নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নিঃশব্দ পদাঘাত

কিছু আন্দোলন মরতে শেখায়, কিছু আন্দোলন বাঁচতে শেখায়। কিছু আন্দোলন মৃত্যুর মাধ্যমে বাঁচতে শেখায়। একটি আন্দোলন লিখে রাখে একটি প্রজন্মের ইতহাস। আমরা জন্ম থেকে লড়তে শিখেছি,লড়তে শিখে মরতে শিখেছি, মরে গিয়ে ফের বাঁচতে শিখেছি।

এসিড খান

অঘূর্নায়মান ইলেকট্রন

এসিড খান › বিস্তারিত পোস্টঃ

চার্লস রবার্ট ডারউইনঃ একজন মহামনীষীর উপাখ্যান এবং আমার কিছু কথা

১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১০:০৪

চার্লস রবার্ট ডারউইন। শুধুই একজন বিজ্ঞানী নন, একজন মহা প্রতিভাধর, অদ্বিতীয় মহামানবের প্রতীক। বিবর্তনবাদের জনক, প্রান বিকাশ এবং প্রজাতির উদ্ভবের সবচেয়ে গ্রহনযোগ্য এবং বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের জনক। একজন জীবন্ত উপপাদ্য। আজ তাঁকে নিয়েই আমার কিছু কথা। আমি এখানে সংক্ষেপে তার জীবন এবং গবেষনা নিয়ে আলোচনা করবো। সেই সাথে বিবর্তনবাদের বেসিক কিছু দিক নিয়ে যথাসাধ্য সহজ ভাষায় আলোচনা করবো যা হয়তো বিবর্তনবাদ নিয়ে অনেকের ভুল ধারনার কিছুটা হলেও অবসান ঘটাবে।



১৮০৯ সালের ১২ই ফেব্রুয়ারি। ইংল্যান্ডের শ্রপশায়ারে রবার্ট ডারউইন এর স্ত্রী সুসান্নাহ ডারউইন পঞ্চম সন্তানের জন্ম দেন। ঘর আলো করে আসে এক নাক বোঁচা ছেলে। নাম রাখা হয় চার্লস রবার্ট ডারউইন। ডাক্তার বাবা চাইলেন ছেলেকেও ডাক্তার বানাবেন। কিন্তু জীববিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহ ছিলোনা ছোট্ট চার্লস ডারউইনের। তাকে মেডিকেল স্কুল থেকে নিয়ে আসা হল সাধারন বিদ্যালয়ে। কিন্তু কে জানতো? জীববিজ্ঞান বিমুখ এই ছোট্ট ছেলেটিই হয়ে উঠবে জীববিজ্ঞানের প্রান পুরুষ! প্রকৃতির কোলে বেড়ে উঠা ছেলেটির আগ্রহ জন্মায় প্রকৃতি নিয়ে। বিচিত্র এই জগতের বিভিন্ন প্রজাতির জীব তার নিউরনে মোচড় দেয়! কেন এত বৈচিত্র! কি এর ব্যাখ্যা? অবশেষে সিদ্ধান্ত নেন গবেষনা করার। সমুদ্রবিমুখ এই ছেলেটিই তরুন বয়সেই নেমে পড়ে সমুদ্রযাত্রায়। সমুদ্রের বিচিত্র প্রান নিয়ে করে উন্মুক্ত গবেষনা।



ইতিহাস হয়ে রইলো গেলাপ্যাগাস দ্বীপ ভ্রমন। তখন ব্রিটিশদের প্রচন্ড প্রতাপ। তখন উড়োজাহাজেরই উন্নতি হয়নি, পানির জাহাজ কোনোরকম ভরসা। কম সময়ে স্বল্প পথে সমুদ্র ভ্রমনের জন্য জাহাজ দরকার। ঠিক করা হল জাহাজ। বিখ্যাত সেই জাহাজ- নাম হল বিগল।



সেই জাহাজে নিয়োগ দেয়া হল এক প্রকৃতিপ্রেমিককে। যে কিনা ক্লাশের লেখাপড়া ছেড়ে সারাদিন কাটাতো প্রকৃতি নিয়ে চিন্তা ভাবনায়। মন দিয়ে শুনতো ভূতত্ত্ব নিয়ে আলোচনা। হ্যাঁ, চার্লস রবার্ট ডারউইন। এই জাহাজে বসেই আবিষ্কার করেন প্রাকৃতিক নির্বাচন তত্ত্ব। টানা পাঁচ বছর ছিলেন এই জাহাজে। গবেষনা করেছেন, এই জাহাজেই পুরো পৃথিবী ঘুরেছেন। জাহাজের কাপ্তান গবেষনার জন্য ডারউইনকে বড় একটা কামরা ছেড়ে দিয়েছিলেন। আর হ্যাঁ, ডারউইন কিন্তু একটুর জন্য এই জাহাজ যাত্রার সুযোগ হারাতে বসেছিলেন। কাপ্তান নাকি তাঁকে দেখে পছন্দ করেন নি। কারন ডারউইনের নাকটি ছিলো বোঁচা। বোঁচা নাক নিয়ে কুসংস্কারাচ্ছন্ন কাপ্তান পরে অবশ্য ক্ষমা চেয়েছিলেন তার কৃতকর্মের জন্য।



১৮৩১ সালের ২৭ ডিসেম্বর। বিগল তাকে নিয়ে যাত্রা শুরু করেরে ইংল্যান্ডের পি-মাউথ বন্দর থেকে। এই জাহাজে করেই তিনি প্রায় পুরো বিশ্ব ঘুরে একসময় ফিরে আসেন আবার মাতৃভূমি ইংল্যান্ডে। ততক্ষনে পার হয়ে গেছে চারবছর নয় মাস পাঁচদিন। সালটা তখন ১৮৩৬ সালের অক্টোবরের ২ তারিখ। ইংল্যান্ড হতে ক্যানারি দ্বিপপুঞ্জ হয়ে দক্ষিন আমেরিকার উপকূল ঘেঁষে চিলির উপকূল হয়ে গ্যালাপ্যাগাস দ্বিপ হতে তাহিতি ঘুরে প্রশান্ত মহাসাগরের বুক চিরে আন্তর্জাতিক তারিখ রেখা অতিক্রম করে নিউজিল্যান্ড এসে অস্ট্রেলিয়ার সিডনি হয়ে থাইল্যান্ডের মরিশাস উপকূল হতে আফ্রিকা সংলগ্ন ভারত মহাসাহর অতিক্রম করে আবার দক্ষিন আটলান্টিক হয়ে ইংল্যান্ডে পৌঁছেন। ফিরে এসেই তিনি গবেষনা প্রকাশ করেন নি। করেছেন অনেক পরে। চূড়ান্ত ভাবে প্রকাশ করেছেন আরো ত্রিশ বছর সময় নিয়ে।



অনেকের বুঝার সুবিধার্থে আমি পুরো অভিযান এবং প্রাসঙ্গিক কিছু ঘটনা সাল অনুযায়ী উল্লেখ করছি।

১) ডিসেম্বর ১৮৩১: প্রথম যাত্রা

২) অক্টোবর ১৮৩৬: ফিরে আসা

৩) জানুয়ারি ১৮৩৭: তাঁর তত্ত্ব নিয়ে প্রথম লন্ডনের রয়্যাল জিওলজিকাল সোসাইটিতে কথা বলেন

৪) জানুয়ারি ১৮৩৯: বিয়ে করেন ইমা নামক মহিলাকে

৫) অগাস্ট ১৮৩৯: জার্নালে গবেষনা ছাপা হয়

৬) নভেম্বর ১৮৫৯: অন দ্য অরিজিন অব স্পিসিস বাই দ্য মিনস অব ন্যাচারাল সিলেকশান ছাপার হরফে প্রকাশিত হয়

৭) এপ্রিল ১৮৬০: সর্বপ্রথম "ডারউইনিজম" নামক টার্ম ইউজ করা হয়

৮) মার্চ ১৮৭১: সর্বপ্রথম "ইভোলিউশান" নামক টার্ম ব্যবহার করা হয়।



মহাজ্ঞানী এই ব্যক্তি ১৮৮২ সালের ১৯ ই এপ্রিল ৭৩ বছর বয়সে প্রকৃতির অখন্ডনীয় নিয়তির কাছে হার মেনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।



১৮৫৯ সালের ২৪ নভেম্বর সম্ভবত মানব সভ্যতার ইতিহাসে সব চেয়ে বিতর্কিত এবং বহুল আলোচিত গ্রন্থটির জন্ম। হ্যাঁ, বইটির নাম অন দ্য অরিজিনস অব স্পিসিস বাই মিনস অব ন্যাচারাল সিলেকশান। সর্বপ্রথম মানুষকে চোখে আঙুল দিয়ে বুঝানো হয় সার্ভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট। প্রানের বিকাশ নিয়ে মানুষের মনে চলতে থাকা হাজার বছরের কুসংস্কারকে ধ্বংস করে দিয়েছিলো এই বইটি। প্রথমবারে প্রকাশক ছাপাতে চাননি চার্চ এর সৃষ্টিতত্ত্বের বিরোধী এই বইটি। অবশেষে মালয় দ্বীপপুঞ্জে গবেষনারত আরেক মহান বিজ্ঞানী আলফ্রেড রাসেল ওয়ালেসের নিরন্তর সহযোগীতায় প্রকাশক ১২৫০ কপি বই ছাপাতে রাজি হন। কিন্তু, তপ্ত মরুভূমিতে এক ফোঁটা পানির মতই উধাও হয়ে যায় ১২৫০ কপি! চাহিদা দেখে প্রকাশক আরো আরো ছাপাতে থাকেন। তারপর সেটা এক ইতিহাস।



এইবার আমি পোস্টের প্রাসঙ্গিকতায় বিবর্তনবাদ এবং জীনের প্রকরন, ডিএনএ কম্বিনেশান নিয়ে সহজ ভাষায় একটু আলোচনা করবো।



আমি প্রথমে প্রানের লক্ষন নিয়ে আলোচনা করবো। কিভাবে আমরা নিশ্চিত হই কোথাও প্রানের অস্তিত্ব থাকতে পারে। অনেক বিজ্ঞানী অনেক জটিল এবং কঠিন সব মতবাদ দিয়েছেন। আমি সেগুলোকে সরল ভাষায় কয়েকলাইনে বলবো।

প্রাণের মৌলিক লক্ষণগুলো এরকমঃ

১. জীবনের একক কোষ। এক কথায়, কোষ হলো পানিভর্তি ব্যাগ যার মধ্যে নানা রাসায়নিক ক্রিয়া-বিক্রিয়া চলে। কোষের আবরণীর মধ্যে প্রাণের সকল কার্যকারিতা (বৃদ্ধি ও বিভাজন) প্রকাশ পায় এবং সীমাবদ্ধ থাকে।

২. এককোষী প্রাণী যেমন আছে (ব্যাকটেরিয়া, ইস্ট, শৈবাল ইত্যাদি), তেমনি আছে বহুকোষী প্রাণী (স্পঞ্জ, মশা, মাছি, আমগাছ, বিড়াল ও মানুষ ইত্যাদি)।

৩. কোষের সকল বিপাকীয় ক্রিয়াদি এবং জৈবনিক কার্যক্রম চালনা করতে বাইরের পরিবেশ থেকে শক্তি সংগ্রহ করতে হয়। সালোক- সংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিপাকের জন্য দরকারী শক্তি-বহনকারী অণু অ্যাডিনোসিন ট্রাইফসফেট (এটিপি) তৈরি হয়।

উদ্ভিদকোষে ক্লোরোফিল থাকায় সূর্য- রশ্মি থেকে সরাসরি এটিপি তৈরি করা যায়। প্রাণিকোষের শক্তি-তথা-খাদ্য-উৎসের

জন্য উদ্ভিদের উপর নির্ভর করতে হয়।

৪. খাদ্য থেকে শক্তি সংগ্রহ করে বিপাকীয় কার্য সমাধা করা কোষের একটি প্রধান কাজ। এই কাজের

মূলে সহায়তা করে নানারকমের রাসায়নিক

বিক্রিয়া। এই সব বিক্রিয়ার সমাহারই বিপাক

প্রক্রিয়া।

৫. বিপাকীয় কাজের সকল

নির্দেশাবলী আসে ডিএনএ’র জেনেটিক কোড থেকে।

৬. পরিবেশের সাথে খাপ-খাইয়ে ও রাখতে কোষের চাই একটি সুন্দর ও কার্যকর নিয়ন্ত্রণকারী বা রেগুলেটরি প্রক্রিয়া। এসব নিয়ন্ত্রণ-ব্যবস্থা বেশ জটিল এবং এর সব কিছু এখনো স্পষ্ট নয়।

৭. কোষ বিভাজিত হয় এবং বংশবিস্তার করে। এই জটিল কিন্তু অবশ্য-প্রয়োজনীয় কাজটি কোটি বছর ধরে অত্যন্ত নির্ভুলভাবে কোষে সংঘটিত হচ্ছে। কোষের সকল তথ্য সঞ্চিত থাকে ডিএনএ’র ভেতর।

৮. পরিবেশের সাথে সারাক্ষণ খাপ-

খাইয়ে চলার জন্য কোষের তাপমাত্রা, লবণাক্ততা, আয়নসমূহের যথাযথ বৈষম্য, খাদ্য ইত্যাদি সর্বদাই নিয়ন্ত্রণ ও পরিবর্তনের মধ্যে রাখতে হয়। কোষকে অ্যাডাপ্ট করার ক্ষমতা রাখতে হয়।



আমি খুব সিম্পল একটা প্রশ্ন করি। তাহলেই ন্যাচারাল সিলেকশান নিয়ে আপনাদের ধারনা পোক্ত হবে। প্রশ্নটা হল- আমেরিকার মানুষ অত্যধিক গরম সহ্য করতে পারেনা, কিন্তু সৌদি আরবের মানুষ সহ্য করতে পারে কেন?"



মনের গভীরেই আপনি উত্তরটা জেনে গেছেন! হ্যাঁ! সহজ কথায় আমেরিকায় ঠান্ডা আবহাওয়ায় থাকার কারনে আমেরিকানরা ঠান্ডায় অভ্যস্থ হয়ে গেছে, তাই গরম সহ্য করতে পারেনা। আর বিষুবীয় অঞ্চলের সৌদি আরবে দিনের বেলায় প্রচন্ড গরম পড়ায় তারা সহ্য করতে পারে! এটাই ন্যাচারাল সিলেকশান। বিবর্তনবাদের অন্যতম অনুসিদ্ধান্ত হল ন্যাচারাল সিলেকশান। মানে, সহজকথায় প্রকৃতি নির্বাচন করবে আপনার চারিত্রিক এবং পারিপার্শ্বিক ভৌত বৈশিষ্ট্য গুলো। অনেকেই প্রশ্ন করেন, এখন কি মানুষের বিবর্তন হচ্ছেনা? হ্যাঁ হচ্ছে। কিন্তু বস্তুত, আমরা হতে দিচ্ছিনা। গরম লাগলেই আমরা ফ্যান/এসি চালাই, শীত লাগলে হিটার জ্বালাই, কাঁথা কম্বল গায়ে দিই, আমরা খালি পায়ে হাঁটিনা। মোট কথা, আমরা প্রতিকূল পরিবেশে নেই। আমরা প্রকৃতিকে শাসন করতে শিখেছি। তাই আমাদের এই প্রজন্মের বিবর্তন হচ্ছেই না বলা যায়। কিন্তু তাও চলছে মিউটেশান। আপনারা ডিসকভারি চ্যানেলে স্ট্যান লি এর "সুপার হিউম্যান" প্রোগ্রামটা দেখলেই নিশ্চিত হবেন।



শ্রোয়েডিঙ্গারের "হোয়াট ইস লাইফ" প্রাণ ও

জীবনের উৎপত্তি বিষয়ক আলোচনার এক

পথিকৃৎ গ্রন্থ হিসেবে বিবেচিত হয়। কয়েক

প্রজন্ম বিজ্ঞানী তাঁর এই বই দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছেন। যদিও এই বই বৈজ্ঞানিক তথ্যে ঠাসা জীববিজ্ঞানের ওপর প্রামাণ্য কোনো গ্রন্থ নয়। কিন্তু জীবন ও প্রাণ সম্পর্কে এই বইটি বেশ কিছু মৌলিক প্রশ্ন তুলেছিল এবং এ সংক্রান্ত

বৈজ্ঞানিক গবেষণার ভিত নির্মাণ করেছিল। রজার পেনেরোজের মতে এই বইটি ‘এই

(বিংশ) শতাব্দীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রভাবশালী বিজ্ঞান-বিষয়ক লেখনীর অন্যতম।’ এই বইয়ের রচনার সময়ে ডিএনএ

আবিষ্কৃত হয়নি। তাই শ্রোয়েডিঙ্গার জীবনের অনুলিপির মূলে একটি ‘অপর্যাবৃত্ত কেলাস’ (অ্যাপিরিয়ডিক ক্রিস্টাল) আছে বলে মনে করতেন। শুধু একটা বৃহদাণু থাকলেই হলো যে নিজেই নিজের কপি করতে পারে। এদের সাধারণ নাম ‘রেপ্লিকেটর’। ডিএনএ বা আরএনএ অণু এমনই সব রেপ্লিকেটর। যদি কোনো জলীয় দ্রবণে এরা থাকে এবং এদের

গঠনকারী অন্যান্য নিউক্লিক অ্যাসিডগুলো থাকে তবে এদের কপি এরা নিজেরাই তৈরি করতে পারে। অবশ্য এখানে তাপমাত্রাও একটা ভূমিকা রাখে। তাপমাত্রা এমন থাকতে হবে যাতে মাধ্যমটি তরল অবস্থায় থাকতে পারে এবং এতে অণুসমূহের চলাচল অবাধ হয়। আরেকটি ভৌত নিয়ম প্রাণের জন্য অপরিহার্য। সেটা হলো কোষের ভেতর

ও বাহিরের নন-ইকুইলিব্রিয়াম বা অসামঞ্জস্য। কোষ প্রাচীরের ভেতরের রাসায়নিক পরিবেশ, লবণাক্ততা, মূলক ও আয়নের উপস্থিতি বাইরের থেকে অবশ্যই আলাদা হতে হবে। কিন্তু আবার একেবারে অচ্ছেদ্য করা যাবে না।

তাহলে বিপাক সম্ভব হবে না। কারণ প্রাণের

দুটি লক্ষ্মণ অত্যন্ত স্পষ্ট ; বিপাক ও বংশবিস্তার। পৃথিবীতে এই যে বর্ণাঢ্য ও বিচিত্র জীবন আমরা দেখি, প্রাণের যে এক অফুরন্ত

ভাণ্ডার এবং অসাধারণ প্রকাশ ও বিকাশ আমরা দেখি, তার মূলে রয়েছে কয়েকটি অভিন্ন প্রক্রিয়া। তাই অনেকেই বলেন ‘দেয়ার ইজ ওনলি ওয়ান লাইফ ইন আর্থ’ -পৃথিবীতে একটিই প্রাণ আছে। সুন্দরবনের সুন্দরী বৃক্ষ, রয়েল বেঙ্গল টাইগার, প্রজাপতি ও ইলিশ মাছ একে অপর থেকে কতই না পৃথক। কিন্তু এদের সবার কোষের মধ্যেই প্রায় অভিন্ন প্রক্রিয়া চলছে। বৈসাদৃশ্য আছে, কিন্তু একটা অভিন্ন সুর লক্ষ করা যায়। কোষের সকল তথ্য, তার ঠিকুজি- কুলুজি লেখা থাকে নিউক্লিয়াসের

অভ্যন্তরে কুন্ডলিত বৃহদাকৃতির অণু ডি- অক্সিরাইবোনিউক্লিক অ্যাসিডের ক্ষার-

অণুর তিনটি করে নিয়ে তৈরি কোডের সমাহারে। ডিএনএ’তে চারটি নাইট্রোজেন-

সমৃদ্ধ ক্ষার অণু (অ্যাডেনিন, গুয়ানিন, সাইটোসিন, থাইমিন) জোড়ায় জোড়ায় ফসফেট চিনির দ্বারা সংযুক্ত থাকে। ১৯৫৩

সালে জেমস ওয়াটসন ও ফ্রান্সিস ক্রিক ডিএনএ’র কাঠামো আবিষ্কার করেন। এই ষাট

বছরে কোষের জেনেটিক তথ্য নিয়ে আমরা অনেকখানি জেনেছি।



অতিসম্প্রতি বাঙালি বিজ্ঞানীদের নেতৃত্বে পাটের জিন-রহস্য উদ্ঘাটিত হয়েছে। তিনটি করে ক্ষার-অণুর জোড়া নিয়ে তৈরি হয় জিন-কোড এবং প্রতিটি কোড একটি করে অ্যামিনো অ্যাসিডের সূত্র বহন করে। এরকম কুড়িটি অ্যামিনো অ্যাসিডের সেট আছে যা পৃথিবীর সকল জীবকুল ব্যবহার করে। সরলতম ব্যাকটেরিয়ায় এক মিলিয়ন ক্ষার-জোড়া বা বেইজ-পেয়ার থাকে এবং সেখান থেকে তিনটি করে কোড নির্বাচন করলে বিন্যাস দাঁড়ায় এক-এর পর ছয়লক্ষ শূন্য (১৬,০০,০০০)! মানুষের বেইজ- পেয়ারের সংখ্যা কয়েক বিলিয়ন, তাহলে সম্ভাব্য বিন্যাস সংখ্যা কত হতে পারে চিন্তা করুন! এভাবে প্রতিটি অ্যামিনো অ্যাসিডের শৃঙ্খল নিয়ে গড়ে ওঠে প্রোটিন। এই প্রোটিনই কোষের সকল কাজের কাজী। এই প্রোটিনই নির্ধারণ করে কোষের বিপাক, বৃদ্ধি — সবকিছু। আমাদের হজমে সাহায্য করে যে ব্যাকটেরিয়া,

অন্ত্রে বসবাসকারী সেই এশেরেশিয়া কোলাই ব্যাকটেরিয়ায় ৪,৬৩৯,২২১ সংখ্যক বেইজ- পেয়ার আছে (৪২৮৮ জিন) এবং মানুষের

আছে ৩ বিলিয়নেরও বেশি (> ৩৫,০০০

সংখ্যক জিন)। তাহলে চারটি ক্ষার অণুকে তিনটি করে সাজালে ৪৩= ৬৪ টি সম্ভাব্য সমাবেশ পাওয়া যায়। এদের প্রতিটিকে কোডন বলে। যেমন অ,ঞ,এ,ঈ ক্ষার অণুর আদ্যক্ষর নিয়ে অঅএ বা অঅঅ একটি কোডন যা লাইসিন নামের অ্যামিনো অ্যাসিড নির্দেশ করে। কাজেই চৌষট্টিটি কোডন দিয়ে বিশটি অ্যামিনো অ্যাসিড নির্দেশিত হবে। ফলে একটি অ্যামিনো অ্যাসিডের জন্য অনেক সময়ে একের অধিক কোডন নির্ধারিত থাকে। এই হলো পৃথিবীতে জীবনের কেতাব যেখানে কোডন-অক্ষরের সমন্বয়ে তৈরি হয়

অ্যামিনো শব্দ। অ্যামিনো-শব্দের সমাহারে তৈরি হয় প্রোটিন-বাক্য। এসব বাক্য দিয়ে তৈরি হয় অধ্যায় (অঙ্গ- প্রত্যঙ্গ), অধ্যায়ের সমাহারের হয় বই (দেহ)। আরো মজার ব্যাপার অ-ক্ষার শুধুই ঞ-ক্ষারের সাথে জোড় গঠন করে এবং এ অবশ্যই সর্বদা ঈ-এর সাথে জোড় গঠন করে। ফলে ডিএনএ’র কুন্ডলীর একপাশের ফিতায় কোডনের ক্রম থেকে অন্যপাশের ফালিতে কী থাকবে তা পরিস্কার বোঝা যায়। এই পরিপূরকতা জীবনের জন্য খুবই উপযোগী।



শেষ করছি সব চেয়ে আলোচিত প্রশ্নের উত্তর দিয়ে। প্রানের উৎপত্তি কিভাবে হল?



সহজ ভাষায় ব্যাখ্যা করি।

প্রাগৈতিহাসিক পৃথিবীর কেমন পরিবেশেই বা প্রথম প্রাণময় কোষের আবির্ভাব ঘটেছিল? প্রাগৈতিহাসিক পৃথিবীর আবহাওয়া খুবই অন্যরকম ছিল। তার সাথে আজকের আকাশ-বাতাসের কোনো মিলই নেই। প্রায় চার বিলিয়ন বছর পূর্বে পৃথিবীর ঘূর্ণন ছিল দ্রুত, চাঁদ ছিল বর্তমানের তুলনায় চার গুণ নিকটবর্তী (ফলে প্রতি তিনঘন্টা অন্তর

আজকের তুলনায় অনেক শক্তিশালী জোয়ার- ভাটা হতো), বাতাসে মেথেন, পানি, নাইট্রোজেন, অ্যামোনিয়া, হাইড্রোজেন সালফাইড ও কার্বন-ডাই-অক্সাইডের প্রধান্য ছিল। অক্সিজেনের লেশমাত্র কোথাও ছিল না। নাইট্রোজেন নীল রং বিক্ষেপ করে বলেই আজকের আকাশ নীল দেখায়। কিন্তু তখন তো নাইট্রোজেনের প্রাধান্য ছিল না, তাই আকাশ ছিল রক্তিম বর্ণের, সূর্য দেখতে নীলচে রঙের ছিল। প্রবল বাতাসের প্রবাহ ও তিন ঘন্টা অন্তুর আদিম সমুদ্রের জোয়ারে সেই সময়ের নরক- তুল্য পৃথিবী দেখলে কে বলত এই গ্রহেই একসময় সুজলা-সুফলা শস্য-শ্যামল প্রান্তর দেখা দেবে!



আদিম পৃথিবীর বাতাবরণের সাথে শুক্রগ্রহের

বাতাবরণের মিল ছিল বলে মনে করা হয়। এখন সেখানে পুরু মেঘমন্ডলের উপস্থিতি লক্ষ করা যায় এবং এই মেঘমণ্ডলের নিচে গ্রিনহাউজ গ্যাসের কারণে পৃষ্ঠের তাপমাত্রা ৪৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকে। এই তাপমাত্রায় তরল পানির উপস্থিতি সম্ভব নয়। তাই শুক্রগ্রহে প্রাণের সম্ভাবনা কম। একইভাবে সূর্য থেকে বেশি দূরে অবস্থিত বলে মঙ্গলের তাপমাত্রা খুবই কম। তাই এই দুই গ্রহে প্রাণের সম্ভবনা কম। তবে এদের উৎপত্তি হয়েছিল মোটামুটি একই কাঁচামাল দিয়ে। প্রথম দিকে পৃথিবীতে হাইড্রোজেন, হিলিয়াম, মেথেন, পানি, নাইট্রোজেন, অ্যামোনিয়া, হাইড্রোজেন সালফাইডের প্রাধান্য ছিল। উদ্বায়ী বিধায় প্রথম দুটি গ্যাস শীঘ্রই মহাশূন্যে হারিয়ে যায়।

নাইট্রোজেন ব্যতীত বাকি গ্যাসগুলো সূর্যের অবলোহিত রশ্মির দ্বারা আলোক-বিশ্লেষণ (ফটোলাইসিস) প্রক্রিয়ায় ভেঙ্গে মৌলিক গ্যাসে পরিণত হয়। পৃথিবীতে তরল পানির সমুদ্র থাকায় ফটোলাইসিস প্রক্রিয়ায় যে কার্বন-ডাই- অক্সাইড ও সালফার-ডাই-অক্সাইড উৎপন্ন হয় সেসব ঐ সমুদ্রে দ্রবীভূত হয়ে যায়। কালক্রমে এরা শিলীভূত হয়ে বিভিন্ন শিলার অংশে পরিণত হয়। কয়েক কোটি বছর পর পৃথিবীর আকাশ নীল হয়ে আসে। কিন্তু তার আগ পর্যন্ত পৃথিবীর বাতাবরণে বিজারকদের উপস্থিতি বেশি ছিল (অর্থাৎ হাইড্রোজেন, মেথেন, অ্যামোনিয়ার প্রাধান্য)

বলে অনেকেই মনে করেন। এই অবস্থায়

পৃথিবীতে প্রাণের জন্য অপরিহার্য কিছু

বৃহদাণু তৈরি হয়ে থাকতে পারে বলে বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন। তাঁরা মনে করেন তখনো পৃথিবী যথেষ্ট জীবননোপযোগী হয়নি, তখনো বাতাস ও মাটিতে কার্বন ও নাইট্রোজেনের সহজলভ্যতা প্রতিষ্ঠিত হয়নি।

এমনি সময়ে কিছু প্রাথমিক হাইড্রোকার্বন চেইন, অ্যারোম্যাটিক যৌগ, অ্যামিনো অ্যাসিড

ইত্যাদি তৈরি হয়ে থাকতে পারে। এদেরকে ভিত্তি করেই পরবর্তীতে প্রাণের বিকাশ ঘটেছে বলে অনেকে মনে করেন। এ সংক্রান্ত একটা অত্যন্ত মজাদার ক্লাসিক এক্সপেরিমেন্ট আছে।



আলেক্সান্দার ওপারিন এবং জে.বি.এস.

হ্যালডেনের মতো অনেক বিজ্ঞানীই মনে করতেন যে আদিম পৃথিবীর বিজারক- বাতাবরণ জৈব-যৌগ সংশ্লেষণের অত্যন্ত

উপযোগী একটি মাধ্যম। বাতাসে যদি হাইড্রোজেন বা হাইড্রাইড- সমৃদ্ধ গ্যাসের আধিক্য থাকে তবে সেঈ বাতাসকে বিজারণ-ক্ষম বা রিডিউসিং অ্যাটমোস্ফিয়ার বলা যায়।

এইরকম বাতাবরণে জৈবযৌগ তৈরি হতে পারে কি- না সেটা পরীক্ষা করে দেখার সিদ্ধান্ত নিলেন স্ট্যানলি মিলার। ১৯৫৩ সালে তিনি নোবেল- লরিয়েট বিজ্ঞানী হ্যারল্ড ইউরে’র ছাত্র। মিলার পরীক্ষাগারে আদিম পৃথিবীর

বাতাবরণের একটা ক্ষুদ্র সংস্করণ তৈরি করতে সক্ষম হলেন। একটি কাঁচের ফ্লাস্কে বাতাস নিষ্কাশন করে তাতে মেথেন, পানি, হাইড্রোজেন ও অ্যামোনিয়া গ্যাস

ভরলেন। পানিকে ফুটিয়ে বাষ্পও তৈরি মম করলেন। ধাতব ইলেকট্রোড দিয়ে বৈদ্যুতক

স্পার্কেরও ব্যবস্থা করলেন। অর্থাৎ আদিম

পৃথিবীর বাতাবরণে যা যা ছিল তার সবই

পরীক্ষাগারে তাঁর যন্ত্রপাতিতে ছিল, এমনকি বজ্রপাতকে বৈদ্যুতিক স্পার্কের সাহার্য্যে সিমুলেট করা হলো। অতঃপর পরপর কয়েকদিনের উপর্যুপরি স্পার্ক এবং একই গ্যাস-মিশ্রণ বারবার চালনার শেষে তিনি কমলা-লাল রঙের একটা দ্রবণ পেলেন। অত্যন্ত কৌতূহলের বিষয় এই যে, এই দ্রবণে বিশটি অ্যামিনো অ্যাসিডের মধ্যে দশটিই পাওয়া যায়; আরও ছিল আরএনএ’র রাইবোজ সহ অন্যান্য শর্করা। তাছাড়া আরএনএ’র গাঠনিক উপাদান নাইট্রোজেন-সমৃদ্ধ ক্ষার-অণু অ্যাডেনিন, গুয়ানিন, সাইটোসিন ও ইউরেসিলও পাওয়া গেল। ফ্লাস্কের গ্যাস মিশ্রণে উপর্যুপরি বৈদ্যুতিক স্পার্কের ফলে স্ফুলিঙের অতিবেগুনী রশ্মি দ্বারা ফরমালডিহাইড তৈরি হয় যা পরে অ্যামোনিয়া ও হাইড্রোজেন সায়ানাইডের

সাথে মিলে তৈরি করে অ্যামিনোনাইট্রাইল। এটাই পানির সাথে বিক্রিয়া করে তৈরি করে গ্লাইসিন নামক

অ্যামিনো অ্যাসিড। অন্যদিকে অ্যাডেনিন তৈরি হয় হাইড্রোজেন সায়ানাইডের পাঁচটি অণুর সম্মিলনে। মেথেন, অ্যামোনিয়া ও হাইড্রোজেন সমৃদ্ধ গ্যাস- মিশ্রণে বজ্রপাত হলে বা বৈদ্যুতিক স্ফুলিঙ্গের উপস্থিতিতে হাইড্রোজেন সায়ানাইড ও ফরমালডিহাইড তৈরি হয়। এই দুটি উপাদান এমনকি আন্তঃনাক্ষত্রিক গ্যাসেও পাওয়া গেছে। কাজেই এরা শুধু পৃথিবীতে নয়, নভোমন্ডলেও উপযুক্ত

রাসায়নিক পরিবেশে তৈরি হতে পারে। ফরমালডিহাইডের পলিমারাইজেশনের

ফলে রাইবোজ সহ অন্যান্য শর্করা পাওয়া যায়। কাজেই মিলার প্রমাণ করলেন যে প্রাণের জন্য অপরিহার্য প্রায় সকল অণুই প্রাচীন পৃথিবীর বিজারক বাতাবরণের উপস্থিতিতে তৈরি হতে পারে। এটা কোনো ম্যাজিক নয়, শ্রেফ রসায়ন।



অতএব প্রানের সৃষ্টি জাস্ট একটি রসায়ন। কোনো মিরাকল নয়।



শেষ করি। শেষে শুধু একটা কথাই বলবো, সত্যকে স্বীকার করতে শিখুন, নয়তো সত্য আপনাকে স্বীকার করবে। ধন্যবাদ ডারউইন। আপনার হাত ধরেই হাঁটছি বিজ্ঞানের পথে, সত্যের পথে। ভালোলাগার বিহ্বলতায় ভালোবাসার আবেগে, সত্যিকার জ্ঞানতীর্থে।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১০:২৮

সাদরিল বলেছেন: পয়েন্টগুলো বোল্ড করে একটু গ্যাপ রাখলে ভালো হতো, পড়ার সময় একটু পর পর গুলিয়ে ফেলেছি। তথ্যবহুল পোস্ট।

২| ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১০:৫২

শ্রীঘর বলেছেন: স্যালুট ডারউইন! তোমার এ আবিস্কার পৃথিবী সারাজীবন মনে রাখবে!!

৩| ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১০:৫২

বেলা শেষে বলেছেন: Good writing, good post
Up to next time, good luck.

৪| ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১২:০৮

পাঠক১৯৭১ বলেছেন: ডারুইনকে ইহুদীদের 'শেষ নবী' বানালে ভালো হতো।

৫| ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১১:০২

কাফের বলেছেন: অসাধারণ পোষ্ট!

বিবর্তনবাদ নিয়ে সহজ বাংলায় প্রচুর লেখা দরকার আমাদের দেশে।




৬| ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১০:০১

এসিড খান বলেছেন: ধন্যবাদ। আসলে মোবাইল থেকে পোস্ট করেছি। তাই, বোল্ড করার ঝামেলায় যাইনি। আর পিসি থেকে পোস্ট করলে কয়েকটা ছবিও অ্যাড করতে পারতাম।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.