নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ধুত্তোর!!

ধৃষ্টদ্যুম্ন

... ডানার রৌদ্রের গন্ধ মুছে ফেলে চিল!

ধৃষ্টদ্যুম্ন › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমার মোবাইল সমাচার ... [১ম খণ্ড]

০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:৩৩





তখন আমার সরকারি চাকুরে বাবা’র পোস্টিং পটুয়াখালিতে। কথা বলবার জন্য টেলিফোন ছাড়া আর কোন মাধ্যম নেই। এদিকে আমাদের পাশের ফ্ল্যাটের ডাক্তার আঙ্কেলের বাসায় একটা ল্যান্ডফোন ছিল। দরকারে সেখানেই বাবা কল দিত। মাঝেমধ্যে সেসব কল আসত রাত দশটার পর। আন্টি তখন কিছুটা বিরক্তিমাখা মুখে আমাদের ফ্ল্যাটে এসে কলিংবেল বাজাতেন। আমার মা উঠে গিয়ে দরজা খুলে চলে যেত, এরপর কথা সেরে আবার ফেরত আসত।



এমনিতে ডাক্তার ফ্যামিলির সাথে আমাদের কোন সমস্যা ছিল না। কিন্তু এই রাত-বিরেতের কলগুলো স্বাভাবিকভাবেই তাদের বিরক্ত করত। হয়ত তারা সেটা মুখে বলতেন না, কিন্তু হাবেভাবে স্পষ্ট বুঝা যেত। কিন্তু জরুরী কল আসলে সেটা ত আর এড়িয়ে যাওয়া যায় না! এই যখন অবস্থা, তখন আমার মা ঠিক করল একটা মোবাইল ফোন কিনবে।



তখন কেবল একবিংশ শতাব্দী শুরু হয়েছে। সাধারণ মানুষ মোবাইল সম্পর্কে টুকটাক জানে ঠিকই, কিন্তু আগুন দামের কারণে এই জিনিস একটা নির্দিষ্ট শ্রেণীর মধ্যে সীমাবদ্ধ। আমরা ঠিক ঐ শ্রেণীর মধ্যে পড়ি না। তাই মোবাইল সেট কেনা বেশ বিলাসিতার পর্যায়ে পড়ে। কিন্তু আমার মায়ের রোখ চেপে গেছে, পাশের ফ্ল্যাটের আন্টির সেই বিরক্তিমাখা অনুভূতির একটা সমুচিত জবাব না দেওয়া পর্যন্ত সে তেমন শান্তি পাচ্ছিল না। তাই যেখানে একটা ল্যান্ডফোন হলেই আমাদের হয়ে যায়, সেখানে একদিন মা ১৮ হাজার টাকা দিয়ে মোবাইল কিনে ঘরে হাজির হল।



জীবনের প্রথম মোবাইল সেট, আমি খুবই উত্তেজিত। বয়স তখন বেশ কম ছিল, প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। মা’কে বেশ কয়েকদিন আগে থেকেই নানা প্রশ্ন করে জর্জরিত করে ফেলছিলাম; যেমন, “আমি যদি ফোন করি তাহলে কিভাবে বুঝব যে অন্যজন ফোনটা ধরেছে?” আমার মা হেসে উত্তর দিত, “ঐপাশ থেকে তোমাকে ‘হ্যালো’ বলবে, তাহলেই তুমি বুঝবে।” এই প্রশ্নের পর আরেক প্রশ্ন, উত্তর পাবার পর আরেকটা ... ... কাছে তখন বাবা’কে পেতাম না। কারণ সে ঐ মুহূর্তে সংসারের ঘানি টানবার জন্য বাংলাদেশের অন্যপ্রান্তে অবস্থিত।



কম বয়সের অনেক স্মৃতিই আমার মনে নেই। সবাই যখন শৈশবের স্মৃতিচারণা করে, তখন সত্যিই আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকি। একটা দুঃখ কাজ করে মনে ... ওদের কি সুন্দর সব মনে আছে, আমার নেই কেন! এই 'ভুলোমন'-এর ব্যাপারটা ঘরে আসা প্রথম মোবাইল সেটের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য; তা কোন ব্র্যান্ডের ছিল, আমার মনে নেই। আসলে কখনো ঐভাবে লক্ষ্য করিনি ব্যাপারটা। শুধু মনে আছে, প্রথম সিমটা ছিল অ্যাক্টেলের (বর্তমানের রবি) এবং তা পোস্টপেইড ছিল। মাসে চার হাজার টাকা বিল আসা খুব কমন একটা ব্যাপার ছিল। আমার মা এই একগাদা অতিরিক্ত টাকা খরচের ব্যাপারে কিছুটা বিরক্ত হত। কারণ প্রায় প্রতিবারই বিল দেবার পর মা বিলপেপারটা নিয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সেটা বুঝার একটা চেষ্টা চালাত ... শেষে “কথা বলা কমাতে হবে” এই সিদ্ধান্তে এসে উঠে চলে যেত।



ব্র্যান্ডের নাম মনে করতে না পারলেও মোবাইল সেটটা কেমন ছিল দেখতে, তা আমার মনে আছে। মাথায় একটা ছোট্ট অ্যান্টেনা ছিল, দুই-তিন ইঞ্চের একটা ডিসপ্লে ছিল, তার নিচেই দুপাশে দুইটা বড় বাটন ছিল সবুজ আর লাল রঙের। এরপর নাম্বারপ্যাড। পুরো প্যাডটাই সম্ভবত রবারের তৈরি ছিল, টিপে বেশ আরাম পেতাম। মনে আছে, একদিন কোন কারণে লাল রঙা কী’টা বেশ কিছুক্ষণ চেপে রেখেছিলাম। কিছুক্ষণ পর দেখি মোবাইল পুরোপুরি অফ হয়ে গেছে, যতই কী চাপি না কেন কিছুই শো করে না। আমি ত খুবই ভয় পেয়ে গেলাম, কেঁদে-কেটে অস্থির। ভেবেছিলাম মোবাইলটা বুঝি নষ্ট করে ফেলেছি। তখন মা ছিল বাথরুমে। পরে সে এসে আবার একই বাটন কিছুক্ষণ চেপে ধরে মোবাইলটাকে ঠিক করে ফেলল, আবারও কী প্যাডে সুন্দর করে লাইট জ্বলছে, টুকটুক করে লেখাগুলো ডিসপ্লে ফুটে উঠছে ... পুরোই ম্যাজিক!



এই মোবাইলটা আমরা ব্যবহার করেছিলাম সম্ভবত ২০০৫ সাল পর্যন্ত। এরপর চিরতরে তাকে বিদায় জানানো হয়। এর মাঝেই অবশ্য আরেকটা সেট আমরা নিয়ে ফেলি, নকিয়া ৩৩১০। এটা নিই সম্ভবত ২০০৩ সালের দিকে। মূল কারণ দুইটা ছিল – এক, নাম ভুলে যাওয়া প্রথম সেটটা মাঝেমধ্যে ডিস্টার্ব দিত। এর হাত থেকে তাই রেহাই পেতে হবে; দুই, তখন ৩৩১০ খুব জনপ্রিয়। মোটামুটি সব কর্মকর্তার হাতে এই জিনিস শোভা পায়। তাই কিনলে স্ট্যাটাস রক্ষে পাবে, অনেকটা এমন চিন্তাভাবনা থেকে কেনা। তা সেই স্ট্যাটাস কেমন রক্ষা হয়েছিল, আমার জানা নেই। কিন্তু মোবাইলে হাত পাকানোর ক্ষেত্রে এই সেটটা খুব কাজে দিয়েছিল। সহজ করে সব গুছানো, একটু ধৈর্য ধরলেই শেখাটা কঠিন কিছু না।



আর এই সেটে একটা জিনিস ছিল, যেটা আমি প্রথম সেটটায় পাইনি – গেইম! ততদিনে ভিডিও গেইমের দোকানে যাওয়া ছেড়ে দিয়েছি। কিন্তু রক্তের কোটি কোটি শ্বেত-লোহিত কণিকায় গেইমের উন্মাদনাটা রয়ে গেছিল। সেটা মেটায় ৩৩১০, তার বিখ্যাত ‘স্নেইক’ গেইমটা দিয়ে। কত সময় যে এটার পেছনে নষ্ট করেছি ... ! সব অবশ্য বিফলে যায়নি, মোটামুটি দক্ষতা অর্জন করেছিলাম।



৩৩১০ সম্ভবত আমি প্রথম দেখি ছোট মামা’র কাছে। আমরা যখন প্রথম মোবাইল সেট কিনি, তখন আমার নানাবাড়ি কিংবা খালাদের কেউ সেটা কেনবার কথা চিন্তাও করত না। কিন্তু বছর ঘুরতে না ঘুরতেই ছোট মামা একটা সেকেন্ডহ্যান্ড মোবাইল কিনে ফেলে। কয়েকদিন পর সেটা চেইঞ্জ করে আরেকটা। এভাবেই একসময় তার হাতে ৩৩১০ চলে আসে। তখনো আমাদের ফ্যামিলি সেই আঠারো হাজারের মোবাইলে পড়ে আছে। মামা তার মোবাইল ধরতে দিত না কাউকে, খুব জরুরী হলে তাকে রিচার্জের টাকা দিতে হত। এর বিনিময়ে সে তার মোবাইল ব্যবহার করতে দিত।



বড় মামা তখন কুমিরায় চাকরি করে। ব্যাচেলার মানুষ, মেসে থাকে। সপ্তাহে একবার নানাবাড়ি আসে। সাথে নিয়ে আসে নানা ধরনের অদ্ভুত কাহিনি। কোন স্টেশানে নাকি লাশ ঝুলে থাকে, রাতের বেলা ভূতেরা ‘হিহিহি’ করে বের হয়, ডাকাতেরা ধারালো অস্ত্র নিয়ে আক্রমণ করে – এসব উলোটপালোট কাহিনি। এগুলার পাশাপাশি সে আমার মা’কে একধরনের ছোট্ট মোবাইল কেনার ব্যাপারে সবসময় পরামর্শ দিত, দৈর্ঘ্যে যেটা বেশি হলে দেশলাই বাক্সের মত হবে। আমাকে লোভ দেখাত সেটা দিয়ে নাকি আমি ‘গাড়ি’, ‘গাড়ি’ খেলতে পারব। পরে সে নিজেই একটা মোবাইল কিনে ফেলে – কিন্তু না, সেটা কোন দেশলাই বাক্স ছিল না। ছিল টাচস্ক্রিন সম্বলিত একটা দারুণ সুন্দর মোবাইল যেটা কিনা স্টিক দিয়ে অপারেট করতে হত। জিনিসটা সেকেন্ডহ্যান্ড হলেও সবাই অমন ‘স্মার্ট’ মোবাইল দেখে বেশ খুশি হয়; বড় মামার ওজনটাও সেই সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ে।



মামার এই মোবাইলে দাবার একটা গেইম ছিল, যেটার প্রতি আমার সাংঘাতিক লোভ ছিল শুরু থেকেই। তখন সদ্য দাবা শিখেছি, বাবাকে হারাবার কথা দুঃস্বপ্নেও ভাবতে পারি না। মনের মধ্যে ছোট্ট আশা, জয় না হলেও মোবাইলের দাবার সাথে একটা ফাইট অন্তত দিতে পারব। সেই আশা আমার কদাচিৎ পূরণ হত, কারণ মামা তার অত্যধিক পছন্দের এই মোবাইল সহজে কাছ-ছাড়া করতে চাইতেন না। তবে ছোট খালার বিয়ের সময় হাসিমুখেই আমাকে সেটটা দেন যাতে আমি খেলতে পারি ...



(চলবে)

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৮:৩৪

প্রফেসর মরিয়ার্টি বলেছেন: তখন সদ্য দাবা শিখেছি, বাবাকে হারাবার কথা দুঃস্বপ্নেও ভাবতে পারি না। মনের মধ্যে ছোট্ট আশা, জয় না হলেও মোবাইলের দাবার সাথে একটা ফাইট অন্তত দিতে পারব। সেই আশা আমার কদাচিৎ পূরণ হত, কারণ মামা তার অত্যধিক পছন্দের এই মোবাইল সহজে কাছ-ছাড়া করতে চাইতেন না।


সুন্দর স্মৃতিচারণ। পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।

০৬ ই মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৩:১৬

ধৃষ্টদ্যুম্ন বলেছেন:

ধন্যবাদ ব্লগার মরিয়ার্টি। আপনার কারণেই অনেকদিন পর নিজের লেখা পোস্টটা চোখে পড়ল। সেজন্য রিপ্লাই দিতেও লেট হয়ে গেল ...

দুঃখিত সেজন্য! :)

২| ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:৩৮

কালীদাস বলেছেন: ভাল লাগল :) পরের পার্ট??

২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৪০

ধৃষ্টদ্যুম্ন বলেছেন:




আরে বাহ্‌! স্বয়ং কালিদাস যে! কী সৌভাগ্য!! :-B

পরের পার্ট পরের বছর হবে নে। কথা দিলাম। |-)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.