নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

প্রিয় নজরুল

মোঃ কামাল হোসেন

আমি খুব সাধারণ একজন মানুষ। চেষ্টা করি অন্যের উপকার করতে সম্ভব নাহলে লক্ষ্যরাখি যেন অন্তত ক্ষতি না হয়।

মোঃ কামাল হোসেন › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রিয় কবির প্রিয় গান

২১ শে জুন, ২০১৪ সকাল ৯:৫৮





এ মোর অহংকার



নাই বা পেলাম আমার গলায় তোমার গলার হার,

তোমায় আমি ক'রব সৃজন- এ মোর অহংকার!

এমনি চোখের দৃষ্টি দিয়া

তোমায় যারা দেখলো প্রিয়া,

তাদের কাছে তুমি তুমিই। আমার স্বপনে

তুমি নিখিল-রূপের রাণী- মানস-আসনে!



সবাই যখন তোমায় ঘিরে ক'রবে কলরব,

আমি দূরে ধেয়ান-লোকে র'চব তোমার স্তব।

র'চব সুরধুনী-তীরে

আমার সুরের উর্বশীরে,

নিখিল কন্ঠে দুলবে তুমি গানের কন্ঠ-হার-

কবির প্রিয়া অশ্রুমতী গভীর বেদনার!



যেদিন আমি থাকবনা ক' থাকবে আমার গান,

ব'লবে সবাই, 'কে সে কবির কাঁদিয়েছিল প্রাণ?'

আকাশ ভরা হাজার তারা

রইবে চেয়ে তন্দ্রাহারা,

সখার সাথে জাগবে রাতে, চাইবে আকাশে

আমার গানে প'ড়বে মনে আমায় আভাসে!



বুকের তলা ক'রবে ব্যথা, ব'লবে কাঁদিয়া,

'বন্ধু! সে কে তোমার গানের মানসী প্রিয়া?'

হাসবে সবাই, গাইবে গীতি,

তুমি নয়ন-জলে তিতি'

নতুন ক'রে আমার গানে আমার কবিতায়

গহীন নিরালাতে ব'সে খুঁজবে আপনায়!

রাখতে যেদিন নারবে ধরা তোমায় ধরিয়া

ওরা সবাই ভুলবে তোমায় দু'দিন স্মরিয়া,

আমার গানের অশ্রুজলে,

আমার বাণীর পদ্মদলে

দুলবে তুমি চিরন্তনী চির-নবীনা!

রইবে শুধু বাণী, সে-দিন রইবে না বীণা!



নাই বা পেলাম কন্ঠে আমার তোমার কন্ঠহার,

তোমায় আমি ক'রব সৃজন এ মোর অহংকার!

এইত আমার চোখের জলে,

আমার গানের সুরের ছলে,

কাব্যে আমার, আমার ভাষায়, আমার বেদনায়,

নিত্যকালের প্রিয় আমায় ডাকছ ইশারায়!



চাই না তোমায় স্বর্গে নিতে, চাই এ ধুলাতে

তোমার পায়ে স্বর্গ এনে ভুবন ভুলাতে!

ঊর্ধ্বে তোমার- তুমি দেবী,

চাই না দেবীর দয়া, যাচি প্রিয়ার আঁখিজল,

একটু দুখে অভিমানে নয়ন টলমল!



যেমন ক'রে খেলতে তুমি কিশোর বয়শে-

মাটির মেয়ের দিতে বিয়ে মনের হরষে।

বালু দিয়ে গড়তে গেহ

জাগত বুকে মাটির স্নেহ,

ছিল না তো স্বর্গ তখন সূর্য তারা চাঁদ,

তেমনি ক'রে খেলবে আবার পাতবে মায়া-ফাঁদ!



মাটির প্রদীপ জ্বালবে তুমি মাটির কুটীরে,

খুশীর রঙে ক'রবে সোনা ধূলি-মুঠিরে।

আধখানে চাঁদ আকাশ 'পরে

উঠবে যবে গরব-ভরে

তুমি বাকী-আধখানা চাঁদ হাসবে ধরাতে,

তড়িৎ প'ড়বে তোমার খোঁপায় জড়াতে!





তুমি আমার বকুল যূথী- মাটির তারা-ফুল,

ঈদের প্রথম চাঁদ গো তোমার কানের পার্সি-দুল।

কুসুমী রাঙা শাড়িখানি

চৈতী-সাঁঝে প'রবে রাণী,

আকাশ-গাঙে জাগবে জোয়ার রঙের রাঙা বান,

তোরণ-দ্বারে নাজবে করুণ বারোয়াঁ মূলতান।



আমার রচা গানে তোমায় সেই বেলা-শেষে

এমনি সুরে চাইবে কেহ পরদেশী এসে!

রঙীন সাঁঝে ঐ আঙিনায়

চাইবে যারা, তাদের চাওয়ায়

আমার চাওয়া রইবে গোপন!- এ মোর অভিমান,

যাচবে যারা তোমায়-রচি তাদের তরে গান!



নাই বা দিলে ধরা আমার ধরার আঙিনায়,

তোমায় জিনে গেলাম সুরের স্বয়ম্বর-সভায়!

তোমার রূপে আমার বুবন

আলোয় আলোয় হ'ল মগন!

কাজ কি জেনে-কাহার আশায় গাঁথছ ফুল-হার,

আমি তোমার গাঁথছি মালা এ মোর অহংকার!



গানের আড়াল



তোমার কন্ঠে রাখিয়া এসেছি মোর কন্ঠের গান-

এইটুকু শুধু র'বে পরিচয়? আর সব অবসান?

অন্তরতলে অন্তরতর যে ব্যথা লুকায়ে রয়,

গানের আড়ালে পাও নাই তার কোনদিন পরিচয়?



হয়ত কেবলি গাহিয়াছি গান, হয়ত কহিনি কথা,

গানের বাণী সে শুধু কি বিলাস, মিছে তার আকুলতা?

হৃদয়ে কখন জাগিল জোয়ার , তাহারি প্রতিধ্বনি

কন্ঠের তটে উঠেছে আমার অহরহ রণরণি'-

উপকূলে ব'সে শুনেছ সে সুর, বোঝ নাই তার মানে?

বেঁধেনি হৃদয়ে সে সুর, দুলেছে দুল হ'য়ে শুধু কানে?



পথচারী



কে জানে কোথায় চলিয়াছি ভাই মুসাফির পথচারি,

দু'ধারে দু'কুল দুঃখ-সুখের-মাঝে আমি স্রোত-বারি!

আপনার বেগে আপনি ছুটেছি জন্ম-শিখর হ'তে

বিরাম-বিহীন রাত্রি ও দিন পথ হ'তে আন পথে!

নিজ বাস হ'ল চির-পরবাস, জন্মের ক্ষন পরে

বাহিরিনি পথে গিরি-পর্বতে-ফিরি নাই আর ঘরে।

পলাতকা শিশু জন্মিয়াছিনু গিরি-কন্যার কোলে,

বুকে না ধরিতে চকিতে ত্বরিতে আসিলাম ছুটে চ'লে।



জননীরে ভুলি' যে-পথে পলায় মৃগ-শিশু বাঁশী শুনি',

যে পথে পলায় শশকেরা শুনি' ঝরনার ঝুনঝুনি,

পাখী উড়ে যায় ফেলিয়া কুলায় সীমাহীন নভোপানে,

সাগর ছাড়িয়া মেঘের শিশুরা পলায় আকাশ-যানে,-

সেই পথ ধরি' পলাইনু আমি! সেই হ'তে ছুটে চলি

গিরি দরী মাঠ পল্লীর বাট সজা বাঁকা শত গলি।



-কোন গ্রহ হ'তে ছিঁড়ি

উল্কার মত ছুতেছি বাহিয়া সৌর-লোকের সিঁড়ি!

আমি ছুটে যাই জানিনা কোথায়, ওরা মোর দুই তীরে

রচে নীড়, ভাবে উহাদেরি তীরে এসেছি পাহাড় চিরে।

উহাদের বদূ কলস ভরিয়া নিয়ে যায় মোর বারি,

আমার গহনে গাহন করিয়া বলে সন্তাপ-হারী!

ঊহারা দেখিল কেবলি আমার সলিলের শিতলতা,

দেখে নাই-জ্বলে কত চিতাগ্নি মোর কূলে কূলে কোথা!



-হায়, কত হতভাগী-

আমিই কি জানি- মরিল ডুবিয়া আমার পরশ মাগি'।



বাজিয়াছে মোর তটে-তটে জানি ঘটে-ঘটে কিঙ্কিণী,

জল-তরঙ্গে বেজেছে বধূর মধুর রিনিকি-ঝিনি।

বাজায়েছে বেণু রাখাল-বালক তীর-তরুতলে বসি'।

আমার সলিলে হেরিয়াছে মুখ দূর আকাশের শশী।

জানি সব জানি, ওরা ডাকে মোরে দু'তীরে বিছায়ে স্নেহ,

দীঘি হ'তে ডাকে পদ্মমুখীরা 'থির হও বাঁধি গেহ!'



আমি ব'য়ে যাই- ব'য়ে যাই আমি কুলু-কুলু-কুলু-কুলু

শুনি না- কোথায় মোরই তীরে হায় পুরনারী দেয় উলু!

সদাগর-জাদী মণি-মাণিক্যে বোঝাই করিয়া তরী

ভাসে মর জলে,-'ছল ছল' ব'লে আমি দূরে যাই সরি'।

আঁকড়িয়া ধ'রে দু'তীর বৃথাই জড়ায়ে তন্তুলতা,

ওরা দেখে নাই আবর্ত মর, মোর অন্তর-ব্যথা!



লুকাইয়া আসে গোপনে নিশীথে কূলে মোর অভাগিনী,

আমি বলি 'চল ছল ছল ছল ওরে বধূ তোরে চিনি!

কূল ছেড়ে আয় রে অভিসারিকা, মরণ-অকূলে ভাসি!'

মোর তীরে-তীরে আজো খুঁজে ফিরে তোরে ঘর-ছাড়া বাঁশী।

সে পড়ে ঝাঁপায়-জলে,

আমি পথে ধাই-সে কবে হারায় স্মৃতির বালুকা-তলে!



জানি না ক' হায় চলেছি কোথায় অজানা আকর্ষণে,

চ'লেছি যতই তত সে অথই বাজে জল খনে খনে।

সন্মুখ-টানে ধাই অবিরাম, নাই নাই অবসর,

ছুঁইতে হারাই-এই আছে নাই- এই ঘর এই পর!

ওরে চল চল ছল ছল কি হবে ফিরায়ে আঁখি?

তরি তীরে ডাকে চক্রবাকেরে তরি সে চক্রবাকী!



ওরা সন্ধ্যায় ঘরে ফিরে যায় কূলের কুলায়-বাসী,

আঁচল ভরিয়া কুড়ায় আমার কাদায়-ছিটানো হাসি।

ওরা চ'লে এক্যায়, আমি জাগি হায় ল'ইয়ে চিতাগ্নি শব,

ব্যথা-আবর্ত মচড় খাইয়া বুকে করে কলরব!

ওরে বেনোজল, ছল ছল ছল ছুটে চল ছুটে চল!

হেথা কাদাজল পঙ্কিল তোরে করিতেছে অবিরল।

কোথা পাবি হেথা লোনা আঁখিজল, চল চল পথচারী!

করে প্রতীক্ষা তোর তরে লোনা সাত-সমুদ্র-বারি







মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.