![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমারর ব্লগবাড়ীতে আপনার সুস্বাগতম । ইনটারনেট বিপ্লবের যুগে কোন তথ্য যদি সার্চ দিয়ে না পাওয়া যায়, সত্যিই বিরক্তিকর! এই বিরক্তি কিছুটা দূর করার জন্যই আমার ব্লগি ..।! প্রয়োজনীয় তথ্যটি পেলে ভাল লাগবে নিজের, স্বার্থক হবে ব্লগিং! আসবেন আবার, বারবার! আমার সাইট http://www.kazisour.blogspot.com/
ঝিনাইদহ জেলার শৈলকুপা উপজেলার প্রত্যন্ত পল্লী রয়েড়া গ্রাম। ঝোপ-ঝাঁড়, এঁদো-ডোবার ধারে জীর্ণশীর্ণ স্যাতস্যাতে ছাপড়া ঘরে বীরাঙ্গনা রিজিয়ার সাজানো স্বপ্নের সংসার। সংসার বলতে পরনে ১১টি তালি দেওয়া সাদা বসন, মেঝেয় ছড়ানো-ছিটানো থালা-বাসন ও পানের বাটা, বোঁটকা গন্ধের ছেড়া, মলিন বিছানাপত্র আর এক পাশে ঝুলানো শিকায় লেপকাঁথা। ঘরের মাচায় শূন্য মাটির হাড়ি-পাতিল ও বারান্দার একদিকে রান্নার চুলা। এ বিধবার সংসারে মাঝে মধ্যে দুই মেয়ের চলাফেরা ছাড়া তেমন কিছু নেই। তবে আজকাল তাঁর স্বামীর মুক্তিযোদ্ধার ভাতার টাকার পাওয়া গেলেও বীরাঙ্গনা রিজিয়ার কপালে আজও পাকসেনাদের এঁকে দেওয়া হিংস্র থাবার চিহ্ন ছাড়া এক শিশি মাথার তেল জোটেনি বলে তিনি জানান।
বীরাঙ্গনা বীরত্বের ইতিহাস জানতে চাওয়ার সাথে সাথে ৬২ বছরের এ বৃদ্ধার চোখ ভরা জল দেখে নিজেকে খুব ছোট লাগলো। লজ্জায় বিনম্রচিত্তে আবার পেশাগত প্রয়োজনে ধীরে ধীরে জানা গেল..... সেদিন ১৯৭১ সালের মে মাসের যে কোন সোমবার। পৈত্রিক বাড়ি রাজবাড়ী জেলার পাংশা থানার কসবামাজাইল। পিতা নছু মন্ডুলের ৩ ছেলে ও ৪ মেয়ের মধ্যে ১৮ বছরের রিজিয়া খাতুন ২য় কন্যা। যুদ্ধের ভয়াবহতা বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার মাইলমারী গ্রামের বসির ডাক্তারের ভাইপো তাঁর খালু রফিক নিরাপদে থাকার জন্য খবর দেয়। কথামত রিজিয়া খাতুন তার ছোটবোন ও বড় ভাই আজিমদ্দিনকে নিয়ে শৈলকুপার উদ্দ্যেশ্যে রওনা হয়। পথে শৈলকুপার রানীনগর গ্রামের হাজরা মন্ডলের বাড়ির ধারে আসতে সন্ধ্যা নামে। সচতুর হাজরা কৌশলে রাত যাপনের নিরাপত্তার কথা বলে তাদেরকে আটকে রেখে পরদিন মঙ্গলবার ভোর রাতে পাকসেনাদের খবর দেয়। রিজিয়ার কাছে থাকা একটি রিকো ঘড়ি দেখে এদেশীয় দোসরা ঘড়িটি বিশেষ সংবাদ প্রেরণযন্ত্র বলে মন্তব্য করে এবং হাজরা ঘড়িটি কেড়ে নিয়ে আজমত ও মোমেনাকে হত্যার হুমকি দেয়। এ সময় পাকসেনাদের চোখ পড়ে ষোড়শী সুন্দরী রিজিয়ার উপর। তাদের লোলুপ দৃষ্টির কবলে পড়ে বড় ভাই আজমত ও ছোটবোন মোমেনার মুক্তির বদলে নিজের সম্ভ্রম তুলে দেয় পাক সেনাদের হাতে। ভাই বোনকে ছেড়ে দিয়ে রিজিয়াকে পাক সেনারা নিয়ে আসে ওয়াপদা কলোনিতে।
দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধকালীন শৈলকুপা ওয়াবদা কলোনী ও শিশু
ডাক্তারে বাড়িতে রিজিয়ার সাথে দেখা হয় অনেক বীরাঙ্গনা ,
কিন্তু কথা হয় না। এ সময় প্রয়োজনমত পাকসেনারা বীরঙ্গনাদের
বেশীর ভাগ সময় শিশু ডাক্তারের বাড়ী ও ওয়াবদার আইবিতে
নিয়ে আসতো। ২০-৩০ জন বীরঙ্গনার মধ্যে সকিনা নামের
একজনের সাথে তার পরিচয় ঘটে। প্রতিটি মেয়ের বয়স ১৫-৩০ এর
মধ্যে এবং অসম্ভব সুন্দরী ছিল বলে তিনি জানান। খাবার ও
সাজসজ্জার জন্য বেগ পেতে না হলেও মনের মানসে আধখানি
পূর্ণিমা চাঁদের মত আজও জ্বলজ্বল করে সেই ভয়াল একাত্তরের
নৃসংশতা। ঘুরে ফিরে চেনা-অচেনা বিভিন্ন বয়সের
পাকসেনাদের কবলে পড়া মেয়েদের আর্তচিৎকার এখনো তাঁর
মনে পড়ে। যে মেয়েরা বেশী ঝামেলা করতো তাদেরকে
লাথি মেরে বুট দিয়ে হাত-পা চেপে ধরতো মেঝেয়। খুবলে
খাওয়া রক্ত-মাংসপিণ্ডের উপর উদ্যম দাপাদাপির পৈশাচিক
নির্যাতন কতটা বেদনাদায়ক এখনো মনে আছে বীরঙ্গনা
রিজিয়ার। মনে আছে নরখাদকদের ভোগবিলাসে বাঙালী
ললনাদের কত নিয়মে ব্যবহার করা হতো। একটু এদিক ওদিক হলেই
বুটের লাথি ও লাইফেল বাটের আঘাতে নিথর হয়ে একবেলা
আধবেলা পড়ে থাকার নির্মমতা ভুল হয়নি রিজিয়া খাতুনের।
দেশ স্বাধীনের পর ৮নং সেক্টরের অধীনে বীরমুক্তিযোদ্ধাদের
একটি দল তাদেরকে শৈলকুপা আইবি থেকে যখন উদ্ধার করেন তখন
সবাই ছিল বস্ত্রবিহীন। মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তায় কাপড় পেয়ে
বাইরে এসে অনেকেই গা ঢাকা দেয়, কেউ কেউ পালিয়ে নিজ
এলাকায় চলে গেলেও রিজিয়ার বাড়ী রাজবাড়ী জেলা হওয়ায়
মুক্তিযোদ্ধা দবির জোয়ার্দ্দার, রহমত আলী মন্টুসহ আরো
অনেকে মিলে তাকে রয়েড়া ওয়াজেদ আলীর বাড়িতে রাখেন।
দবির জোয়ার্দ্দার বীরঙ্গনা রিজিয়ার বিয়ের প্রস্তাব ঘোষণা
করলে মুক্তিযোদ্ধা সিরাজ মণ্ডল সম্মত হয়ে পরদিন রিজিয়ার
পৈত্রিক বাড়ী কসবামাজাইল থেকে বিয়ে করে আনেন।
সংসার জীবনে দেবর, ননদ, ভাসুর আত্মীয়-পরিজন কারো কাছেই
তিনি সম্মান না পেলেও স্বামী মুক্তিযোদ্ধা সিরাজ তাকে
কোনদিন অবহেলা করেননি বলে জানান। তিনি বলেন, “শ্বশুর
বাড়ীর লোকেরা আমাকে অশালীন গালি-গালাজ করতো।
বিয়ের দীর্ঘদিন পর ২ কন্যা সন্তানের জন্ম হলে পরিবেশ কিছুটা
পরিবর্তন হলেও এখনো লজ্জায় অনেকের কাছে মাথা তুলে
দাঁড়াতে পারি না।”
“স্বামী মুক্তিযোদ্ধা, আমি বীরাঙ্গনা ।” এ কথা ভেবে লাভ কী?
জীবন আর চলছে না রিজিয়া খাতুনের। সংসারে অভাবের তাড়নায়
ছোট মেয়েকে ঢাকায় এক বাসায় কাজে দিয়ে এসেছেন। বড়
মেয়েকে এসএসসি পাস করিয়ে একটা চাকুরীর জন্য জেলা অফিস,
ডিসি, এমপি-মন্ত্রী ধরে ও ধর্না দিয়েও কোন কাজ হয়নি। স্বামীর
রেখে যাওয়া ৪ কাঠা ভিটে বাড়ী ছাড়া কোন সম্পদ তাঁর অবশিষ্ট
নেই যা দিয়ে সংসার চলে। পুত্র না থাকার দরুন আর্তিতে তার
চোখ-মুখে হতাশার ছাপে কপালে কয়েকটি ভাঁজ পড়ে গেছে।
আক্ষেপ করে বীরাঙ্গনা রিজিয়া বলেন, যুদ্ধে কোন মা-
বোনের সম্ভ্রম যায়নি, শুধু পুরুষের অস্ত্রেই দেশ স্বাধীন হয়েছে
বলেই সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা করেছে। আর বীরাঙ্গনা
খেতাবে ভূষিত করে সমাজে মাথা নোয়াবার সুন্দর ব্যবস্থা করে
দিয়েছে আমাদের মত অনেক মেয়ের। আর কোন যুদ্ধে যেন
মেয়েদের বীরাঙ্গনা হতে না হয়। পুরুষের যাঁতাকলে বলির পাঁঠা
মেয়েদের বীরাঙ্গনা খেতাব পাবার চেয়ে আত্মগোপন করাই
শ্রেয় ছিল বলে রিজিয়া খাতুন পরিষ্কার বলেন। স্বাধীনতার মত পরম
বস্তুকে হাতে পেলেও বীরত্বের খেতাবে চেয়ে আত্মসম্মান
নিয়ে বাঁচার চেষ্টায় যারা ক্যাম্প থেকে পালিয়েছিল তাদের
অনেকেই হয়তো ভালো আছেন, একথা বলেই তিনি ঝর ঝর করে
চোখের জল ছেড়ে দেন।
বড় মেয়ের একটি চাকুরীর বিনিময় কিংবা সরকারী সাহায্যে তাঁর
জীবদ্দশার শেষ মুহূর্তগুলো হাসিতে ভরে উঠুক এ নিশ্চয় অমূলক
চাওয়া নয় ? হাজারো সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার
অনাবিল সুখ-ভোগ করতে বীরাঙ্গনার জন্য কোন মহৎ প্রাণ আছেন
কি ? এ প্রশ্ন করেই রিজিয়া খাতুন প্রস্থান করে বলেন, “বাবা তুমি
যাও...।”
তথ্যসূত্র :shailkupa।hpage.com
০৬ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১১:৪১
থিওরি বলেছেন: (
২| ০৬ ই অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ১০:৫৮
সুমন কর বলেছেন: বিনম্র শ্রদ্ধা রইলো উনার প্রতি।
শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ। +
০৬ ই অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ১১:৫৮
থিওরি বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১|
০৬ ই অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ৯:৪৯
অগ্নি সারথি বলেছেন: দুঃখিত পুরোটা পরে ওঠার সাহস করে উঠলাম না।