নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কাজী হাসান সোনারং

আমি একজন নিসর্গচারী। সোনারং তরুছায়া নামে আমার একটি বাগান ও বৃক্ষরোপণ সম্পর্কিত একটি কার্যক্রম আছে।

কাজী হাসান সোনারং › বিস্তারিত পোস্টঃ

ডা. আলী আশরাফ হোসেন : একজন অগ্রজ চারণ বৃক্ষপ্রেমী

১১ ই আগস্ট, ২০২২ সকাল ৮:২৮


কাজী হাসান

২০১৮ সালের ১৭ জুলাই ছিলো সাতক্ষীরা জেলার দেবহাটা উপজেলার পারুলিয়া গ্রামের মহান চিকিৎসক ডা. আলী আশরাফ হোসেন এর ২৪তম মৃত্যুবার্ষিকী! তাঁকে উৎসর্গ করে আমরা সেদিন দুপুরে তাঁর সমাধি পাশে একটি কাঠ বাদাম গাছ রোপণ করি। রোপণকার্যে আমার সঙ্গে ছিলেন জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত বৃক্ষপ্রেমী, সাবেক বিসিক কর্মকর্তা, সাতক্ষীরার ফারূখী নাজনীন ও ডা. আলী আশরাফ হোসেনের ভাগনি, সাতক্ষীরার সরকারি শিশু হাসপাতালের কর্মকর্তা ফাতেমা বেগম।

সাতক্ষীরার একজন শ্রদ্ধেয় প্রয়াত বৃক্ষপ্রেমীর নাম ডা. আলী আশরাফ হোসেন। যিনি জীবদ্দশায় প্রায় প্রতিদিন সাতক্ষীরার একটি অংশের গ্রাম থেকে গ্রামে দুঃস্থ ও অসহায় রোগীদের চিকিৎসা করে বেড়াতেন। কখনও কোনও যানে কখনও বা পায়ে হেঁটে এইড বক্স নিয়ে তিনি রোগীর দোর গোড়ায় পৌঁছতেন চিকিৎসা সেবা নিয়ে।

একটি চেনা পথ, রৌদ্রোজ্জ্বল মেঠোপথ বা কাঁচা বা আধাপাকা সড়ক। পাশে ফসলের দিগন্তজোড়া মাঠ~এসব পেরিয়ে, তিন রাস্তার মোড় হয়ে তাঁকে কয়েকটি গ্রামে যেতে হতো। মধ্য দুপুরে মাথার ওপর ছাতা থাকলেও ফসলের আলপথ পেরিয়ে প্রচণ্ড রৌদ্রতাপে ঘেমে নেয়ে উঠতেন তিনি। সুদীর্ঘ পথের মধ্যবর্তী জায়গায়, তিন রাস্তার মোড়ে একটি দীর্ঘদেহী ছায়াশীতল গাছের খুব অভাব বোধ করতেন সেই মহান চিকিৎসক। ভাবতেন, একটি বৃক্ষের ছায়ার নীচে শরীর এলিয়ে দিয়ে শীতল হাওয়ার মায়ায় নিজেকে সমর্পিত করতে পারলে মন্দ হতো না! একটু বিশ্রামের পর ক্লান্তি ঝেরে বাকি পথ পাড়ি দিতে পারতেন অনায়াসে। একদিন তিনি তাঁর ভাবনা সম্ভব করার উদ্যোগ নিলেন। তিন রাস্তার মোড়ে রাস্তার ধারে রোপণ করলেন একটি কাঠ বাদাম গাছের সজীব চারা। ছায়াদানে যে গাছ অতুলনীয়। সুবিন্যস্ত শাখার সেই কাঠ বাদাম গাছটি বড় হলে, তার নীচে ঘর্মাক্ত নিজেকে ছায়ার মায়াময় পরশ দেবেন, আশেপাশের জমিতে কাজ করা কোনও কৃষক বা তার মতো আরও পথিকজন বিশ্রাম নেবেন গাছটির ছায়াতলে~এমন ভাবনা তাঁর মনে খেলা করে।

কাঠ বাদাম গাছ দ্রুত বর্ধনশীল। বছর না গড়াতেই শাখা ছাড়িয়ে ছায়াদান উপযোগী হয়ে কিশোরী অবয়ব লাভ করে সেই ছোট কাঠ বাদাম গাছটি! ঘর্মক্লান্ত ডা. আলী আশরাফ হোসেন পরম তৃপ্তি নিয়ে সেই গাছের ছায়ায়, সুশীতল হাওয়ার মায়ায় অবগাহন করেন। শুধু তিনিই নন, এক সময় ওই গাছের ছায়ার টানে নিত্য রোদেলা প্রহরে জমিতে কাজ করা কৃষক, হাটুরে, পথিকজন বিশ্রাম নিতে একটু ক্ষণের জন্য হলেও কাঠ বাদাম গাছটির সান্নিধ্যধন্য হতেন। ডা. আলী আশরাফ হোসেন এক সময় সেই গাছের গোড়ায় একটি সিমেন্টের বেদি তৈরি করে দেন। যাতে শীতল চত্বরে সবার বসতে সুবিধা হয়। তৃষ্ণার্তজনের কথা ভেবে এক সময় তিনি একটি টিউবওয়েলও সেখানে বসিয়ে দেন। কর্মযজ্ঞটি তিনি করেছেন পরম মমতায়, চরম আনন্দ নিয়ে। খুবই নীরবে। তিনি কখনও আশা করেন নি, এ কারণে তাঁর নাম ডাক হোক, তাঁর নামে ধ্বনিত হবে প্রশংসাগাঁথা! পরবর্তীতে তাঁর পরিবারের বিনয়ী উত্তরসূরিগণ এ প্রসঙ্গে নির্লিপ্তই থেকেছেন! শ্রদ্ধেয় ডা. আলী আশরাফ হোসেন নিজ উদ্যোগে ওই অঞ্চলে আরও অনেক গাছ রোপণ করেছেন। খুব বেশি মানুষ সে কথা জানেন না। জানতেন পথের যে পাশে তিনি একটি গাছ রোপণ করেছেন, তার উল্টোপাশের বাড়ির মানুষজন। কারণ তিনি তাদের অনুরোধ করতেন, গাছটিকে দেখে রাখতে। মাহমুদপুরের সেই কাঠ বাদাম গাছটিকে কেন্দ্র করে পরবর্তীতে কিছু দোকানপাট গড়ে ওঠে। জায়গাটি রূপ নেয় একটি ছোট বাজারে। পরে জায়গাটি ‘বাদামতলা’ নামেও পরিচিতি লাভ করে। প্রতিটি জনবহুল বাণিজ্যাঞ্চলের গোড়াপত্তনে বোধ করি এমন একজন ডা. আলী আশরাফ হোসেনের ভূমিকা থাকে, থাকে তাঁর আন্তরিক উদ্যোগ!

এমন মহান নীরব বৃক্ষসখার অবদানের গল্পগাঁথা হয়তো দেশের আনাচে কানাচে অনেক পাওয়া যাবে। কিন্তু আমার তেমন জানা নেই। তেমন তথ্য পেলে অনুগ্রহ করে আমাকে জানাবেন। আমি সেই বৃক্ষছায়ায় গিয়ে নিজে শীতল ও ধন্য হবো। কৃতজ্ঞতা ও শ্রদ্ধা প্রকাশ করবো সেই মহান বৃক্ষসখার প্রতি।

মুন্সীগঞ্জ জেলার গজারিয়া উপজেলার ভবেরচরে অবস্থিত আমাদের বৃক্ষরোপণ ও বিতরণ কেন্দ্র ‘সোনারং তরুছায়া'র যাত্রা শুরু হয়েছিলো একটি কাঠ বাদাম গাছের চারা রোপণের মধ্যদিয়ে। আমি কি তাহলে ডা. আলী আশরাফ হোসেনের বৃক্ষ উদ্যোগ দ্বারা প্রভাবিত হয়ে তা করেছিলাম? না। আমি ডা. আলী আশরাফ হোসেনের বৃক্ষপ্রেম তথা কাঠ বাদাম গাছ রোপণের বিষয়টি জেনেছি ২০১৪ সালে। আর আমাদের ‘সোনারং তরুছায়া’র প্রথম গাছ হিসেবে একটি কাঠ বাদাম গাছের চারা রোপণ করি দশ বছর আগে ২০১২ সালের ২৩ জুন। শাখার সুবিন্যাস ও দ্রুতবর্ধনশীল বলে আমি প্রথম গাছ হিসেবে রোপণের জন্য একটি কাঠ বাদাম গাছের চারাই নির্বাচন করেছিলাম। পরবর্তীতে পরিণত হওয়ার পরে সেই কাঠ বাদাম গাছের বীজ পড়ে যে চারা হয়েছিলো তার একটি ২০১৪ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর আমাদের কম্পাউন্ডের একটি নির্বাচিত জায়গায় রোপণও করি।

২০১৮ সালের ১৭ জুলাই ডা. আলী আশরাফ হোসেন এর ২৪তম মৃত্যুবার্ষিকীর দিন আমাদের বাগানে প্রথম রোপিত কাঠ বাদাম গাছটির একটি চারা সাতক্ষীরার পারুলিয়া গ্রামে তাঁদের বাড়িতে তাঁর সমাধি পাশে তাঁকে উৎসর্গ করে রোপণ করি আমরা। আমরা দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধীরে ধীরে কয়েকশত কাঠ বাদাম গাছ রোপণ করার ও আগ্রহী বৃক্ষপ্রেমী শিক্ষার্থীদের উপহার দেয়ার সিদ্ধান্ত নিই। আমাদের সেই ইভেন্টটির নামকরণ করা হয় 'ডা. আলী আশরাফ হোসেন স্মারক বৃক্ষ' রোপণ [https://www.facebook.com/media/set/?set=a.10156578639303307&type=3] । যার আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় সেদিন থেকেই।

আমরা সে বছর পারুলিয়ায় যে কাঠ বাদাম গাছের চারাটি রোপণ করেছিলাম, তাতে তার দু’দিন আগে, ১৫ জুলাই ডা. আলী আশরাফ হোসেন এর পুত্র স্বনামধন্য অভিনয়শিল্পী, সংস্কৃতিজন আফজাল হোসেন ও সংস্কৃতিজন আলফাজ হোসেন এর আশীর্বাদপূর্ণ স্পর্শ নিয়েছি। ডা. আলী আশরাফ হোসেন এর পুত্রদ্বয় ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে দৃষ্টিনন্দন গাছ সংগ্রহ করে অসম্ভব সুন্দর বাগানবাড়ি করেছেন পারুলিয়ায়। সেই বাড়িটির বাগানের গাছপালার সবুজসাথী হয়ে বেড়ে উঠছে আমাদের রোপণ করা কাঠ বাদাম গাছের চারাটি। গাছটি রোপণের পর আমরা প্রয়াত বৃক্ষপ্রেমী ডা. আলী আশরাফ হোসেন রোপিত সেই কাঠ বাদাম গাছটি দেখতে মাহমুদপুরের বাদামতলায় গিয়েছিলাম। ছবি তুলেছিলাম সেই কিংবদন্তী গাছের নীচে।

গত ১৭ জুলাই ২৮তম মৃত্যুবার্ষিকীতে বৃক্ষপ্রেমী সমাজসেবী ডা. আলী আশরাফ হোসেনকে গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করে ‘সোনারং তরুছায়া ‘র পক্ষ থেকে সকালে গজারিয়ার ভবেরচরস্থ ল্যান্ডোভারী হাই স্কুল প্রাঙ্গণে কাঠ বাদাম গাছের চারা রোপণ করা হয়। গাছগুলো রোপণ করেন ল্যান্ডোভারী হাই স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. জামাল হোসেন, সহকারী শিক্ষক সাইদ সরকার, মাইনুল হাসান, হাসান ইমাম, বৃক্ষবিষয়ক সংগঠন ‘সোনারং তরুছায়া’র শিক্ষার্থীদের ইউনিট ‘সোনারং তরুছায়া গ্রীন ক্লাব’ এর সদস্য সাব্বির, মেহেদী ও ওই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। আমাদের ‘সোনারং তরুছায়া’র পক্ষ থেকে ল্যান্ডোভারী হাই স্কুল এ একটি বাগান করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে (Click This Link)। কার্যক্রমটি এরই অংশ ছিলো। সেদিন বিকেলে ‘সোনারং তরুছায়া’র ‘আলী যাকের চত্বর’ এ বৃক্ষপ্রেমী শিক্ষার্থীদের গাছের চারা উপহার দেয়া হয়।

ঘটনাটি বিস্ময়কর! গত ১৭ জুলাই ছিলো মহৎপ্রাণ ডা. আলী আশরাফ হোসেন এর ২৮তম মৃত্যুবার্ষিকী। সেদিন রাত আটটায় ডা. আলী আশরাফ হোসেন এর সহধর্মিনী মনুয়ারা খানম মারা যান। বাবার মৃত্যুর ঠিক আঠাশ বছর পরে একই দিন মাতৃহারা হন সংস্কৃতিজন আফজাল হোসেন ও আলফাজ হোসেন।

[email protected]

মন্তব্য ২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই আগস্ট, ২০২২ বিকাল ৩:৪৮

ইমরোজ৭৫ বলেছেন: কি সুন্দর লেখা।

১২ ই আগস্ট, ২০২২ সকাল ৮:২৯

কাজী হাসান সোনারং বলেছেন: অশেষ ধন্যবাদ!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.