নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্বর্ণপর্ণী

উর্ণনাভ

কলসিতে জল নাই , যমুনা কত দূর

উর্ণনাভ › বিস্তারিত পোস্টঃ

দিয়াশলাইয়ের কাঠি

৩০ শে আগস্ট, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৪৫

হ্যালো, স্লামালাইকুম ।
ওয়ালাইকুমসালাম,কে বলছেন?
জি আমি বাসা ভাড়ার ব্যাপারে ফোন দিয়েছি ।
ওহ , ভাই বাসা তো অনেক আগেই ভাড়া হয়ে গেছে ।
ঠিক আছে বলার আগেই ফোনটা ওপাশ থেকে কেটে গেল।
ভালো বিড়ম্বনাতেই পড়া গেল দেখছি । সাত দিন ধরে এলিফ্যান্ট রোড , আজিমপুর,নীলক্ষেত , নিউমার্কেট এলাকার
সব বাসা ভাড়ার বিজ্ঞাপন তছনছ করে ফেলেছি ।
কোন বাসায় ব্যচেলর রাখবে না , কিছু আগেই ঠিক হয়ে গেছে , কিছু বাসায় আকাশছোঁয়া ভাড়ায় ছয় মাস
থেকে এক বছরের এডভান্স চায় - অবস্থা সুকরুণ ।

অথচ বাড়িওয়ালা নোটিশ দিয়ে রেখেছে । এই মাসের মধ্যে বাড়ি ছাড়তে হবে ।
দোষ কি আমার খুব বেশি ছিল ?
দুইটা রুম নিয়ে থাকি আমি ।
বাড়িওয়ালার ভয়ে তটস্থ থাকতে হয় সবসময় ।
সেদিন রাতের কথা । গান শুনছিলাম । সাউন্ড তো খুব বেশি ছিল না ।
আমাকে এসে বাড়িওয়ালা গিন্নীর সে কি ধামকি ধমকি ।
তাঁর মেয়ের পড়ায় খুব ক্ষতি হয় । মেয়ে পড়ে প্রাইভেট ভার্সিটিতে ফার্মাসীতে ।ফেসবুকে তো দেখি সারাদিনই অনলাইন থাকে ।
সে আবার আমার ফেসবুক ফ্রেন্ড ।
মেয়েটাকে নিজের একাউন্ট থেকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠানোর দুঃসাহস করিনি । নতুন নামে
আইডি খুলে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছিলাম । প্রোফাইল পিকচারে গোলাপ ফুল দিয়ে অদ্ভুতভাবে
মিথ্যাচার করে ইনফো দিয়ে সাজিয়েছিলাম পুরো আইডি ।
তারপর প্রায়ই কথা হয় ।
আমি মিথ্যা বলি ।
মেয়েটাও মিথ্যা বলে, বুঝতে পারি ।
তবু কি যেন কেমন এক অদ্ভুত অবৈধ আনন্দ পাই । বাড়িওয়ালার মেয়ে বলেই হয়ত গোপন এই
আনন্দ অস্বাভাবিকভাবে বিবর্ধিত হয় ।

গাউছিয়া মার্কেটে আজ অনেক ভিড় । আসলে আজ না । প্রতিদিনই ভিড় হয় । যত বেশি ভিড়
ততই লাভ । মঙ্গলবার দিনটা অবশ্য খালি থাকে রাস্তা । ওভারব্রিজের নিচে দাঁড়িয়ে থাকি আমি ।
সুযোগ মত এটা সেটা হাতটান দেই । না , না ,আমি প্রোফেশনাল পকেটমার না । এটা আমার সাইড বিজনেস ।
মাঝে সাঝে হয় আর কি । ভদ্র বেশভূষা আমার ।
কত স্বপ্ন ছিল । কবিতার স্নিগ্ধতায় কত রাত পার করেছি একসময় ।
থাকনা সেসব ।
দীর্ঘশ্বাসটা দীর্ঘ করার মত সময় এখন আমার কাছে নেই ।
সন্ধ্যা নামছে । রাস্তার হলদে বাতিগুলো জ্বলে ঊঠছে একে একে ।


কি যে হয়েছিল সেদিন জানিনা । কি ভূত মাথায় চেপেছিল কে জানে ! বাড়িওয়ালীর সাথে নইলে কে যায় তর্ক করতে ? পাগল না মাথা খারাপ !
মুখের উপর বলে দিয়েছিলাম , " কিসের পড়াশোনা আপনার মেয়ের ?"
বলার কারণ ছিল । গান শুনতে শুনতে আমি তো তাঁর মেয়ের সাথেই চ্যাট করছিলাম ।
তবু কি দরকার ছিল বলার ?
পেটের কথা মুখে আনার পর যা ঘটে তা নির্মম নয়, নিষ্ঠুর নয় - বরং আরো জঘন্য কিছু ।
বাড়িওয়ালী মুহূর্তের জন্য কথা হারালেন । চিরকাল তাঁর সামনে মাথা নিচু করে সালাম দিয়ে যাওয়া আর যখন তখন ধমকি শোনা আপাত নিরীহ এই আমি যে এভাবে তাঁর মুখের উপর উচু গলায় এভাবে কথা বলব তা তিনি কি স্বপ্নেও ভেবেছিলেন ?
বাড়িওয়ালাকে তেল মেরেই থেকেছি সেখানে দুইটা বছর । এটা সেটা ফুটফরমাশ তো কতই খাটলাম । কিছু টাকাও মেরেছি অভ্যস্ত হাতে ।
সে যাই হোক , আমিও অবাক হয়ে গিয়েছিলাম নিজের কণ্ঠে । কেন?
হয়ত ফেসবুকের ছোট্ট একটা ছবি । জানি না আসলে কী !
বাড়িওয়ালার মেয়ের সাথে একটা ছেলের ছবি । তাতেই বা কী ?

তিনি আর কিছু বলেন নি । পরদিন সকালে বাড়িওয়ালা নিজে এসে শান্ত কণ্ঠে এই মাসের মধ্যে বাড়ি ছাড়তে বলে গেলেন ।

তারপর আজ সাতদিন হয়ে গেছে । মাসের দুই দিন বাকি আছে আর।

শহীদ জননী জাহানারা ইমাম সড়কের ডানে একটা নির্জন মত গলি । হাঁটছি । উদ্দেশ্যহীন আবার উদ্দেশ্যযুক্ত হাঁটা । তবে আনমনা উদাস এই হাঁটা ।
একটা ছেলের সাথে কি করে যেন ধাক্কা লেগে গেল । ময়লা গেঞ্জি । বয়স বার-চৌদ্দ হবে।
ধমক দিতে গিয়েও মুখ আটকে গেল ।
ছেলেটার হাতে কিছু কাগজ । সাদা কাগজে টাইপ করা বাসা ভাড়া টাইপের বিজ্ঞাপন ।
কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলাম । পাশের দেয়ালে দুইটা কাগজ লাগিয়ে ছেলেটা সামনের দিকে এগিয়ে গেল ।
দ্রুত হাতে কাগজগুলো থেকে মোবাইল নাম্বারগুলো ফোনে সেভ করলাম । তারপর আশেপাশে ডানে বামে তাকালাম । নাহ ।
কেউ নেই । একটানে কাগজ দুইটা ছিড়ে ফেললাম । বাড়ি ভাড়ার দৌড়ে প্রতিযোগী থাকা উচিত না ।
মনে একটা প্রশান্তির ঢেউ দোলা দিল । ফোনের সবুজ বাটনে চেপে কানে নিয়ে সামনের দিকে হাটতে শুরু করলাম । ছেলেটা আর কোথায় কোথায় লিফলেট লাগায় দেখতে হবে ।
সব ছিড়ব আজ । সব ।

কবিতার কয়েকটা লাইন আওড়াতে আওড়াতে হাঁটছি ।

"আমি একটা ছোট্ট দেশলাইয়ের কাঠি
এত নগণ্য, হয়তো চোখেও পড়ি না :
তবু জেনো
মুখে আমার উসখুস করছে বারুদ-
বুকে আমার জ্বলে উঠবার দুরন্ত উচ্ছ্বাস ;
আমি একটা দেশলাইয়ের কাঠি । "

কবিতা লিখতাম এক সময় । হয়ত বেশ নিম্নমানেরই লিখতাম । এই কবিতাটা আমার না । সুকান্তের ।

হাঁটার গতি বাড়িয়ে দিলাম ।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ৮:৩০

তানিয়া হাসান খান বলেছেন: ভাল লিখেছেন :)

৩০ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ৮:৪০

উর্ণনাভ বলেছেন: ধইন্যবাদ

২| ৩০ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ৮:৫৪

বটের ফল বলেছেন: অনেক চমৎকার। খুব ভালো লাগলো। ভালো থাকবেন।

৩০ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ৯:০২

উর্ণনাভ বলেছেন: ধন্যবাদ । আপনিও ভালো থাকবেন

৩| ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:০০

Z@hid বলেছেন: গুরু..

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.