নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ধুত্তোর!!

ধৃষ্টদ্যুম্ন

... ডানার রৌদ্রের গন্ধ মুছে ফেলে চিল!

ধৃষ্টদ্যুম্ন › বিস্তারিত পোস্টঃ

চলচ্চিত্র আলোচনাঃ দ্য মোটরসাইকেল ডায়ারিজ ... এবং হারানো এক স্বপ্নের অনুসন্ধান (১ম খণ্ড)

৩০ শে জুলাই, ২০১৪ ভোর ৫:০৩





১.



তখন সময় ১৯৫০ ...



বায়োকেমিস্ট গ্রানাদো ঠিক করল, এবারই তার স্বপ্ন পূরণ করতে হবে। অনেকদিন ধরেই প্ল্যান করা হচ্ছে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা আর বাস্তবায়িত হচ্ছে না। আর্জেন্টিনা থেকে ভেনেজুয়েলা পর্যন্ত সড়কপথে, নিজ ব্যবস্থায় যাওয়া ত আর অত সোজা নয়! কিন্তু এখন সাথে আছে ফুজার, ২২ বছর বয়সী এক টগবগে যুবক। যখন তাকে গ্রানাদো প্রস্তাব দিল, তখনই ফুজার রাজি হয়ে যায়। অ্যাডভেঞ্চারের গন্ধ যেহেতু প্রবলভাবে পাওয়া যাচ্ছে, তাহলে মেডিসিনের ডিগ্রিটা কি এক বছর পিছিয়ে দেওয়া যায় না?



শেষ পর্যন্ত দুজন বন্ধু বের হয়ে গেল লাতিন আমেরিকা ঘুরতে। ভ্রমণসঙ্গী হিসেবে আছে একটা মোটরসাইকেল, নরটন ৫০০। আর্জেন্টিনার বুয়েন্স এইরেস থেকে আন্দেজ পর্বতমালার উত্তর দিক, এরপর চিলি হয়ে আতাকামা মরুভূমি, সেখান থেকে পেরুর আমাজনের ভেতর দিয়ে ভেনেজুয়েলা – এই হচ্ছে তাদের যাত্রার ছক। গ্রানাদোর ইচ্ছা, তার ত্রিশতম জন্মদিনটা সে ভেনেজুয়েলাতে পালন করবে। কাজেই দোসরা এপ্রিলের আগেই সেখানে পৌঁছুতে হবে।



জন্মদিন উদ্‌যাপনের পাশাপাশি তাদের অবশ্য আরেকটা লক্ষ্য আছে। তা হল পেরুর লেপার কলোনিতে যাওয়া। সেখানে কুষ্ঠ রোগীদের চিকিৎসা করা হয়। তাতে অংশগ্রহণ করে মানবিকতার ডাকে সাড়া দেওয়া, মনে প্রশান্তি পাওয়া – এই হচ্ছে ব্যাপার। তবে পুরো ভ্রমণের মূল উদ্দেশ্য একটাই – অ্যাডভেঞ্চারে সামিল হওয়া।





২.



ক্লাস টেনে থাকতে মিশুকের সাথে চিঠি আদান প্রদান করা শুরু। শুনতে প্রেমিক-প্রেমিকার ব্যাপার বলে মনে হতে পারে, কিন্তু আদতে তা কেবলই বন্ধুত্বের বেড়াজালে সীমাবদ্ধ ছিল। অনেক না বলা কথা আমি তখন সেসব চিঠিতে লিখতাম, যেগুলো কাউকে কখনো সামনাসামনি বলা হয়ে উঠেনি। মিশুক অত জটিল কিছু লিখত না। আমার কথাগুলোর সাথে তাল মিলিয়ে চলত, সাথে থাকত কিছু ধাঁধা এবং টুকটাক প্রশ্ন।



যাই হোক। এমনই এক চিঠিতে আমি লিখেছিলাম আমার ভ্রমণ লিপ্সার কথা। ভেবেছিলাম, অনার্স কমপ্লিট করার পর বাংলাদেশ ঘুরতে বের হব। একেবারে একা। কাঁধে থাকবে ব্যাকপ্যাক, চোখে থাকবে মুগ্ধতা আর বুকে থাকবে দেখবার প্রবল আগ্রহ। দেশটাকে একেবারে কাছ থেকে দেখব। প্রতিটা জেলা ঘুরে বেড়াব, যত দর্শনীয় স্থান আছে তার প্রত্যেকটা নিজে ঘুরে দেখে আসব। সব জায়গাতে অন্তত এক রাত কাটাব। পার্বত্য চট্টগ্রামের অচেনা পাহাড়ি নদীগুলোতে নৌকায় চড়ে বেড়াব, পাহাড়ে তাঁবু খাটিয়ে থাকব, সিলেটের চা বাগানের বৃষ্টি উপভোগ করব। এসবের বাইরে আর যা আছে, সবখানেই আমার পদচিহ্ন থাকবে – এই ছিল প্রতিজ্ঞা।



মিশুকের পাশাপাশি ক্লাসের আলামিনের সাথে এ ব্যাপারটা নিয়ে হালকা আলচনা করেছিলাম। প্ল্যান শুনে সে বলল, “এটা কিন্তু অনেক টাকার ব্যাপার!” আরে তাই ত, এটা ত আগে মাথায় আসেনি! জানতাম যে হাতে কিছু থাকতে হবে, কিন্তু আলামিনের সাথে কথা বলার পর বুঝতে পারি যে অল্প কিছুতে হবে না, মোটা একটা অঙ্ক লাগবে।



সেটা অবশ্য তেমন কঠিন কিছু নয়। টার্গেট যেহেতু অনার্সের পর, কাজেই হাতে এখনো ছয়-সাত বছরের মত সময় আছে। এর মধ্যে সবটুকু না হোক, কিছু অন্তত ঠিকই জোগাড় করে ফেলব। তাহলে আর চিন্তা কিসের?



তবে হ্যাঁ, বাসা থেকে বের হব কী বলে? বাবা-মা’য়ের পারমিশান নিতে হবে, তাদের বুঝাতে হবে যে সবাই একভাবে জীবন কাটায় না, কিছু ব্যতিক্রম থাকবেই। এ সমস্ত কথা বলবার পরেও যদি তারা অবুঝ থাকে, তাহলে আমি পালিয়ে যাব। স্বপ্ন আমাকে সত্যি করতে হবে, দেশটাকে একদম কাছ থেকে দেখতে হবে। অত বাধা মানলে কী আর চলে?





৩.



জীবনের একটা মস্ত বড় সমস্যা হচ্ছে, আপনি সব সময় প্ল্যানমাফিক কাজ করতে পারবেন না। কারণ আপনার প্ল্যানের সাথে অন্যেরটা মিলবে না। তাই গরমিল বাঁধেই। যেরকম হল গ্রানাদো আর ফুজারের ক্ষেত্রে। মোটরসাইকেল দিয়ে দেশের পর দেশ পাড়ি দেওয়া অত সোজা কথা নয়। তাছাড়া তারা থাকবেই বা কোথায়? খাবার দাবারের ক্ষেত্রেও সমস্যা দেখা দিবে। এসবের মধ্যেই কাজ করতে হবে। না হলে ভেনেজুয়েলা যাওয়া হবে না।



যাত্রা শুরুর পর দুজনে প্রথমে গেছিল ফুজারের বান্ধবীর বাড়িতে। সেখানে তাদের থাকবার কথা ছিল দুদিন, কিন্তু ঐ যে, প্ল্যানমাফিক সবকিছু হয় না! শেষ পর্যন্ত এক সপ্তাহ থেকে দুই বন্ধু সেখান থেকে বিদায় নেয়। আসবার সময় বান্ধবী ফুজারকে পনেরো ডলার দিয়ে দেয়, যা দিয়ে তার জন্য কিছু ভাল মায়ামি প্যান্ট কিনতে হবে।



এরপর শুরু হয় দীর্ঘ যাত্রা। শহরের পর শহর তারা পাড়ি দেয়। কখনো বাইক নিয়ে দুজনে খালে গিয়ে পড়ে, কখনো বা ঝড়ের রাতে থাকবার তাঁবু পাগলাটে বাতাসে উড়ে গিয়ে পাহাড়ি নদীর জলে ভেসে যায়। এরকম পরিবেশে গ্রানাদোর মুখের বুলির উপর বাধ্য হয়ে ফুজারকে ভরসা করতে হয়। তারা দুজনে বিভিন্ন বাড়িতে যায়, নিজেদের পরিচয় দেয় এবং যতটুকু পারে অন্যদের সিমপ্যাথি জোগাড় করার চেষ্টা করে। এতে অনেক সময় কাজ হয়, অনেক সময় হয় না। তখন বাধ্য হয়ে গ্রানাদো ফুজারের কাছ থেকে ঐ পনেরো ডলার চাইতে থাকে ... একবার নয়, বারবার। কিন্তু ফুজার অনড়, বান্ধবীকে দেওয়া কথার বরখেলাপ করা যাবে না। ফলে দুজনের মধ্যে মাঝেমধ্যে ঝগড়া বাঁধে।



এর মধ্যেই একদিন চিলির এক স্থানীয় পত্রিকায় তাদের অ্যাডভেঞ্চার নিয়ে প্রতিবেদন ছাপা হয়। দুজন মানুষ আর্জেন্টিনা থেকে মোটরসাইকেলে চেপে লাতিন আমেরিকা ঘুরতে বের হয়েছে, রেকর্ড ব্রেকিং সময়ে ভেনেজুয়েলা পৌঁছে যাবে – এই-ই হচ্ছে কাহিনি। এতে গ্রানাডোর বড্ড সুবিধা হয়, কারণ বিপদে পড়লে তার মুখের বুলির পাশাপাশি এখন এই পত্রিকাটাও তাকে সাপোর্ট দিবে। এর প্রমাণও হাতেনাতে পাওয়া যায়, যখন তারা তাদের নষ্ট বাইক নিয়ে এক গ্যারেজে উপস্থিত হয়।





৪.




স্কুল পেরিয়ে কলেজে ভর্তি হলাম। ক্লাস নাইন-টেনে যেসব বই পড়তে হয়েছে, তার তিনগুণ বেশি সিলেবাস এখন শেষ করতে হবে; তাও মাত্র দেড় বছরে। কাজেই অনেক চাপ, তাল মিলিয়ে না চললে মুশকিলে বড্ড মুশকিল।



হাইস্কুলে উঠবার পর পড়াশোনার যাবতীয় দায়িত্ব আমার উপরে চলে আসে, মা আর তেমন সাহায্য করত না। ফলে প্রাইমারি লেভেলের মত অত ভাল রেজাল্ট পরবর্তীতে কখনোই করতে পারিনি; কলেজেও না। মাঝে দিয়ে ভয়ানক পারিবারিক বিপর্যয় আসে। সে এক সময় গেছিল ... আশা করি বাকি জীবনে এমন কিছু আর সহ্য করতে হবে না।



ঐ দূর্ঘটনার ফলে পড়াশোনায় মনোযোগটাই নষ্ট হয়ে যায়। ফলে ফার্স্ট ইয়ারে আহামরি কিছু করা হয়নি। যদিও সেকেন্ড ইয়ারে যতটুকু পারি কাভার দেবার চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু সেটা পর্যাপ্ত ছিল না। যে কারণে এইচএসসি ভাল হয় ঠিকই, কিন্তু ভর্তি পরীক্ষায় তেমন কিছু করতে পারিনি। ঐ চারটা মাস খামখেয়ালিপনায় ভরা ছিল, পড়াশোনার ঠাঁই হয়নি।



যাই হোক। শেষ পর্যন্ত ভার্সিটি লাইফ শুরু হল। আরো বেশি ব্যস্ততা ঘিরে ধরল আমাকে ... ল্যাব, ক্লাস টেস্ট, সেমিস্টার ফাইনাল, সারা দিনব্যাপী ক্লাস, দিন শেষে ক্লান্ত হয়ে ঘরে ফেরা – এর মাঝেই সীমাবদ্ধ হয়ে গেলাম। একঘেয়ে একটা জীবন, সত্যিই একঘেয়ে।



এসবের মাঝদিয়েই কোথায় যেন আমার ঐ পাগলাটে স্বপ্নটা হারিয়ে গেল, সেই দেশ দেখবার স্বপ্ন। কত কিছুই ত ঘুরেফিরে ভাবি, কিন্তু ভ্রমণের ইচ্ছেটা বলতে গেলে এক প্রকারে মারা গেল। উলটো ঘরভর্তি হয়ে গেছি, বড্ড বেশি। টিভিতে কিংবা পেপারে ভাল কোন জায়গার সন্ধান পেলে ভাবি, হ্যাঁ ঘুরতে যাব। কিন্তু সেটা ঐ অতটুকুই, এর বেশি না। ভার্সিটিতে ভর্তি হবার পর বেশ ভাল একটা বন্ধ পেয়েছিলাম। এহ্‌সানের সাথে প্ল্যান করা ছিল, বাইরে ঘুরতে যাব – কক্সবাজার, নিঝুম দ্বীপ, সেন্টমার্টিন। সে অবশ্য সিলেটে ঘুরতে যাবার পক্ষপাতী ছিল বেশি। তাকে আমি ভাল করে বুঝাতে পারিনি, এতদিনের ক্লান্তিভাবটা কাটাবার জন্য সমুদ্রের নিরন্তর আছড়ে পড়া ঢেউয়ের কোন বিকল্প নেই।



শেষ পর্যন্ত এ প্ল্যানটাও ভেস্তে যায়। কারণ হিসেবে সামনে আসে ব্যস্ততা আর ব্যস্ততা, কারোরই ভালমত সময় মিলে না। ফলে সেটা ভবিষ্যতের জন্য জমা হয়ে যায়। যদি কখনো যাই ... ...





(চলবে)

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ৩১ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ৮:৪০

অপ্‌সরা বলেছেন: বাস্তব ব্যাস্ততা কত স্বপ্নকেই বিনষ্ট করে দেয়!!!

০১ লা আগস্ট, ২০১৪ ভোর ৪:২৭

ধৃষ্টদ্যুম্ন বলেছেন:

:)

হ্যাঁ, সেটাই। ভাগ্যিস, স্বপ্ন নষ্ট হলেও আবার তা গড়ে উঠে নতুন কিছুকে আঁকড়ে ধরে ... না হলে বাঁচাই মুশকিল হয়ে যেত!

ধন্যবাদ ব্লগার 'অপ্সরা', আমার ব্লগে প্রথম কমেন্ট করার জন্য। :)

২| ০৩ রা আগস্ট, ২০১৪ রাত ১২:৫৩

মহামহোপাধ্যায় বলেছেন: একই শিরোনামে একটা বই আছে পড়ে দেখতে পারেন। আশা করি হতাশ হবেন না।

স্বপ্নেরা ফিরে ফিরে আসুক বারবার। ধরা দিক এই কামনা করি।

হ্যাপি ব্লগিং :)

০৩ রা আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১২:৪৪

ধৃষ্টদ্যুম্ন বলেছেন:
:)

হ্যাঁ, বইয়ের কথাটা জানি। এখনো পড়িনি, তবে ভবিষ্যতে পড়বার ইচ্ছে আছে।

ধন্যবাদ ব্লগার মহামহোপাধ্যায়। :)

৩| ০৩ রা আগস্ট, ২০১৪ রাত ১:৪৮

এম. এ. হায়দার বলেছেন: প্রশংসনীয় উদ্যোগ... চলুক।

০৩ রা আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১২:৪৬

ধৃষ্টদ্যুম্ন বলেছেন:

:)

কমেন্টের জন্য ধন্যবাদ ব্লগার এম. এ. হায়দার।

৪| ১০ ই আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ২:২৭

খাটাস বলেছেন: আমি যদি ভুল না করি, গ্রানাডো আর ফুজারের গল্পের সাথে আপনার আত্তকথন টা চমৎকার ভাবে উপস্থাপন করেছেন।
ভাল লাগা। আরও লিখুন। শুভ কামনা।

১২ ই আগস্ট, ২০১৪ সকাল ১১:৫৩

ধৃষ্টদ্যুম্ন বলেছেন:
:)

আমি দুঃখিত, দুই দিন দেরিতে রিপ্লাই দেবার জন্য।

ধ্ন্যবাদ আপনাকে ব্লগার খাটাস।

৫| ১৩ ই আগস্ট, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৪৭

লেখোয়াড় বলেছেন:
ভাল পোস্ট। ভাল লাগল।

১৩ ই আগস্ট, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৫৪

ধৃষ্টদ্যুম্ন বলেছেন:

:)


ধন্যবাদ ব্লগার লেখোয়াড়!

৬| ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:৫৭

ইফতেখার রাজু বলেছেন: দারুণ লেগেছে..

০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৬ ভোর ৫:৪৩

ধৃষ্টদ্যুম্ন বলেছেন:



দেরিতে রিপ্লাইয়ের জন্য দুঃখিত! :)


পড়বার জন্য ধন্যবাদ ... !:#P

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.