| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বিষয়টি নিয়ে আরেকটি লিখা এই ব্লগেই রয়েছে। বলতে পারেন, রয়েছে তো আবার কেন? বলি, ওই লেখায় কিছু কথা বাদ পড়ে গিয়েছিলো, তাই এই লিখা।
মূল লেখা
বাংলাভাষী কিছু স্বঘোষিত নাস্তিক রয়েছেন, যারা সারাজীবন বিজ্ঞানের কাছে না গিয়েও, বিজ্ঞানীদের জীবন সম্পর্কে না জেনেও নিজেদের বিজ্ঞানমনস্ক ঘোষণা করেন। তারা মূলত নাস্তিক্যবাদের যে দর্শন সে সম্পর্কেও পুরোপুরি জ্ঞাত নন। নাস্তিক্যবাদের কথা হলো, ঈশ্বরে অবিশ্বাস করা। কিন্তু যারা ঈশ্বরে বিশ্বাস করে তাদের সাথে সংঘাত তৈরি নয়। আমাদের বাংলাভাষী নাস্তিকদের কাজ হলো, সংঘাত সৃষ্টির কাজটা করা। এই যে করোনাকাল চলছে, মহাদুর্যোগের এ সময়েই স্বঘোষিত নাস্তিকরা বসে নেই। তারা ধর্ম আর বিজ্ঞানের মধ্যে দ্বন্দ্ব লাগিয়ে দিতে চাইছেন। মুশকিলটা হলো, এই দ্বন্দ্বটা যারা মোটামুটি চিন্তা করেন তাদের জন্য বিপদের নয়। বিপদটা হলো সাধারণ শ্রেণির, যাদের মধ্যে চিন্তার চেয়ে আবেগের জায়গাটা বেশি।
এই বিষয়টা খুলে বলার আগে আরেকটি প্রাসঙ্গিক কথা বলে নেই। বিজ্ঞানী বা চিকিৎসক যারা আছেন তারা কি সবাই নাস্তিক? প্রশ্নটা তথাকথিত বিজ্ঞানমনস্কদের কাছে। এই যে যুক্তরাজ্যে করোনার ভ্যাকসিন চ্যাডক্স ১ নিয়ে সারা বিশ্বে আশা জাগছে, তার আবিষ্কার করেছেন সারা গিলবার্ট নামে একজন বিজ্ঞানী। যারা কাব্যি করেন, ‘যদি বেঁচে যাও এবারের মতো, মনে রেখো বিজ্ঞান লড়েছিলো একা, মন্দির মসজিদ নয়’, তারা বলুন তো সারা গিলবার্ট কি নিজেকে কখনো নাস্তিক বলেছেন? বলেননি। যতদূর জানি, সারা গিলবার্ট অর্থডক্স খ্রিস্টান। তিনি আস্তিক। এই যে ডাক্তার ভাইয়েরা মানুষের জন্য জীবনপণ করেছেন, তাদেরকেও দেখবেন লাইভে এসে সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করছেন। কেন করেছেন, কারণ মানুষের একটা ভরসার জায়গা লাগে। ক্রমাগত ব্যর্থতা নিরসনে মনের একটা শক্তি লাগে, আর সেই শক্তিই ঈশ্বর।
বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী মুদ্রা অ্যমেরিকান ডলার, সেখানেও লেখা থাকে, ‘আমরা ঈশ্বরে বিশ্বাস করি’। আপনি না করতে পারেন তথাকথিত মিস্টার বিজ্ঞানমনস্ক, বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিধর দেশটি করে। কারণ শক্তি আরেক বৃহৎ শক্তির অস্তিত্ব বোঝে। আপনারতো শক্তিই নেই। রয়েছে কিছু আধা বিদ্যা, অর্ধ ধারণা, বিভ্রান্ত চিন্তা, তাই আপনার মনে হয় আপনিই সব। না ভাই, দুঃখের সাথে বলতে হয়, আপনার সাথে ওই কাটমোল্লা আর আধা পুরোহিতদের কোনো পার্থক্য নেই। দু’তরফেই অল্প বিদ্যা ভয়ংকর টাইপের অবস্থা।
জানি, নানা তত্ত্ব কপচাবেন। মার্ক্স, অ্যাঙ্গেলস তো থাকবেই। কারণ আপনারা তো আবার নিজেদের বাম বলে দাবি করেন। শিখেছেন কয়টা শব্দ পুঁজিবাদ, প্রলেতারিয়েত ইত্যাদি। বলি, দেখানতো আপনাদের পাথ ফাইন্ডার মার্ক্স কোথায় ঈশ্বরের বিরোধীতা করেছেন, অস্বীকার করেছেন। সত্যিকার অর্থে দেখাতে পারবেন না। যা দেখাবেন তা অস্পষ্ট কিছু ব্যাপার এবং পরিপূর্ণ ব্যাখ্যাহীন। ধোঁয়াশা থেকে নেয়া হাইপোথিসিস তৈরি করে আপনারা বসে আছেন বিজ্ঞানমনস্ক হয়ে। এমন এক বিজ্ঞানমনস্ককে জানি। যিনি বিশ্বভারতীর ছাত্রী। ভালো গান করেন। পড়াশোনা বা যাপিত জীবনে বিজ্ঞানচর্চার সাথে যার কোনো সম্পর্কই নেই, তবু তিনি বিজ্ঞানমনস্ক। কেন, কারণ তিনি কথিত বাম রাজনীতির সমর্থক। তিনি রবীন্দ্রনাথকেই ঈশ্বর মানেন। মানুষের উপাস্য ঈশ্বরে তিনি বিশ্বাস করেন না। সুতরাং তিনি বিজ্ঞানমনস্ক হিসাবে স্বার্থক এবং স্বীকৃত।
অনেকেই হাসবেন এমন বিজ্ঞানমনস্কতার সংজ্ঞা আর ব্যাখ্যায়। না, হাসার কিছু নেই, খোঁজ নিয়ে দেখুন এদের বিজ্ঞান জানার লেভেলটা। উপরে বর্ণিত ব্যাখ্যার বাইরে কিছু নেই। সেদিন সামাজিকমাধ্যমে দেখলাম, একজন এক রিকশাওয়ালাকে করোনা ভাইরাস বিষয়ে জিজ্ঞেস করছেন। রিকশাওয়ালা বলছেন, ‘টিভিত চাক্কার মতন যে বড় ভাইরাস দেহায়, ওইডা মানুষের মধ্যে ঢুইকা পড়লে বাঁচন আছে।’ আমাদের বিজ্ঞানমনস্কদের ধারণাও এরচেয়ে খুব বেশি এগুনো নয়। বর্তমান সময়ে ওই রিকশাওয়ালার সাথে তাদের পার্থক্য এটুকুই তারা ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়েছেন। আর ওই রিকশাওয়ালার পেটের তাগিদে রিকশা নিয়ে বের হতে হয়েছে।
আমার জানা ঢাকার এক বিজ্ঞানমনস্কের কথা বলি। অভিজাত এলাকায় তার বাস। সেখানে করোনা আক্রান্ত একজন মারা গেছেন। তিনি তার দাফন নিয়ে কথা বলতে গিয়ে বলছেন, কবর দেয়ার কী দরকার, পুড়িয়ে ফেললেই ভাইরাস মরে যায়। তাকে বলা হলো, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইড লাইনটা কি আপনি জানেন? উনি বললেন, হ্যাঁ তারা পুড়িয়ে ফেলতে বলেছে। বুঝলেন তো তার বিজ্ঞানমনস্কতার দৌড়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যেখানে পরিষ্কার জানাচ্ছে, কবর দেয়াটাই সর্বোত্তম। বলছে, মৃতদেহ থেকে ভাইরাস ছড়ায় না, সেখানে ওই বিজ্ঞানমনস্ক বলছেন উল্টোটা। অর্থাৎ তিনি এবং তার স্বগোত্রীয়রা কোন খোঁজই রাখেন না এ বিষয়ে। বেশির ভাগই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাইটে বোধহয় জীবনে একবারও উঁকি মেরে দেখেননি। তারপরও তারা বিজ্ঞানমনস্ক। কারণ তারা কথিত বাম, তারা নাস্তিক। বলিহারি সংজ্ঞা ও প্রকৃতি বিজ্ঞানমনস্কতার।
এবার এই বিজ্ঞানমনস্কদের কারণে সাধারণদের বিপদটার ব্যাপারে আসি। প্রতিটি ক্রিয়ার বিপরীত প্রতিক্রিয়ার কথা আমাদের জানা। এই অর্ধশিক্ষিত বিজ্ঞানমনস্করা যখন ধর্মকে খোঁচাবেন তখন সে খোঁচায় তাদের প্রতিপক্ষ অর্ধশিক্ষিত কাটমোল্লা-পুরোহিতরাও জেগে উঠবেন। তারাও দ্রুত প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে তাদের নিজেদের প্রমান করতে চাইবেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জানাযা বা ভারতের রথযাত্রা সেই প্রতিক্রিয়ারই ফসল। আর সাধারণ মানুষ এই প্রতিক্রিয়ার শিকার। যেহেতু সাধারণ মানুষ বেশিরভাগই আবেগপ্রবণ। আর ধর্মের সাথে আবেগটা যায় ভালো।
এখানে আরেকটা কথা বলে রাখা উচিত, এই খোঁচাখুঁচির পেছনে একটা রাজনৈতক কারণও রয়েছে। দেখবেন তথাকথিত কিছু বিজ্ঞানমনস্ক আর কাটমোল্লারা অর্থনৈতিক ভাবে খুব ভালো অবস্থায় রয়েছেন। তাদের থেকে অনেক যোগ্য লোকও অর্থনৈতিক ভাবে তাদের ধারেকাছে নেই। এরা চলাচলে দামী গাড়ি থেকে হেলিকপ্টার পর্যন্ত ব্যবহার করছেন। থাকছেন দামী ফ্লাটে। এর মূল কারণটা হচ্ছে প্রণোদনা। ভাবছেন তো কিসের প্রণোদনা, এটা ডাইভার্শন সৃষ্টির প্রণোদনা। প্রাচীণ ভারতের চাণক্য নামের এক কূটনীতিবিদ, আমার ভাষায় ‘কূটনা’ ডাইভার্শনের ব্যাপারে মাহির ছিলেন। ব্যাপারটা হলো, একটা ঘটনা আড়াল করতে এমন ঘটনা সামনে আনতে হবে যা মানুষের আবেগের সাথে জড়িত। যা সাধারণ মানুষকে আলোড়িত করে। দেখুন ভারতে, করোনা সামাল দিতে যখন সরকার হিমশিম খাচ্ছে, তখন সামনে আনা হলো মুসলমানরাই তাবলীগের নামে করোনা ছড়াচ্ছে। এক মন্ত্রেই সরকারের অর্ধেক ব্যর্থতা আড়ালে পড়ে গেলো। নিয়ন্ত্রণ নয় ছড়ানোর ব্যাপারটাই তখন দাঁড়ালো মূখ্য হয়ে। বুঝলেন তো ডাইভার্শনটা। এগুলো খুব কঠিন কোনো কৌশল নয়। অনেকটা আমাদের ভিলেজ পলিটিক্সের মতন।
আমাদের বিজ্ঞানমনস্করা এই কাজটিই করেন। তারা যতই আধুনিক শহুরে বলুন, গ্রামের কুটনামি তাদের মগজ জুড়ে রয়েছে। যখনই ক্রাইসিস সৃষ্টি হয়, মানুষ সেই ক্রাইসিস নিয়ে কথা বলতে শুরু করে, তখনই নব্য চাণক্য তথা ‘কূটনা’রা তাদের দাঁত-নখ বের করেন। ধর্মকে কমন প্রতিপক্ষ বানিয়ে তার সাথে কোন কিছুর বিবাদ বাঁধিয়ে দেন। গ্রাম্যতায় যেমন দু’পক্ষের মধ্যে মামলা বাঁধিয়ে ‘নেপোয় মারে দই’, তেমনি। এই করোনাকালে বাঁধিয়ে দেয়া হচ্ছে ধর্মের সাথে বিজ্ঞানের। বিজ্ঞানমনস্ক ভাইদের প্রশ্ন করুন তো, ভ্যাকসিন আবিষ্কার কি ধর্মের কাজ, নাকি বিজ্ঞানের? উত্তর হবে বিজ্ঞানের। তাহলে এখানে ধর্মের সাথে বিজ্ঞানের বিবাদটা কোথায়। আপনি খুঁজে না পেলেও তারা পাবেন। একজন বিজ্ঞানী যখন বলেন, আমি আমার কাজ করে যাচ্ছি, বাকিটা জানেন ঈশ্বর। তখনও সেই স্বঘোষিত বিজ্ঞানমনস্করা বিবাদটাকে উস্কে দিতে চাইবেন। না দিয়ে উপায়ও নেই। তারা সেই রিকশাওয়ালার মতই অসহায়। তাদের এসব করতে হয় পেটের তাগিদেই।
আমাদের এই মহাদুর্যোগের কালে এইসব বিজ্ঞানমনস্ক আর কাটমোল্লা আর পুরোহিতদের রীতিমত বয়কট করা উচিত। তা না হলে অপ্রয়োজনীয় বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের পড়ে থাকতে হবে। আমাদের চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তার চেয়ে এই দুর্বৃত্তরা বিজ্ঞান আর ধর্মের কাইজাকেই সামনে এগিয়ে দেবে। আমরা মরবো রোগে আর কাইজাজনিত সৃষ্ট সংঘাতে।
©somewhere in net ltd.