নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

গণমাধ্যমকর্মী, লেখক।

কাকন রেজা

গণমাধ্যমকর্মী, লেখক ।

কাকন রেজা › বিস্তারিত পোস্টঃ

মহামারির এই দুর্যোগে বিজ্ঞান আর ধর্মের তর্ক রাজনৈতিক ধান্ধাবাজি

২৩ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ১২:২৬


আলাপটা তুলেছিলেন এক প্রবাসী সাংবাদিক। করোনাকালে সামাজিকমাধ্যমে একটি মন্তব্য ঘুরে বেড়াচ্ছে, ‘যদি বেঁচে থাকো এবারের মতো, মনে রেখো বিজ্ঞান লড়েছিল একা, মন্দির বা মসজিদ নয়।’ প্রবাসী সেই সাংবাদিক বললেন, ভ্যাকসিন আবিষ্কার বিজ্ঞানের কাজ, ধর্মের নয়, এমনটা। আমি তার সাথে পুরোপুরি একমত। সমাজের সবকিছুরই আলাদা রোল রয়েছে, নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে তা প্লে করে। বিজ্ঞানের কাজের নির্দিষ্ট ক্ষেত্র রয়েছে। বিজ্ঞানের চর্চার আলাদা জায়গা রয়েছে, রয়েছে দর্শনের আলাদা ক্ষেত্র। যারা বিজ্ঞান ও ধর্মকে লড়িয়ে দিতে চান। তারা ভুলে যান ধর্মও একটা দর্শন। বিজ্ঞান আর দর্শনের মধ্যে কনফ্লিক্ট সৃষ্টি করা কোনো বুদ্ধিবৃত্তিক কর্ম নয়। এমন কাজ মূলত চতুরদের। এরা বুদ্ধির জায়গায় চালাকি দিয়ে জিততে চায়।

প্রশ্ন করতে পারেন চালাকিটা কোন জায়গায়। জায়গাটা হলো রাজনীতির। আমাদের যারা বিজ্ঞান আর ধর্মকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিতে চাচ্ছেন, তাদের লক্ষ্যটা হচ্ছে একটা আড়াল তৈরি করা। আড়াল কিসের, আড়ালটা হলো এই মুহূর্তে প্রয়োজনীয় কিছু আলাপের উপর পর্দা ফেলা। এই মহাদুর্যোগের সময় যখন আমাদের দৃষ্টি দেয়া উচিত দুর্যোগ মোকাবেলার বিষয়ে তখন এই আলাপ সেই বিষয়টাকে আড়াল করে দেয়ার জন্যই সৃষ্টি। আমাদের প্রস্তুতি কতটা যখন এটা আমাদের জানা প্রয়োজন, তখন এই আড়াল সৃষ্টি। আমাদের অব্যবস্থাপনা নিয়ে যখন কথা বলা প্রয়োজন, তখন অহেতুক, নিরর্থক একটা তর্ক সামনে তুলে আনা। এই মহামারির সামনে দাঁড়িয়ে আমরা যখন দেখছি সবখানে হযবরল, তখন আমাদের দৃষ্টি অন্যদিকে ঘোরানোর জন্যই এই ফালতু তর্কের অবতারণা।

এদেশে একটা শ্রেণি রয়েছে। যারা নিজেদের বাম হিসাবে পরিচয় দেন। আর তাদের এই পরিচয়কে দৃশ্যমান করার বড় উপায় হলো সব বাদ দিয়ে ধর্মের বিরুদ্ধে কথা বলা। এটাই হলো আমাদের তথাকথিত কিছু বামের মূল কাজ। তারা এই কাজটা করেন সুনির্দিষ্ট একটা লক্ষ্য নিয়ে। দেখবেন দেশে যখন একটা ক্রাইসিস শুরু হয়, তখনই তারা কোন না কোন উছিলায় ধর্মকে সামনে এনে কেওয়াজ লাগিয়ে দেন। ফলে মূল ক্রাইসিসটা আড়ালে পড়ে যায়। মূলত বাম নামের এই শ্রেণিটার কাজ ডাইভার্শন সৃষ্টি। কেনো তারা এ কাজটা করেন, তা খুব একটা ব্যাখ্যা করে বলার দরকার নেই। কারণ বিষয়টি সবাই জানেন। তারা হলেন ‘প্ল্যান বি’।

যাক গে, সেই প্রসঙ্গে বেশি যেতে চাই না। কারণ অহেতুক তর্কের সময় এটা নয়। আমরা এক মহাবিপদের সমুখে দাঁড়িয়ে। এটা কোনো রাজনৈতিক বিপদ নয়। ঝড়, বন্যা হলেও একটা কথা ছিলো ত্রাণের ফটোসেশন করে রাজনৈতিক ভাবে মোকাবেলা করার সুযোগ থাকতো। এখানে প্রয়োজন সর্বোচ্চ মনোসংযোগ এবং তা অবশ্যই দেশপ্রেমের সাথে। এখানে রাজনৈতিক ধান্ধাবাজির কোনো জায়গা নেই। ষোল কোটি মানুষের দেশে ভঙ্গুর একটা স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় এই বিপদ পাড়ি দেয়া কতটা সম্ভব তা নিয়ে আলোচনাই এখন জরুরি। অসম্ভবকে সম্ভব করার জন্য সমন্বিত পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং তা অনুযায়ী কাজ করাটাই এখনে অগ্রাধিকার।

বিজ্ঞানের কাজ হলো ল্যাবে। ধর্মের কাজ মসজিদ মন্দিরে। চিকিৎসকরা যখন রোগীকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন, তখন বেশিরভাগই আঙুল উপর দিকে দেখিয়ে দেন। বিজ্ঞানের ছাত্র হয়ে চিকিৎসকরাও উপরে দেখান ঈশ্বরকে। ঈশ্বর হলো একটা আশ্রয়। মানুষ যখন নিরাশ হয়ে পড়ে তখন তার মানসিক শক্তির জন্য একটা নির্ভরতার প্রয়োজন পড়ে, আর সেই নির্ভরতাটাই হলো ঈশ্বর। ইতালি থেকে অ্যামেরিকার সাধারণ মানুষেরা ভরসা করছেন চিকিৎসকদের উপর। আর চিকিৎসকরা ভরসা করছেন সেই ঈশ্বরের উপর। তাদের অসহায় স্বীকারোক্তি তাই জানান দিচ্ছে। এখানে বিজ্ঞানের সাথে ধর্মের কোনো বিভেদ নেই। যারা ধর্মকে ভ্যাকসিন আবিষ্কারের কথা বলেন, তাতে তাদের বুদ্ধির থেকে চতুরতা অন্যার্থে বুদ্ধিহীনতাই বেশি প্রকাশ পায়। সেই প্রবাসী সাংবাদিকও এমনটাই বলেছেন। তিনি অবশ্য আমার মতো চতুরতা না বলে বিষয়টিকে শিশুসুলভ হিসাবে ব্যাখ্যা দিয়েছেন। কিন্তু শিশুরা সুচিন্তিত কোনো তর্কের অবকাশ ঘটায় না, এটা হয়তো তিনি খেয়াল করেননি অথবা এড়িয়ে গেছেন।

তবে তিনি একটা ভালো কথা বলেছেন। বলেছেন, এই বিজ্ঞান মূলত কর্পোরেট। আজ ধনী দেশ আক্রান্ত বলেই বিজ্ঞান উঠেপড়ে লেগেছে এই মহামানি নিয়ন্ত্রণে। তানা হলে এবারও আফ্রিকা বা এশিয়ার গরীব মানুষদের গিনিপিগ বানিয়ে ভ্যাকসিনের পরীক্ষা চালাতো দীর্ঘদিন ধরে। এবার বাধ্য হয়েই তারা নিজেদের লোকজনের উপর পরীক্ষা শুরু করেছে। বিজ্ঞান যে কর্পোরেট তার আরেকটা দিক হলো, যে পরিমান যুদ্ধাস্ত্র, বিমান জাহাজ বানানো হয়েছে, সে পরিমান অর্থ চিকিৎসা ব্যবস্থার পেছনে ব্যয় করা হয়নি। বর্তমান মহামারি তা স্পষ্ট করে দিয়েছে। আমাদের কথাই ধরুন, আমাদের মেগা প্র্রকল্প রয়েছে হাজার হাজার কোটি টাকার। বিপরীতে দেশের তেষট্টি জেলার কোন হাসপাতালেই একটা ভেন্টিলেটর নেই। আইসিইউ নেই, করোনারি ইউনিট নেই। উপজেলাগুলোতে সামান্যতম সুবিধাও নেই। এখন কী বোঝা যাচ্ছে সেতু, ফ্লাইওভার, হাতিরঝিলের চেয়ে ভেন্টিলেটর, আইসিইউ বেশি প্রয়োজন। নিজেদের ভালো থাকার প্রয়োজনে এসবের বিকল্প নেই। আমরা জানি না আমাদের সমুখে কী রয়েছে, আমরা কোন পরিণতির দিকে যাচ্ছি। এমন মুহূর্তে যারা ফালতু তর্কের জন্ম দেয়, তাদের ইরাদা যে সহি না তা পরিষ্কার এবং সেই ইরাদা অবশ্যই রাজনৈতিক।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.