নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি এখনও পড়াশুনা করছি। তার সাথে বেশ কিছু দিন ধরে লেখালেখির সাথে যুক্ত আছি। বাবা মায়ের ছোট ছেলে। ঘোরাঘুরি এবং খাওয়া দাওয়া করতে বেশ পছন্দ করি।

কাল্পনিক আমি

আমি এখনও পড়াশুনা করছি। তার সাথে বেশ কিছু দিন ধরে লেখালেখির সাথে যুক্ত আছি। বাবা মায়ের ছোট ছেলে। ঘোরাঘুরি এবং খাওয়া দাওয়া করতে বেশ পছন্দ করি।

কাল্পনিক আমি › বিস্তারিত পোস্টঃ

দরজার ওপারে

০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৫ রাত ১:৫৭

কাঁধের ব্যাগটা মাটিতেই ফেলে সোফায় গা এলিয়ে দিল নীলাক্ষী। ক্লান্তির সঙ্গে অসম্ভব আনন্দ মিলেমিশে কেমন একটা সুখী অবসন্ন ভাব। সাড়ে পাঁচ বছরের দীর্ঘ পরিশ্রমে তার আর ঋজুর মিউজিক কোম্পানি ‘রাগিণী’ শহরের সেরা সংস্থা হয়ে উঠেছে। এবার কলকাতার গণ্ডি ছাড়িয়ে মুম্বইয়ের দিকে পথ চলা শুরু হয়েছে তাদের। আজ মুম্বইয়ের বৃহত্তম প্রযোজক সংস্থার সঙ্গে একটা বড় চুক্তি সাক্ষর হয়েছে ‘রাগিণী’র। এখান থেকে আর পিছন ফিরে তাকানোর অবকাশ নেই। শুধু উপরের দিকে উড়ান। সামনে তিন-তিনটে বড় ছবিতে কাজ করবে তাদের কোম্পানি। টাকাপয়সা তো ভাবার বিষয়ই নয়, সাফল্য এলে দেশের বৃহত্তম মিউজিক কোম্পানি হয়ে ওঠা কেউ ঠেকাতে পারবে না। ভাবতেই গায়ে কাঁটা দিল নীলাক্ষীর। আজ এইজায়গায় পৌঁছনোর জন্য ঋজু আর তার পাশাপাশি কর্মীদেরও অবদান কিছু কম নয়। প্রায় শূন্য থেকে শুরু করেছিল ওরা। সেখান থেকে সকলের প্রচেষ্টায় এত বড় জায়গায় পৌঁছনো। কালকের দিনটা তাই কাজকর্ম থেকে সবাইকে ছুটি দেওয়া হয়েছে। এই ফাঁকে ঋজু আর নীলাক্ষী কিছুটা পুরনো সময়ে ফিরে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছে। সেই কলেজ জীবনে যেরকম হুটহাট তাকে বাইকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ত ঋজু। উদ্দেশ্যহীনভাবে বেরিয়ে ঠিক কোথাও না কোথাও চলে যেত তারা। কখনও বোলপুর-সবুজবন, কখনও দীঘা কিংবা বকখালির সমুদ্রে, কখনও বা চন্দননগরে গঙ্গার ধারে। কলেজ শেষ হয়ে যাওয়ার পর ঋজু ব্যস্ত হয়ে পড়ল গানবাজনা নিয়ে। আর নীলাক্ষী এমবিএ পড়তে দেরাদুনে। ২০০৮-এ চাকরি নিয়ে নীলাক্ষী ফের কলকাতায় ফিরল। ঋজু এর মধ্যে উঠতি সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে বেশ নাম করেছে। সেবার কলেজের রিইউনিয়নে ফের দেখা দু’জনের। এক মুহূর্তে পুরনো স্মৃতি, বন্ধুত্ব সব তাজা হয়ে উঠল। এরপর ক’দিন দেখাসাক্ষাৎ হতে একদিন ঋজু বলে বসল, ‘নীল, একটা মিউজিক কোম্পানি শুরু করবি একসঙ্গে?’ অফিসের পাশাপাশি নতুন করে কিছু করতে কোনও আপত্তি ছিল না নীলাক্ষীর। চেষ্টাচরিত্র করে দু’বছরের মধ্যে মোটামুটি দাঁড়িয়ে গেল ‘রাগিণী’। তারপর পথ চলতে চলতে আজ এই জায়গায়। চাকরি কবেই ছেড়ে দিয়েছে নীলাক্ষী। এখন ‘রাগিণী’ তার একমাত্র অবলম্বন। এখানে পৌঁছনো সহজ ছিল না। সাফল্যের সঙ্গে বেড়েছে শত্রুসংখ্যা। হঠাৎ নীলাক্ষীর একঝলক মনে পড়ে গেল প্রতিদ্বন্দ্বী ‘সরগম’-এর ডিরেক্টর মিস্টার সোনালিয়ার কথা। আজকে চুক্তি হাতছাড়া হওয়ার পর ঋজুর দিকে দেওয়া তাঁর ক্রূর দৃষ্টিটার কথা মনে করে ভ্রূ কুঁচকে গেল ওর।

এলোমেলো চিন্তা করতে করতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছিল নীলাক্ষী। ঘুমের মধ্যে একটা অদ্ভুত স্বপ্ন দেখল। একটা ব্যস্ত রাস্তার ওপারে দাঁড় করানো রয়েছে ঋজুর সদ্য কেনা বাইকটা। রাস্তা দিয়ে সাঁই সাঁই করে ছুটেযাচ্ছে বাস আর গাড়ি। খানিক উঁকিঝুঁকি মেরে ঋজুকে দেখতে পাওয়া গেল। কিন্তু বারবার চেষ্টা করেও রাস্তা পার হতে পারছে না নীলাক্ষী। হঠাৎ মনে হল, ঋজু ভীষণ উত্তেজিত। চোখ বিস্ফারিত হয়ে রয়েছে। বারবার হাত নেড়ে ওকে ওপারে যেতে বারণ করছে। আর কিছু একটা যেন বলতেও চাইছে। কিছু একটা বারণ করছে। খানিক বাদে দূর থেকে ভেসে আসল কয়েকটা কথা। ‘দরজা খুলিস না নীল,দরজা খুলিস না। কিছুতেই দরজা খুলিস না।’ তারপর সব আবছা হয়ে এল। নীলাক্ষীর ঘুমও ভেঙে গেল। ঘাবড়ে গিয়ে সোফায় সোজা হয়ে বসল। বিকেল ঢলে কখন অন্ধকার নেমে এসেছে। ঘরের ভিতর ঘুটঘুটে অন্ধকার। আলো জ্বেলে ঘড়ির দিকে তাকাল একবার। আটটা বেজে গিয়েছে। কতটা ক্লান্ত হলে অসময়ে মানুষ চার-চারটে ঘণ্টা ঘুমিয়ে নেয়। ভেবে মুচকি হাসল নীলাক্ষী। কিছুক্ষণের মধ্যে ঋজুর চলে আসার কথা। আজ সারা রাত বাইকে ঘুরবে বলে কথা হয়ে রয়েছে। অদ্ভুত স্বপ্নটার কথা মনে পড়তে একটু অস্বস্তি শুরু হল ওর। ঋজুকে স্বপ্নে দেখা তেমন অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু গোটা স্বপ্নটাই কেমন একটু অস্বাভাবিক। স্বপ্নটা আবছা হয়ে যাওয়ার আগে ঋজুর মুখ থেকে ভয়ার্ত ভাবটা কেটে গিয়ে যেন বিষণ্ণ হয়েগিয়েছিল। তবে কত অদ্ভুত স্বপ্নই তো দেখে থাকে মানুষ। তাই আর ওটা নিয়ে মাথা ঘামাল না নীলাক্ষী।


রাত দশটা বেজে গিয়েছে। ঋজুর কোনও পাত্তা নেই। ফোন এক ঘণ্টা ধরে সুইচ অফ। অসম্ভব বিরক্ত হয়ে টিভি চালিয়ে বসল নীলাক্ষী। ‘কাজের বেলা কোনও ফাঁকি নেই। অথচ একদিন ছুটি কাটাতে এত ঢিলেমি। নিশ্চয়ই বাড়িতে ঘুমিয়ে কাদা।’ মনে মনে গজগজ করে উঠল। আরও এক ঘণ্টাতেও কোনও খবর না পেয়ে রাগ সপ্তমে চড়ে গেল নীলাক্ষীর। এরপর আর এলেও যাবে না। সিদ্ধান্ত নিয়ে রাতের খাবার তৈরি করতে শুরু করল। ঝনঝন শব্দে বাসনপত্র নামিয়ে রান্না চাপিয়ে দিল। প্রায় সাড়ে বারোটা নাগাদ, নীলাক্ষী তখন ঘর অন্ধকার করে টেবিলে খাবার সাজিয়ে রাগে অভিমানে ফুটে ফুটে কাঁদছে, বাইরে শব্দ পাওয়া গেল। বাইকের শব্দ। কাঁচের জানলা দিয়ে আলো এসে ঘরে পড়ল। রাগে চোয়াল শক্ত হয়ে গেল নীলাক্ষীর। কী কী কথা শোনাবে, মনে মনে সাজিয়ে নিল। কিন্তু বাইক থেমে যাওয়ার পর আর কোনও সাড়াশব্দ নেই। একটু অবাক হলেও অভিমানে ঠায় বসে রইল চেয়ারে। দেখা যাক, কী নাটক অপেক্ষা করছে। হঠাৎ দরজার উপর ঠকঠকঠক করে আওয়াজ হল। ভ্রূ কুঁচকে দরজার দিকে তাকিয়ে রইল সে। ২-৩ মিনিট বাদে ডোরবেল বেজে উঠল। টিংটং টিংটং টিংটং... পরপর তিনবার। ‘যত্তসব নাটক!’ ক্ষোভে ফেটে পড়ে হনহন করে দরজার দিকে এগিয়ে গিয়ে লক খুলতে যাবে, আচমকা মনে পড়ল, ঋজুর কাছে তো ডুপ্লিকেট চাবি রয়েছে। বেল বাজাল কেন? টিংটং টিংটং টিংটং... আরও তিনবার বেল বাজল। নীলাক্ষী ঘরের আলো জ্বালিয়ে জিজ্ঞাসা করল, ‘কে?’ কোনও উত্তর নেই। বাইরের বাল্বটা কবে খারাপ হয়ে গিয়েছে, নতুন লাগানো হয়নি। এই বাড়িতে তেমন একটা আসা হয় না ওদের। বারুইপুরে অনেকটা ফাঁকা যায়গা কিনে ছোট্ট একতলা বাড়িটা বানিয়েছিল ওরা। মাঝেসাঝে এই ছুটি কাটাতে আসা। এর মধ্যে কবে বাইরের আলোটা নষ্ট হয়ে গিয়েছে খেয়াল করা হয়নি। রাস্তার যতটুকু আলো আসে তাতে যদি কিছু দেখা যায়, এই আশায় এবার ডোর ভিউয়ারে চোখ রাখল। হ্যাঁ, আলো আঁধারিতে ঋজুকে অন্তত বোঝা যাচ্ছে। মুখটা যথাসম্ভব রাগী করে লক খুলতে গিয়ে আবার কী ভেবে ডোর ভিউয়ারে তাকাল নীলাক্ষী। কিছু তো একটা অস্বাভাবিক। চোখ। হ্যাঁ, ঋজুর চোখগুলো। ধক করে উঠল নীলাক্ষীর বুকের ভিতরটা। একদম স্বপ্নের মতো ভয়ার্ত মুখের ভাব ওর। আবার বেল বেজে উঠল টিংটং টিংটং টিংটং...স্বপ্নটার কথা মনে পড়ে গেল। ‘দরজা খুলিস না নীল।’ লক থেকে হাত সরিয়ে নিল নীলাক্ষী। চিৎকার করে জিজ্ঞাসা করল, ‘কে? ঋজু?’ কোনও উত্তর নেই। আবারপ্রশ্ন করল, ‘ঋজু তুই তো? উত্তর দে, নাহলে দরজা খুলব না।’ এবারেও কোনও সাড়াশব্দনেই। ডোর ভিউয়ারে সেই বিস্ফারিত চোখ। ভয়ে তখন থরথর করে কাঁপছে নীলাক্ষী। মাথা কাজ করছে না। ঋজু কেন উত্তর দিচ্ছে না বুঝতে পারছে না। দৌড়ে রান্নাঘর থেকে ফোনটা আনতে গেল। এবার পুলিশকেই খবর দিতে হবে। কিন্তু রান্নাঘরে পৌঁছতে আরও বড় ধাক্কা। চার্জ শেষ হয়ে ফোন বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ব্যাগ তন্নতন্ন করে খুঁজে কোথাও চার্জার মিলল না। ওদিকে ঘনঘন ডোরবেল বাজা শুরু হয়েছে। ঘেমেনেয়ে একশা হয়ে অসহায় নীলাক্ষী মাটিতেই বসে পড়ল। আর কিছু ভাবতে পারছে না সে। হাত-পা অসাড় হয়ে আসছে। বিশ্রী অমঙ্গল অনুভব করতে পারছে। তবে যাই হয়ে যাক, দরজা আজ সে খুলবে না। কিছুতেই না। ঋজু যদি এটা খারাপ মজাও করে থাকে, তবে থাক দরজার ওপারে ঠায় দাঁড়িয়ে। আসতে আসতে ক্ষীণ হয়ে এল ডোরবেলের শব্দ।


একটু একটু করে চোখ খুলল নীলাক্ষী। সারা শরীর অবসন্ন। ভোরের আলো চোখে এসে পড়েছে। প্রথমে কিছু বুঝে উঠতে পারল না সে। দরজার কাছে দেওয়ালে হেলান দিয়ে ধুলোমাখা মেঝেয় এভাবে এলোমেলো হয়ে কেন পড়ে রয়েছে? বিছানায় ঘুমায়নি! এসব ভাবতে ভাবতে আচমকা গত রাতের ঘটনা সব মনে পড়ে গেল। তাড়াতাড়ি মেঝে থেকে উঠে জামাকাপড়ের ধুলো ঝেড়ে সটান দরজা খুলে ফেলল। ভোরের নরম আলোয় একদম সোজাসুজি চোখে পড়ল ঋজুর মুখ। চোখগুলো আর বিস্ফারিত নয়। বরং নিশ্চিন্ত। সামান্য বিষণ্ণও। কিন্তু এ শুধুই মুখ। গলার নীচ থেকে বাকি দেহের চিহ্নমাত্র নেই। ঋজুর সামান্য লম্বা চুল থেকে বাঁধা একটা দড়ি উঠে গিয়েছে উপরে। দরজার ফ্রেমে নতুন গাঁথা একটা পেরেকে আটকানো দড়ির অন্য প্রান্তটা। নীচে রক্ত শুকিয়ে কালো হয়ে রয়েছে। অদূরে রাখা ঋজুর বাইকটা। তাতে হেলান দিয়ে বসানো রয়েছে ঋজুর মুণ্ডহীন দেহ। পৃথিবীটা যেন দুলে উঠল নীলাক্ষীর। পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গেল। ভারসাম্য হারিয়ে পড়ে যেতে যেতে হাত পড়ল দরজায় আটকানো একটা কাগজে। তাতে লেখা— বুদ্ধিমতী মেয়ে।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ৯:৪১

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: ভয়ংকর!!!!!!!!!!

গল্পতো নয়.. যেন গা ছম ছম করে ওঠা কাহিনী...

++++

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.