নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ভালবাসি লিখতে। ছোট ছোট অনুভূতিগুলোকে শব্দে প্রকাশ করতে। ভালবাসি দেশ, মাটি ও মানুষকে।
আজ বলব ছোট্ট এক মিজানের কথা।
এই মিজানের সাথে হুট করে একদিন আমার দেখা হয়। দেখা হওয়াটা অবশ্য ভাগ্যের পরিহাস বলা যায়। রাস্তার পাশে বড় রকমের ভীড় জমে আছে। মানুষের হা-হুতাশ "আহারে, পোলাডা মইরা গেছেগা!" দেখি, ছোট্ট এক ছেলে, বয়স কতই বা হবে! আট থেকে দশ বড়জোড়। নিথর দেহ পড়ে ছিল। প্রথম দর্শনে যে কেউ মরদেহ ভেবে ভুল করবে। পায়ের কাছে ক্ষত থেকে রক্তধারা বের হচ্ছিল। জানতে পারলাম, ঘাতক গাড়ি ছেলেটির পায়ের পাতার উপর চাকা উঠিয়ে দিয়েছে। এত মানুষ আশেপাশে কিন্তু কেউই কাছে গিয়ে দেখছে না, ছেলেটি বেঁচে আছে কিনা!
বেঁচে থাকার কথা বলছি এই কারনে, ছোট দুর্ঘটনা ঘটলেও, রক্তপাত না হলেও চারপাশে ভীড় করা আমাদের সমাজের বড় অংশ ভেবে নেয়, মরে গেছে মানুষটি, যে দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে।
আমাদের মানবতা যে সেই কবেই ভষ্ম হয়ে গিয়েছে তা অনুভব করলাম সেদিন প্রবলভাবে। তখনই ছেলেটি নড়ে উঠল এক সেকেন্ডের জন্য। কেউ একজন বলে উঠল, "বেঁচে আছে এখনও"। তারপরের সময় কিভাবে কেটেছে আমার জানা নেই। হাসপাতাল, ডাক্তার, ছুটোছুটি আরও কত কি! যখন ডাক্তার বলল, ছেলেটি ঠিক হয়ে যাবে, তখন কি এক স্বর্গীয় অনুভূতি আমায় পেয়ে বসে, তার বর্ণনা দেয়া আমার মত তুচ্ছ প্রাণীর কর্ম নয়।
আমি গভীরত্ব নিয়ে মিজানের দিকে তাকাই কোন এক সময়ে। ওর হাড় জিরজিরে শরীরে কাল চামড়ার প্রলেপ। মুখের দিকে তাকালে অপুষ্টির চিহ্নকে ছাপিয়ে এক কোমল মায়া নজর কেড়ে নেয়। সেই মুখের দিকে তাকিয়ে যে কেউ এক মুহূর্ত চুপ থাকবে। হারিয়ে যাবে মায়াময় অনুভূতির জগতে। যখন জ্ঞান ফিরল, তখন সেই মিজানের করুণ চাহনী দেখতে পেয়েছিলাম। তাতে খুশি ছিল, বেঁচে থাকার আনন্দ ছিল, ছিল স্নেহ পাওয়ার আকুতি। মিজানের কাছ থেকে জেনে ওর বাবা মাকে খবর দিয়েছিলাম। তারা এসে তাদের স্নেহের ছেলেকে দেখতে পেয়ে কান্নায় লুটিয়ে পড়ছিল। রিক্সাচালক বাবা বলছিল তার ছেলের নানা গুনের কথা। মায়ের প্রলাপবাক্য আর গালিগালাজ এ হাসপাতালের পরিবেশ হয়ে ক্ষণিকের জন্য হয়ে উঠেছিল ভারী। বলাই বাহুল্য, গালিগুলো ছিল সেই ঘাতক ড্রাইভারের উদ্দেশ্যে।
এরপর অনেকদিন মিজানকে দেখিনি। পুরান ঢাকার ওই এলাকায় আরো অনেকবার গিয়েছি। হন্যে হয়ে তন্ন তন্ন করে মিজানকে খুঁজেছি এই চোখজোড়া দিয়ে। পাইনি। সেই ছোট্ট মিজান দাগ কেটে গেছে মনের গভীরে। আফসোস হয় ভেবে, এভাবে কত মিজান হারিয়ে যায় চোখের আড়ালে। কেউ কেউ খবরের শিরোনাম হয় তো কেউ কেউ চুপিচুপি বিদায় নেয় এই চেনা পরিবেশ থেকে। তাদের মুখে থাকে কত হাহাকার আর নিশ্চুপ ভৎসনা!
আমি কোন একদিন সেই মিজানের দেখা পাওয়ার ইচ্ছে এখনো লুকিয়ে রেখেছি সযতনে। মিজানরা ভাল থাকুক সমাজের বুকে। বেড়ে উঠুক প্রাণভরা উচ্ছ্বাস নিয়ে। এগিয়ে যাক জীবনের পথে, আমাদের অবাক করে দিয়ে...
২৪ তম দিন
মার্চ- ২০১৮
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
ছবি - নেট
৩১ শে মার্চ, ২০১৮ সকাল ১১:২৮
খালেদা শাম্মী বলেছেন: আমিন। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে নিজাম সাহেব।
আমিও কয়েকদিন থেকে মন্তব্য করতে পারছিনা। তবে লেখা পড়ি নিয়মিত। আপনার কারো উপর অভিযোগ ছিল। এরপর আবার বায়ো আপডেট করেছেন সবই দেখেছি যদিও মন্তব্য করতে পারিনি। আপনার কাছ থেকে নতুন নতুন লেখা পাব এটাই প্রত্যাশা।
ভাল থাকুন এই শুভকামনা।
২| ৩১ শে মার্চ, ২০১৮ দুপুর ২:৩২
মো: নিজাম উদ্দিন মন্ডল বলেছেন: ঝামেলা মিটে গিয়েছে
ব্লগে কয়েক জনের মধ্যে একটু ভুল বুঝাবুঝি ছিল। সন্ধির জন্য সিনিয়রেরা লিখেছিল। ওখানে সবাই মিলে কি মজাই না করলাম??
ইস্, আপনি যদি থাকতেন??
©somewhere in net ltd.
১| ২৮ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ১০:০১
মো: নিজাম উদ্দিন মন্ডল বলেছেন: আহারে! বেচারা!!!
মিজানরা ভালো থাকুক।
(আপনার লেখা কয়দিন পড়া হয় নি)