নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

গণমাধ্যমকর্মী, লেখক।

কাকন রেজা

গণমাধ্যমকর্মী, লেখক ।

কাকন রেজা › বিস্তারিত পোস্টঃ

পরিস্থিতির পর কেনো, আগে কেনো সাজানো যায়নি স্বাস্থ্যখাতকে?

২৮ শে মে, ২০২০ রাত ১২:৪১


এই লেখার ভূমিকা হলো, একটা গণমাধ্যমে প্রকাশ পাবার পরও উঠিয়ে নেয়া হয়েছে এটি। কেনো উঠিয়ে নেয়া হলো তার ব্যাখ্যাও দেয়া হয়নি। কি অদ্ভুত ব্যাপার, না? একটা গণমাধ্যমের সামান্যতম ব্যাখ্যাও থাকবে না, কেনো একটা লেখা প্রকাশ করার পরও তা উঠিয়ে নেয়া হলো। আমাদের গণমাধ্যমের অবস্থা এমনটাই। আমাদের গণমাধ্যমের রেটিং তাই জানান দেয়। মুক্ত গণমাধ্যম দিবসে, তালিকার উল্টো দিক থেকে আমরা প্রথমের ক্রমিকেই থাকি।

মূল লেখা

অনেকেই বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতি কেটে গেলে স্বাস্থ্যখাতকে নতুন করে বা ঢেলে সাজাতে হবে। কেনো আগে সাজাতে অসুবিধা কোথায় ছিলো। টাকা পয়সাতো কম ঢালা হয়নি সরকারের তরফ থেকে। পর্দাকান্ড, বালিশকান্ড, থার্মোমিটারকান্ড এমনসব দুর্দান্ত কান্ড ঘটানোর পরেও মহামারি পরবর্তী সাজানোর কথা কেনো। কাদম্বিনীকে কতবার মরিয়া প্রমান করিতে হইবে সে মরে নাই। আমাদের দেশটা ক্রমশ যেনো কাদম্বিনী হয়ে উঠেছে। বারবার মরে প্রমান করতে হচ্ছে সে মরে নাই। এই করোনা না এলে আমাদের সিংহভাগ মানুষের বোঝা সম্ভব হতো না, আমাদের স্বাস্থ্যখাতসহ প্রতিটি খাতের কী অবস্থা। আমাদের সব কথামালা আর বাগাড়ম্বর করোনা স্রোতে ভেসে গেছে।

কানাডার অর্থনীতিকে ছুঁয়ে ফেলার বক্তব্য কতটা ঠুনকো ছিলে তা দুই মাসের আধা লকডাউনেই বোঝা গেছে। বোঝা গেছে মানুষকে সহায়তার নামে লুটপাটের দৃশ্যচিত্রে। মাত্র দুইটা মাস আমাদের অর্থনীতি কুলিয়ে উঠতে পারে না। পোশাক শিল্পসহ সব শিল্পের নাভিশ্বাস উঠতে শুরু করে। বড় থেকে ক্ষুদ্র সব ব্যবসা-বানিজ্যে ধ্বস নামে। অর্থাৎ দুই মাসের আপদকালীন সময় পাড়ি দেবার সামর্থ্য আমাদের নেই। থাকলে এমন ভয়াবহ সময়ে যখন করোনার পিকটাইম চলছে তখন দায়িত্বশীলদের মুখে জীবনের সাথে জীবিকা বাঁচানোর কথা উঠতো না। আমাদের লিখতে হতো না, ‘দোকান খুললে করোনা, না খুললে অভাব’ এমন লেখা।

আমাদের রাষ্ট্র ও সমাজের অবস্থা কী তা দেখিয়ে দিয়েছে আড়াই হাজার টাকার সহায়তা পরিকল্পনা। মাত্র ৫০ লক্ষ পরিবারের পাবার কথা এই নগদ সহায়তার টাকা। অথচ আমাদের ৪ কোটি মানুষ অতি কিংবা দরিদ্র। তারপরেও নিজেকে সান্ত্বনা দিতে বললাম, কিছু মানুষতো পাচ্ছে। জানি, আড়াই হাজার টাকা একটা মোটামুটি পরিবারের জন্য মাত্র এক সপ্তাহের খরচ। এরচেয়ে বেশি দিন চালানো অসম্ভব এ টাকায়। অথচ এই আড়াই হাজার টাকা নিয়েই কত নির্লজ্জতা। জনপ্রতিনিধি সাথে রাজনৈতিক নেতাদের আত্মীয় স্বজনের নাম দেয়া হচ্ছে এই টাকার জন্য। গণমাধ্যম জানাচ্ছে, কোটিপতি লোকজনের নামও উঠেছে সেই দুঃস্থদের লিস্টে। হায়রে লোভ! হাজার কোটি টাকা লুটপাটেও এদের আশ মেটেনি। বিদেশে সেকেন্ড হোম বানিয়েই তারা ক্ষান্ত হয়নি। হাত দিয়েছে মুষ্টিমেয় কিছু দুঃস্থদের এক সপ্তাহের খরচের উপরেও। বলিহারি এদের, নমস্য এরা!

সামাজিকমাধ্যমে একজনের বিক্ষুব্ধ মন্তব্য ছিলো অনেকটা এরকম, ‘বেশ্যাদের টাকা দেয়া হবে জানলে, চোরেরা তাদের স্ত্রী-কন্যাদের নামও সেই লিস্টে তুলে দিত’। কতটা বিক্ষুব্ধ হলে একজন মানুষ এমন মন্তব্য করতে পারেন। এই বিক্ষুব্ধতার লেভেলটা বুঝতে হবে রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রকদের। অনেকে হয়তো বলবেন ফেসবুকে বা সামাজিকমাধ্যমে অনেকেই বিপ্লবী হয়ে উঠেন, এটা কিছু না। এদের ভার্যুেওয়াল জগত ছাড়া রিয়েল জগতে দেখা পাওয়া যায় না। সুতরাং এদের নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। তাদের বলি, চুপ থাকা মানেই মেনে নেয়া নয়, সেটা যতটা দ্রুত বুঝতে পারা যাবে ততই মঙ্গল।

মঙ্গল এ কারণেই, হাজার কোটি টাকা থাকলেও অনেক সময় কাজে লাগে না। যেমন লাগেনি অনেক ধনী লোকদের। প্রয়োজনের সময় একটা আইসিইউ বেডও জোগাড় করা যায়নি। এড়ানো যায়নি মৃত্যু। সেই হাজার কোটি টাকা অর্থহীন হয়ে গেছে। করোনাকাল আমাদের সেই শিক্ষাই দিচ্ছে। এই যে স্বাস্থ্যখাতের বিভিন্ন লঙ্কাকান্ডে যারা চুপ করে ছিলেন, তারাও কিন্তু ছাড় পাচ্ছেন না করোনার হাত থেকে। যারা ভেবেছিলেন অসুস্থ হলেই ব্যাংকক সিঙ্গাপুর চলে যাবেন, তাদের সেই ভাবনা আজ দুর্ভাবনায় পরিণত হয়েছে। রথি-মহারথিদেরও আজ মৃত্যুর স্বাদ পেতে হচ্ছে। অন্যের মৃত্যু যাদের হৃদয়ে কোন অনুভূতিই সৃষ্টি করতে পারেনি, তারা আজ বুঝতে পারছেন তারা অমর নন। দাবি আদায়ের মিছিলে না থাকলেও সাধারণ চুনোপুটিদের সাথে তারাও সামিল হচ্ছেন মৃত্যুর মিছিলে। যেনো আকাশ আর মাটি মিলে যাচ্ছে নীলিমায়।

তাই যারা এখন একান্তই বাধ্য হয়ে বলছেন, এ অবস্থা কেটে গেলে স্বাস্থ্যখাতকে ঢেলে সাজাতে হবে, তাদের জন্য করুণাই হয়। আল্লাহতায়ালা কোরআনেও মানুষকে উদ্দেশ্যে করে বলেছেন, শাস্তি রহিত করলে পূর্বাস্থায় ফিরে যাবার কথা। এরাই সেই মানুষ যারা এমন অবস্থা কেটে গেলে ‘যাহা পূর্বং তাহাই পরং’। যেই সেই। আবার তারা স্তব রচনা করবে। বন্দনা গাইবে। সেই খরগোশের গল্পের মতন, আলু খাবার পর যখন কোষ্ঠ পরিষ্কার হচ্ছিল না তখন আলু খাবে না বলে প্রতিজ্ঞা করেছিলো সে। হয়ে যাবার পরই আবার বলা শুরু করলো, আলু খাব না খাব কী, আলু ছাড়া আছে কী। এরাও তেমনি, এদের কাছে আলু ছাড়া আর কিছু নেই।


মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.