নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মনেরও ঘর থাকে। মন ও উদ্বাস্তু হয়।হয়ে পড়ে ভ্রাম্য মন। স্থিতধী আর ভ্রাম্য মনের লড়াইয়ে জন্ম নেয়, কিছু স্পষ্ট উচ্চারণ।

স্থিতধী

আমরা সবাই যেন একেকটি খামে মোড়া চিঠি। সবাই পারেনা সে খাম খুলে আমাদের পড়ে নিতে।

স্থিতধী › বিস্তারিত পোস্টঃ

৭১ এ বুদ্ধিজীবি হত্যাকান্ড ও একজন রাও ফরমান আলি

১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ১১:৪৭

“ফরমান আলী দেখেছেন এবং দেখে দুঃখ পেয়েছেন যে পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ ধর্মীয় আচরণ করে ঠিকই, কিন্তু রাজনীতির ব্যাপারে তাঁরা সেকুলার । সংস্কৃতিতে ভাষার গুরুত্ব বিষয়ে তিনি সচেতন ; তবে শহীদের মাজারে মিলাদ, মোনাজাত এসব না করে হিন্দুরীতিতে ‘ ফুল দিয়ে পূজা করা’ দেখে তিনি ক্ষুব্ধ।“



২০১৭ সালের একুশে বইমেলাতে প্রকাশিত অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী রচিত “একাত্তরের যুদ্ধ ও জাতীয়তাবাদের পরীক্ষা” বইটি মূলত পাকিস্তানি জাতীয়তাবাদ বনাম বাঙালী জাতীয়তাবাদ এর ভিত্তিতে রচিত, যেখানে অবাঙালি পাকিস্তানপন্থী ও বাঙালি পাকিস্তানপন্থী এ দু ধরণের লোকদের একাত্তর পূর্ববর্তী ও একাত্তরের যুদ্ধকালীন কর্মকাণ্ড ও তাঁদের মনোভাব কে বিশ্লেষণ করা হয়েছে । পূর্ব পাকিস্তান সেনাবাহীনির ডেপুটি মার্শাল ল’ এডমিনিস্ট্রেটর এবং গভর্নরের সিভিল এফেয়ারস উপদেষ্টা ; রাও ফরমান আলির প্রসঙ্গটিও তাই চলেই এসেছে একজন অবাঙালি পাকিস্তানপন্থী হিসেবে ১৯৭১ এ তাঁর বাঙালি গণহত্যা, বিশেষত বেছে বেছে বাঙালি বুদ্ধিজীবী হত্যার পরিপ্রেক্ষিতে । এই রাও ফরমান আলির ১৯৭১ পরবর্তীতে লেখা একটি বই র‍্য়েছে যেটার বাংলা অনুবাদে নাম হচ্ছে “ ভুট্টো শেখ মুজিব বাংলাদেশ” । উপরের প্রথম প্যারাগ্রাফটি লেখক অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ফরমান আলির সেই বইটির লেখার উপর ভিত্তি করেই লিখেছেন। লেখক জানাচ্ছেন যে, রাও ফরমান আলীর লেখা সেই বইটি পড়লে ফরমান আলীর রাজনৈতিক চিন্তাধারার পরিচয় পাওয়া যায় যা কিনা ডানপন্থী জামায়াতঘেষা চিন্তাধারা।

১৯৭১ এর পর পাকিস্তান এ বিষয়ে হামিদুর রহমান কমিশন গঠণ করে এবং এই কমিশন পাকিস্তানের পরাজয়ের জন্য দায়ী কিছু মানুষকে চিহ্নিত করে কেবল, সামগ্রিকভাবে এটি যে পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিদের উপর পশ্চিম পাকিস্তানের একটি অন্যায্য অন্যায় পাশবিক আগ্রাসন ছিলো সেটি স্বীকার করেনি। ফলে রাও ফরমানের মতো ধূর্ত পাষণ্ডরা এই কমিশনের কাছে নিজেদের উপর আরোপিত সমস্ত অপরাধ মিথ্যা দাবী করে পাড় পেয়ে গেলেও অপেক্ষাকৃত কম বুদ্ধিমান জেনারেল নিয়াজী এই কমিশনের চোখে হয়ে ওঠে প্রধান ভিলেন যাকে একজন অদক্ষ, কাপুরুষ ও চরিত্রহীন সেনাপ্রধান রূপে ঘোষণা দেয়া হয়। কিন্তু ২৫ মার্চের গণহত্যার পরিকল্পক টিক্কা খান, রাও ফরমান আলী এভাবে তিরস্কৃত হন না কমিশনের কাছে । উল্টো কমিশন উল্লেখ করে যে রাও ফরমান আলী যুদ্ধকালীন সময়ে গভীর আন্তরিকতা ও বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে কাজ করেছেন । আরেকটি মজার কিংবা দুঃখের বিষয় হল এই কমিশনের প্রধান ছিলেন জাতে একজন বাঙালী যিনি অবাঙালি পাকিস্তানি কর্তাদের আস্থা অর্জন করে পাকিস্তানি সুপ্রীম কোর্টের প্রধান বিচারপতি হয়েছিলেন।


যারা নিয়াজীর “বিট্রেয়াল অফ ইস্ট পাকিস্তান” বইটি পড়েছেন তারা জেনে থাকবেন নিয়াজী এই কমিশনের উপর কতটা ক্ষুব্ধ ছিলো এবং তাঁর দাবী অনুযায়ী পাকিস্তানি রাজনীতিবিদরা ১৯৭১ এর অনেক আগেই আসলে পূর্ব পাকিস্তান বিষয়ে আশা ছেড়ে দিয়ে, কোন রাজনৈতিক সমাধানে না পৌছানোর চেষ্টা করে শেষমেশ সেনাবাহীনিকেই সব বদনামের দায় নেবার জন্য সামনের দিকে ঠেলে দেয়। তাঁর দাবী অনুযায়ী রাও ফরমান আলী ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে অত্যন্ত আতঙ্কের মধ্যে ছিলো । কারন সে জানতো যেহেতু সে প্রচুর বাঙালী হত্যার মূল পরিকল্পনার সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত তাই পূর্ব পাকিস্তানে সে অবস্থায় বাঙালিদের হাতে রাও ফরমানের জীবন একদম নিরাপদ নয়। তাই সে নিয়াজিকে তখন অনুরোধ করে তাঁর পোস্টিং তখন পশ্চিম পাকিস্তানে করে দেবার জন্য। অন্যদিকে রাও ফরমান আলী উল্টো নিয়াজীকে একজন ছিঁচকাঁদুনে জেনারেল হিসেবে আখ্যা দেয় যে কিনা ৭ ডিসেম্বর থেকেই বাঙালী যোদ্ধা ও ভারতীয় সেনাদের ভয়ে মেয়েদের মতো কান্নাকাটি করতো প্রায় ই।

পাকিস্তানি ঐ কমিশন যাই জানাক কিন্তু ইতিহাস প্রমাণ করে ১৯৭১ আমাদের বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করার প্রধান কারিগর এই রাও ফরমান আলি। সে সময়ে সিভিল এফেয়ারসের একক উপদেষ্টা হিসেবে যুদ্ধে প্যারা মিলিটারি ভলান্টিয়ার বাহিনী গঠণ করার পরিকল্পনা তাঁর ই ছিল; যার অর্থ যুদ্ধে পাকিস্তানের পক্ষে কাজ করা রাজাকার, আল বদর ও আল শামস, শান্তি কমিটি এগুলো সব তাঁরই ব্রেইন চাইল্ড । যুদ্ধের শেষে তাঁর অবস্থান থেকে তাঁর যে ডায়রী টা উদ্ধার হয় সেখানে একটি লিস্ট পাওয়া যায় বিভিন্ন বাঙালি বুদ্ধিজীবির নামের । সেই তালিকার বেশীরভাগ কেই ধরে ধরে হত্যা করা হয় , বেঁচে যাওয়াদের কেউ কেউ বাঁচেন ভাগ্যের জোড়ে কেউ কেউ নানা সম্পর্কের জোড়ে। যেমন আলতাফ গওহর, যাকে আইউব খানের আত্মজীবনী “ প্রভু নয়, বন্ধু” এর মূল লেখক হিসেবে মানা হয়; তিনি জানান যে রাও ফরমান আলির ডায়েরি তে একটা হিট লিস্ট ছিলো যেখানে তাঁর এক পরিচিত বাঙালি বন্ধুর নাম ছিলো, ফলে আলতাফ তাকে অনুরোধ করেন যেন সেই নামটি বাদ দেয়া হয় । ফরমান আলি সেই অনুরোধ রেখে সেই নামটি তাঁর ডায়রীর লিস্ট থেকে কেটে দেন।

ফরমানের রাজনৈতিক ও ধর্মীয় ভাবনাগুলোর প্রতিফলন ঘটে তাঁর ১৯৭১ এর যুদ্ধকালীন কর্মকান্ডে । যেহেতু শহীদ মিনার কে সে বাঙালির হিন্দুয়ানীর প্রকাশ হিসেবে দেখেছে তাই ২৫ মার্চের আক্রমণের প্রথম পর্বেই পাক সৈন্যরা বাংলা একাডেমী ও শহীদ মিনারে মর্টারের গোলা বর্ষণ করে । তারপরেই ইসলামী ছাত্রসঙ্ঘের সদস্যরা ভাঙা শহীদ মিনারকে মসজিদ হিসেবে ঘোষণা দিয়ে সেখানে দোয়া মাহফিল বসিয়ে দেয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়য়ের অনেক শিক্ষকেরা ও তাঁদের অসংখ্য ছাত্ররা ধর্ম নিরপেক্ষতার সমর্থক ও ধর্ম নিরপেক্ষতার চর্চা করতো। ফরমানের মেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়য়ের তৎকালীন ছাত্রী থাকার কারনে সেই বাস্তবতা তাঁর জানা ছিলো এবং এই বাস্তবতাটিকে সে ঘৃণা করতো । ফলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আক্রমণের আরেকটি কেন্দ্রে পরিণত হয় ২৫ মার্চের প্রথম পর্বেই । সিরাজুল ইসলাম জানাচ্ছেন যে বুদ্ধিজীবী হত্যার পরিকল্পনায় রাও ফরমান আলি বিবেচনাতে যে কেবল আওয়ামী পন্থি লোকদের রেখেছে তা নয়, তাঁর সিলেকশনের মূলে ছিলো এমন গুরুত্ব পূর্ণ বাঙালিদের লিস্টে রাখা যারা স্পষ্ট কিংবা সম্ভাব্য রূপে ধর্ম নিরপেক্ষতা অথবা বাম পন্থী ধারার রাজনীতির সমর্থক । এর ই ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ এর অক্টোবরে ফরমান আলী আওয়ামী লীগের শূন্য ঘোষিত আসনগুলো সব ইসলামী ডানপন্থী দলগুলোকে দান ক্ষয়রাতের মতো বিলাতে থাকেন । ৭০ এর নির্বাচনে ভরাডুবি হওয়া জামায়াতে ইসলামকে ইনি দান করে দেন পঞ্চাশটি আসন, নেজামী ইসলামকে দিয়ে দেন পাঁচ আসন।

ফরমান তাঁর বইতে স্বীকার করেন যে ৭০ এর নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানে ইসলাম পন্থী সব দলগুলোকে সাহায্য করার জন্য শিল্প পতি / ব্যাবসায়ীদের চাপ দিয়ে সেসময় ২২-২৩ লক্ষ টাকার রাজনৈতিক অর্থায়ন করা হয় কিন্তু দুঃখ জনকভাবে তাতে কোন লাভ হয়না কেননা ইসলামপন্থী রাজনীতি তখন ৫-৬ টি দলে বিভক্ত হয়ে ছিলো। আরো জানা যায় যে আইউব খানের আমলেই পাকিস্তানের চার ডিভিশন সৈন্যর বেতন চালাতো খোদ আমেরিকা । স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম হতে গিয়ে যে বাঙালি অবাঙালি মিলিয়ে লক্ষাধিক প্রাণের নাশ হয়েছে যুদ্ধের সেই বাস্তবতাও ফরমান স্বীকার করেছে । এক পর্যায়ে ২৫ শে মার্চের মধ্যরাতের কথা লিখতে গিয়ে সে লেখে;
“ এর পরে কারবালা কাহিনী । … ইস্রাফিল যেন হুংকার দিয়ে উঠলো । ভুট্টো ইয়াহিয়ার চাপিয়ে দেয়া যুদ্ধে আমাদের নেমে পড়তে হলো । পাকিস্তান রক্ষার নামে আমরা দ্রুত অস্ত্র হাতে তুলে নিলাম এবং দীর্ঘ নয় মাস আমরা অসংখ্য প্রাণ সংহার করেও নিজেদের অবস্থান টিকিয়ে রাখতে পারিনি। শতাব্দীর কান্না বিজড়িত একটি মুহূর্তে জেগে উঠলো একটি জাতি। “

জেগে উঠলো একটি জাতি! হ্যাঁ, ঠিক তাই । গণহত্যার পরিকল্পক , রাজাকার আল বদরের নির্মাতা অবশেষে মেনে নিতে বাধ্য হলো যে পূর্ব পাকিস্তানের অধিবাসীরা পাকিস্তানি নয়, তাঁরা আদতে বাঙালী জাতি, যে জাতি তীব্র প্রতিরোধ ও সংগ্রামের মধ্য দিয়ে নিজেদের পরিচয় প্রতিষ্ঠা করে নিয়েছে। সিরাজুল ইসলাম বলছেন যে তাঁর এই স্বীকারোক্তির ব্যাখ্যা কি? ব্যাখ্যা এটাই যে পাকিস্তানি ইসলামি আদর্শপন্থী রাও ফরমান আলীর ভেতরে একটি বাস্তববাদী সত্ত্বা বিদ্যমান। ফলে আদর্শপন্থী তাঁর তথাকথিত আদর্শ রক্ষায় জঘন্যতম পদক্ষেপ গুলোকে বেঁছে নিতে কোন দ্বিধা না করলেও পরবর্তীতে বাস্তব পন্থী সত্ত্বা সময়ের বাস্তবতাকে অস্বীকার করতে পারেনি। এই বাস্তববাদী সত্ত্বাটি ই তাঁর বুদ্ধির ব্যাবহার করে ১৯৭১ এ বাঙালীর নেতা শেখ মুজিবকে দেশদ্রোহী হিসেবে ঘোষণা করতে নারাজ ছিলো। কারন সে জানতো মুজিবকে দেশদ্রোহী ঘোষণা করার অর্থ দাঁড়াবে পূর্ব পাকিস্তানিদের অপমান করে আরো ক্ষেপিয়ে তোলা যা তাঁদের প্রতিরোধ আরো বহুগুন বাড়িয়ে দিবে। সে কারনেই পাকিস্তানি সিদ্দিক সালিকের লেখা বইয়ের বরাতে জানা যাচ্ছে যে , ২৫ মার্চের সন্ধ্যায় ইয়াহিয়া যখন ঢাকা ছেড়ে যাচ্ছে তখন রাও ফরমান আলি পিন্ডিতে গিয়ে ইয়াহিয়া জাতির উদ্দেশ্যে তাঁর বক্তব্যে কি কি মূল পয়েন্ট রাখতে পারে সেটার একটা খসড়া করে ইয়াহিয়াকে দেয় । সেই পয়েন্ট গুলোর মধ্যে ছিলো যে, শেখ মুজিবকে কোনভাবেই দেশ দ্রোহী হিসেবে প্রচার করা যাবেনা, বলতে হবে যে তিনি চরম পন্থীদের ফাঁদে পড়ে যাওয়া এক দেশপ্রেমিক নেতা যাকে পাকিস্তান সেনাবাহিনি প্রটেক্টিভ কাস্টডিতে নিয়েছে কেবল, তাকে তাঁরা গ্রেপ্তার করেনি। সেই সাথে পূর্ব পাকিস্তানকে ছয় দফার ভিত্তিতে কতটুকু ছাড় দেয়া যেতে পারে সেটার সম্ভাব্যতা নিয়ে কিছু কথা থাকতে হবে। রাও ফরমানের সেই খসড়া বক্তব্যর একটি পয়েন্ট কেও মেনে চলার কোন প্রয়োজনই যে বোধ করেনি ইয়াহিয়া; সেটার সাক্ষী ইতিহাস।

বাস্তবিক ভাবেই রাও ফরমান শেখ মুজিবর রহমান কে একজন পাকিস্তানি দেশপ্রেমিক মহান ত্যাগী নেতা হিসেবে গণ্য করতো । তাঁর বিবেচনায় আওয়ামী লিগের কিছু চরমপন্থি যেমন তাজউদ্দীন আহমেদ ও পূর্ব পাকিস্তানের বামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলো তাকে ভুল পথে ধাবিত করে পাকিস্তান ভেঙ্গে ফেলার পরিস্থিতি টি সৃষ্টি করে । সেই সাথে সে পশ্চিম পাকিস্তানের ভুট্টোর অনেক জঘন্য রাজনৈতিক চালকেও পাকিস্তান ভেঙ্গে যাবার জন্য দায়ী করে । সে বিশ্বাস করতো তাজউদ্দীন আহমেদের পূর্ব পুরুষ হিন্দু আর তাই সে ভারত পূজারী ,অন্যদিকে লীগের খন্দকার মোস্তাক পাকিস্তানের সাথে আপোস পন্থী, পাকিস্তান ভাঙন পন্থী নয় । পাকিস্তানের এক নায়ক আইউব খানকেও সে পছন্দ করেনি কারন সে ইসলাম অনুসারী রাষ্ট্র নায়ক ছিলোনা । সম্প্রতি বাংলাদেশের ডিবিসি চ্যানেলে হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিবের যে সাক্ষ্যাতকার প্রচারিত হয়েছে সেখানে তাঁর বক্তব্যের সাথে এই রাও ফরমান আলীর ধ্যান- ধারণা, চিন্তা- চেতনা ও বিশ্বাসের বেশ কিছু মিল লক্ষ্য করা যায় । ইহা বোধকরি কোন চমকপ্রদ বিষয় নহে।

মন্তব্য ২২ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (২২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ১২:৪৯

রাজীব নুর বলেছেন: আপনার এই পোষ্ট টি আমি পরপর দুইবার খুব মন দিয়ে পড়লাম।
এরকম পোষ্টে আমার আগ্রহ আছে।

অধ্যাপক সিরাজুল ইসলামের বইটি সংগ্রহ করার ইচ্ছা আছে।

১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২০ সকাল ৮:৩৪

স্থিতধী বলেছেন: হ্যাঁ, বইটি সংগ্রহ করুন। অনেক ইন্টারেস্টিং বিষয় নিয়ে আলোকপাত করা হয়েছে এতে । বিশেষ ভাবে বইটির দ্বিতীয় ভাগে তিনি বাঙালি পাকিস্তানপন্থীদের মন মানসিকতা, দৃষ্টিভঙ্গিটিকে তাঁর নিজের প্রিয় এক শিক্ষকের কেস স্টাডি দিয়েই চমৎকার বিশ্লেষণ করেছেন । আমাদের স্বাধীন বাংলাদেশে অমন মানুষ অনেক দেখা যায় ।

২| ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ১:২৫

নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: পাকিস্তানি জাতীয়তাবাদ বিষয়টাই ছিল ভুল। একদিন সকালে ঘোষণা দিলেই একটা জাতী গঠিত হয়ে যায় না।জাতী গঠন একটা দীর্ঘ প্রকৃয়ার ফল।আমাদেরকে পাকিস্তানি বানাতে চাওয়াটা ছিল একটি চরম ভুল।তারই ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে যায়।

বর্তমানের পাকিস্তানও একটি ভংঙ্গুর রাষ্ট্র।যে কোন সময় ভেঁঙ্গে যেতে পারে এই পাকিস্তান।স্বাধীনর জন্য অনেক দিন থেকেই যুদ্ধ করছে বেলুচরা।সিন্ধুর অবস্থাও বেশি ভাল না।

১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২০ সকাল ৮:৩৫

স্থিতধী বলেছেন: আমাদেরকে পাকিস্তানি বানাতে চাওয়াটা ছিল একটি চরম ভুল।

কিন্তু এই চরম ভুলটাতো আমাদের ই রাষ্ট্রের প্রধানতম স্থপতি করে গিয়েছিলেন সোহরাওয়ারদী সাহেবের একান্ত অনুরাগী রাজনৈতিক শিষ্য হিসেবে । পাকিস্তান সৃষ্টিতে ওনার প্রবল অবদান এখনো বহু পাকিস্তানীরা শ্রদ্ধার সাথে -ই স্মরণ করে । পাকিস্তান সৃষ্টির পটভূমিকাটাও তো মূলত আমাদের জনতা ও জনপ্রিয় নেতারাই প্রস্তুত করেছিলেন। জোড় করে পাকিস্তানি তো আমাদের বানানো হয়নি আসলে। আমরাই বরং সাধ করে গিয়ে কুড়ালের নিচে পা দিয়ে রেখেছি। ইতিহাসের এই ভুল শোধরানো কিভাবে যাবে ? বিশেষ করে জনতার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ যখন ইতিহাসের ভুলকে ভুল হিসেবেই মানতে চায়না, এটাকে শুধু দুই ভাইয়ের মাঝে শত্রুর কারনে হওয়া একটা ভুল বোঝাবোঝি ( গোলমালের বছর) হিসেবে গণ্য করে?

৩| ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ১:৪১

চাঁদগাজী বলেছেন:


যারা আমাদের শিক্ষক, সাংবাদিক, ডাক্তার, ইন্জিনিয়ারদের হত্যা করেছিলো, ওরা আবার দলবন্ধ হয়েছে।

১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২০ সকাল ৮:৩৮

স্থিতধী বলেছেন: কিন্তু তাঁদের বিপরীতে স্বাধীনতার মূল আদর্শে বিশ্বাসীরা দলবদ্ধও নয়, নীতিবান ও নয় । ৬-৭ বছর আগে আমাদের সেক্ট্রর কমান্ডার ফোরামের কোন একটা আয়োজনে মুক্তিযুদ্ধে আমাদের একজন সেক্টর কমান্ডার বলেছিলেন যে আমাদের স্বাধীনতার যুদ্ধটি পাকিস্তানের একটি চক্রান্তে হওয়া ভারতের করা হস্তক্ষেপে অনেক তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে গিয়েছে, যা হওয়াটা আসলে উচিৎ হয়নি। কেননা দুনিয়ার ইতিহাসের বহু জাতির স্বাধীনতা যুদ্ধের ব্যাপ্তি আরো ব্যাপক সময় ধরে ঘটেছে, ফলে সেসব জাতির সামষ্টিক স্মৃতিতে ঐ সকল স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মৃতি, স্বজন হারানোর বেদনা ও যুদ্ধের অন্ত্যজ আদর্শ অনেক গভীরে পৌছাতে পেরেছে । আমাদের স্বাধীনতার যুদ্ধ মাত্র নয় মাসেই শেষ হবার কারনে সাত কোটি জনতার সকল অংশ যুদ্ধের ভয়াবহতা কে একই বা কাছাকাছি মাত্রায় উপলব্ধি করেনি । যার ফলে একে অনেকেই “ গোলমালের বছর” হিসেবে ই দেখতে চায় আর তাই দেশে উল্লেখ করার মতো একটি অংশ ক্রমাগত বাড়তে দেখা যায় যারা অন্তরে মুক্তিযুদ্ধ কে ধারণ করেনা একদম, অনেকটা পারিবারিকভাবেই ।
রণাঙ্গনের একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এ নিয়ে আপনার কোন ব্যখ্যা বিশ্লেষণ থাকলে জানাবেন।

৪| ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২০ ভোর ৪:৫১

হাসান কালবৈশাখী বলেছেন:
১৯৭১ এর পর পরাজিত পাকিস্তান হামিদুর রহমান কমিশন গঠণ করে এবং এই কমিশন পাকিস্তানের পরাজয়ের জন্য দায়ী কিছু মানুষকে চিহ্নিত করে। বাঙালিদের উপর গণহত্যা ও বুদ্ধিজীবি হত্যায় রাও ফরমান ও গোলাম আজমের মত মতো ধূর্ত পাষণ্ডদের চেহারা উম্মচিত হয়েছিল।

১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২০ সকাল ৮:৪১

স্থিতধী বলেছেন: সিরাজুল ইসলাম জানাচ্ছেন সেই কমিশন গঠন ই করা হয়েছিলো শুধু গুটিকয়েক লোককে দায়ী করে সেনাবাহিনীর বৃহৎ অংশ ও বাকিদের দায়মুক্তি দেয়ার উদ্দেশ্যে । কারন যুদ্ধের মাঝপথে বাংলাদেশের প্রতিকূল বর্ষা মৌসুমে এসে অংশ নেয়া নিয়াজীকে যুদ্ধের প্রধানতম ভিলেন বানিয়ে এই কমিশন অন্য দিকে যুদ্ধের শুরুর দিকে বাঙালি গণহত্যায় অংশ নেওয়া টিক্কা খান কে রেহাই দেয় । অন্যদিকে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তানেই থাকা রাও ফরমান আলির যাবতীয় পাশবিক পরিকল্পনা ও কর্মকাণ্ড শুধু উপেক্ষিতই হয়না বরং এই কমিশন তাঁর পদক্ষেপের ভূয়সী প্রশংসা করে! এটা আমাদের দেখতে হবে যে নিয়াজী ও টিক্কা ছিলো কেবল কসাই শ্রেনীর মাথামোটা পাকি সেনা, তাঁরা কেবল খুন ও ধর্ষণ , লুচ্চামি করতেই জানতো । কিন্তু এই চিকন বুদ্ধির ধূর্ত রাও ফরমান তাঁর পরিকল্পনায় আরো অনেক বেশী গভীর ও ব্যাপক ছিলো । সে মিলিটারির পাশাপাশি সিভিলিয়ান স্ট্রাটেজি গুলো ও খুব ভালো করে জানতো । ফলে সাধারণ জনগণের মাঝে প্রপাগান্ডা ছড়িয়ে দেওয়া, বাঙালি সিভিলিয়ান ও ইসলামি দল গুলোর মধ্য থেকে শান্তি কমিটি, রাজাকার, আল বদর বাহিনী তৈরি করা এগু লোর মাধ্যমে সে আমাদের ভেতর থেকে ই পঙ্গু ক্ রে দেওয়ার প্রধানতম কাজটির নেতৃত্ব দেয় । প্রপাগান্ডার মাধ্যমে সে স্বাধীন বাংলার নেতৃত্ব দান কারী তাজউদ্দীন আহমেদের প্রকৃত নাম তেজা রাম হিসেবে উল্লেখ করে, অর্থাৎ তাজউদ্দীন কে একজন পাকিস্তান বিরোধী হিন্দু হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়।

টিক্কা ও ফরমান আলী দুজনেই পাকিস্তানে তাঁদের ভিন্ন ভিন্ন প্রভুদের কাছ থেকে পুরস্কৃত হয়েছে । রাও ফরমান পাকিস্তান আর্মির বড় কিছু ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার হিসেবে কাজ করেছে, পাকিস্তানের জেনারের জিয়াউল হকের আমল পর্যন্তও সে অত্যন্ত উঁচু মানের জীবন যাপন করে যেতে সঙ্কম হয়েছে। জিয়াউল হকের ক্ষমতা চ্যুতির পর এই ধূর্ত শেয়ালের সুসময় শেষ হয়।

৫| ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২০ দুপুর ১:০৩

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
সুন্দর বিষয়।+++

১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২০ দুপুর ২:৩৪

স্থিতধী বলেছেন: ধন্যবাদ।

৬| ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২০ দুপুর ১:০৩

রোকসানা লেইস বলেছেন: সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর বইটি সঠিক অনেক তথ্যে সমৃদ্ধ গবেষণা ধর্মী বই।
এধরনের বয়ের প্রচার খুব কম বাংলাদেশে।
পাকিস্থান বাংলাদেশকে স্বীকার করে নিলেও কিছু বাংলাদেশি এখনও মানতে পারে না তারা পাকিস্থানে নেই। শুরু থেকে এই পঞ্চাশ বছর পর্যন্ত অজস্র ভুল হয়েছে চলছে।
তবু কিছু মানুষ এখনো হাল ধরে আছেন। সত্য জানার সত্যের পথে চলার।

১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২০ দুপুর ২:৩৬

স্থিতধী বলেছেন: সত্যিই তাই। বইটিতে তিনি মুক্তিযুদ্ধের অনেক বৃহৎ আঙ্গিক আর খুঁটিনাটি তথ্যের সুন্দর সমন্বয় করেছেন । তাঁর বিশ্লেষণও গভীর এবং ঝরঝরে । অনেকগুলো প্রসঙ্গেই তাঁর ইতিহাস ব্যাখ্যা ছিলো অকপট ঋজু । যেমন এক জায়গায় তিনি বলছেন;

“ এমন মত অবশ্য চালু আছে যে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য পাকিস্তান দরকার ছিলো । তর্কের দিক থেকে সেটি সত্য, কিন্তু ন্যায়ের দিক থেকে মোটেই নয়। কেননা আসলে পাকিস্তানের কোন দরকার ই ছিল না, এবং পাকিস্তান দেখাও দিতোনা যদি স্বীকার করে নেওয়া হতো যে ভারতবর্ষ এক বা দুই জাতির দেশ ছিলোনা , দেশ ছিলো বহু জাতির । কেবল পাকিস্তানি জাতীয়তাবাদ নয়, ভারতীয় জাতীয়তাবাদও ছিলো চাপিয়ে দেওয়া ব্যাবস্থা; ভেতর থেকে গড়ে ওঠা বস্তু নয়। জিন্নাহ আর মুজিবের রাজনৈতিক প্রসঙ্গে আমরা এটাও মনে রাখবো যে, জিন্নাহর তুলনায় মুজিবের কাজটা ছিলো কঠিন । জিন্নাহ দরকষাকষি করেই পার পেয়ে গেছেন, মুজিবকে জেল জুলুমসহ বহুরকমের অত্যাচার বছরের পর বছর সহ্য করতে হয়েছে । “

আমাদের উপমহাদেশের ধর্মীয় উন্মাদনার যে বিষ বাষ্প থাকে সেটা থেকে চির কালীন ভাবে রেহাই পাবার কোন সুযোগ আছে কিনা,সেটা আসলেই এক বড় প্রশ্ন।

৭| ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২০ বিকাল ৫:৪৫

রাজীব নুর বলেছেন: আমার মন্তব্যের উত্তর দেওয়ার জন্য আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ।

১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২০ ভোর ৫:২২

স্থিতধী বলেছেন: আপনাকে প্রতি উত্তর তো আমি এখন পর্যন্ত একবার- ই বোধহয় দেইনি । বাকি সব সময়- ই কিছুনা কিছু উত্তর দিয়েছি।

৮| ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২০ ভোর ৫:৫৭

অনল চৌধুরী বলেছেন: বাঙ্গালীরা যদি ইসরাইলীদের মতো হতো, তাহলে কমান্ডো পাঠিয়ে পাকিস্তান থেকে সব গণ-হত্যাকারীকে ধরে এনে উপযুক্ত শাস্তি দিতো।
কিন্ত তারা এমনই নিকৃষ্ট জাতিতে পরিণত হয়েছে যে রাজাকার সালা কাদেরকে টাকা খেয়ে (তার ভাষায় ছাগলদের কাঠালপাতা খাওয়ানো) সংসদে পাঠায় আর সাঈদীকে চাদে দেখে !!!!

১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ৯:০৯

স্থিতধী বলেছেন: দুনিয়ার বহু দেশ প্রয়োজনে প্রতিশোধ নেবার জন্য শত্রু দেশে গুপ্তচর পাঠিয়ে সেইসব যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তি দিয়েছে । সেই শাস্তি দেবার জন্য কোন ট্রায়ালও গঠণ করেনি তাঁরা। সোজাসাপ্টা নগদে শাস্তি দিয়ে দেয়া হয়েছে । আমি একমত যে টিক্কা – নিয়াজী – রাও ফরমানদের আমরা নিজেরা শাস্তি দিতে পারিনি । এটা আমাদের ভুল ও সীমাবদ্ধতা । দেশী – বিদেশী সমস্ত যুদ্ধাপরাধী ও নব জন্ম নেওয়া যুদ্ধাপরাধীদের সমর্থক ছানাপোনাদের সময়মত নিকেশ না করার খেসারত বাংলাদেশকে বারবার দিতে হয়েছে ও হচ্ছে । কথায় আছে, “ সময়ের এক ফোঁড়, অসময়ের দশ ফোঁড় “ ।

৯| ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২০ ভোর ৬:০৪

অনল চৌধুরী বলেছেন: লেখক বলেছেন: আমাদেরকে পাকিস্তানি বানাতে চাওয়াটা ছিল একটি চরম ভুল।

কিন্তু এই চরম ভুলটাতো আমাদের ই রাষ্ট্রের প্রধানতম স্থপতি করে গিয়েছিলেন সোহরাওয়ারদী সাহেবের একান্ত অনুরাগী রাজনৈতিক শিষ্য হিসেবে । পাকিস্তান সৃষ্টিতে ওনার প্রবল অবদান এখনো বহু পাকিস্তানীরা শ্রদ্ধার সাথে -ই স্মরণ করে । পাকিস্তান সৃষ্টির পটভূমিকাটাও তো মূলত আমাদের জনতা ও জনপ্রিয় নেতারাই প্রস্তুত করেছিলেন। জোড় করে পাকিস্তানি তো আমাদের বানানো হয়নি আসলে। আমরাই বরং সাধ করে গিয়ে কুড়ালের নিচে পা দিয়ে রেখেছি। ইতিহাসের এই ভুল শোধরানো কিভাবে যাবে ?
- ধর্মের ভিত্তিতে হলেও শেরে বাংলার লাহোর প্রস্তাব ছিলো বাঙ্গালী মুসলমানদের জন্য একটা উপযুক্ত জাতি রাষ্ট্র গঠনের প্রস্তাব, কারণ সেইসময় এই অঞ্চলের মানুষদের ইউরোপের মতো জাদীয়তাবাদের ভিত্তিতে রাষ্ট্র গঠনের মতো বুদ্ধি ছিলো না। কিন্ত একাধিক রাষ্ট্র করার কথা বলা হলেও নেহেরু-।প্যাটেল পশ্চিমবাংলাকে নিয়ে অবিভক্ত স্বাধীন বাংলা প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব নাকচ করলে জিন্নাহও কৌশলে বাংলাকে পাকিস্তানের সাথে যুক্ত করে, যেটা প্রতিরোধ করার মানসিকতা বেশীরভাগ বাঙ্গালী নেতার ছিলো না।
কিন্ত ভারতের সাথে থাকলে আজ বাংলাদেশের মুসলমানদের অবস্থাও হতো ভারতের মতো শোচনীয়।

১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ৯:১৪

স্থিতধী বলেছেন: ধর্মের ভিত্তিতে হলেও শেরে বাংলার লাহোর প্রস্তাব ছিলো বাঙ্গালী মুসলমানদের জন্য একটা উপযুক্ত জাতি রাষ্ট্র গঠনের প্রস্তাব, কারণ সেইসময় এই অঞ্চলের মানুষদের ইউরোপের মতো জাদীয়তাবাদের ভিত্তিতে রাষ্ট্র গঠনের মতো বুদ্ধি ছিলো না।

ইউরোপের মতো জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে রাষ্ট্র গঠনের বুদ্ধি অথবা ইচ্ছা যে আমাদের নেতাদের ছিলোনা আমার আফসোসটা সেটাকে ঘিরেই। ইতিহাসের ভুল সেটাকেই বোঝাতে চাচ্ছি । ১৯৪০ এ লাহোর প্রস্তাবে শেরে বাংলা ফজলুল হক একটি অপেক্ষাকৃত ভালো প্রস্তাব দিয়েছিলেন শুধু ( একাধিক মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্র ), তবে সেটি অপেক্ষাকৃত ভালোই ছিল কেবল, পরিপূর্ণ ভালো নয়; কারন হচ্ছে এর ভেতরের অন্তর্গত সাম্প্রদায়িক বৈশিষ্ট্য । এর জন্যই আজো আমরা এদেশের মুসলিম ফ্যানাটিক দের কথায় কথায় বলতে শুনি ; “ নব্বুই - বিরানব্বুই % মুসলিমের দেশে এটা হবেনা ওটা চলবেনা” জাতীয় অগণতান্ত্রিক মানসিকতার কথা বার্তা । ভাস্কর্য ইস্যুটা কোন ইস্যু হবার যোগ্যতাই রাখতোনা যদি ইতিহাসের নিজেরই অমন সাম্প্রদায়িক বৈশিষ্ট্য না থাকতো । যে জন্য সিরাজুল ইসলাম বাংলাদেশ সৃষ্টির জন্য পাকিস্তানের আবশ্যকতা প্রসঙ্গটিকে বলছেন, “ তর্কের দিক থেকে সেটি সত্য, কিন্তু ন্যায়ের দিক থেকে মোটেই নয়” । শেরে বাংলা পরবর্তীতে একক দেশ পাকিস্তান থেকে সড়ে আসার সিদ্ধান্ত নিয়ে সঠিক একটি কাজ করলেও, তাঁর সমসাময়িক ও অনুজ রাজনীতিকরা সেই সঠিক সিদ্ধান্তটি বুঝতে পারলেন না, মেনে নিতে পারলেন না। শেখ মুজিব তাঁর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ তে বলছেন যে তিনি নিজে শেরে বাংলার একক পাকিস্তান থেকে সড়ে আসার সিদ্ধান্তের সমালোচনা বক্তৃতা করতে গিয়ে দক্ষিণবঙ্গের মানুষের কাছে নিজ দলবল সহ মার খেয়েছিলেন। তবু সে যুবা বয়সে ওনার টনক নড়েনি, ঊনি পাকিস্তানের অসাড়তা ধরতে পারেননি । বিষয়টা বুঝতে তিনি আরো প্রায় ২০ বছর নিলেন। আর তাঁর সিনিয়র আরো অনেক নেতারা তো আজীবন কায়েমী স্বার্থকেই ‘ জনগণের ‘ স্বার্থ হিসেবে প্রচারের চেষ্টা চালালো।

শেখ মুজিবের জন্মের সময়ে, ২০ এর দশকে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের ( বঙ্গবন্ধু টাইটেল টা তোফায়েল আহমেদ বোধকরি দেশবন্ধু টাইটেল থেকেই নিয়েছিলেন) নেতৃত্বে হওয়া “ বেঙ্গল প্যাক্ট” একটা সম্ভাবনার সৃষ্টি করেছিলো দুই বাংলার ধর্মীয় সম্প্রীতির মাধ্যমে অবিভক্ত স্বাধীন বাংলার সৃষ্টির । শেরে বাংলা সহ আরো অনেক মুসলিম নেতা ও সুভাস চন্দ্র বসু সহ অনেক উদার হিন্দু নেতারা তাতে অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়েছিলেন। কিন্তু কায়েমি স্বার্থের হিন্দু – মুসলিম নেতারা , সর্বোপরি অবিভক্ত ‘ ভারত’ পন্থীরা আবারো পথের কাঁটা হয়ে গেলো । চিত্তরঞ্জন দাশের মৃত্যুর পর সে প্রচেষ্টা সম্পূর্ণ ভেঙ্গে পড়লো আর শেরে বাংলার মতো নেতারাও তখন বোধকরি বাধ্য হয়েই সাম্প্রদায়িক দাবীর পথেই হাটলেন। অথচ, ধর্মীয় বিষবাস্পের রাজনীতি কে উপেক্ষা করে উপমহাদেশের সব প্রাকৃতিক জাতিগুলোকে মেনে নিয়ে আমরা ইউরোপীয় ইউনিয়নের ধাঁচে তাঁদের আগেই এ অঞ্চলে বহু জাতির বহু দেশের ইউনিয়ন তৈ্রির উদাহারণ রাখতে পারতাম যদি বেশীরভাগ নেতারা “ অখণ্ড ভারতের” বিপুল অর্থনৈতিক, ভূ রাজনৈতিক প্রাপ্তি বা “ দ্বি জাতি” তত্বের পেছনে নিজেরা না ছুটতেন, জনগণকে না ছোটাতেন কিংবা জনগণও না ছুটতো ।

১০| ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২০ সকাল ১১:৪২

সন্ধ্যা রাতের ঝিঁঝিঁ বলেছেন: নতুন অনেক কিছু জানতে পেরে ভালো লাগছে, ৭১ নিয়ে যতবারই আমি পড়তে নিই আমি কনফিউজড হয়ে যায়, কোনটা সত্যি কোনটা বায়াসড বুঝতে পারিনা। ক্রাচের কর্নেল পড়ার পর মনে হয়েছে জিয়াউর রহমানকে আর যাই হোক সুস্থ মস্তিষ্কে আমি রেস্পেক্ট করতে পারবো না, ওনার অবদানকে অস্বীকার ও করবো না। ব্লগে সিনিয়র অনেকের লেখা পড়ার পর মনে হয়েছে তাহলে আমি কি ভূল জেনেছি। সাক্ষী ছিল শিরস্ত্রাণ, একাত্তরের দিনগুলো, আরো কয়েকটা বই কোথাও আমি জিয়াউর রহমানকে তেমনভাবে পাইনি। আরো অনেক ব্যাপার অনেক বেশী কনফিউজিং লাগে। '৭১ নিয়ে ভালো কোন বইয়ের নাম জানা থাকলে জানালে কৃতজ্ঞ থাকবো।
দারুণ একটা বিষয় নিয়ে লেখার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ৯:২৪

স্থিতধী বলেছেন: শুরুতেই ক্ষমা চেয়ে নিই, তাঁর কারন আপনার প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে আমি বেশ লম্বা একটি মন্তব্য লিখে ফেলবো মনে হচ্ছে।

কোনটা সত্যি কোনটা বায়াসড বুঝতে পারিনা

এটা খুব স্বাভাবিক । ইতিহাস বা আরো প্রেসাইজলি বললে, যেকোন রাজনৈতিক ইতিহাসে সাবজেক্টিভ ইন্টারপ্রিটেশনের অনেক সুযোগ থেকে যায়, কারন কে কোন জায়গা বা স্বার্থ থেকে ইতিহাসকে দেখছে সেটা অনেক বেশী মানে রাখে । রাবণ কে একজন সীতা হরণকারী দুশ্চরিত্র হিসেবে দেখানো যায় আবার তাকে অন্যভাবে একজন দেশপ্রেমিক শ্রীলঙ্কান হিসেবেও পরিচয় করানো যায় ঘটনা পরম্পরার উপর ভিত্তি করে । রাজনীতির সবচেয়ে পিচ্ছিল বিষয়টি বোধহয় এটিই যে সাধারণত প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের মত এটাতে কোন “ প্রমাণিত একক মহান সত্য” বলে কিছু থাকেনা, যা থাকে তাঁর বেশীরভাগটাই বিভিন্ন মানব গোষ্ঠীর স্বার্থ সংলগ্ন নানা ইস্যুর ইন্টারপ্রিটেশন । যেকারনে প্রায় সর্বদা- ই রাজনীতি মানেই অর্থনীতি এবং সমাজ বিজ্ঞান আলোচনা ; কারা কামাবে? কিভাবে ও কতটুকু কামাবে? কে ভোগ করবে? কারা কিরকম সম্মান পাবে? এসকল প্রশ্নের সমাহার এখানে ঘটে । স্বাভাবিক ভাবেই এ প্রশ্নগুলোর উত্তরও তাই নানা স্বার্থের কারনেই সরল হয়না কখনো, দেখতে শুনতে বা তত্ত্বে তা যতই সরল হোক। তাঁর উপরে সেই রাজনৈতিক ইতিহাসের চর্চা যদি করে আমাদের মতো বিভক্তি প্রিয়, বর্ণচোরা বাঙালী জাতি, তাহলে তখন সাধারণ মানুষের কাজ আরো বহুগুন বেড়ে যায় । ফলাফল, আমাদের পাঠ্য বইয়ে জাতির জন্ম ইতিহাস পরিবর্তিত হয় সরকার বদলানোর সাথে সাথে!!

এখন আমি সাধারণত এ নিয়ে কি করার চেষ্টা করি সেটা বলি । আমি সোজা কথায় “ লিটারেচার রিভিউ” করার চেষ্টা করি, বিশ্বাসযোগ্য প্রত্যক্ষ্যদর্শীর বয়ান শুনি। একি বিষয়ে বিভিন্ন আঙ্গিকে, বিভিন্ন দৃষ্টিকোণে যত বয়ান তাঁর সব শোনার চেষ্টা করি। অমুক মানুষ বা তত্ত্বের প্রশংসায় ভরা সব রকমের কথা শুনে নিয়ে আবার তাঁকে বকাবকি – গালাগালি করা কথাগুলোও শুনি । এটার সুবিধা আপনি নিশ্চয়ই বোঝেন; এটা সবসময় শুধু কনফিঊজ করে তা নয়, বরং ভালোমতো সব সাইডের কথা পড়ে, শুনে ও যাচাই করে নিলে তা বিচারকের বিচার করার মতো একটা মাঝামাঝি ‘সত্যের’ কাছে পৌছে দিতে সাহায্য করে । আমার এই ছোট পোস্টেও দেখতে পাচ্ছেন চার - পাঁচটি সোর্সের উল্লেখ আছে যেখানে একেক সোর্স একেক ঘরাণার, তবে সবকিছুকে মিলিয়ে একটি দিকে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে । তবে নন- ফিকশনের ইতিহাস কে ভালোভাবে বোঝার জন্য আমি সাধারণত ফিকশনের আশ্রয় নেয়া ঐতিহাসিক উপন্যাস একটু এড়িয়ে চলার চেষ্টা করবো সেটার কল্পনা প্রবণতার কারনে।

তাই সব মিলিয়ে আপনাকে কোন “ একটি” বই পড়ে মুক্তিযুদ্ধর মতো বিষয় কে বোঝার চেষ্টা করার কথা ভুলেও বলবোনা । যেমন ধরুন আমি আপনাকে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে একটা তথাকথিত “ নৈর্ব্যক্তিক” ও “ বৈজ্ঞানিক “ গবেষণাকর্ম রূপে দাবি করা ভারতীয় আমেরিকান শর্মিলা বসুর লেখা বিতর্কিত ডেড রেকনিং ৭১ এর কথা যদি বলি একক বই হিসেবে পড়তে তাহলে সেটাও মহা ভুল হবে। এটি মুক্তিযুদ্ধ কে সাবালক অবস্থায় না দেখা, যুদ্ধের তিন দশকেরও পরে মুক্তিযুদ্ধ কে জানার আগ্রহ দেখানো, গণহত্যার প্রকৃতি বুঝতে চাওয়া একটি লেখা যার পেছনে আছে আসলে একটি ব্যাক্তিগত কুলীন প্রথার সঙ্কীর্ণ চিন্তার এজেন্ডা । লেখিকা নিজেকে রাজনীতির বাইরের মানুষ দাবি করলেও এক্ষেত্রে তাঁর রাজনৈতিক, সামাজিক ইতিহাস জাত প্রণোদনাটি তাঁর লেখায় আবছায়া ভাবে হলেও ফুটে ঊঠেছে , তাঁর ‘গবেষণা’ কোনভাবেই “নৈর্ব্যক্তিক” থাকতে পারেনি । মূলত সেটা পূর্ব বাংলার বাঙালি বিদ্বেষী হয়ে উঠেছে ক্রমেই । তাই মুক্তিযুদ্ধে পরিণত বয়সে সম্যকভাবে অভিজ্ঞতা লাভ করা দেশী – বিদেশী পেশাদারেরা তাঁর গবেষণা কর্মটিকে অসম্পূর্ণ এবং তখনকার বাস্তবতা থেকে দূরে থাকা একটি বই হিসেবে উল্লেখ করেছেন। পশ্চিমবঙ্গ শরণার্থী শিবির থেকে মুক্তিযুদ্ধ কে অবলোকন করা লেখিকার আপন মা পর্যন্ত বইট নিয়ে কোন মন্তব্য করতে চাননি। পাকিস্তান ও বাংলাদেশের একটি গোষ্ঠী- ই কেবল বইটিকে ক্রমাগত হাততালি দিয়ে গেছে, পুরো পাকিস্তানও বইটিকে মহা সত্য হিসেবে মানে নি। ঐ বিশেষ গোষ্ঠীটি তাজউদ্দিন কন্যার “ নেতা ও পিতা” বা বামপন্থী বদরুদ্দীন উমরের লেখা কিছু বইয়ের চুম্বক অংশ নিয়েই রাজনীতি করতে চায় কেবল, পুরো বইয়ের বিষয়তে ঢোকেনা । ঠিক তেমনি ব্লগের সকল সিনিয়রও অবশ্যই চরম সত্যর পূজারী ঠাকুর দেবতা নন, সব সিনিয়ররা মুক্তিযুদ্ধের সকল খুঁটিনাটি বোঝা সাবালকও ছিলেন না, অনেকেরই রয়েছে ব্যাক্তিগত ইতিহাস ও রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি ।

আরব/ ইসলামপন্থী ও রাওয়ালপিন্ডি মুখী নানা সামরিক বেসামরিক দল, চীনা পন্থী ও মস্কো পন্থী নানা বাম দল, বাঙালিত্বে বিশ্বাসী তবু ভারত মুখী দল, ইউরোপীয় স্বাধীনতা, ধর্ম নিরপেক্ষতা ও গণতন্ত্রে বিশ্বাসী এবং পূর্ব এশিয়ার মতো ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদে আস্থা রাখা একটি - দুটি প্রজন্ম, সদ্য বিকশিত শহড় কেন্দ্রিক রাজনীতি সচেতন শিক্ষিত মধ্যবিত্ত আর ইতিহাসের লম্বা সময় ধরে অবহেলিত, কায়েমি স্বার্থের যাঁতাকলে অর্থনৈতিকভাবে নিষ্পেশিত এ অঞ্চলের কোটি কোটি দরিদ্র শ্রেনীর মানুষ যাদের মধ্য থেকেই উঠে এসেছে এ অঞ্চলের সিংহ ভাগ সতঃপ্রনোদিত মুক্তিযোদ্ধা । সাক্ষ্য, প্রমাণ ও ঐতিহাসিকরা বলেন, এমন সমস্ত কিছুর মিথস্ক্রিয়াতেই আমাদের মুক্তিযুদ্ধ; কোন একটি বইতে এর সমগ্র ব্যাপ্তি কে মলাট বন্দী করা অবাস্তব ।

জিয়াউর রহমানকে আর যাই হোক সুস্থ মস্তিষ্কে আমি রেস্পেক্ট করতে পারবো না, ওনার অবদানকে অস্বীকার ও করবো না।

অতিরিক্ত রেস্পেক্ট কাউকে করাই ভালো নয় । সেটা চোরের লক্ষণ । অতি মুল্যায়ন, অব মূল্যায়ন দুটোই খারাপ । আপনি কোনটাই করছেন না দেখে ভালো লাগলো । খন্দকার মোস্তাক বঙ্গবন্ধুর সবচাইতে বড় ভক্ত ছিলো , সেই ভক্ত এ দেশের অন্যতম বড় বেইমান হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে । জিয়াউর রহমান জীবিত অবস্থায় নিজেকে কোনদিন “ স্বাধীনতার ঘোষক” হিসেবে দাবি করেন নাই , ওটা মোটেও ওনার কোন বিনয় নয়, ওটা তার বাস্তববাদীতা , তিনি খুব ভালো করেই জানতেন কেবল তাঁর ঘোষণা শুনেই মানুষ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পরে নাই। তিনি একজন সাধারণ খবর পাঠকের মতো করেই একটি প্রায় জানা বিষয় জাতিকে বাঙালিদের সেনাবাহিনীর একজন সদস্য হিসেবে বঙ্গবন্ধুর পক্ষ হতে জানিয়েছেন কেবল এবং সেটাও অন্যদের আয়োজনে, তিনি নিজে কোন যুদ্ধ করে চিটাগাং রেডিও স্টেশন দখল করে নিয়ে তারপর সে ঘোষণা দেননি । তাঁকে স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে যখন তিনি রাজনৈতিক ক্ষমতার বলয়ে প্রবেশ করলেন তখন তাঁর নতুন জন্ম নেয়া স্তাবকেরা তাঁকে মহিমান্বিত করতে গিয়ে এই “ স্বাধীনতার ঘোষক” উপাধি নিয়ে আসে। যেন তাঁর মুক্তিযুদ্ধের একজন সেক্টর কমান্ডার হওয়াটা যথেষ্ট নয়! এই স্তাবক গোষ্ঠীর শেখ মুজিবের সাথে জিয়াউর রহমানের তুলনা করার যে বাতুলতা দেখায় তা দেখে বোধ হয় খোদ জিয়াউর রহমান দশবার জিভ কাটতেন।

কেন মুক্তিযুদ্ধের সময়ের বইতে জিয়াউর রহমানের নাম থাকবে? তিনি তো কোন রাজনৈতিক নেতা নন তখন যে তাঁর নাম আসবে, এমন কোন তারকা সেনা সদস্যও নন যে লোকের মুখে মুখে অথবা বিশিষ্ট জনেরা ৭১ এ তার নাম জপবেন । একজন জনপ্রিয় নেতার পক্ষ হয়ে বাঙালী স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়া জনৈক সেনা সদস্যের নামটা সবার মনে থাকার কথাও নয় । তথাপি আপনি হুমায়ুন আযাদের স্মৃতি চারণে “ আমরা কি এই বাংলাদেশ চেয়েছিলাম” বইটিতে জিয়াউর রহমানের ঘোষণার উল্লেখ পাবেন। হুমায়ূন আযাদ অন্তত এই বিষয়ে খুশি হয়েছিলেন যে তিনি সে ঘোষনায় তাঁর পুরো নাম না বলে শুধু মেজর জিয়া হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন, ফলে তাতে হুমায়ূন আযাদের মনে হয়েছে যে তিনি একজন অপেক্ষাকৃত তরুণ আত্ম বিশ্বাসী এক বাঙালি সেনা, কোন পদোন্নতি না হওয়া বৃদ্ধ হতাশাগ্রস্ত বিপ্লবী সেনা নন। ফলে তরুণ বাঙালি সেনারা পাকিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের দায়িত্ব নিয়েছে সেটা অনেককে খানিকটা ভরসা দিয়েছে তখন।

জিয়াউর রহমানের সিনিয়র ও সমকালীন সহকর্মীদের অনেকেই তাঁকে অত্যন্ত উচ্চাভিলাষী, ক্ষমতার আগ্রহী রূপে আখ্যায়িত করতেন যার সত্যতা আছে বলেই ইতিহাস ইঙ্গিত দেয় । তিনি উচ্চারণ করেছিলেন “ আই উইল মেইক পলিটিক্স ডিফিকাল্ট ফর দা পলিটিশিয়ান্স” এবং তিনি পরবর্তীতে করেছেনও তাই। তিনি খন্দকার মোস্তাকের আনা জঘন্য ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় বাতিল করেন নি। তাই পরোক্ষ ভাবে হলেও তিনি সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের একজন সহায়ক কিনা, সেটা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশকারীদের ভালো যুক্তির খুঁটি নাই্। এদেশে তিনিই আবার জামায়াত ও রাজাকারদেরকে কে তাঁদের পাকিস্তানি স্টাইল ধর্মীয় রাজনীতি করার বৈধতা দিয়ে গেছেন এটি অমোচনীয় ঐতিহাসিক সত্য। তিনি সংবিধানে ধর্ম নিরপেক্ষতা কে হটিয়ে দিয়ে সেখানে “বিসমিল্লাহ্‌ “ ঢুকিয়ে বঙ্গবন্ধু হত্যার আগ পর্যন্ত আমাদের স্বাধীনতার স্বীকৃতি না দিতে চাওয়া সৌদি আরবকে খুশি করিয়েছেন এই আশায় যে তাঁরা এবারে পেট্রো ডলার দিয়ে বাংলাদেশকে ভরিয়ে দেবে । হয়েছেও তাই, ফলে তিনি বলতে পেরেছেন “ মানি ইজ নো প্রবলেম” । তাঁর ক্ষমতা টেকাতে তিনি সেনা ছাঊনিতে অজস্র সৈনিকের হত্যার কারন হয়েছেন , বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন কর্নেল তাহেরের মতো মুক্তিযোদ্ধা বাঙালি সেনাদের সাথে, এগুলোর ঐতিহাসিক সাক্ষীরা আজও জীবিত । এ সমস্ত কিছুর বিনিময়ে তিনি সার্ক ধারণাটির উদ্যোক্তা বা বিটিভির “নতুন কুড়ির” অথবা বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা ; এই জাতীয় প্রশংসা বাক্য গুলো ভারী হয়না খুব। অপরদিকে তিনি ক্ষমতা লোভী হলেও তাঁর কুযোগ্য সন্তানটির মতো টেন পারসেন্টের সওদা করে নিজের বা পরিবারের দেশে বিদেশে সম্পত্তি বাড়ানোর মতো ব্যাক্তিগত অর্থ সম্পদ লোভী এক লোক ছিলেন ; এমন কথা তাঁর শত্রুদেরও বলতে শোনা যায়না। কেউ কেউ তাঁকে অতটুকু ক্রেডিট দিতে চান যে তিনি অন্তত খন্দকার মোস্তাক পাকিস্তানের সাথে একটি কনফেডারেশন রাষ্ট্র তৈরির যে পরিকল্পনায় ছিলেন বলে শোনা যায়, সে পথে হাটেন নি। স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকায় চাঁদ তাঁরা লাগাতে জাননি । পুরোপুরি ভাবে পাকিস্তানের ভক্ত এজেন্ট আর ভারতের দুষমন এমন কাউকে ভারতও বাংলাদেশে স্বীকৃতি দিতে চাইতো কিনা সেটা নিয়েও সন্দেহ আছে ।

১১| ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ২:৪৪

অনল চৌধুরী বলেছেন: দক্ষিণ এশিয়ার সব সমস্যা সৃষ্টি করেছে জঙ্গী হিন্দুদের রাম-রাজ্য প্রতিষ্ঠার খায়েশ, যে জন্য অসংখ্য জাতি থাকার পরও তারা ইউরোপের মতো আলাদা একাধিক স্বাধীন দেশ সৃষ্টি না করে ধর্মের ভিত্তিতে শক্তির মাধ্যমে ভারত নামের একটা দেশ সৃষ্টি করতে চেয়েছে। আর মুসলমানরাও এটা বুঝতে পেরে একইভাবে ধর্মকে ব্যাবহার করে রাষ্ট্র চেয়েছে।

সুতরাং প্রথমে যারা যে অপরাধ করেছে , সম্পূর্ণ দোষ তাদেরই।
নব্বুই - বিরানব্বুই % মুসলিমের দেশে এটা হবেনা ওটা চলবেনা”-এগুলি জামাতি জঙ্গীরা ছাড়া আর কারা বলে?
কিন্ত দেশে যখন চুরি-দুরনীতি-মদ-জুয়া আর ডিশ এ্যান্টেনায় অবাধে কারিনা-দিপিকা-সানি লিওন অবাধে চলে, তখন আবার এদের কোনো আপত্তি থাকে না।

২১ শে ডিসেম্বর, ২০২০ সকাল ৭:৪৯

স্থিতধী বলেছেন: সুতরাং প্রথমে যারা যে অপরাধ করেছে , সম্পূর্ণ দোষ তাদেরই।

ইতিহাস বা আইন কে এইভাবে করে পাঠ করতে গেলে তো আমাদের ইতিহাসের দুষ্টচক্রের ভেতরেই বসবাস করতে হবে আজীবন । চক্র ভেঙ্গে নতুন দিনের নতুন সম্ভাবনা তৈরি অলীক কল্পনাই থাকবে । ‘তালি এক হাতে বাজেনা’ সেই বাস্তবতায় , কোন হাত আগে ছুটে এসেছিলো জেনে ফেলে আমরা তো সম্মিলিত ভাবে তালি বাজার অপরাধ টিকে ভুলে যেতে পারিনা। ভারতের মাটিতেই জঙ্গী বিজেপি আর জামায়াতের জন্ম হয়েছিলো; এ দক্ষিণ এশিয়াতে এদের ভাব শিষ্যরাই ধর্মীয় উন্মাদনার হাত তালিটি স্মমিলিত ভাবে বাজিয়ে যায় তাদের কায়েমি স্বার্থে , এটাতো বাস্তব । এটাও ঠিক ভারত পাকিস্তান গঠন হবার পর প্রভাবশালী জাতীয় রাজনৈতিক নেতাকে ধর্মীয় কারনেই হত্যা করার প্রথম নজীর ভারতের মাটিতেই সৃষ্টি হয় হিন্দু উগ্রবাদী নাথুরাম গডসের মহাত্মা গান্ধীকে হত্যার মাধ্যমে । তবে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি করার জন্য সাধারণত ইতিহাস পাঠ করা হয়না, করা হয় ইতিহাসের অপ্রীতিকর পুনরাবৃত্তি গুলোকে ঠেকানোর উপায় বোঝার চেষ্টায়।

৯০-৯২% মুসলিমের কথাটি বারবার যদি এ বাংলাদেশে শুধু জামায়াতের লোকেরাই উচ্চারণ করতো তবে এতো চিন্তা থাকতোনা। কিন্তু অনেক সাধারণ মুসলিম নাগরিকরাও যখন ঐ কথাটি নানা ইস্যুতে বারবার মুখে আনে তখন দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবনা থেকেই যায় । তা নাহলে সাধারণ মুসলিম নাগরিকদের বোঝাতে, “ ভাস্কর্য কেন মূর্তি নয়” এমন এক বিষয়ে ব্লগার থেকে শুরু করে রাষ্ট্র পরিচালকদের এতো লেখা, এতো বয়ান, এতো রাজনীতির কখনো কোন প্রয়োজন পরতোনা এ দেশে । ডেটল ৯৯.৯৯% জীবাণু ধ্বংস করে বলে বিজ্ঞাপন দেয়, তেমনি সম্ভাব্য সামনের এক বাংলাদেশে এমন মানুষেরা ৯৯.৯৯% মুসলিমের বাংলাদেশে এরা ‘বিদায়াতি মুসলিম’ ওরা ‘শিয়া পন্থী মুসলিম’ ইত্যাদি বলে মুসলিম বিভাজনের রক্তক্ষয়ী মারামারিতে অংশ নিবে ঠিক পাকিস্তান বা তাঁর থেকেও অধমদের মতো ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.