নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্বর্ণপর্ণী

উর্ণনাভ

কলসিতে জল নাই , যমুনা কত দূর

উর্ণনাভ › বিস্তারিত পোস্টঃ

আক্কেল সেলামী ; একগুচ্ছ কষ্টের কথা

১৮ ই এপ্রিল, ২০১৩ দুপুর ২:১০

যথারীতি শেষ প্রহরে প্লাটফর্মে ঢুকিলাম টিকিট কাটিবার কোনপ্রকার সুযোগ না পাইয়াই ।

৭ নং প্লাটফর্মে ট্রেন আমাদিগের প্রতীক্ষায় অপেক্ষমান ।

পশ্চাৎদিগ হইতে হঠাৎ এক খাকি উর্দিধারীর ডাক শুনিলাম । থামিতে না চাহিয়াও থামিতে হইল ।

"কোথায় যাইবেন ? "

"ক" জেলায় ।

"টিকিট প্রদর্শন করুন ।"

"কাটিতে পারি নাই সময়স্বল্পতার দরূণ । আমরা ইস্টুডেন্ট ।"

"ইস্টুডেন্ট বইলা কি মাথা কিনিয়া খাইয়াছেন? ১১০ টাকা বাহির করুন ।"

আমরা অবাক দৃষ্টি নিক্ষেপ করিয়া তাহাকে বুঝাইবার আপ্রাণ চেষ্টা করিলাম ।

কিছুতেই কিছু হইল না ।

৫০ টাকা তাহার হস্তগত করিয়া সম্মুখে অগ্রসর হইলাম । খোঁজা- খোজি করিয়া সুন্দর গদিওয়ালা একখানা বগিতে উঠিতে গেলাম ।

কিন্তু ইহা কিসের আলামত !

সাদা উর্দিধারী এক ব্যক্তির নিষ্ঠুর বাঁধা ।

কহিলাম ," ট্রেন চলিতে শুরু করিলে ডান হস্তের কর্ম সম্পাদন করিব ।"

শুনিয়া "ভদ্রলোক' কহিলেন ," যাইবেন কোথায় ?"

কহিলাম "ক" জেলায় ।

উনি কহিলেন ২০০ টাকা লাগিবে । গদিতে বসাইয়া নিয়া যাওয়া হইবে ।

কহিলাম , "আমরা ইস্টুডেন্ট" ।

যেন গগন হইতে ভূপতিত হইয়া বলিলেন , "তাহাতে কি হইয়াছে ! ইহা কি লোকাল বাস পাইয়াছেন নাকি ! ইস্টুডেন্ট হোন আর যাহাই হোন তাহাতে কিছু আসিবারও নহে

যাইবারও নহে ।"

বলিলাম, "ট্রেনে উঠিতে দিন , চলিতে চলিতে কথা হইবে''

এইযাত্রা রক্ষা হইল বলিয়া মনে হইল । সম্মুখে কি হইবার আছে ভাবিবার অবকাশ পাইলাম জানালার পাশে গদিতে বসিয়া ।

বন্ধু "স" কহিল, তাহার নিকট একশত বিংশ টাকা রহিয়াছে । আমি কহিলাম আমার টাকার থলিতে একশত টাকার একখানা কাগজ ব্যতিরেক কিছুই খুঁজিয়া পাওয়া যাইবে না ।

দুইখানা একশত টাকার কাগজ আর একখানা বিংশ টাকার ।

সাদা উর্দি 'ভদ্রলোক' মশাইকে ৫০ মুদ্রা দক্ষিণা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হইল । কিন্তু টাকা যে ভাঙাইতে হবে তাহাতে । একশত টাকা হস্তগত হইলে যে সাদা উর্দি "ভদ্রলোক" মশাই আহ্লাদে নয়খানা হইয়া আর কিছুই ফেরত দিবেন না তাহা না বুঝিবার মত মস্তিষ্ক আমাদিগের ছিল না ।

আচমকা যেন মেঘ চাহিতেই মেঘ পাইয়া গেলাম ।

রেলওয়ের আরেক সাদা উর্দি মশাই যাহাকে খাঁটি বাংলাতে বেয়ারা বলা হইয়া থাকে উনি নাস্তার বাটি নিয়া হাজির হইলেন ।

ইতোমধ্যে ট্রেন চলিতে শুরু করিয়াছে । টাকা ভাঙ্গাইবার এমন সুযোগ কে হস্তছাড়া করিবে !

পুছিলাম, ' কত হে মামা খাদ্যখানি? "

কহিল একগাল হাসিয়া উনি , " ২০ টাকা হইলে পাবেন খাদ্য ও পানি " ।

কিঞ্চিৎ অবাক হইলাম বটে ।

বাটিতে তিন পদের খাদ্য নজর হইতেছিল ।

আবার পুছিলাম, " কত হে মামা ? "

মামা কহিলেন , ' ২০ টাকা' ।

তাহার আঙ্গুলখানি প্লেটের এককোণায় চলিয়া গেল ।

অবিশ্বাসের সুরে কহিলাম শুধু কি বিশ ?

উনি হু হা করিয়া সামনে সিটে চলিয়া গেলেন দুই বাটি খাদ্য কিংকর্তব্যবিমূঢ় আমাদের দুই মূর্তির কোলে ত্যাগ করিয়া ।

একে অপরের পানে চাহিয়া প্রথমেই পাউরুটি খাওয়া শুরু করিলাম । লাল জেলিসদৃশ বস্তু দ্বারা মাখানো বলিয়া খাইতে মন্দ লাগিল না ।

এইবার টিস্যুকাগজে মোড়ানো অন্য দুই খাদ্যদ্রব্য খুলিয়া দেখিলাম । প্রথম বস্তু দেখিয়া তো চক্ষু চড়কগাছে উঠিল । এ যে ভাজা মুরগির মাংস । অন্য বস্তুটি যে কি বুঝিলাম না ঠিক যদিও ভবিতব্যে খাইয়া যথেষ্ট আমোদ অনুভব করিয়াছিলাম ।

ভাবিলাম দেশে ভালোই উন্নতি হইয়াছে বোধ হইতেছে ।

বিংশ টাকায় এতকিছু এই একবিংশ শতাব্দীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন হলে কোনদিন

খাইয়াছি বলিয়াও স্মৃতিতে উকি দিতেছিল না ।

মনে সন্দেহ জাগিল ।

বন্ধু "স" কে পুছিলাম , " ভ্রাতা , এ কী বস্তু দিয়া গেছে কেবল বিশ টাকা বলিয়া ! সে কি বিশ বলিয়াছিল নাকি একশত বিশ ! ? "

বন্ধু আশ্বস্ত করিল সেও বিশ শুনিয়াছে ।

তবু কাহারো মনের সন্দেহই কাটিল না ।

কয়েকশত সেকেণ্ড অপেক্ষার পর দেখিলাম মামা গদির পাশ দিয়া পেছনের গদিতে যাইতেছেন ।

আবার পুছিলাম কত হে মামা ?

উনি বিরক্ত কণ্ঠে কহিলেন বিশ ।

এইবার সব সংশয় পাশের জানালা দিয়া ফালাইয়া দিয়া দক্ষিণহস্তের কর্মে মনোযোগ দিলাম ।

এমতাবস্থায় আসিলেন দরজার সেই সাদা উর্দিধারী 'ভদ্রলোক' ।

পুলকিত ভাব নিয়া কহিলেন, " কি ইস্টুডেন্ট সাহেবেরা , ভালোই তো ভোজন করিতেছেন ! "

বন্ধু 'স' কহিল টাকা ভাঙ্গাইতে হইবে যে । আপনাকে নচেৎ কি দিব !

উনি কহিলেন, " বেশ বেশ । চিন্তা করিবেন না ঘুরিয়া আসিতেছি । "



খাওয়া শেষ করিয়া ১০০ টাকার কাগজ নিয়া অপেক্ষা করিতে লাগিলাম ।

ক্ষুদ্র অপেক্ষার অবসান ঘটাইয়া মামার আগমন ঘটিল । বাটি ফেরত নিয়া দক্ষিনহস্ত অগ্রসর করিলেন ।

বন্ধু 'স' একশত টাকার কাগজ খানি ধরাইয়া দিল ।

মামার মস্তকে যেন সহস্র কিলোটনের নিউক্লিয়ার বোমা বিস্ফোরিত হইল ।

উনি কহিলেন , " এইটা কী ? "

আমরা কহিলাম "ষাট ফেরত দাও হে মামা । ভাংতি হইবে না ।"

মামা চমকিত হইয়া ধমকিত সুরে কহিলেন , " ২৪০ হইয়াছে ।"

আমরা কহিলাম ," কি হে মামা ! তুমি যে ২০ করিয়া বাটি দেখাইয়া দিয়া গিয়াছিলে !"

মামা বাংলিশে কহিলেন , " পাউরুটি বিশ ,বলি Bread বিশ । কাবাব,স্যান্ডউইচ কি বিনামূল্যে গ্রহণ করিবেন ? "

ইহা হইতে নিষ্ঠুর বাক্য শেষ কবে শুনিয়াছিলাম স্মৃতিতে আনিতে পারিলাম না ।

এইবার আমাদিগের মস্তকে সহস্র মেগাটনের নিউক্লিয়ার বোমা বিস্ফোরিত হইল ।

বলে কি লোক !!!

আমাদিগের নিকট সর্বসাকুল্যে হইবে ২২০ টাকা । ২৪০ কোথা হইতে হইবে !

জনসম্মুখে মান সম্মান কি এইরূপে ধুলোয় মিশ্রিত হইবে !



জানালার স্নিগ্ধ বৈশাখী হাওয়ার মাঝেও ঘাম জাগ্রত হইল ।

বুকের মাঝে যেন চিনচিনে ব্যথা লাগিতেছিল । বুকে হাত দিতেই কি যেন ঠেকিল ।

বাজ চমকাইবার মতো মনে পড়িল বুকপকেটে তিনশত টাকার কোষাগার রহিয়াছে । বুলেটের বেগে টাকা বাহির করিলাম ।

চমকিত হইয়া গেলাম ।

মামার হাতে ধরাইয়া দিয়া এই যাত্রা মুক্তি পাইলাম বোধ হইল ।

সত্যই কি মুক্তি পাইলাম ।

সাদা উর্দি ধারীদের খেলা যে একে একে চলিতেই থাকে ।

আরেক মামা আসিলেন খাবার নিয়া । সাদা উর্দির বুকপকেটে লেখা BR ।

উনি পুছিলেন কিছু নিব কিনা । দেখিলাম সেই একই খাদ্য তালিকাভুক্ত বাটি ।

কৌতুহলবশত পুছিলাম ," কত হে মামা !"

কহিলেন মামা , " ২০ টাকা মাত্র ।"

কহিলাম , " আশ্চর্য !"

এইবার পুছিলাম কোনটা বিশ ?

মামা পাউরুটিতে অঙ্গুলি নির্দেশ করিয়া কহিলেন , " ইহা বিশ ।"

পুছিলাম , " তবে বাটিতে যে তিন প্রকার খাদ্য আছে ? কেবল একটার দাম কহ কেন ? আপনারা যে এভাবে বিংশ করিয়া কহিয়া খাদ্য দিয়াই দৌড় দিয়া থাকেন তাহাতো আমাদিগের মতো নিরীহ বালকদের মনে বিভ্রান্তির সূচনা করে ।"

মামা এইবার সদানন্দ চিত্তে কহিলেন , "একশত বিশ বলিলে বেশি বেশি লাগিতে পারে । কেউ খরিদ করিতে চাহে না ।তাই বিশ কহিয়া থাকি । "

পুছিলাম , " সবাই তো ইহা বুঝিতে পারিবে না "

মামা নিষ্ঠুরভাবে কহিলেন ," যে বুঝিবে সে-ই খাইবে । তা আপনারা কয় বাটি খাইয়াছেন আর কত খরচ গিয়াছে? "

করুণসুরে জবাব কহিতেই মামা সহাস্য প্রস্থান করিলেন ।

কাঁটা ঘায়ে যেন নুনের মালিশ পড়িল ।

জানালা দিয়া বাঁকা চাঁদখানিকে দেখিয়া মনে হইল উহাও তীব্র ব্যাঙ্গের হাসি হাসিতেছে ।

সেই চন্দ্রমুগ্ধ রাত্রের আক্কেল সেলামীর অবসান ঘটিয়াছিল দরজার সেই সাদা উর্দিধারী 'ভদ্রলোক' যাহাকে

ভদ্রলোকে টি.সি. বলিয়া থাকে তাহার দক্ষিণে হস্তে ষাট টাকা সম্প্রদান করিয়া ।

মন্তব্য ১১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই এপ্রিল, ২০১৩ দুপুর ২:২৩

ইয়ার শরীফ বলেছেন: বড়ই ব্যাথিত হইলাম আপ্নাদিগদের এহেন নিদারুণ কষ্টের ভ্রমনভোজনে

১৮ ই এপ্রিল, ২০১৩ দুপুর ২:২৮

উর্ণনাভ বলেছেন: ব্যথা ভাগ করিয়া লইবার হেতু আপনাকে ধইন্যবাদ

২| ১৮ ই এপ্রিল, ২০১৩ দুপুর ২:২৪

সোহাগ সকাল বলেছেন: ভালো লাগলো।

শুভ কামনা।

১৮ ই এপ্রিল, ২০১৩ দুপুর ২:২৯

উর্ণনাভ বলেছেন: ধন্যবাদ

৩| ১৮ ই এপ্রিল, ২০১৩ দুপুর ২:৩৭

মাহতাব সমুদ্র বলেছেন: ভালো লাগলো। ধন্যবাদ। ধারাবাহিকতা রক্ষা করবেন। অনেক ভালো লিখেছেন।

১৮ ই এপ্রিল, ২০১৩ দুপুর ২:৫০

উর্ণনাভ বলেছেন: ধন্যবাদ । চেষ্টা করব ..........

৪| ১৮ ই এপ্রিল, ২০১৩ দুপুর ২:৫৩

রাইসুল সাগর বলেছেন: লিখায় ভালো লাগা। শুভকামনা সব সময় জানিবেন।

১৮ ই এপ্রিল, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৫২

উর্ণনাভ বলেছেন: শুনিয়া প্রিত হইলাম । ধন্যবাদ গ্রহণ করিবেন

৫| ১৮ ই এপ্রিল, ২০১৩ বিকাল ৩:১২

প্রিতী ইসলাম বলেছেন: মামা বাংলিশে কহিলেন , " পাউরুটি বিশ ,বলি Bread বিশ । কাবাব,স্যান্ডউইচ কি বিনামূল্যে গ্রহণ করিবেন ? "


ভালো লাগলো।

১৮ ই এপ্রিল, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৫১

উর্ণনাভ বলেছেন: ধন্যবাদ

৬| ২৪ শে এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১:৩৩

আত্মকেন্দ্রিক বলেছেন: অসাধারন!! ধইন্য ধইন্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.