বীর ও বাংলাদেশ

১২ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ২:৪২

অনেক দিন আগে, ১৯ শতকের অন্যতম দার্শনিক ও সমাজবিজ্ঞানী Thomas Carlyle -এর একটি উক্তি পড়েছিলাম। উক্তিটি ছিল এরকম -

"কোনো একটা জনগোষ্ঠির মনের খবর যদি জানতে হয়, তবে জানতে হবে সেই জনগোষ্ঠীর বীরদের, দেখতে হবে কারা পাচ্ছে বীরের কাংক্ষিত মর্যাদা ও সম্মান"

আজ আমার বর্তমান বাংলাদেশ কে দেখে উক্তিটি বার বার আমার ভেতরে অনুরিত হচ্ছে। যা দেখছি তা বিশ্বাস করতে পারছিনা, আর করলেও সেটা মনে হচ্ছে একটা দুঃস্বপ্ন। ছোখ দুটি খুললেই সেই বীভৎস দুঃস্বপ্নের অবসান হবে, কিংবা আর কয়েকটা ঘণ্টার ঘুম শেষ হয়ে গেলেই এর থেকে মুক্তি মিলবে। কিন্তু সেটা যে হচ্ছে না। রাত দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে, স্বপ্নের চাদরে বিচ্ছু কীটগুলো যেন আরো বেশি 'ওম' পেয়ে লেপটে আছে শরীরের সাথে।

কিন্তু এই দুঃস্বপ্ন গুলো কি একদিনের, শুধু একটি মাত্র রাতেরই দুঃস্বপ্ন ? আমাদের দেশীয় কালচারে এই বিষ কীটগুলো কি হঠাৎ জন্ম নিয়েছে? না, সেটাওতো সম্ভব নয়। উপযুক্ত পরিবেশ আর পর্যাপ্ত পরিচর্যা না পেলে এই বিষ কীটগুলো আজ বংশ বৃদ্ধি করে এই পর্যায়ে আসতে পারত না । কারা দিয়েছে সেই পরিচর্যা ? কাদের এত দায় এই কিট্‌দের জন্য ? না, আমি দোষারোপ করে দোষাদোষীর খেলা খেলতে চাইনা। কেবল মনে হচ্ছে হয়ত আমিই দায়ী, আমরা প্রত্যেকেই দায়ী।একটি মত কে, একটি মতাদর্শকে, নিজের 'ইজম' কে প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে আমরা নিজেরাই নিজেদের অলক্ষে এই সব কীট কে পরিচর্যা করে আসছি। আর এইসব কীট আজ যেন এক একটা ফ্রাঙ্কেইস্টাইন।

ভিন্ন মুখোশে, ভিন্ন ভিন্ন নামে প্রথমেই আমাদের সকল প্রকার মূল্যবোধ কে, নৈতিকতাকে, নিষ্পাপ সরলতাকে প্রথমেই গিলে ফেলেছে এই সব দানবরা। তাই সমাজের অন্যায়, রাজনৈতিক অত্যাচার, রাষ্ট্রের সন্ত্রাস কে আমাদের কাছে অন্য সব পাঁচ সাতটি স্বাভাবিক কাজের মতই মনে হচ্ছে।আমি জানিনা বাংলাদেশের বর্তমান সমাজ বিজ্ঞানীরা চলমান সমাজ প্রক্রিয়াকে উঁনারা কি ধাঁচে ফেলে দেখছেন, কিন্তু বিরাট একটা অংশ যে পঁচে গেছে সে আমরা স্বীকার করতে না চাইলেও বাতস্তবতা কিন্তু তা-ই। না হলে আজকে আমাদের সমাজে কাদেরকে দেখছি বীরের বেশে? কারা পাচ্ছেন বীরের কাংক্ষিত মর্যাদা ও সম্মান ? না, এই সহজ সমীকরনের দায় আমার একার নয়, প্রত্যেক বিবেকবান, সুস্থ মস্তিষ্কের বাংলাদেশীদেরই দায়। আর দায় থেকে দায়িত্ব এড়ানো যতোটা সহজ, বিবকের দংশন থেকে কিন্তু ততটা সহজ নয়।

২ টি +১/-০