![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
শিরোনাম টা চুরি করা।
আসলে টার্ক বলে কিছু নেই। রাত ২:২১ মিনিটে এ ধরণের কথার মানে কি? মজা?
আমরা যেটাকে আদর করে টার্ক বলি অথবা অন্যরা যারা এটাকে টার্ক নামেই জানে এটা আসলে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় এর আবাসিক সেমিস্টার (Residential Semester) হিসেবে অফিসিয়ালি বলা হয়। TARC হল Training and Resources Center, যেটা পূর্বে বলা হত ব্র্যাক NGO এর ক্ষেত্রে।
যাই হোক Traditionally আমরাও এটাকে টার্ক নামে ডাকতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় এ ভর্তি হওয়া মানে তাকে এই টার্ক এ যেতেই হবে, আজ নয় কাল। এই ক্যাম্পাস পরিচিত হল ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় সাভার ক্যাম্পাস নামে।
তো কি হয় এই টার্ক এ? কেনই বা এটা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় বা বিশ্ববিদ্যালয় এর বাইরেও এত কথা,এত আলোচনা-সমালোচনা। একটু ফ্ল্যাশ ব্যাক এ যাই, হ্যাঁ?
জানুয়ারি ২৪,২০১৪ বিকাল ৩.০০ টা শার্প
মহাখালি ক্যাম্পাস এর ক্যফেটেরিয়া তে ৪৫০ জন এর মত ছেলেপেলে। তল্পি-তল্পা সহ। কয়েক জনকে দেখা গেল বগলে কোলবালিশ নিয়া ইধার উধার দেখতেছে। মাইকে বলা হল লাইন ধরতে। Information Desk এর সামনে আড়ং দুধ এর গাভীর ছবি আঁকানো গাড়ির বিশাল বহর। সবার মাঝেই চাপা উত্তেজনা। একটা একটা করে করে সেই আড়ং দুধ এর গাভী ওয়ালা গাড়ি আসছে আর সবাই লাইন ধরে গাড়িতে উঠছে। আগে লাগেজ দেন আমরা। অনেক অভিভাবক কে দেখলাম উড়ে উড়ে এসে সন্তানের কপাল,গাল,কান নাক সহ পঞ্ছ ইন্দ্রিয় তেই চুমা চাট্টি দিয়া লাল বানায় ফালায়তেছে শেষ বারের মত। আমার আব্বুও দেখা দেখি আমাকে একটা ছোট্ট করে হাগ দিল । একটা বিদায়ের সুর যেন আজ বাজছে বিয়গলে। গাড়িতে উঠলাম, মামায় এক্সেলেটর এ পাড়া দিতেই কিসের কি? গান শুরু হয়ে গেল,’’ তুনে মারে এন্ট্রিইয়ান, দিল মে বাজে ঘান্টিয়ান ট্যাঁও ট্যাঁও ট্যাঁও’’।
ওই যে শুরু হল একসাথে গান গাওয়ার ব্যাপারটা,চলেতেই থাকল ৩ মাস। না,গানটা না। একসাথে চলার ব্যাপারটা একসাথেই চলতে থাকল। কত গান আসল গেল,কত জায়গায় গেলাম,কত কি করলাম কিন্তু এই ‘’একসাথে’’ নামক ভুতটা ছাড়ল না। জেঁকে বসল ভাল মতই। ঠিক্কাসে ঠিক্কাসে ভাই ব্রাদার একসাথে :v.
ছায়ানীড়, ধানসিঁড়ি, কৃষ্ণচূড়া, গন্ধরাজ এ ছেলেরা এবং সূর্যোদয়, দিগন্ত, রজনীগন্ধা এ মেয়েরা সংসার শুরু করল। ভয় পাবেন না। এগুলা ডরমিটরি :v. তখন তো শীতের শেষ।কিন্তু ওই এলাকায় তখন ও শীতের ভালই দাপট। সবাই যে যার রুম এ জিনিস পত্র রেখেই বেরিয়ে পড়ল ক্যাম্পাস দেখতে। নানা মানুষ নানা মত। ‘’ হুম, খারাপ না, ভালই আছে’’ , ‘’আল্লাহ্, এত্ত ফুল, ওয়াওও সো কালারফুল’’, ‘’ দোস্ত মাঠ টা দেখসস, অস্থির না, চল একটা দৌড় দেই’’, ‘’ আচ্ছা, এইইই খান্ননে আমাদের ৩ মাস থাকতে হবে, ও নো, আই অয়ান্না গো হোম’’ এই টাইপের কথা বার্তা বাতাসে ভাসতে থাকল। আমার মত কয়েকটা ফাতরা পোলাপাইন এর প্রথম কোশ্চেন, ‘’ আচ্ছা ব্রো, জোন টা কোন দিকে’’, ‘’ সিসি ক্যামেরাটা নাই কোনদিকে’’, ‘’ ওই ৬ তলা গন্ধররাজ এর ছাদে উঠা যায় নাইলে ওই পানির ট্যাঁঙ্কির নিচে কি সন্ধ্যার পর কেউ থাকে’’ এই টাইপের কোশ্চেন করতে লাগল।
পরের দিন, দিনব্যাপি একটা সেমিনার দিয়া দিন শুরু হল এবং দিন টাই মাটি কইরা দিল। মারকুলি হল এ ঢুকতেই ‘’হেল্ল মাই ডিয়ার স্টুডেন্ট’’ বইল্লা কে জানি চিক্কুর দিল। শুনলাম এইডাই রেহান স্যার। অ্যাসিস্ট্যান্ট ক্যাম্পাস সুপারিন্টেনডেন্ট। বস পাবলিক। ৫ মিনিটের ভিতরেই পলাপাইন রে শান্ত করায় ফালাইলেন স্যার। পরে সাভার ক্যাম্পাস এর নিয়ম কানুন,কোর্স ডিটেইলস এবং সোশ্যাল ক্যাপিটাল সম্পর্কে নাতিদীর্ঘ কিন্তু দিনব্যাপি বক্তব্য রাখলেন উপস্থিত প্রশাসনিক ব্যাক্তিরা।
পরদিন থেকে ক্লাস শুরু হল। বেশি না, মাত্র ৩ টি কোর্স এখানে করান হয়।
Bangladesh Studies
Ethics and Culture
English/Chinese/French Language course
সাথে ফ্রি হিসেবে রয়েছে কিছু Activity যেমন : Hydro Phonic Vegetable Cultivation, Gardening, Recycling, Creative Writing, Traditional Bangla song, Recitation সহ আরও কিছু ভুং চুং জিনিসপাতি। এগুলোর একটাতে থাক্তেই হবে। এখানে পদে পদে আপানকে মার্ক্স হারানর ভয়ে থাকতে হবে। কারণ প্রতিটা জিনিসের উপর ছিল ছোট ছোট নম্বর যার একটু ঘাটতি আপনার সিজিপিএ কে ধসিয়ে দিতে পারে, যেমনটা দিয়েছে আমার। আবার একটু সচেতনতাই পারে আপনাকে 4 এর মুখ দেখাতে এবং ভিসি সার্টিফিকেট নামক এক বস্তুর দেখা দিতে। ফাও জিনিস। :v
সকাল টা শুরু হত জাতীয় সঙ্গীত এর মধ্য দিয়ে। হাসলেন? হা হা আমিও হাসলাম। ২ দুইটি মার্ক ছিল এই এন্থেম এ উপস্থিতির জন্য। তবে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে এসে এরকম নিয়মিত সবাই এন্থেম করা এবং জাতীয় পতাকা উত্তোলন ছিল ইউনিক এক্সপেরিএন্স। এরপর ৯ টা থেকে ক্লাস। এক এক জন এর এক এক সময় এ ক্লাস। আর অইখানে সময় মেনে চলা টাও একটা এপিক এক্সপেরিএন্স ছিল। ১/২ মিনিট লেট বলে কোন কথা নাই। সব কিছু শার্প। সকাল ১০ টার ৩০ সেকেন্ড পরে গেলেও দেখবেন চোখের সামনে থেকে আপনার খাবার টা চলে যাচ্ছে। কিন্তু আপনি কিছুই করতে পারছেন না। ভাল কথা, ডাইনিং হল ছিল ৪ টা কস্তুরি,সুরভী,তুষ্টি আর তৃপ্তি। মান সম্মত এবং সুস্বাদু খাবার এর বিশ্বস্ত নাম এগুলো ( কর্তৃপক্ষের ভাষায় -_- )। আসলে ছিল ব্র্যাক পোলট্রি ফিডিং এবং ব্র্যাক চিকেন এর ধুন্ধুমার ছড়াছড়ি।
টার্ক এর আরেকটা পরিচয়, It’s a land of photo shoot. সোমবার ফর্মাল ডে তে সব পার্ট সাট লইয়া সেই ছবি তলা হত। সোমবার ছাড়াও যে কোন দিন কোন ইভেন্ট এ এরকম একসাথে বন্ধু বান্ধব অদ্ভুত সহ ছবি এবং সেলফি তোলার সুযোগ করে দিচ্ছে আপনাকে এই টার্ক।
বিকেল বেলায় কেউ ফুটবল, কেউ ক্রিকেট, ভলিবল , ব্যাডমিন্টন ইভেন কেউ কেউ গোল্লাছুট,মাংস চোর, কানামাছি টাইপের খেলায় মেতে উঠত। কেউবা আবার প্রেয়সীর হাত ধরে চলে যেত শাল্লার পিছনে কিংবা দুরন্ত মাঠের পাশের পাতা ঝরা শুকনো রাস্তায় কেউ স্বপ্নের জাল বুন্ত হাঁটতে হাঁটতে। আড্ডাবাজ এর দল বসত আনন্দপুর এ। গোল হয়ে বসে হারিয়ে যেত জীবনের চূড়ান্ত প্রাণোচ্ছল কোন মুহূর্তে। তারুণ্য তখন লাগাম ছাড়া। গান পাগল রা বেশির ভাগ সময় ই মূর্ছনার ওইদিক টায় থাকত। হতাশ যুবক দের এই সময়ে স্মোকিং জোন এ স্টার লাইট অথবা শুকনো পোঁতান গোল্ডলিফ হাতে নিস্পলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে এবং মাঝে মাঝে বুনকা বুনকা ধোঁয়া ছাড়তে দেখা যেত।
Bangladesh Studies কোর্স এর অংশ হিসেবে ২ টি ট্যুর এ নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। একটি হল BRAC Visit. এখানে ব্র্যাক NGO এর বিভিন্ন program যেমনঃ Microfinance, Education, CEP(Community Empowerment), WASH,HR সহ অনেক ধরণের সামাজিক উন্নয়ন মূলক কর্মসূচী যেগুলো সরাসরি ব্র্যাক পরিচালিত সেই সব জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়। একদম তৃণমূল পর্যায় এর এইসব গ্রামীণ কার্যক্রম এর সাথে পরিচিত হওয়াটা আসলেই একটা অসাধারণ বাস্তব অভিজ্ঞতা ছিল। পরের ট্যুর ছিল মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর এবং লালবাগ কেল্লা সফর। বাংলার ইতিহাসটা আরেকটু কাছে থেকে দেখার অভিজ্ঞতাটাও মনে রাখার মত। Ethics and Culture কোর্স এর অংশ হিসেবে ছিল SLL( Social Learning Lab). একদিন এর জন্য সবার ঝারুদার,কুক,ডিশ ওয়াসার, লেবার, লন্ড্রি বয় থেকে শুরু করে Campus এর Head হয়ে পুরা ক্যাম্পাস পরিচালনা করার অভিজ্ঞতা তো আগামি ২০ বছর এ ভোলার সম্ভাবনা কম। ‘’সক্রেটিস এর জবানবন্দি’’ নামে একটা নাটক মঞ্চস্থ করা হয়েছিল। নৈতিকতা আর মূল্যবোধ শেখার এরকম সুযোগ যদি সবাই পেত? সেই পূর্ব মুসলিম যুগ এর থেকে শুরু করে স্বাধীনতা যুদ্ধ পর্যন্ত বাংলার এই গৌরবময় ইতিহাস যদি এক মঞ্চে একসাথে মঞ্চস্থ হয়, তাও আবার আমাদের ই অভিনয় এর মাধ্যমে তবে কেমন হত? হ্যাঁ, ১৬ টা সেকশন মিলে ১৬ পর্বের এই ড্রামা যেদিন একত্রে মঞ্চস্থ করলাম আমরা সেদিন টা আসলেই ছিল অন্যরকম আনন্দের দিন। একের পর এক যুদ্ধ, অধিকার আদায় এর শানিত তরবারির শব্দে সেদিন মারকুলি হল এর মঞ্ছ কে মনে হচ্ছিল, ‘’ সারা বিশ্বের বিস্ময়, তুমি আমার অহংকার’’। সবশেষে প্রায় ৫০০ জন এর একত্রে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার মাধ্যমে শেষ হল অনুষ্ঠান। স্রদ্ধায় গর্বে শরীরের এর লোম দাঁড়িয়ে গিয়েছিল সেদিন।
রাত এ ডিনার এর পর ছিল অস্থির একটা সময়। মাঠের ভিতরে সব ভাই ব্রাদার, বইন সিস্টার মিলে ‘’ সজনী আগের মত ভালবাইসা যা না রে, ভালবাসার নেশায় আমায় পুরা দমে পাইছে রে’’ জাতীয় ৩য় শ্রেণীর গান হেঁড়ে গলায় গাওয়ার মাধ্যমে ১ম শ্রেণীর আড্ডা হত। হয়ত কেউ তখন খোলা মাঠে শুয়ে আকাশের চাঁদ এর দিকে তাকায় থাকত আর ভাবত’’ আর কয়দিন? সময় তো শেষ ই হইয়া গেল রে পাগলা’’। এক রাত এ খুব আয়োজন করে বৃষ্টি এল। আহ!বছর এর প্রথম বৃষ্টি। স্যার ম্যাডাম দের নিষেধ কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে এক ঝাক তরুন তরুণী নামল প্রকৃতির সেই রুপসুধা পান করতে আর প্রথম বৃষ্টির জলধারা গায়ে মাখতে। সে রাতের মূল্য বোধ করি অন্য কিছু দিয়া মাপা যাবে না। জানিনা কার হাত ধরে গোল হয়ে সবাই ভিজেছি, কিন্তু এটা জানি সেটা তো আমাদের ই কেউ। রাতে ডরম এ এসে সব ভাই ব্রাদার এর যে আড্ডা টা বসত সেটা শেষ হতে হতে মাঝে মাঝে পরের দিন আন্থেম এর সময় হয়ে যেত। মুড়ি পার্টি নামক একটা জিনিস যে এই পৃথিবীতে আছে এবং সেটা যথেষ্ট বিনোদন এর সেটা টার্ক এ না আসলে অনেকের ই অজানা থাকত।
লিখতে বসছিলাম রাত ২:২১ মিনিটে, এখন ভোর ৪:৩৯ বাজে। এইডা কিছু হইল। ২ ঘণ্টার উপরে হল লিখতেছি। তাও কত কথাই তো লিখি নাই। আর লিখব ও নাহ। অনেক হইছে। টার্ক টার্ক টার্ক করে আর কত্ত প্যারা খাব। সেই ১৬ই এপ্রিল থেকে প্যারা খাওয়া শুরু করছি। স্টিল নাও খাচ্ছি। কি করব, টার্ক এর ভিডিও টা তে যখন মূর্ছনা থেকে একটা টান মারে তখন আমার বুকের ভেতর থেকেও একটা টান মারা হয়।১৭ তারিখে তো শুধু ডরমিটরি গুলার দিকে তাকাই আর auto চোখে পানি চলে আসে। কি প্যারা ভাই। যাই হোক আমরা চলে আসছি টার্ক করে।আবার আর এক ব্যাচ যাচ্ছে। আরও যাবে। ওরা হয়ত আমরা না, কিন্তু ওদের মাঝেই আছি আমরা। ওদের ই তো প্রতিচ্ছবি আমরা।
যাই, আড়ং দুধ এর গাভিওয়ালা গাড়ি গুলা সমানে হর্ন দিচ্ছে। বিদায় সাভার ক্যাম্পাস, বিদায় টার্ক, বিদায় আর এস ৩৫।
জয়তু RS-35, জয়তু টার্ক। ভুলবো না তোমায় কোনদিন।
০৭ ই জুন, ২০১৪ রাত ১২:১৪
রুম স্প্রে বলেছেন: আসলেই দারুণ ব্যাপার স্যাপার ভাই
©somewhere in net ltd.
১|
০৭ ই জুন, ২০১৪ রাত ১২:০৬
কালো_সাদা বলেছেন: দারুন ব্যাপার, আসলেই অনেক শিক্ষণীয়। আহারে কেন ব্র্যাকে এডমিশন নিলাম না