স্মৃতির জোনাকিরা...(অভিভাবক)

১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১:০৫

মনেপড়ে ২০ ফেব্রুয়ারি ২০০৬ ন্যাশনাল ব্যাংকের চাকরীতে যোগদান করেছিলাম। ২১ ফেব্রুয়ারি ২০০৬ ছিল ছুটির দিন। ২২ ফেব্রুয়ারি ২০০৬ প্রধান কার্যালয়ে গিয়ে জানতে পারলাম, আমাকে বদলী করা হয়েছে রাজশাহী শাখায়। কোন বিকল্প ছিল না; তাই ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০০৬ বিকেলে রাজশাহী রওনা হয়েছিলাম।
সে সময় রাজশাহী ব্রাঞ্চের ম্যানেজার ছিলেন ওয়াসেব আলী খান স্যার আর সেকেন্ডম্যান ছিলেন রফিক স্যার। আমার বেতন ছিল ১২ হাজার টাকা। ২১ থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি; এই ৮দিন চাকরী করে বেতন বাবদ যা পেয়েছিলাম তা দিয়ে মেসের ভাড়া, খাবার-দাবার আর হাত-খরচ সংকুলান হচ্ছিল না।
একদিকে সপ্তাহে ছুটি ছিল শুধু শুক্রবার। অন্যদিকে প্রবেশনারী অফিসারদের কোন ছুটির অনুমতি ছিল না। এমন কি রাজশাহী শহরে আমার আত্মীয়-স্বজন কেউ ছিলনা যে আমাকে টাকা দিয়ে সাহায্য করতে পারে...।
যাই হোক, ৯ মার্চ ২০০৬ ছিল বৃহস্পতিবার আমি সাহস করে সেকেন্ডম্যান রফিক স্যারকে বললাম, স্যার আমাকে শনিবারের জন্য ছুটি দেন। সে বলল, কি দরকার বল? আমি বললাম, স্যার ঢাকা থেকে আসার সময় যা টাকা নিয়ে এসেছিলাম তা শেষ হয়ে গেছে, এদিকে এক সপ্তাহ চাকরী করে যা বেতন পেয়েছি তাও শেষ। হাতে শুধু টাঙ্গাইল যাবার ভাড়া আছে। আমি শুক্রবার গিয়ে টাকা নিয়ে শনিবার চলে আসবো।
স্যার আমার হাতে ধরে বললেন, দেখো খোরশেদ আমি তোমাকে টাকার জন্য তোমার বাবার কাছে যেতে দিতে পারবো না। তুমি ন্যাশনাল ব্যাংকে চাকরী করো, তার মানে আমি সেকেন্ডম্যান হিসেবে তোমার অভিভাবক অর্থাৎ বাবার মতোই। আমি যদি তোমার বাবার মতো নাই হতে পাড়লাম তাহলে কেন সারাদিন তোমাদের দিয়ে এতো কাজ করাচ্ছি। তোমার কত টাকা লাগবে বল, আমি এখনই দিয়ে দিচ্ছি। আর রাজশাহী থাকতে কোনদিন কোন সমস্যা হলে এটা তোমার সমস্যা না; এটা আমারও সমস্যা - এই কথাটা মনে রাখবে। কথা শেষ হবার আগেই স্যার আমার হাতে ৫ হাজার টাকা দিয়েছিলেন। আমি ভীষণ লজ্জায় পড়ে, টাকাটা নিয়েছিলাম!
...
আজ এতদিন পরে ভাবছি; আমার চাকরী জীবন ১০ বছর হতে চললো-আমি কি স্যারের মতো এতোটা ভাল মানুষ হতে পেড়েছি। এখনও স্যারকে মনে হলে, মনটা ভাল হয়ে যায়। মন থেকে স্যারের জন্য শুভ কামনা চলে আসে।
......
অভিভাবক : ০৬/১২/২০১৫

৮ টি +২/-০