![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মানুষের জীবনতো তীব্র স্রোতেভেসে চলা কচুরি পানার ন্যায়ক্ষনিকের দেখা আর পরিচয়,আবার স্রোতেই ভেসে চলে যেতে হয়।তবুওতা কখনো ভোলা যায়না।।
আমরা সুখে শান্তিতেই বসবাস করিতে ছিলাম। সুখে বাধ সাধিল ফজা মিয়ার হটাৎ আগমন।
আমিনুল ভাই,মোশারফ ভাই,ভাগনে রিপন,ভাগনে মামুন,রানা ভাই এবং আমি এই ৬জন। গাজীপুর মহানগরে অবস্থিত বোর্ডবাজার এলাকায় একটি ফ্লাট বাসায় মিলিয়া মিশিয়া বসবাস করিতাম। সকলেই কর্মজীবী। আমাদের মধ্যে সবচাইতে সিনিয়র পারসন আমিনুল ভাই। আমরা তাঁহাকে শ্রদ্ধা করি। তিনিও আমাদিগকে অত্যাধিক সেন্হ করেন। তিনি প্রচণ্ড রসিক প্রকৃতির একজন মানুষ। গল্পবাজ এবং আড্ডাবাজ হিসেবেও তাঁহার সুখ্যাতি রহিয়াছে। মানুষ হিসেবেও আমি ব্যক্তিগতভাবে তাঁহাকে পছন্দ করি।
ফজা আমিনুল ভাইয়ের খালাতো ভাই।
আজকের গল্পটাতে ফজা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। সে ইহার পূর্বে আমাদের বাসায় ১৫দিবস কাটাইয়া গিয়াছিল। ইহাছাড়া বিশেষভাবে তাহার সহিত আমার পরিচয় নাই।
একদিন দিবাকর্ম সম্পাদন করিয়া গৃহে ফিরিয়া ফজাকে দেখিতে পাইলাম। মোশারফ ভাইয়ের সহিত গল্পে মশগুল রহিয়াছে। আমি ফজার সহিত শুভেচ্ছা বাক্য বিনিময় করিয়া বাথরুম হইতে ফ্রেশ হইয়া ফিরিয়া আসিয়া ফজার আগমনের হেতু সম্পর্কে যাহা অবগত হইলাম তাহার মর্মার্থ হইতেছে এইযে,ফজা বিবাহ করিয়াছে। বালিকাটি কে?বালিকাটি তাহাদের গ্রামের। দীর্ঘদিন তাহাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। কিছুদিন পূর্বে তাহারা তাহাদের অবিভাবকদিগকে না জানাইয়া প্রেমের টানে গৃহ হইতে পলায়ন করিয়াছিল। দুই দিবস এইখানে সেইখানে কাটাইয়া ফজা মিয়া যখন প্রেমের ভার আর সহিতে পারিতেছিল না,তখন সে সিদ্ধান্ত লইয়াছিল বালিকাটিকে তাঁহার পিত্রালয়ে রাখিয়া আসিবে। বালিকাটির জনক তাহাদের এরুপ সিদ্ধান্তে ডাইরেক্ট ঘোষণা করিয়া দিয়াছিলেন,উহা যদি পূণরায় গৃহে ফিরিয়া আসে তাহা হইলে তিনি বিষপান করিয়া ইহলোক ত্যাগ করিবেন। বালিকাটির ভ্রাতা ঘোষণা করিয়াছিল,উহা ফিরিয়া আসিলে সে গৃহ ত্যাগ করিয়া অন্যত্র চলিয়া যাইবে। এইরুপ যখন পরিস্থিতি ফজা তখন বালিকাটিকে তাহার এক মাসির গৃহে পাঠাইয়া দিল। মাসি স্ববিস্তার শ্রবণ করিয়া স্থান দিতে অস্বিকৃতি জানাইলেন। ফজা অপারগ এমতবস্থায় বালিকাটি এখন কোথায় যাইয়া দাড়াইবে। সে না হয় আবেগের বশিভূত একটি অপরাধ করিয়াই ফেলিয়াছে তাই বলিয়া সে কোথাও স্থান পাইবে না ইহা কিরুপ কথা। যাহা হউক,ফজা মিয়া এহেন পরিস্থিতির মাঝে বালিকাটিকে তাহার এক লতায় পাতায় আত্মিয়ের গৃহে কোনরকমে রাখিয়া ঢাকায় চলিয়া আসিলো।
তাহার বক্তব্যে এক্ষণে বুঝিতে পারিলাম,এই কারণেই সে ইহার পূর্বে আমাদের বাসায় ১৫ দিবসের মত গা ঢাকা দিয়াছিলো।
পুরুষ মানুষ 'যেইখানে রাইত সেইখানে কাইত' হইতে পারে কিন্তু মেয়ে মানুষ তাহা পারেনা। ফজার স্থান মিলিলেও বালিকাটির কোথাও স্থান মিলিতেছিল না। ফজা এতদিন দুরে থাকিলেও সে বিবেকের দংশনে জর্জরিত হইতেছিল। সে বারবার বলিতেছিল সে যদি বালিকাটিকে কোন নিরাপদ স্থানে রাখিয়া আসিতে পারিত তাহা হইলে সে নিশ্চিন্ত বোধ করিত। কিন্তু যেইহেতু তাঁহার কোন স্থান মিলিতেছেনা সেইহেতু সে বিবাহ করিয়া ফেলিয়াছে।
এতক্ষণ যাহা বর্ণনা করিলাম তাহার পুরোটাই ফজা হইতে শ্রবণপূর্বক বর্ণনা করিয়াছি। আমাদের মন গলাইবার জন্যে সে যতটা মাধুরী মিশ্রিত ভাষায় বর্ণনা করিয়াছে আমি ঠিক তেমন করিয়া এখন বলিতে পারিতেছি না।
ফজার কথা শ্রবণ করিয়া তাঁহার প্রতি এক ধরণের ভাললাগা তৈরী হইল আমার মধ্যে। পিরিতি করা উত্তম কিংবা মন্দ কর্ম তাহা বলিতে পারিব না। তবে পিরিতি করিয়া অতঃপর ওয়াদা অনুযায়ী বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া মন্দ কর্ম নহে। ফজা বলিতেছিল। আমরা সকলেই চুপ মারিয়া শুনিতেছিলাম। কিন্তুু এই পর্যায়ে আসিয়া বলিয়া ফেলিলাম,'' বিবাহ করিয়াছেন ভাই উত্তম করিয়াছেন। পিরিতি যখন করিয়াছেন তখন বিবাহ করা আপনার কর্তব্য ছিল। আপনি আপনার কর্তব্য পালন করিয়াছেন,এইটেই বড় কথা্। এখন একখানা বাসা ভাড়া করিয়া জীবীকা নির্বাহের জন্য কর্মের অনুসন্ধান করিতে থাকেন। অতঃপর যাহা হইবার হইবে।"
আমার কথা শ্রবণ করিয়া মোশারফ ভ্রাতা কহিলেন,"ভাবিতো বর্তমানে আমাদের বাসায় রহিয়াছে।"
এইকথা শুনিয়া চমকাইয়া উঠিয়া ভ্রাতার মুখপানে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে চাহিলাম।
ভ্রাতা কহিলেন,"সে এক্ষণে আমাদের পাসের কক্ষে রহিয়াছে দুই_একদিন থাকিবে।"
আমি আর কিছু কহিলাম না। কিন্তুু এতক্ষণ ধরিয়া আমি যাহাকে বালিকা বলিয়া সম্বোধন করিয়া আসিতেছি তাহাকে দর্শন করিয়া পূর্বাপেক্ষা অধিক চমকাইয়া উঠিলাম। আরে এতো বালিকা নহে ৩৫ উর্ধ্ব রীতীমত ভদ্রমহিলা। যে বয়সে মেয়েদেরকে বালিকা বলিয়া গণ্য করা হয় সেই বয়সটা এই মহিলা অনেক পূর্বেই পার করিয়া আসিয়াছে। আর ফজার সহিত উহাকে কিছুতেই মানাইবে না। সে যাহাই হউক,পাত্র_পাত্রী মিলিয়া গেলে আমাদের আলোচনা, সমালোচনা,ভাবনা যাহাই বলিনা কেন সকলি মিছে।
৩ কক্ষের বাসায় আমরা ৬ সদস্য মিলিয়া শয়ন কার্যে ২ কক্ষ এবং ১ কক্ষে আহারকার্য সম্পাদন করিতাম।
ঘটনা ঘটিবার যেইহুতু আর কিছুমাত্র অবশিষ্ট নাই সেইহেতু নব দম্পতিকে ১ কক্ষ ছাড়িয়া দিয়া ১ কক্ষে ২জনের বেডে ৩ জন করিয়া গাদা-গাদি,ঠাসা_ঠাসি আর মশক বাহিনীর সহিত যুদ্ধ করিয়া পরাস্ত হইয়া রাত্রী যাপন করিতে লাগিলাম।
১ দিন,২দিন,৩দিন করিয়া এইভাবে দিন গড়াইয়া যাইতে লাগিল। আমরা মনেমনে বিরক্ত হইতেছিলাম কিন্তু তাঁহাদের মধ্যে কোন প্রকার বিকার লক্ষ করিতেছিলামনা। আমিনুল ভাইকে আমরা সকলেই শ্রদ্ধা করি,কাজেই সকলেই চুপ করিয়া রহিলাম।
এই কাহিনীর পরবর্তী অংশ যদি আমি যাচিয়া না শুনিতে যাইতাম তাহা হইলে হয়তো হাফ ছাড়িয়া বাচিতাম এই বলিয়া যে, আপদ বিদায় হইয়াছে। আমার কিংবা আমাদের আর বিশেষ কিছু বলিবার কিংবা ভাবিবার ছিলনা।
পরবর্তী ঘটনা সম্পর্কে মোশারফ ভাই কর্তৃক আজ যা জানিলাম তাহা জানিয়া শুধু অবাকই হইলাম না মর্মাহতও হইলাম বটে। এতক্ষণ আমাদের আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে যে মহিলাটি ছিল সে আমাদের ফজার আপন চাচাত ভাইয়ের স্ত্রী। তাহার যথাক্রমে ৭ ও ৮ বছরের ২টি পূত্র সন্তান রহিয়াছে। স্বামী বেচারা প্রবাসে থাকে। স্বামীর অনুপস্থিতিতে ফজার সহিত সে এই ধরণের অনৈতিক সম্পর্কে জড়াইয়া পড়িয়াছিল। একসময় সে স্বামী,সন্তান,বাবা,মা এবং জাগতিক আর সবকিছুকে তুচ্ছ মনে করিয়া ফজার সহিত চলিয়া আসিয়াছিল। এই কথাতো এতোদিন আমরা কেহ অন্তত আমি জানিতাম না।
তো যাক,এখন তাহারা কোথা গিয়াছে?এই প্রশ্নের উত্তরে জানিলাম- আমিনুল ভাই কৌশলে মেয়েটির পিতার সহিত যোগাযোগ করিয়া জানাইয়া দিয়াছে যে,মেয়েটি তাহার আশ্রয়ে নিরাপদে রহিয়াছে। তখন মেয়েটির পিতা আমিনুল ভাইকে অনেক কাকুতি মিনতি করিয়া বলিয়াছেন মেয়েটিকে যেন তাহার নিকট পৌছাইয়া দেয়। তাহা হইলে তিনি চীর কৃতগ্গ থাকিবেন। সেই উদ্দেশ্যেই আমিনুল ভাই আজ উহাদের লইয়া গিয়াছেন। বেশ ভাল করিয়াছেন। কিন্তু আমি কিছুতেই ভাবিয়া পাইতেছিনা যে,আমিনুল যে কর্মটি এই ১০দিবস পরে করিলেন সেই কর্মটি কেন প্রথম দিবসেই করিলেননা। মেয়ে এবং ছেলে উভয়উ তাহার আত্মিয়। সকল ঘটনাইতো তাঁহার জানা ছিল। তিনি এরুপ একজন সম্মানি মানুষের আসনে বসিয়া এরুপ জঘন্য কর্মটি করিতে পারিলেন?তাহার অনুজ ভ্রাতাকে পরস্ত্রীর সহিত তাহার নিজের বিছানায় কিরুপ করিয়া এই ১০টি রাত্রী যাপন করিতে দিলেন?
এখন আবার শুনিতেছি যে মেয়েটিকে তাঁহার শশুরালয়ে ফিরিয়ে দেওয়া হইবে। কিন্তু তাহার স্বামী শর্ত জুড়িয়া দিয়াছে-মেয়েটিকে পবিত্র কোরআন শরীফ স্পর্শ করিয়া বলিতে হইবে যে ফজার সহিত তাঁহার কোন প্রকার শারিরীক সম্পর্ক হয় নাই। এর প্রেক্ষিতে আমিনুল ভাই মেয়েটিকে পরামর্শ দান করিয়াছেন-"তুমি কোরানশরীফ সরাসরি স্পর্শ না করিয়া কোরানের উপর হস্ত রাখিয়া সকলি অস্বীকার করিবে।"
মহিলাটি হয়তো স্বামীর সংসারে সুখী ছিলনা। তাই সে ফজার হস্ত ধরিয়া অল্প সুখ ত্যাগ করিয়া অধিক সুখ লভিতে চাহিয়াছিল। ফজা তাঁহাকে সুখের চরম পর্যায়ে পৌছাইয়া দিয়াছে কিনা তাহা ভাবিয়া দেখিবার ভার আমি পাঠকদের উপর ছাড়িয়া দিলাম।
মহিলাটির ভবিষ্যৎ যে এখন কোথায় গিয়া ঠেকিবে তাহা আল্লাহ তায়ালাই নির্ধারন করিবেন।
তবে আমাদের সমাজে সর্বত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ফজা নামের অপদার্থরা। এই অপদার্থগুলি নিপাত যাক।
©somewhere in net ltd.