![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
১.
দোকানদার প্রথমেই একটা বেড়ে প্রশ্ন করে বসল ...
“আসল বই কিইন্যা কী করবেন?”
আমি তার দিকে খানিকটা সরু চোখে তাকিয়ে রইলাম। ব্যাটার মতিগতি ঠিক বুঝা যাচ্ছে না।
সে তার মত করে গম্ভীরভাবে বলতে থাকলো, “ইন্ডিয়ান বাংলার যত বই আছে, তার মধ্যে কেবল আনন্দ পাবলিশার্সের বাঁধাই-ই সবচেয়ে ভালো। অন্যগুলো অত টেকসই না। দু-তিনদিনেই ছিঁড়ে যায়, এমন অবস্থা।”
আচ্ছা! এতক্ষণে ক্লিয়ার হল। দোকানদারের নিজস্ব বইয়ের তাকে যে পাইরেটেড বইজোড়া আছে, তা আমাকে গছিয়ে দেওয়ার চেষ্টা। কিন্তু তা ত হবার নয়! এই যে আমি গোটা টিএসসির ফুটপাত ছেড়ে, নীলক্ষেতের রঙিন বইয়ের প্রলোভন উপেক্ষা করে কিংবা ইন্টারনেট ভর্তি ই-বুকের মায়া ত্যাগ করে নিউমার্কেটে এসেছি কেবলই ‘আসল’ কপির আশায়, তা কি ব্যাটা বুঝে না? নাকি বুঝেও না বুঝার ভান!
আমি মাথা নেড়ে বললাম, “না ভাই, আমার আসলটাই লাগবে। থাকলে দ্যান। না থাকলে চলে যাই।”
“আইচ্ছা দেখি দাঁড়ান” বলে দোকানি চলে গেল। কিছুক্ষণ পর প্রথম পার্টটা হাতে নিয়ে এসে বলল, একটাই পাইলাম। চলবে? বাকিটা ঐ দেশিটাই নিয়া যান!
নাহ্, হবে না – বলে বের হয়ে এলাম। বাইরে বেশ গরম। গ্রীষ্মকাল শুরু হয়ে গেছে। তার উপর দুপুরের কড়া রোদ। এখন মিডিয়াম সাইজের হোয়াইট বোর্ডটা হাতে ধরে সিএনজি যোগাড় করতে হবে। বাসায় যাবার সময় হয়ে গেছে।
সেদিন আর হল না। পরে আজিজ সুপার মার্কেটের ‘তক্ষশিলা’য় ঢুঁ মারতেই পেয়ে যাই।
“কড়ি দিয়ে কিনলাম হবে?”
চশমা পরা এক সম্ভ্রান্ত মহিলা বসে আছেন। কিছু একটা লিখছিলেন। মুখ তুলে বললেন, “বিমল মিত্রের? হ্যাঁ হবে।” এরপর অ্যাসিস্টেন্টকে ডাকাডাকি করে বই বের করা হল। লাল রঙা দুইটা বই। উপরে হলুদের মধ্যে লেখকের নাম আর শিরোনাম লেখা। আর নীচে শাড়ির পাড়ের মত হলদে একটা পাড়। আর নামের সার্থকতার জন্য গোটা কয়েক কড়ি ছিটোনো।
এই-ই বেশ। জানতাম যে ‘মিত্র অ্যান্ড ঘোষ’ বই বাঁধাইয়ে ‘আনন্দে’র মত পারবে না। একটু হালকা, দূর্বল হবেই। তবুও নিউমার্কেটের স্মৃতি টাটকা থাকায় জিজ্ঞেস করে নিলাম, “আসল ত?”
সম্ভ্রান্ত মহিলা দ্রুতবেগে মাথা নেড়ে বললেন, “হ্যাঁ হ্যাঁ, একদম আসল।” তাঁর কথার যৌক্তিকতা টের পেলাম বিলটা হাতে নিয়ে। দাম চার অঙ্কে পৌঁছে গেছে!
দুঃখ করার কিছু নেই। আসল বই পড়ার কিংবা ধরার যে সূক্ষ্ম সুখানুভূতি, তা আমি দেশিগুলাতে পাব না। তার উপর যে বই পড়ার জন্য হুমায়ূন আহমেদকে রীতিমত খাটের তলায় শুয়ে অন্ধকারে চোখ ব্যথা করতে হয়েছে, তার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা ত লাগবেই।
আমি অতি যত্নের সাথে বই দুইটা ব্যাগে ঢুকিয়ে নিলাম।
২.
‘গল্প’টা মূলত দীপঙ্করের। সেই সাথে দুই নারীর – লক্ষ্মীদি ও সতী। পার্শ্বচরিত্রে আছে মিঃ ঘোষাল এবং নয়নরঞ্জিনী দাসী।
জন্ম বর্ধমানের কোন গ্রামে হলেও দীপঙ্করের বেড়ে ওঠা কলকাতায়, উনিশের একের বি ঈশ্বর গাঙ্গুলী লেনে। বিধবা মা স্বামী হারিয়ে সেই কবে এসে জুটেছিল অঘোরদাদুর বাসায়। এরপর থেকে এখানেই রান্নাবান্নার কাজ। তার বদলে থাকা-খাওয়ার বন্দোবস্ত। বিপত্নীক অঘোরদাদু বর্ণে-পেশায় ব্রাহ্মণ। পূজোয় ফাঁকি মেরে যজমানদের কাছ থেকে জিনিসপাতি এনে জমানোটাই তাঁর মূল কাজ। তাঁর মতে, “কড়ি দিয়ে সব কেনা যায়রে মুখপোড়া!” তাই কড়ি জমানোই সই।
অঘোরদাদুর বাড়িতেই একদিন ভাড়াটে হয়ে এলো কাকাবাবুরা। সাথে লক্ষ্মীদি। রোজ রাতে ঘুঙুরের ধ্বনি শুনে একদিন দিপু গিয়েছিল দেখতে। তখনই ধরা পড়া এবং লক্ষ্মীদির সাথে পরিচয়। বড্ড শাসনে রাখা লক্ষ্মীদিটা ভালোওবাসত তাকে। দিপুও তার জন্য প্রতি সকালে চিঠি নিয়ে যেত দাতারবাবুর কাছে। দাতারবাবুর ছাড়াও লক্ষ্মীদির কাছে শোনা যেত তার ছোটবোনের কথা, সতীর কথা। একদিন সেই সতীও বর্মা থেকে চলে এলো এই অঘোরদাদুর বাসায়। শুরু হল কাহিনী।
এরপর সতীর সাথে সখ্যতা, লক্ষ্মীদির বাড়ি ছেড়ে পালানো, সতীর ভালোবাসাকে উপেক্ষা করা, অতঃপর তার বিয়ে হয়ে যাওয়া। যেইসেই পরিবারে না, কলকাতার একেবারে উপরের স্তরের ধনবান পরিবারে। সেখানেই নয়নরঞ্জিনী দাসীর আবির্ভাব সতীর শাশুড়ি হিসেবে। আর বর হন সনাতনবাবু। যাঁর কিনা বই পড়া ছাড়া সারা দিনে কোন কাজ নেই। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবার বহু আগেই অ্যাডলফ হিটলারের সম্পর্কে তাঁর জানাশোনা ছিল – এমনই তাঁর জ্ঞানের বাহার।
ততদিনে দিপুবাবুর রেলঅফিসে চাকরি হয়ে গেছে। তেত্রিশ টাকার ঘুষে যার শুরু, নিষ্ঠাগুণে একদম উচ্চপদে চলে যাওয়া। অফিসে ফিসফাস শুরু হয়, “রবিনসন সাহেবের কুকুরকে বিস্কিট খাইয়ে সেন সাহেবের এ প্রমোশান!” শুরু হয় আরেক লণ্ডনফেরত অফিসার মিঃ ঘোষালের সাথে ব্যক্তিত্বের সংঘর্ষ। কিন্তু এসবের কিছুই দিপুকে কষ্ট দেয় না, যতটা মনঃপীড়া সে পায় তার ‘তেত্রিশ টাকার ঘুষ’-এর কথা মনে পড়লে। রেলঅফিসের দুর্নীতির শিকার গাঙ্গুলীবাবু যখন দারিদ্র্যের কষাঘাত সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করে, তখন দীপঙ্করের মন কেঁদে উঠে। প্রাণবন্ধু কিরণ যখন স্বদেশের টানে নিরুদ্দিষ্ট হয়, তখন তার বিধবা অসহায় মা-কে সাহায্য করবার জন্য দিপু ছুটে যায়। অর্থাভাবে লক্ষ্মীদির নৈতিক স্খলনে তার ঘৃণা হয়। এমন-ই তার সততা!
সেই দিপুর জীবনে আবারও সতীর আগমন ঘটে, যখন শাশুড়ির দাপট মেয়েটা সহ্য করতে পারে না। মিঃ ঘোষালের মত ধুরন্ধর ব্যক্তি সুযোগমত এবার তাদের মাঝে ঢুকে পড়ে। তখন শুরু হয় আরেক দ্বন্দ্ব। অদ্ভূত এই দিপু-সতীর ভালোবাসা! কত আঘাত, কত কষ্ট। তবুও পরস্পরের প্রতি ভালোবাসা কখনো মুখ ফুটে তারা বলে না। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যখন জাপানিরা কলকাতায় বম্বিং করে চলেছে, সেই ধ্বংসাত্মক রাতেও তাদের মধ্যকার প্রেম কেবল সৌজন্যতায় আটকে থাকে। সুযোগ পাওয়া সত্ত্বেও দিপু তাই সতীকে তার স্বামীর কাছে ফিরিয়ে দেবার চেষ্টা করে। একবার নয়, বারবার ... ...
সততার প্রকৃষ্ট উদাহরণ!
শেষমেষ আর কিছু জুটে না তার কপালে। সব ছেড়ে সে বাংলার জেলায় জেলায়, গ্রামে গ্রামে ঘুরতে থাকে। স্কুল-কলেজে পড়াতে থাকে। সেই থাকে চলতে থাকে তার লক্ষ টাকা ঋণের দাম মেটানো। কারণ সে কড়ি দিয়ে সুখ কিনতে চেয়েছিল। কিন্তু সম্ভব হয়নি। তবুও সে তার জীবনের মূল লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হয় না। তাই যখন ছাত্রদের থেকে সে বিদায় নেয়, তখন বলে উঠে W H Auden এর কবিতার লাইন ...
"All I have is a voice
To undo the folded lie
The romantic lie in the brain
Of the sensual man-in-the-street
And the lie of Authority
Whose buildings grope the sky:
There is no such thing as the State
And no one exists alone;
Hunger allows no choice
To the citizen or the police;
We must love one another or die."
এই-ই দীপঙ্করের জীবন, এই-ই ‘কড়ি দিয়ে কিনলাম’ ...
৩.
উপন্যাসের বিস্তৃতি মূলত প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ পর্যন্ত। ফলে তৎকালীন কলকাতা নগরীর অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার উল্লেখ এখানে আছে। দেশবন্ধুর মৃত্যু, জালিয়ানওয়ালা-বাগ হত্যাকাণ্ড ও রবীন্দ্রনাথের প্রতিবাদ, স্বদেশী আন্দোলন, কংগ্রেসের ভারত-ছাড় আন্দোলন, তেতাল্লিশের মন্বন্তর, কলকাতায় জাপানিদের বম্বিং, মিলিটারি কনট্র্যাক্টের মাধ্যমে কতিপয়ের আঙুল ফুলে কলাগাছ হওয়া ... কী নেই! এছাড়াও ইতিহাসখ্যাত রাশিয়ান বিপ্লব, থাইসেন-হিটলারের উত্থান, উইনস্টল চার্চিলের উল্লেখ কিংবা ঐদিকে সূর্যসেনের চট্টগ্রাম দখল – প্রসঙ্গান্তরে সবই এসেছে। ঈশ্বর গাঙ্গুলী লেনের মধুসূদনের রোয়াকে দুনিকাকা-পঞ্চুদা’রা যে আড্ডা বসাতেন, সেখানেই মূলত রাজনীতির নানা হাল-চাল ফুটে উঠত।
যেমন, সি আর দাশের মৃত্যুর পর –
“দুনিকাকা বলছে – মরে গেছে বেশ হয়েছে, ওসব চরকা-ফরকা কেটে কী লাভ হতো ভাই, চরকা কেটে আয়ার্ল্যান্ড স্বাধীন হয়েছে? না চরকা কেটে আমেরিকা স্বাধীন হয়েছে? বল্, বুঝিয়ে দে আমাকে?
মধুসূদনের বড়দা বললে – গান্ধীরই সুবিধে হলো জানলেন দুনিকাকা, গান্ধীর কথা প্রোটেস্ট করবার মত আর লোক রইল না কেউ –
পঞ্চুদা দাঁড়িয়েছিল। বললে – ও গান্ধী-ফান্ধীর কম্ম নয় বুঝলে হে, ছিল একটা বাঙালি সে-ও চলে গেল। এখন বুঝতে পারছেন না আপনারা, পরে বুঝবেন – দাঁত থাকতে তো দাঁতের মর্যাদা বূঝে না লোকে –
ছোনেদাও দাঁড়িয়েছিল একপাশে। বললে – এখন ঐ জে এম সেনগুপ্তই ভরসা। আমাদের সবেধন নীলমণি-
পঞ্চাদা কথাটা লুফে নিলে। বললে – আরে রাখ্ রাখ্, কার সাথে কার তুলনা! সেই কথায় বলে না হাতি ঘোড়া গেল তল্ ...
দুনিকাকা সবজান্তা মানুষ। তার এক-একটা কথার ফুৎকারে তা-বড় তা-বড় লোক নস্যাৎ হয়ে যায়। দুনিকাকা গোটা পৃথিবীটাকেই তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিতে ওস্তাদ, এক বৃটিশ গভর্নমেন্ট ছাড়া। সেই দুনিকাকা বললে – ওরে যার নাম আরশোলা তারই নাম ছারপোকা, ও তোদের সুভাষ বোসই বল্ আর জে এম সেনগুপ্তই বল্, এক-একটা টিপুনিতেই সব কুপোকাৎ - ”
তখনকার রাজনীতি নিয়ে সাধারণ মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি এমন ঘরোয়াভাবে ফুটিয়ে তোলার ব্যাপারটি ইতিহাসপ্রিয়দের জন্য নিঃসন্দেহে এক বিশাল পাওয়া।
৪.
বাল্মীকির রামায়ণ-ই যে ‘কড়ি দিয়ে কিনলাম’-এর মূল অনুপ্রেরণা, তা বিমল মিত্র প্রথমেই বলে নিয়েছেন। তাঁর মতে, সমাজের বিভিন্ন স্তরে এখনো রামায়ণের চরিত্রগুলো বিরাজ করছে। এখনো এ সংসারে সীতা-হরণ হয়, সীতার বনবাস কিংবা পাতাল প্রবেশ – সবই অহরহ হচ্ছে। এসবই লক্ষ্মীদি, দীপঙ্কর, সতী কিংবা ঘোষাল সাহেবের মাধ্যমে আমরা উপন্যাসে দেখি। তবে উপন্যাসের শুরু মহাভারতের অনুকরণে। শেষ দিয়ে শুরু করা।
১৯৬২ সালে প্রথম ‘কড়ি দিয়ে কিনলাম’ প্রকাশ পায়, তখন-ই তা গোটা ভারতবর্ষের বৃহত্তম উপন্যাস হিসেবে স্বীকৃতি পায়। শুরুটা হয়েছিল ‘দেশ’ পত্রিকার মাধ্যমে, যা কিনা বাংলা সাহিত্যের বহু শক্তিশালী লেখকের জন্মদাতা। পত্রিকাটির সম্পাদক সাগরময় ঘোষ নাকি প্রথম খণ্ড হাতে নিয়ে লেখককে বলেছিলেন, “বইটি হাতে নিয়ে অনুভব করলাম কী বিরাট কীর্তি আর কী অসাধ্যসাধনই না করেছেন। এরপর আছে দ্বিতীয় খণ্ড।”
এখন বৃহত্তম হলেই যেমন ‘এপিকধর্মী’ খেতাব পাওয়া যায়, তেমনি নানা বাঁকা কথাও সহ্য করতে হয়। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের সম্পর্কে যেমন বলা হয়, বাংলা সাহিত্যে তাঁর মত বেশি কাগজ আর কেউ নষ্ট করেননি। তেমনি এক লেখকও নাকি ‘কড়ি দিয়ে কিনলাম’ সম্পর্কে বলেছিলেন, তিনি চাইলে এই হাজার পৃষ্ঠার বইকে আড়াইশোতে নামিয়ে আনতে পারবেন। তারমানে এতে ‘বাজে বকবক’ অনেক বেশি। কথাটা খানিকটা হলেও সত্য বটে। কারণ গোটা উপন্যাসটাই দীপঙ্কর-সতী-লক্ষ্মীদিতে এতটা পরিপূর্ণ যে কোন কোন অংশে একঘেয়ে লাগাটা অস্বাভাবিক না। আমার মনে আছে, আমি প্রথম একশ পৃষ্ঠা পড়তে গিয়ে প্রায় এক মাস কাটিয়ে দিয়েছিলাম। পরে অবশ্য পড়ার গতি বৃদ্ধি পেয়েছে। কাজেই ‘সবুরে মেওয়া ফলে’-তে বিশ্বাস রেখে ক্রমাগত পড়ে যাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।
এই বাহুল্যতার কথা ভেবেই সম্ভবত এক লেখক প্রকাশককে বলেছিলেন, বইটা তেমন বিক্রি হবে না। কিন্তু সেসব কিছু হয়নি। বই প্রকাশিত হয়েছে, বিক্রি হয়েছে দেদারসে, রবীন্দ্র পুরস্কার পেয়েছে, বিভিন্ন ভাষায় অনুদিত হয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা, মানুষের ভালোবাসা পেয়েছে। কোন এক হিন্দিভাষীর অনিদ্রা রোগ দূর হয়েছে এ উপন্যাস পড়ে। ডাবল মিনিংয়ের সুযোগ আছে যদিও, তা সত্ত্বেও লেখক এতে অনুপ্রাণিতই হয়েছে।
এসবই তাঁর ‘মুখবন্ধে’ লেখা।
৫.
গত বছর বলতে গেলে অনেক লেখকের বই-ই পড়তে হয়েছে যেখানে লেখক পরিচিত হলেও তাঁর লেখার সাথে প্রথম পরিচয়। সে হিসেবে তারাশঙ্করের ‘কবি’ যেমন আসে, তেমনি হাওয়ার্ড অ্যান্টনের ক্যালকুলাসও আসে। আর নতুন সেমিস্টারের চোথা লেখকগুলো ত আছেই। কিন্তু দিনশেষে বিমল মিত্রের ‘কড়ি দিয়ে কিনলাম’ বেছে নেওয়া কারণ উপন্যাসের সাথে ‘রিলেট’ করার ব্যাপারটা এর ক্ষেত্রেই বেশি হয়েছে। বিশেষ করে দীপঙ্করের সংগ্রাম, সততার সাথে আপোষহীন মনোভাব, সঠিক মানুষ সমাজে খুঁজে বেড়ানো অথবা মানুষকে ভালোবেসে তাদের ঘিরে বাঁচার ব্যাপার ... এ ব্যাপারগুলো মনে সহজেই দাগ কেটে যায়। আমার ত মনে হয়, জীবনে যারা ভালোভাবে, ভালোবেসে বাঁচতে চায় এমন মানুষেরা দিপুর মাঝে নিজেদের ছায়া খুঁজে পাবেই। উপন্যাসের আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তাও সেদিকে ইঙ্গিত করে। আর ‘কড়ি দিয়ে কিনলাম’-এর সার্থকতা এখানেই!
‘আমার ভালো লেগেছে, বইটি পড়বেন’ – এ ধরনের কথা ক্লাসিক উপন্যাসের রিভিউ শেষে বলাটা হাস্যকর ঠেকে। তাই ওটা বলতেও চাই না। তবে দু-একটা ব্যাপারে একটু নজর দিতে বলি। প্রথমত, যদি পশ্চিমবঙ্গের আসল প্রিন্ট কিনে পড়েন তাহলে একটু সাবধানে থাকবেন। কারণ প্রথম পার্টে কিছু পেইজ মিসিং। তখন আমায় বাধ্য হয়ে ই-বুক নামাতে হয়েছিল। আর দ্বিতীয়ত, উপন্যাসে শেষে ডঃ শ্রীকুমার বন্দোপাধ্যায়ের ‘নির্ঘণ্ট’ নামক যে সাধুভাষায় রচিত রিভিউখানি আছে, তা ভুলেও পড়বেন না। অন্তত উপন্যাস শেষ হবার সপ্তাহখানেকের মধ্যে ত নই-ই। কারণ অত্যন্ত কঠিন ভাষার লেখাটি সাথেসাথে পড়লে উপন্যাসের ঘোর কেটে যেতে বাধ্য। কাজেই সাবধান!
আর শেষে বলতে চাই, বিমল মিত্রের লেখার জাদুর সাথে পরিচিত হবার পরপরই কিন্তু তা থেমে যায়নি। প্রমাণ বুলশেলফে থাকা ‘একক দশক শতক’ বইখানি! শীঘ্রই পড়া হবে আশা রাখি। আপাতত সুনীলের ‘পূর্ব-পশ্চিম’ নিয়ে আছি। ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হচ্ছে, কড়ি দিয়ে কিনলামের টাইমলাইনের ঠিক পরপরই সুনীলেরটা শুরু।
যাই হোক, হ্যাপি রিডিং!
©somewhere in net ltd.
১|
২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৩:৪৩
রেজওয়ানা আলী তনিমা বলেছেন: চমৎকার রিভিউয়ের জন্য ধন্যবাদ।আপনাদের মত নিবেদিত পাঠকদের জন্যই লেখক টিকে থাকেন। আমি তো ধার নিয়ে কাজ চালিয়ে অভ্যস্ত!