নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শেষ খেয়া

শেষ খেয়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

অবেলার ভালবাসা

২৮ শে জুন, ২০১৫ রাত ১:২২

প্লিজ, আপনি আমার কাছে আসবেন না "
বিয়ের প্রথম রাতে নিজের বৌয়ের মুখ থেকে এই রকম
কথা শুনে বিশাল একটা ধাক্কা খাওয়ার কথা
আমার,কিন্তু আমি খুব স্বাভাবিক ভাবেই কথাটা
নিলাম। কারণ এই রকম কিছু একটা হবে সেটা আমি
আগেই আঁচ করতে পেরেছিলাম তাই এই অবস্থার জন্য
মোটামুটি মানসিক প্রস্তুতি ছিলো আমার। তার কথা
শুনে আমি বরং একটু হাসলাম। আস্তে আস্তে মাথার
টোপর খুলে ড্রেসিং টেবিলের উপর রেখে বিছানা
থেকে বালিশটা নিয়ে সোজা চলে গেলাম বারান্দায়।
দরজা টেনে দিলাম যাতে ও ঘুমাতে অস্বস্তি বোধ না
করে। হেলান দিয়ে বসে আছি বারান্দায়। নিশুতি
রাত,বাইরে অপূর্ব জ্যোৎস্না সাথে ঝিঁঝিঁ পোকার
বিরামহীন আহাজারি। আসলে সবকিছু মিলিয়ে ঠিক
কোন অবস্থানে আমি আর সামনে কি হতে যাচ্ছে তা
বোধগম্য হচ্ছেনা আমার। আমার ঘর, আমার সব অথছ
আমাকেই এখন বারান্দায় ঘুমাতে হচ্ছে, বড্ড হাসি
পাচ্ছে। সমগ্র ঘর জুড়ে এখন এই অপরিচিতার রাজত্ব, হ্যাঁ
অপিচিতাইতো সে। আচ্ছা আদৌ কি সে রাজত্ব করতে
চাইবে? নিজের করা প্রশ্নের কোন উত্তর দিলোনা মন।
ভীষন ক্লান্ত আমি অথছ ঘুমাতে পারছিনা। অবশ্য কিচ্ছু
করারও নেই, এখন এই রুমের বাইরে যাওয়া কোন ভাবেই
সম্ভব নয়। আমাদের বিয়েটা সম্পূর্ণ ঘরোয়া পরিবেশে
হলেও কিছু মেহমান বাড়িতে এসেছেন, উনারা আমাকে
বাইরে দেখলে কি ভাববেন।দয়া করে কপি করবে না। এটা বর্তমানে কপি করে আনা।
হুট করে বিয়ে করা আমার স্ত্রী রূপে যে মেয়েটার এখন
আমার পুরো সাম্রাজ্য শাসন করার কথা তার নাম
মৌমিতা। নামের মতই অদ্ভুত রকমের সুন্দর সে, চোখ দুটো
তার ভীষন মায়াময় তা ছবি দেখে বুঝেছি। ছবিতে তার
ঠোঁটের বাম দিকের ছোট্ট তিলটাও আমার চোখ এড়াতে
পারেনি। কিভাবে পারবে? কারণ আমার কাছে মনে
হয়েছে, এই তিলটাই তার সৌন্দর্যের পূর্ণতা এনে
দিয়েছে সম্পূর্ণ রুপে। আচ্ছা তার চুল গুলো কতটুকু লম্বা
হবে? সে হাসলে কি তার গালে টোল পড়ে? প্রচুর
জানতে ইচ্ছে করছে।
[ ২ ]
মৌমিতাদের বাড়ি হচ্ছে আমাদের পুরনো বাড়ীর
কাছাকাছি। মফস্বল এড়িয়ায় আমার বেড়ে উঠা, দুই
ভাইয়ের মধ্যে আমি ছোট। ছোট বেলায় বাবা মারা যান,
তারপর নিজের চোখে দেখেছি আমাদের দুই ভাইকে
নিয়ে মায়ের সংগ্রাম। বর্তমানে ভাইয়া উনার পরিবার
নিয়ে অস্ট্রেলিয়া আছেন প্রায় ৬ বছর। বাড়িতে আমরা
দুই ভাই আর মা থাকতাম। মৌমিতারা ঠিক কবে
আমাদের পাড়ায় আসেন সেটা মনে নেই আমার তবে
প্রায় দিন বিকেলে মৌমিতার মাকে আমাদের বাসায়
দেখা যেতো। উনি নাকি মায়ের স্কুল জীবনের বান্ধবী
ছিলেন। আমি তখন ইন্টার শেষ দিকে পড়ি, ভালো
রেজাল্ট করতে হবে, ভালো ভার্সিটিতে চান্স পেতে
হবে। সারা দিনরাত স্যারের বাসা আর পড়া নিয়ে
থাকতাম। মৌমিতাকেও প্রায় সময় দেখা যেতো
আমাদের বাসায় কিন্তু কখনোই কথা বলা হয়নি তার
সাথে, খুব একটা প্রয়োজন না থাকলে আমি কারো
সাথে তেমন একটা কথা বলতাম না। আসলে আমি একটু
ঘরকুনো টাইপ ছেলে ছিলাম অবশ্য আজো এর থেকে খুব
বেশি একটা উত্তরণ ঘটেনি আমার। তারপর ভাইয়ার
স্কলারশিপ হয়ে যায় আর আমিও জাহাঙ্গীরনগরে চান্স
পাই। বাড়িতে মাকে একলা রেখে আসা কোন উপয়ায়েই
সম্ভব ছিলোনা তাই পুরনো বাড়ি বিক্রি করে আমরা
ঢাকায় চলে আসি তাও প্রায় ৬ বছর। তারপর থেকে
মৌমিতাদের সাথে কোন যোগাযোগ ছিলো না কিন্তু
কয়েকদিন আগে মা হঠাৎ করেই আমাদের পুরনো
এলাকায় যাওয়া কথা বলেন,কারণ মৌমিতার মা নাকি
অনেক অসুস্থ। অনেক দিন যাওয়া হয়না তাই আমিও
রাজি হয়ে যাই। তারপর যা হলো তার জন্য আমি মোটেও
প্রস্তুত ছিলাম না। মৌমিতার মাকে দেয়া আমার
মায়ের কথা অনুযায়ী বাধ্য ছেলের মতো মৌমিতাকে
বিয়ে করতে হলো আমার। অথছ আমার প্ল্যান ছিলো আর
দুই বছর পর বিয়েটা করার। বিয়ের আগে মৌমিতার সাথে
মাত্র একবার কথা বলেছিলাম,
" ভালো আছেন? "
" শুনেন, আপনাকে স্পষ্ট করে বলি। আমি একটা ছেলেকে
প্রচন্ড ভালোবাসি আমি তাকেই বিয়ে করবো।"
" জ্বী, কিন্তু এই বিয়ে?"
" আমার মা অসুস্থ, তাই আমি যাস্ট মায়ের ইচ্ছা পুরনের
জন্য আপনাকে বিয়ে করতে যাচ্ছি। মা সুস্থ হয়ে গেলে
আমরা আলাদা হয়ে যাবো "
আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম, লাইন কেটে গেলো। আর কোন
কথা হয়নি, ভারি মিষ্টি গলা মেয়েটার। আরেকটু কথা
বলতে ইচ্ছে হচ্ছিলো আমার কিন্তু সবকিছুর উর্দ্ধে তখন
আমি কি করবো তা ঠিক বুঝতে পারছিলাম না। মাকে
কথাটা কি বলা ঠিক হবে? মা যদি মৌমিতার মাকে
বলে দেন তখন কি হবে? উনি ভীষন অসুস্থ, আর এই
ব্যাপারটা শুনে পরে যদি উল্টা পাল্ট কিছু হয়ে যায়
তবে? তাই ব্যপারটা চেপে গেলাম। ভাবলাম এরকম
রিলেশন থাকতেই পারে, বিয়ের পরে হয়তো ঠিক হয়ে
যাবে।
[ ৩ ]
" আর কতো ঘুমাবে? উঠো এখন। দেখোনা কতো সুন্দর রোদ
উঠেছে "
মৌমিতা মাত্রই গোসল করে বারন্দায় এসেছে, ভেজা
চুলের যেনো এক অপ্সরীকে দেখছি,কিন্তু মুখটা অস্পষ্ট
তার। ঠিক তখনই মোবাইলের শব্দে ঘুমটা ভেঙ্গে গেলো,
এতক্ষণ স্বপ্ন দেখছিলাম। রাতে ফোন অফ করেই ঘুমিয়ে
ছিলাম,এটা এলার্মের শব্দ। প্রতিদিন গদবাধা
নিয়মানুযায়ী ৭ টায় আমাকে উঠতে হয়, তারপর অফিস।
রাতে কখন ঘুমিয়েছি ঠিক বলতে পারিনা। আশে পাশে
কিছু মশার উপস্থিতি লক্ষ করলাম,উনাদের আকৃতি ঢোল
থেকে কোন অংশে কম নয়। দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকতেই
মৌমিতা চোখে পড়লো। গুটিশুটি হয়ে শুয়ে আছে সে। খুব
নিঃশব্দে দরজাটা এটে দিয়ে জানালার পর্দা টেনে
দিলাম। একটু ঘুমাক বেচারি, সারা রাত হয়তো ঘুমায়নি।
আমি ফ্রেশ হয়ে নিচে নাস্তা করতে গেলাম। আমাকে
টেবিলে একা দেখে মা প্রশ্ন করলেন,
" বৌ মা কোথায়? "
" ও ঘুমাচ্ছে, ডাকার দরকার নেই। ঘুমাক আরেকটু "
মা আর কিছু বললেন না, আমি নাস্তা সেরে পাড়ার
মোড়ের দিকে গেলাম। অফিস থেকে ৭দিনের ছুটি
নিয়েছি, আজ ৪র্থ দিন। একটা সিগারেট কিনে চায়ের
স্টলের ভেতরে ঢুকলাম, হাতে পত্রিকা। আমাকে দেখেই
পাড়ার শায়েক ভাই বেশ বড়সড় ডাক ছাড়লেন,
" আরে তন্ময় ভাই যে, তা সারা রাত কেমন কাটলো? "
কথাটা বলেই ফিক করে হাসলেন তিনি। আমিও যোগ
দিলাম উনার সাথে।
" লজ্জা পাচ্ছেন কেনো। আরে মিয়া এই রাতের কথা
সারাজীবন মনে রাখবেন। হাজার চাইলেও ভুলতে
পারবেন না।"
আমি হেসে বললাম,
" তা অবশ্য বটে "
দুপুরে বাসায় ফিরে দেখি হুলস্থুল ব্যাপার। ভাইয়া আর
ভাবী আমাকে না জানিয়েই চলে এসেছেন। ফ্লাইট
দেরী করায় গতকাল রাতে আসতে পারেননি । মা ভীষন
ব্যস্ত রান্না ঘরে। ভাইয়ার সাথে কথা বলে আমি আমার
রুমে গেলাম। রুমে ঢুকতেই দেখি ভাবী মুখ কালো করে
বসে আছেন পাশেই মৌমিতা। তবে কি মৌমিতা সব বলে
দিয়েছে? বুকটা কেঁপে উঠলো একবার। নিজেকে সামলে
নিলাম। ভাবী বললেন,
" কাল এসে পৌঁছানোর জন্য অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু
পারিনি। বড্ড খারাপ লাগছে"
" তাই বুঝি তোমার মন খারাপ ? "
প্রশ্নটা ছুঁড়ে দিয়ে একটু থামলাম আমি, তিনি বললেন,
" হ্যাঁ,আচ্ছা তুমিই বলো একমাত্র দেবরের বিয়েতে
থাকতে পারিনি মন খারাপ হবে না তো কি হবে?"
আমি হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম, তার মানে মৌমিতা কিচ্ছু
বলেনি ভাবী কে। অবশ্য বললে এতো সময়ে ভাবী
বিচ্ছিরি একটা অবস্থা তৈরি করতেন। আর যাই হউক
হয়তো মৌমিতাও # ব্যপারটা বুঝতে পেরেছে, চালাক
আছে মেয়েটা। আমাদের বিয়ের দুই দিন পর মৌমিতার
মা মার যান। আমাদের বাড়ীর সবাই যখন রিসিপশন
নিয়ে তোড়জোড় করছিলেন তখনি মৃত্যুর সংবাদটা এলো
। ভাইয়ার ইচ্ছে ছিলো রিসিপশনটা বড় করে দেয়ার
কিন্তু মৌমিতার মা মারা যাওয়ার ফলে কিছুই সম্ভব
হলো না। আসলে ভাগ্যদেবী সুপ্রসন্ন ছিলেন না আমার
প্রতি তাই অবলীলায় একের পর এক অঘটন গুলো মেনে
নিতে লাগলাম।
[ ৪ ]
" সারাদিন কিছু খান নি, কিছু একটা মুখে দিন। "
মৌমিতা নিশ্চুপ,আমি বলেই যাচ্ছি
" এভাবে না খেয়ে থাকলে অসুস্থ হয়ে যাবেন "
মৌমিতা চিৎকার করে উঠলো,
" আমাকে নিয়ে ভাবতে হবে না। আপনি যান এখান
থেকে "
" কিছু একটা মুখে দেন প্লিজ "
" কেনো বিরক্ত করছেন?"
আর কিছু বললাম না, চুপচাপ বারান্দায় চলে এলাম।
আমারই দোষ, কেনো মিছেমিছি বেচারিকে বিরক্ত
করতে গেলাম। এখন নিজের খারাপ লাগছে, আমি
বারান্দার গ্রীল ধরে দাঁড়িয়ে আছি। কারো পায়ের
শব্দে ঘুরে তাকালাম, তাকিয়ে দেখি মৌমিতা সে
বললো,
" আমি আপনার সাথে থাকা আমার পক্ষে অসম্ভব। দয়া
করে আমাদের ডিভোর্সের ব্যবস্থা করুন। আমি তূর্যের
সাথে কথা বলেছি এ ব্যপারে "
আমি কিছু বললাম না, নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে রইলাম। কি
বলার আছে, মেয়েটা তো আগেই আমাকে বলেছিলো।
তখন যদি না করতাম তবে হয়তো কিছু একটা হতো। আমি
ভেবেছিলাম, মৌমিতা হয়তো আমাকে মেনে নেবে
কিন্তু কিছুই হলোনা।
তার প্রশ্নে আমার চিন্তার ছেদ ঘটলো,
"কি হলো, কথা বলেন না কেনো? "
" আচ্ছা আমার অপরাধটা কি?"
মৌমিতা কিছু বললো না, রুমে চলে গেলো সে। আমি
সারাটা রাত জেগে রইলাম। চারিদিকের পরিবেশ খুব
নিরব থাকলেও বুকের ভেতর জটিল হিসেব নিকেশের
একটা মহাপ্রলয় চললো সারাটা রাত।
[ ৫ ]
" আপনি কি ভাবে জেনে শুনে এই কাজ করতে পারলেন? "
মৌমিতার লাভার তূর্যের কথায় আমি নির্বাক। সেই
কখন থেকে সে কথা বলে যাচ্ছে অবিরত,আমি শুধু
গিলছি।
" মৌমিতা মানা না করলে আমি আপনাকে খুন করতাম "
এবার আমি একটু হাসলাম। এই প্রথম বারের মতো উত্তরে
বললাম,
" আপনার কি মনে হয়, আমি কি এখনো খুন হয়নি? "
আমার প্রশ্নে বেচারা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো।
পাশে বসা মৌমিতার মধ্যেও ইতস্তত ভাব দেখতে
পেলাম। আমি নিজে থেকেই তূর্যের সাথে দেখা করতে
চেয়েছি। এতো সুন্দর একটা মেয়ে যার ভাগ্যকে সুপ্রসন্ন
করেছে তাকে একবার দেখার ইচ্ছেটা বাদ দিতে
পারলাম না কোন মতেই। কিছু সময়ের নিরবতা ভেঙ্গে
আমি বললাম,
" আমাকে কিছুদিন সময় দিতে হবে, বাসার ঝামেলা
শেষ হয়ে গেলে স্পেশালী ভাইয়া আর ভাবী চলে
যাওয়ার পর আমি আপনার মৌমিতাকে আপনার হাতেই
তুলে দেবো। কিন্তু ততোটুক সময় মৌমিতাকে আমার
স্ত্রী হিসেবে থাকতে হবে।"
আমার কথা শুনে তূর্য সাহেবের চোখে মুখে অবিশ্বাসের
ছাপ ফুটে উঠলো, সেটা বুঝতে পেরে আমি বেচারার
# দ্বিধা ভেঙ্গে দিলাম।
" কথা দিচ্ছি,আপনি আমাকে বিশ্বাস করতে পারেন "
কথাটা বলেই রেস্টুরেন্টের টেবিল ছেড়ে উঠে এলাম।
বাইরে দাঁড়িয়ে আছি, গুড়িগুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে, অবশ্য
বিকেল থেকেই আকাশ মেঘলা ছিলো আজকে। আমি
সিগারেট ফুঁকছি আর অপেক্ষা করছি মৌমিতার জন্য।
এতো দেরি করছে কেনো মেয়েটা? বৃষ্টির বেগ বাড়ার
আগেই বাসায় যেতে পারলে ভালো।
ভালোবাসার মানুষের সাথে কাটানো অনেক দীর্ঘ
সময়টাও হয়তো অনেক অল্প হয়। যদিও এ ব্যপারে আমার
জ্ঞান শূন্যের কোটায়। জীবনে প্রেম করতে পারলাম
না, আসলে ঠিক তা নয়। প্রেম করিনি আমি, ভয় ছিলো
যদি জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে না পারি। হঠাৎ করেই
মেঘলার কথাটা মনে পড়লো, মেয়েটা হয়তো প্রচন্ড
ভালোবাসতো আমায়। আমি কখনোই বুঝতে পারিনি।
ভার্সিটিতে থাকতে এই মেয়েটা ভীষন কেয়ার করতো,
নানা বাহানায় কথা বলতে চাইতো আমার সাথে। আমিও
যে তাকে ভাবতামনা সেটা নয় কিন্তু কেনো জানি
হয়নি। তখন হয়তো অর্ধপূর্ণ যান্ত্রিক মানব ছিলাম আর
এখন পুরোটা।
" আমি সিগারেটের গন্ধ একদম সহ্য করতে পারিনা "
মৌমিতার কথায় ঘুরে তাকালাম, কিছু বললাম না।
চোখের পলকে সিগারেটটা ছুঁড়ে ফেলে দিলাম।
রিক্সায় করে বাসায় ফিরছি, দুজনেই বৃষ্টির ছাটে পুরো
কাকভেজা অবস্থা। কোন এক সময় চিন্তা করতাম,
একদিন # রিক্সায় করে শহরের রাজপথ দাপিয়ে বেড়াবো
পাশে থাকবে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর একজন মনবী।
অবশেষে আজ ইচ্ছেটা পূর্ণতা পেলো, এই অনাহুত জীবনে
এতটুকুই বা কম কিসের।
[ ৬ ]
ভাইয়া ভাবীকে তুলে দিয়ে এয়ারপোর্ট থেকে বেড়িয়ে
এলাম। আজ দশ তারিখ, তূর্য সাহেবকে দেয়া কথাটা
রাখার দিন। ফোন দিলাম আমার লয়্যার জনাব খালেদ
আহমদ কে। তারপর তূর্য সাহেবকে আর মৌমিতা আমার
সাথেই ছিলো। অফিসে পৌঁছতেই দেখি তূর্য সাহেবও
উপস্থিত। কাগজ পত্র ঠিকঠাক করতে কিছুটা সময়
লাগলো, বাকী শুধু সই করা। আমি মৌমিতার দিকে
তাকিয়ে বললাম,
" ছোট্ট একটা প্রশ্ন ছিলো? "
আমার কথা শুনে মৌমিতা বললো,
" জ্বী করেন "
" আচ্ছা আমার অপরাধটা কি, একবার জানতে পারি ? "
মৌমিতা নিশ্চুপ, কোন উত্তর দিলোনা সে। আমি একটু
হাসলাম, চুপাচাপ ডিভোর্স পেপারে সাইন করে
বেড়িয়ে এলাম অফিস থেকে। আসার সময় তাদের দেয়া
আংটির বক্সটা মৌমিতার হাতে ধরিয়ে দিয়ে এসেছি
যার মধ্যে আংটি আছে আর আছে ছোট্ট একটা চিরকুট
" কখনো যদি নিজেকে প্রচন্ড একা ভাবো তবে চলে
এসো তোমার পুরনো ঠিকানায়"
হাটছি আমি, কেনো জানি রিক্সা নিতে ইচ্ছে
করছেনা। ভেতরে কিসের যেনো একটা শূন্যতা অনুভূত
হচ্ছে। আসলে জোর করে কিছুই হয়না, আমি চাইলে
মৌমিতাকে নিয়ে এক ছাদের নিচে থাকতে পারতাম
কিন্তু তাতে লাভ? আমাদের দুটি সত্ত্বা কখনোই এক
হতে পারতো না। জানি মানুষজন শুনলে আমাকে
অপদার্থ গালি দেবে, হাজার রকমের প্রশ্ন করবে। কিন্তু
জোর করে কাউকে কিছু চাপিয়ে দেয়া ঠিক নয়, সেটা
কেউ বুঝতে চাইবেনা। সবারই নিজস্বতা বলতে কিছু
জিনিস থাকে। মৌমিতারও আলাদা একটা পৃথিবী আছে
যে পৃথিবীতে আমার কোন স্থান নেই আর হবেও না
কখনো সেটা স্পষ্ট। তবে কেউ একজন তো তার
ভালোবাসাকে পেয়েছে এটাই বা কম কিসের। দুজনের
জয় কোন দিন সম্ভব নয় তাই আমিই না হয় হেরে গেলাম।
আপাতত চিন্তা মাকে নিয়ে,উনাকে কিভাবে
সামলাবো কিছুই বুঝতে পারছিনা। পকেট থেকে
সিগারেট বের করে মুখে পুরতেই মনে হলো, মৌমিতা
সিগারেটের গন্ধ সহ্য করতে পারেনা, ছুঁড়ে ফেলে
দিলাম সিগারেটটা। ভীষণ অবাক হলাম আমার চোখে
কয়েক ফোটা অশ্রু বিন্দুর উপস্থিতি বুঝতে পেরে। আচ্ছা
এটা কি তীব্র একটা কষ্টের অশ্রুবিন্দু যা মৌমিতার
প্রতি মাত্র কয়েকদিনে গড়ে উঠা আমার প্রথম
ভালোবাসার প্রতিমূর্তি? ঠিক বুঝলাম না আমি। মাথার
ভেতরে একটা শূন্যস্থান সৃষ্টি হচ্ছে, অসম্ভব রকমের
বিশাল একটা শূন্যতা।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.