![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আজ মাসের ৫ তারিখ।
ছাত্রী পড়ানো বাবদ ২০০০ টাকা পাওয়ার কথা। সে জন্যই বিশিষ্ট রড – সিমেন্ট- ঢেউটিন ব্যাবসায়ী কামাল সাহেবের বাড়ির উদ্দেশে প্রচন্ড বৃষ্টির মধ্যেও বের হয়েছি। তার ক্লাস টেন পড়ুয়া ছোট মেয়েটিকে পড়ায়। বড়লোকের আদরের কন্যার মত মেয়েটি চঞ্চল না। শান্ত এবং গোছানো স্বভাবের। যার অনেক রহস্যময় কথার অর্থ আমি এই ৬ মাসেও বুঝতে পারিনি।
কলিংবেল বাজতেই তন্বী দরজা খুলে দিল। শাড়ী পরা সামান্য সাজগোজ করা তন্বীকে দেখে হতচকিত হলাম। রুমে ঢুকতেই বলল – স্যার আপনি তো পুরো ভিজে গেছেন। একটু বসুন আমি শুকনো কাপরের বেবস্থা করছি। আপনার চোখ লাল হয়ে গেছে।জ্বর আসছে নাকি?
বললাম আমার জ্বর আসেনি। শুকনো কাপড়ও লাগবে না। তুমি বরং একটা তোয়ালে এনে দিয়ে পড়তে বসো।তন্বী তোয়ালে এনে দিয়ে ইতস্ততভাবে বলল – স্যার আজকে পড়ব না। আমার ছোট খালা যার পলা নামের সুন্দর একটা কুকুর আছে তিনি সকালে এসেছেন।তার কথা আপনাকে বলেছিলাম।
-ও হ্যাঁ! মনে পরেছে।
স্যার আজ সাড়াদিন খালার সাথে বসে গল্প করব। প্লিজ স্যার আজ পড়ব না।
তন্বীর ইতস্তত ভাব দেখেই বুঝলাম – আসার সময় বৃষ্টিতে ভিজে আমার চোখ লাল হয়েছে বলেই আজ আমাকে ছুটি দেয়ার জন্য ও মিথ্যা বলছে – আসলে তার কোন খালা আসেনি। এর আগেও সে এমনটি অনেকবার করেছে।
বললাম ঠিক আছে। আজ পড়তে হবে না। আমি বরং কাল আসব। আজ আমি উঠি।
স্যার মা আপনাকে চা খেয়ে যেতে বলেছেন।
আজ না অন্য দিন খাব।
বের হয়ে আসার সময় তন্বী আমার হাতে একটা নীল খাম ও রাপিং করা একটা বক্স দিয়ে বলল- স্যার এগুলো আপনার জন্য। আমাদের বাসার বাইরে গিয়ে খুলবেন।এ কথা বলেও ও ছুটে বাসার মধ্যে ঢুকে গেল।
দেখলাম শাড়ী পরা তন্বীকে আজ অনেক বড় দেখাচ্ছে।
বৃষ্টি না থাকায় সামান্য হেটে গিয়ে একটা চায়ের দোকানে বসলাম। চা দোকানের ছেলেটাকে এক কাপ চা দিতে বলে নীল খাম টা খুললাম। চকচকে ৪ টা ৫০০ টাকার নোটের সাথে ময়লা ধরা পুরনো একটা ১০০ টাকার নোট দেখে অবাক হলাম।সাথে একটি চিঠি। বাড়তি ১০০ টাকা কোথা থেকে এলো এ ভাবনায় বিভ্রান্ত হয়ে চিঠিটা পড়া শুরু করলাম। তন্বী লিখেছে-
স্যার,
আজ আমার জন্মদিন। খুব ইচ্ছা ছিল আমার কোন এক জন্মদিনে আপনাকে নিয়ে হুড খোলা রিকশায় চড়বো। এবারের জন্মদিনে সে ইচ্ছাটা পুরন করতে পারলাম না।যদি রিকশায় চড়তাম তাহলে রিক্সা ভারাটা আমিই দিতাম। আজ যদি কিছুটা সময় হুড খোলা রিকশায় ঘুরেন তাহলে আমার ইচ্ছা কিছুটা পুরন হবে। সে জন্যই ভাড়া বাবদ ১০০ টাকা দিলাম।
বক্সে আপনার জন্য একটা ছাতা আর একটা শার্ট আছে- এটা আমি নিজে গিয়ে কিনেছি আপনার জন্য।ভাঙ্গা ছাতা টা ফেলে কাল থেকে নতুন ছাতা নিয়ে আমাদের বাসায় আসবেন এই শার্ট পড়ে। আমি জানি আপনার একটায় শার্ট, প্রতিদিন এক শার্ট পড়ে আসেন বলে আমার খারাপ লাগে। বৃষ্টিতে ভিজে লাল চোখে পড়াতে এলে আমি ভীষণ কস্ট পাব। প্লিজ বৃষ্টিতে ভিজবেন না।
আর আপনি এত কুঁজো হয়ে হাটেন ক্যান ? সোজা হয়ে হাটতে পারেন না। আপনার জন্য আমার বান্ধবীরা আমাকে কুজি বলে।
ইতি, তন্বী।
প্রচণ্ড বৃষ্টিতে হুড খোলা রিকশায় চোড়েছি। মধ্য বয়স্ক রিকশাচালক বার বার পিছন ফিরে বিভ্রান্ত চোখে আমার দিকে তাকাচ্ছে। তন্বীর দেয়া নীল খাম আর প্যাকেট টা ভিজে যাচ্ছে। যাক ।আমার মত ছেলেদের এত্ত ভাবলে চলে না, এত ভাবতে হয়না। কারন সবাই সবকিছু পায় না।আমার সাদা একমাত্র শার্ট এর মায়া, ২ বছর আগের কেনা ৯০ টাকার সেই ভাঙ্গা , ছেড়া ছাতার মায়া আমি ছাড়তে পারব না। শুধু কষ্ট লাগছে – তন্বী কে বলা হল না – কাল থেকে আর আমি ওকে পড়াতে যাব না। ... ... ...
২| ২৯ শে জুন, ২০১৪ বিকাল ৫:৪৮
মাটি আমার মা বলেছেন: সুন্দর লিখেছেন, ভাল লাগল পিচ্ছি মেয়ের সাথে নায়ক প্রেমে জড়িয়ে না পড়ায়।
৩| ৩০ শে জুন, ২০১৪ দুপুর ১:১০
কামরুল হোসেন ২৯৬ বলেছেন: আপনার/ আপনাদের ভালোলাগা আমার লিখার অনুপ্রেরণা ধন্যবাদ সবাইকে।
©somewhere in net ltd.
১|
২৯ শে জুন, ২০১৪ বিকাল ৫:৪৩
মুক্তকণ্ঠ বলেছেন: খুব ভালো লেগেছে ভ্রাতা। সত্যি!