| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মূল লেখা শুরুর আগে কিছু বাড়তি কথা বলার আমার অভ্যাস। এবারও বলছি। আমার নিচের লেখাটা যখন লিখি তখন কোভিড আক্রান্ত রোগী মাত্র তিন জন। এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে দশ-এ। অনেকে বলছেন, এর সংখ্যা আরো বেশি। যে দেশে সড়ক থেকে শুরু করে নানাবিধ কারণ বা উপায়ে বছরে বারো থেকে বিশ হাজার মানুষ প্রাণ হারায় সেখানে, ‘সমুদ্রে পেতেছি শয্যা শিশিরে কী ভয়’।
মূল লেখা
আমরাতো দীর্ঘদিন থেকেই কোয়ারান্টিন হয়ে আছি। আমাদের উপর যখন যে হুকুম আসছে মুখ বুজে পালন করছি। কোনো কথা বলছি না। কারো ইচ্ছে হলে আমাদের বাচ্চাদের মাথার চুল কেটে দিচ্ছে প্রকাশ্যে। লজ্জায় আমাদের বাচ্চা মাথা হেট করে আছে। একপাল গাধা সেই লজ্জিত বাচ্চাটার চারিপার্শ্বে হো হো করে হাসছে। আমাদের বাচ্চা সমাজ থেকে কোয়ারান্টিনে চলে যাচ্ছে।
একজন সাংবাদিক নিখোঁজ। নিশ্চয়ই সে কোয়ারান্টিনের পরবর্তী ব্যবস্থা আইসোলেশনে রয়েছেন। আরেকজনকে এক ডিসি রাতের বেলা বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে কোয়ারান্টিনে দিয়ে দিলেন। বেচারাকে ন্যাংটা করে পিটানো হলো। মামলা দেয়া হলো মাদকদ্রব্যের। দেয়া হলো কারাগারে কোয়ারান্টিনে। এমন অসংখ্য ঘটনা রয়েছে কোয়ারান্টিনের।
রয়েছে আইসোলেশনেরও এমন অনেক ঘটনাই। কোথায় কাকে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে কেউ জানে না। মাঝেমধ্যে কেউ ফিরে আসেন, কিন্তু তারা ভুলে যান, আইসোলেশনের স্মৃতি। বেঁচে ফিরে আসাটাই তাদের কাছে বড় হয়ে দাঁড়ায়।
আমাদের কোয়ারান্টিনে থাকতেই হয়। আমাদের প্রতিপদে মৃত্যুদূত হাত বাড়িয়ে থাকে। বাড়ি থেকে সন্তান বেড়িয়ে গেলে বাড়িতে ফিরবে কিনা সে নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় থাকে বাবা-মা। চোখ মেলে রাখে দরোজার দিকে। কেউ ফিরে আসে, কেউ বা না। আমাদের সড়ক খেয়ে নেয় প্রতিবছর হাজারো প্রাণ। আমাদের নদী গিলে নেয়, ডোবা-পুকুর-নালায় ভাসে প্রাণহীন দেহ। আমরা ভয়ে কোয়ারান্টিনে যাই, হোম কোয়ারান্টিন।
কিইবা করতে পারি আমরা! আমাদের ভয় সব তাড়িযে বেড়ায়। চারিদিকে অনুভূতির বরকন্দাজরা নানা জুজু’র ভয় দেখায়। আমরা ভয়ে সিঁটকে থাকি, আটকে থাকি। ক্রীতদাসের মতন নতমস্তকে পথ চলি, মাথা তুললেই ভয়। মরে যাবার ভয়, ছেড়ে যাবার ভয়। আমরা ভয় তাড়াতে স্বেচ্ছা কোয়ারান্টিনে যাই, যাই স্বেচ্ছা নির্বাসনে। অনিচ্ছায় যাই অনিশ্চিত আইসোলেশনে। অভ্যস্ত এই আমাদের আর কী ভয় দেখাবে ভাইরাস করোনা।
©somewhere in net ltd.