![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এই শহরে কিছু কিছু শব্দ কলম নয় হ্রদয় থেকে নেমে আসে, একা। এই শহরে বিনয় ঝুলে থাকে মরা গাছের ডালের মতো, একা।
নব্বই দশকের (১৯৯০-১৯৯৯) কথা, সময়টা ছিল বাংলা ব্যান্ড মিউজিকের এক শ্রেষ্ঠ সময়। আমাদের মধ্যে যাদের কণ্ঠ ভাল ছিল তাড়া স্বপ্ন দেখতাম একদিন গায়ক হবো। একটা ব্যান্ড মিউজিকের গ্রুপ করবো। সেই সময় সোলস, মাইলস, এল আর বি, চাইম, অবস্কিউর, অরবিট একটার পর একটা গানের এ্যালবাম বেড় করছিল। সেই সময়ে ব্যান্ডগুলোর নিজস্ব অ্যালবাম ছাড়াও অসংখ্য মিক্সড অ্যালবাম বেড়িয়েছিল। আমরা ঈদে নতুন কাপড়ের চাইতে নতুন ব্যান্ডের গানের জন্য বেশি অপেক্ষা করতাম। নতুন কোন ব্যান্ড এ্যালবাম বেড় করলে ঢাকা থেকে আনার ব্যাবস্থা করতাম।
গত মে মাসে (২০১৪) জুয়েল (Mohammad Abu Jewel) এর সাথে ম্যাসেজ বিনিময়ের মাধ্যামে রেজাউলের কথা মনে পড়ল। মে মাসের ২৫ তারিখ ছিল আমাদের বন্ধু রেজাউল করিম (রেজা) এর মৃত্যু দিবস।
আমি সে সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হইনি, পড়াশুনা করছি, ধানমণ্ডিতে একটা মেসে থাকি। সেই সময়, একদিন জুয়েল আমাকে জানায়, ঢাকা-আরিচা রোডের এক মোটর-বাইক এক্সিডেন্টে রেজাউলের মৃত্যু হয়েছে।
রেজা ছিল আমাদের সহপাঠী। আমরা এক সাথেই থাকতাম, গণিত প্রাইভেট পড়তাম, পুকুরে একত্রে গোছল করতাম। ও ছাত্র হিসেবে ছিল আমার মতো মাঝারী মানের কিন্তু মানুষ হিসেবে খুব ভাল ছিল। ওর বাবা খুব সাধারন মানের একটা সরকারি চাকরী করতো। ওদের ভাড়া বাড়িটা ছিল ঢেউটিনের ঘর যার দেয়াল ছিল তালাই (বাশের তৈরি)। আমি ওর সাথে বিকেলে বিছানায় শুয়ে নতুন ব্যান্ডের গান শুনতাম। যখন বৃষ্টি ওদের ঢেউটিনের চালে পড়ত তখন মুগ্ধ হয়ে থাকতাম।
ও আমাকে ওর স্বপ্নের কথা বলতো। ওর একটাই স্বপ্ন ছিল “একদিন সে ব্যান্ডের শিল্পী হবে, একটা ব্যান্ডের দল বানাবে, সারাদেশ ঘুরে বেড়াবে”।
আমার কিছু দিন বাবা–মা ছাড়া, এক আত্মীয় বাড়িতে থাকতে হয়েছিল। আমার ঐ দূর সম্পর্কের আত্মীয়কে ভাল লাগতো না। আমি সারাদিন রেজা’র বাড়িতেই থাকতাম। রেজা’র মা আমাকে খুব পছন্দ করতো। একদিন স্কুল জীবন শেষ হয়ে গেলো। কলেজ জীবনে আমি আর রেজা অনেক দুরে চলে গেলাম।
মন খারাপ হলে, আমি রেজাদের বাড়ি যেতাম। একদিন ওর বাড়ি গিয়ে দেখি রেজা একটা ব্যান্ডের দল বানিয়েছে, এলাকায় ঘুরে ঘুরে সে ব্যান্ডের শিল্পীদের মতো গান করছে। সে সময় ক্যামেরা এতো সস্তা ছিল না, ছবি তোলা আর প্রিন্ট করা ছিল ব্যয়-বহুল। আমার মন খারাপ এজন্য যে, আমার সংগ্রহে “রেজার সাথে আমার” কোন ছবি নাই।
রেজার সাথে যেদিন ওর বাড়িতে আমার শেষ দেখা, সে সময়টাতে আমি ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করা শুরু করেছিলাম। রেজা আমাকে বলেছিল, “বন্ধু, তুই তো ধানমণ্ডি থাকিস, আমার জন্য একটা ব্যান্ড দল খুঁজে দিস”। আমি বলেছিলাম, “ঢাকা গিয়ে তোর জন্য অবশ্যই ব্যান্ড দল খুঁজবো, তুই আমার উপর ভরসা রাখিস”। ওর ইচ্ছা ছিল ঢাকার ব্যান্ডের সাথে একত্রে কনসার্ট করবে, সময় হলে একটা মিক্স এ্যালবামও বেড় করবে।
একদিন রেজাকে দেয়া কথাটা আমি রাখতে পারিনাই। আমি যখনি রেজা নামের কোন মানুষ পাই। তার দিকে চেয়ে থাকি, তার গলার কণ্ঠ শুনতে চাই...
বাংলা ব্যান্ড মিউজিকে আমার বন্ধু রেজার মতো আরও অনেকেই হয়তো আছেন, যাদের মানুষ স্মরণ করেন। কিন্তু আমার জানা মতে, রেজার কোন মৌলিক গান, কোন গানের অডিও কিংবা গানের ভিডিও নাই। রেজার ভাল দিকটা হচ্ছে, সে বাংলা ব্যান্ড মিউজিক কে মনে প্রানে ভাল বাসত। ব্যান্ড মিউজিক নিয়ে তার একটা স্বপ্ন ছিল...
আমরা যারা নব্বই দশকে স্কুলে পড়েছি, একত্রে ব্যান্ড মিউজিকের গান শুনে শুনে বড় হয়েছি। তারা যখনি ব্যান্ড মিউজিকের গান শুনি একা একা নীরবতায়...
রেজার কণ্ঠ তখন আমাদের প্রাণটা ছুঁয়ে যায়...
রেজা, বন্ধু আমার তুমি ভাল থেকো, তোমার ঠিকানায়। যেনে রেখো, আমরা যতদিন বেঁচে আছি, তোমাকে ভুলব না। তোমাকে মনে করবো সুরের মূর্ছনায়...
০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:১৭
খোরশেদ খোকন বলেছেন: ধন্যবাদ, ভাল থাকবেন...
২| ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৫০
বঙ্গভূমির রঙ্গমেলায় বলেছেন: আপনার বন্ধুর জন্য সহমর্মিতা।
ভাল থাকুক আপনার বন্ধু। আল্লাহর রহমত প্রাপ্ত হোক।
০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:১৮
খোরশেদ খোকন বলেছেন: ধন্যবাদ, ভাল থাকবেন...
৩| ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:০১
অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: আপনার বন্ধুর জন্য খারাপ লাগলো।
ভালো থাকবেন ভ্রাতা।।
০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:১৮
খোরশেদ খোকন বলেছেন: ধন্যবাদ, ভাল থাকবেন...
©somewhere in net ltd.
১|
০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৩৬
সুমন কর বলেছেন: রেজা, বন্ধু আমার তুমি ভাল থেকো, তোমার ঠিকানায়। যেনে রেখো, আমরা যতদিন বেঁচে আছি, তোমাকে ভুলব না। তোমাকে মনে করবো সুরের মূর্ছনায়...