![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
২০১৫ সালের মার্চ মাসের ১৮
তারিখ. . .
সবে মাত্র রাত শুরু...
অজানা কোন অঘটনের আশঙ্কায় মন
বারবার হতচকিত করে ওঠছে।
শেষ পর্যন্ত বুঝতে পারলাম কিছু
একটা হতে যাচ্ছে।
আমার এই চোখ দুটো হতভভ্ব দৃষ্টিতে
দেখল, ০৮ঃ৫৬ মিনিটে মা আমার
চোখের
সামনে চিরকালের মতো চলে যান।
যেই
আমি গত একটা সপ্তাহ ধরে
ডাক্তারকে বলে আসছি, মাকে যেন
ওনারা মেরে ফেলেন। সেই আমিই
বিশ্বাস করতে পারছিলাম না যে,মা
আর নেই। দীর্ঘ ছয়
মাস পেইন মিটারের টেন অন টেনের
অবর্ণনীয় কষ্ট সহ্য করে মা'কে
বিদায় নিতে হয়েছিল।
মায়ের শরীরে দানা বেঁধে ছিল ঘাতক
ব্যাধি ক্যান্সার । দুই রকমের
মারাত্ক ক্যান্সার (Pulmonary
metastasis and Bony
metastasis) মায়ের শরীরের
কোষগুলু ভক্ষণ করতে থাকে
প্রতিনিয়ত। দেয়া হয়েছিল latest cemotherapy ৬ টা ও রেডিওথেরাপি.
কোন কাজই হয়নি এতে।
কারণ দুর্ভাগ্যবশত এই ক্যান্সার ততক্ষণে পৌছে
গিয়েছিল ক্যান্সারের শেষ ধাপে
অর্থাত্ 4th step এ.
এ বেলায়
আমি আমার সবচেয়ে প্রিয় মানুষটিকে
হারিয়েছিলাম।
মায়ের সব
লাইফ সাইন কিভাবে বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল
পরিস্কার বুঝতে পেরেছিলাম। কিন্তু
সব বুঝতে পেরেও বিশ্বাস করতে পারি
নাই যে, মা আর নাই। কারণ সেই
ছোটবেলা থেকেই আমি নিজে নিজে
একটা
বদ্ধমূল ধারণা করে নিয়েছিলাম যে,
মা আমার আগে কখনোই মারা যাবে
না। ভুল করেও যদি কখনো সিমুলেট
করার চেষ্টা করতাম যে,মা নাই...
এখন আমি কি করবো... তাইলেই হইত।
কেঁদে কেটে একাকার করে ফেলতাম।
কখনো একাই বাথরুমে গিয়ে কাঁদতাম,
মনের ভিতরে বন্যার পানি বইত। সেই
আমিই তখন অবিশ্বাসে
বোবা হয়ে গেছিলাম।
মা মারা গিয়ে ভালোই আছেন ঐ
দুনিয়ায়। আমি জানি। কিভাবে? আমি
জানি... আমার মা ভালো আছে...
অনেক ভালো। কিন্তু মাকে ছেড়ে
আমি একেবারেই ভালো নেই। মানুষের
সাথে হাঁসি আনন্দ করি...
ফেসবুকে লেখালেখি করি...
কিন্তু সেটা
মা'কে ভুলে থাকার জন্যে।
বাড়িতে যাওয়ার ইচ্ছা ফুরিয়ে এসেছে,
ওখানে গেলে আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে
আসে; বুকের ব্যথাটা ভয়ঙ্কর
মাত্রায়
বেড়ে যায়।
মাঝে মাঝে এই ভেবে এখনও
অবাক হই যে, যার মাথার একটা চুলও
সাদা হয়েছিল না সেই জন নেই; আর
আমার মাথাভর্তি পাকা চুল,(যদিও
আমার বয়স এখন ১৭) আমি বেঁচে
আছি!!! ভালো মানুষ দুনিয়াতে
বেশিদিন
থাকে না; খারাপেরা বেঁচে থাকে- তা
প্রমাণ করতেই কিনা মা আমাকে
একা রেখে চলে গেলেন। আর আমি
আজও বেঁচে রইলাম...
ডাক্তাররা যখন মায়ের
টাইম লাইন বেঁধে দিয়েছিল আমি সেটা
বিশ্বাস করি নাই। করি তো নাই,
মাকেও জানাই নাই। মা তাই
মাঝে মাঝেই আমাকে বলতেন, তিনি
সুস্থ হয়ে কি কি করবেন? আমাকে
নিয়ে
তীর্থক্ষেত্রে যাবেন... বাসার পাশের
খালি
জায়গাটুকুতে কি কি গাছ লাগাবেন......
আরো কত কিছু...
ভাবলে অবাক হয়ে যাই, কিভাবে ঐ
কথাগুলো শুনে আমি হাসিমুখে মায়ের
দিকে তাকিয়ে থাকতে পারতাম!!!
মা আজ নেই এক মাস বিশ দিন হয়।
মা সব সময় চেয়েছিলেন, আমি যেন
একজন ভালো মানুষ হই, সৎ ও সুন্দর
মনের মানুষ হই। কিন্তু আমি সেটা
আজও হতে পারিনি। সবার কাছে
মায়েয় জন্যে দোয়া চাইবো না; চাইবো
আমার জন্যে... আমি যেন আমার
মায়ের চাওয়া সেই ভালো মানুষটা হতে
পারি।
আর আমি ভালো মানুষ হলেই
সেটা আমার মায়ের জন্যে হবে
সবচেয়ে বড় দোয়া..
©somewhere in net ltd.