নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মনেরও ঘর থাকে। মন ও উদ্বাস্তু হয়।হয়ে পড়ে ভ্রাম্য মন। স্থিতধী আর ভ্রাম্য মনের লড়াইয়ে জন্ম নেয়, কিছু স্পষ্ট উচ্চারণ।

স্থিতধী

আমরা সবাই যেন একেকটি খামে মোড়া চিঠি। সবাই পারেনা সে খাম খুলে আমাদের পড়ে নিতে।

স্থিতধী › বিস্তারিত পোস্টঃ

\'যদি\' কথন

০৭ ই মার্চ, ২০২১ সকাল ৭:৩৩



শর্ত, অনিশ্চয়তা, আকাঙ্খা , সম্ভাবনা, বিকল্প ভাবনা; এমন অনেক কিছুর প্রকাশবাহী একটা ছোট শব্দ “ যদি”। এই “যদি” এর শর্তে আমরা অনুপ্রাণিত হই আবার থমকেও যাই। এই শব্দটা আমাদেরকে সিদ্ধান্ত মূল্যায়ন এবং গ্রহণে সাহায্য করে , আবার একি সাথে “যদি” এর আধিক্য আমাদেরকে সিদ্ধান্তহীনতার গোলকধাঁধাতেও নিক্ষেপ করতে পারে । অর্থাৎ সম্ভাব্যতা কে আমলে রেখে বিকল্প পরিকল্পনা এবং সিদ্ধান্ত নেবার কাজে “ যদি” যেমন প্রয়োজনীয় তেমনি ; শঙ্কা আর সম্ভাবনার দোলাচল- উচ্ছ্বাস প্রকাশেও “যদি” পারঙ্গম । লটারি নামক ভাগ্যের খেলায় আমরা তাই অতি পরিচিত এক স্লোগান শুনতে পাই; “ যদি লাইগা যায়!” । আবার প্রেমে হতাশ মানুষের মুখে গানও শুনতে পাই; “ আগে যদি জানতাম তবে মন ফিরে চাইতাম!” । এভাবে করে সংশয় ও সম্ভাবনা কেন্দ্রিক যুক্তি- তর্ক, কল্পনা এবং দর্শন বিনির্মাণেও এই “যদি” এর ভূমিকা ফেলনা নয়।

মানবজীবনে অনেক মত, অনেক পথ, অনেক গন্তব্য । আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হয়; কখন কোন পথে যাবো, কোন মতে থামবো, কোন গন্তব্যের ট্রেন ধরবো। অনিশ্চয়তাবাচক বৈশিষ্ট্য থাকবার ফলে, এই “যদি” শব্দটা অনেকের কাছে তাই অনেকক্ষেত্রেই হয়ে ওঠে অনাকাঙ্খিত । নিশ্চয়তার আকাঙ্খায় থাকা মানুষেরা এই যদি দিয়ে উৎপন্ন অনিশ্চয়তার আস্ফালন কে সহ্য করতে পারেনা । এটি তাঁদের মনে তৈরি করতে পারে গভীর উদ্বেগ। তাই অনেক মানুষ চেষ্টা করে এই শব্দটি জীবনে যথাসম্ভব এড়িয়ে চলবার। আবার এর ঠিক উল্টোটিও আছে; যদি এর ঐ অনিশ্চয়তায় অনেকেই খুঁজে নিতে চায় নতুন সম্ভাবনা, নতুন পথ, নতুন উদ্যম। ‘যদি’ আছে বলেই জীবন তাঁদের কাছে এক আনন্দের বিষয়, সব কৌতূহলের কেন্দ্রস্থল। তাই ‘যদি’ এর সীমানা ডিঙিয়ে যাবার ‘সংকল্প’ ফুটে ওঠে কবির কাব্যে;
“আমার সীমার বাঁধন টুটে
দশ দিকেতে পড়ব লুটেঃ
পাতাল ফেড়ে নামব নীচে, ওঠব আবার আকাশ ফুঁড়েঃ
বিশ্ব-জগৎ দেখব আমি আপন হাতের মুঠোয় পুরে”


তো গণিতের দৃষ্টিতে দেখতে গেলে , “যদি” শব্দে যে শর্ত, বাধা বা আকাঙ্খাগুলো থাকে তা সাধারণত চলক রাশি; ধ্রুব নয় । আমরা জানি, চলক রাশি পরিবর্তনশীল; ফলে অপরিবর্তনীয় ধ্রব রাশির বিপরীতে পরিবর্তনশীল চলক রাশির বিষয়ে দ্রুত সুনিশ্চিত কোন মীমাংসায় আসাটা দুরূহ কাজ। চলক রাশির চলমানতা কে বুঝবার কিংবা তা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে প্রয়োজন হয় ধৈর্য, মেধা, অধ্যাবসায়, আন্তরিকতার মত নানা মানবিক গুণের প্রয়োগ ও বিকাশ । অমন দূরহ কাজ নিষ্পন্ন করার চাইতে বরং ধ্রব রাশির অপরিবর্তনীয় অদৃষ্টে বিশ্বাস স্থাপন অপেক্ষাকৃত সহজ ও মানসিকভাবে স্বস্তিকর কাজ ।
“তোমারেই করিয়াছি জীবনের ধ্রুবতারা, এ সমুদ্রে আর কভু হব নাকো পথহারা।“
রবীন্দ্রনাথের এই গান গেয়ে গেয়ে এক নিরুপদ্রপ, ঝুকিহীন, চেষ্টাহীন, নিরাপদ জীবন ভেসে ভেসে পাড় করে দেয়ার বাসনা তাই হতেই পারে অনেকের।

তবে দুরূহ কাজকে বাস্তবায়িত করাটাও মানুষের আরেক বৈশিষ্ট্য, তাই সভ্যতার এক পর্যায়ে মানুষ গণিতের জগতে আবিষ্কার করলো ক্যালকুলাস নামক এক অস্ত্রের ; যার দ্বারা পরিবর্তনশীল চলক রাশির ক্ষুদ্র থেকেও ক্ষুদ্র পরিবর্তনের নিখুঁত বিশ্লেষণ করতে সে সক্ষম হল । ফলে গণিতের চলক রাশির অতীতের মতো নিজেকে অনেকটা অস্পৃশ্য - অনিশ্চিত করে রাখবার সেই ক্ষমতা অনেকটাই যেন খর্ব হল । ক্যালকুলাসের উপর ভর দিয়ে গণিত ও ফলিত বিজ্ঞান মানব সভ্যতা কে এগিয়ে নিয়ে গেলো আরো বহু দূর । আবার অর্থনীতিতে ‘যদি’ ভিত্তিক অনিশ্চয়তা থেকে অর্থনীতিবিদরা ব্যাখ্যা করলেন সুযোগ ব্যায় ধারণার; যা কোন উৎপাদনকারী কখন কোন পণ্য কতটুকু উৎপাদন করবেন কিংবা করবেন না এমন বিষয়ে ভালো সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করে । তাতে ক্যালকুলাস এবং সম্ভাব্যতা সংক্রান্ত গণিতের প্রয়োগ, অর্থনীতির সেই ধারণাগুলোকেও পরিপুষ্ট করতে সাহায্য করলো। অন্যদিকে কম্পিঊটার প্রোগ্রামিং এ এই “যদি” এর প্রয়োগ ঘটানো হয় if-else স্টেটমেন্টের মাধ্যমে ; এটিও প্রায়োগিক ভাবে সহায়ক হয় কম্পিঊটার তথা মানুষকে নানারকমের নির্ভুল কার্যকরী সিদ্ধান্ত নিতে । বিপুল পরিমাণ তথ্য রাশিকে সহজে বিশ্লেষণ করার কম্পিঊটারের দক্ষতাই অধুনা বিগ ডাটা এনালাইসিস কিংবা ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন যুগের সূত্রপাত করলো। আধুনিক সময়ে সকল শিক্ষিত মানুষকে নানা কাজে নানাভাবে কম্পিঊটারের শরণাপন্ন হতেই হয়, অবশ্য যদি তিনি চাচা চৌধুরী না হয়ে থাকেন আরকি।*
(*কারন চাচা চৌধুরীর মগজ কম্পিঊটারের চেয়েও প্রখর। প্রচারে: ডায়মন্ড কমিকস)

মোদ্দা কথা, ব্যাক্তি এবং গোষ্ঠী জীবনে যেকোন সংশয় - অনিশ্চয়তা অস্বস্তিকর, ক্ষেত্র বিশেষে ভীতিকরও বটে। কিন্তু মানুষ নামক বুদ্ধিমান, গল্পপ্রিয়, স্বপ্নবাজ, অধ্যাবসায়ী প্রানী অনিশ্চয়তাজাত এই অস্বস্তির প্রকোপ কে কমিয়ে আনার নানা পন্থাও বের করতে জানে । মোটাদাগে তাঁর কিছু পন্থা মূলত সামাজিক ও মনোজাগতিক আর কিছু পন্থা বাহ্যিক ব্যাবহারিক । সামাজিক ও মনোজাগতিক পন্থায় মানুষ নিয়ে আসলো দর্শন, নীতিশাস্ত্র, ধর্ম, জ্যোতিষ, লোকায়ত গল্প, সঙ্গীত ইত্যাদির আর আশ্রয় নিতে থাকলো এসবের ভেতর । অন্যদিকে ব্যাবহারিক ক্ষেত্রে মানুষ চর্চা করতে লাগলো গণিত, পরিসংখ্যান, অর্থ, আইন ও চিকিৎসা শাস্ত্র ইত্যাদির । এসব কিছুর একটা অলিখিত লক্ষ্য যেন জীবনের অনিশ্চয়তার প্রকোপ কে কমিয়ে এনে মানুষ তথা মানব সভ্যতাকে যথাযথ সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করা; জীবনে স্বস্তি বৃদ্ধি করে জীবন কে উপভোগ্য ও সুখী করে তোলা। তবে সুখ যে কি জিনিস সেটাই আবার আরেক দার্শনিক বিতর্ক নাম । স্কুল জীবনে সাহিত্যিক মোতাহের হোসেন চৌধুরীর একটি প্রবন্ধ পড়ানো হতো যেখানে তিনি মানব জীবনের চাহিদা গুলো কে দুই তালা দালানের সাথে তুলনা দিয়েছিলেন । এক তালায় ক্ষুধা, দারিদ্র নিবারণের মতো অতি জৈবিক - ব্যবহারিক বিষয়, আর দোতালায় সংস্কৃতি চর্চা ও রুচির উন্নয়নের মতো কিছু আত্মিক বিষয় । এক তলার ভিত্তি শক্ত না হলে শুধু কল্পনাতে বানানো দুই তালা স্থায়ী হয়না। সম্ভবত তার সেই লেখার প্রেরণা ছিলো ম্যাস্লো সাহেবের হায়ারারকি অফ নিডস। নোবেল জয়ী বারট্রান্ড রাসেলের The Conquest of Happiness নামক বইটির বাংলা অনুবাদও তিনি করেছিলেন, নাম দিয়েছিলেন ‘সুখ’ ।

যাই হোক, সপ্তদশ শতাব্দীকে গণিত ও বিজ্ঞানের অসামান্য অগ্রগতির এক শতাব্দী হিসেব গণ্য করা হয় । গ্যালেলিও, দেকারত, বেকন, নেপিয়ার, নিউটন, লিবনিজ, ডি ফেরমা, প্যাস্কেলের মতো বিবিধ চিন্তাশীল গবেষকদের দ্বারা পর্যবেক্ষণ ভিত্তিক বৈজ্ঞানিক গবেষণা পদ্ধতি ও গাণিতিক মডেলিং এর প্রভূত উন্নয়নের সাথে সাথে সেই শতকেই জন্ম ও বিকাশ শুরু হয় লগারিদম, সম্ভাব্যতার তত্ব এবং ক্যালকুলাসের । সেই ধারাবাহিকতায় আধুনিক সম্ভাব্যতার সূত্র দিয়ে সাজানো পরিসংখ্যান ,ক্যালকুলাস, আর নানা গাণিতিক মডেলিং আজকের একবিংশ শতাব্দীর তথ্য বিজ্ঞান, ব্যবস্থাপণা বিজ্ঞান, অর্থনীতি, একচুয়ারিয়াল সাইন্স, মেশিন লারনিং, আরটিফিশিয়াল ইন্টালিজেন্স ইত্যাদির মেরুদন্ড রূপে কাজ করছে । দৈব অনিশ্চয়তার প্রকোপ দক্ষতার সাথে যথাসম্ভব এড়িয়ে চলার জন্য এখন পুরো পৃথিবীতে বিভিন্ন রকমের প্রতিষ্ঠান তথ্যভিত্তিক কার্যকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণের স্বার্থে জ্ঞানের এই সকল শাখার বাস্তবিক প্রয়োগ করে চলেছে । ফলে প্রতিষ্ঠান ও ব্যাক্তি উভয় লাভবান হচ্ছে এবং ‘যদি’ এর তৈরি করা সংশয় অনেকক্ষেত্রেই তাঁর ধার হারাচ্ছে।

কিন্তু এগুলো তো গেলো ব্যবহারিক পন্থার কথা । গত তিনশো - চারশো বছরে যেভাবে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মানব জীবন ও সভ্যতায় প্রবল অবদান রেখে নিজ প্রভাব বলয় তৈরি করে যাচ্ছে, এই একই সময়ে কি সেই মাত্রায় সামাজিক ও মনোজাগতিক পন্থাগুলোও তা করতে পারছে ? অর্থাৎ গত তিনশো – চারশো বছরে দর্শন , ধর্ম, নীতিশাস্ত্র; এসবেরও কি প্রভূত রকমের উন্নতি ও বিকাশ হয়েছে ঠিক যেভাবে হয়েছে গণিত, বিজ্ঞান, আইন বা চিকিৎসা শাস্ত্রের ? বাস্তব জীবনে পরিবর্তনশীল পৃথিবীর অনিশ্চয়তা মোকাবিলার এ দুরকম পন্থার মাঝে কোনটি বেশী সফল ? আমরা কি গণিত ও বিজ্ঞানে বেশী ভরসা রাখবো নাকি দর্শন ও নীতি শাস্ত্রে?

এগুলো তর্কের বিষয় । অনেকে তো বলেই বসেন; “ বিজ্ঞান আমাদের দিয়েছে বেগ, কেড়ে নিয়েছে আবেগ” । তখন আবারো প্রশ্ন জাগে; আবেগ কি আসলে বিজ্ঞান কেড়ে নিচ্ছে নাকি আবেগ কলুষিত হচ্ছে কারন দর্শন , ধর্ম, নীতিশাস্ত্র এখন তুলনামূলক অনগ্রসর সে কারনে ? যদি তাই হয় তবে সেই দায় কি বিজ্ঞানের নাকি মানুষের? বিজ্ঞানের তো আর আবেগের ঠেকা নেবার কথা নয়, বিজ্ঞানের কাজ সত্যের নৈর্ব্যক্তিক অনুসন্ধান আর প্রাপ্ত জ্ঞানের সম্প্রসারণ । নাকি আসলে দর্শন , ধর্ম, নীতিশাস্ত্র এসব বিষয়ে অনগ্রসরতা বলে কিছু নেই? এগুলো সব অনড় অপরিবর্তনীয় চিরন্তন বা ধ্রুব/ ধ্রপদী হিসেবে বিবেচনা করতে হবে?

ব্যাপারটা হয়তো অন্যভাবেও ভাবা যায় । ধরুন, খনার বচনের যতই ঐতিহাসিক,সাহিত্যিক, লোকায়ত বা আবেগীয় মূল্য থাকুক; প্রায়োগিক ক্ষেত্রে বাংলার কৃষক কি আজ খনার বচন মেনে চলে বেশী উপকার পাবে নাকি হাতের মোবাইলের থেকে পাওয়া প্রায় নির্ভুল আবহাওয়ার পূর্বাভাস থেকে বেশী উপকৃত হবে? যা কিছু পরিবর্তন বা সংস্কারের আওতায় পড়েনা ( যেমন খনার বচন) সেটাই শুদ্ধ, পবিত্র ও সঠিক? অর্থাৎ যার হালনাগাদ বলে কিছু নাই এবং যার বাস্তব প্রয়োগে সুফলতা অপ্রতুল; সেটাই কি তবে মহান কিংবা ধ্রুপদী ?

এই মহান, চিরন্তন বা ধ্রুপদী প্রসঙ্গে আরেকবার বিংশ শতকের অগ্রভাগে ঢাকার যুক্তিবাদী আন্দোলন “ শিখা গোষ্ঠীর” অন্যতম ব্যাক্তি; সাহিত্যিক মোতাহের হোসেন চৌধুরীর কাছে একবার যাই । তাঁর “সংস্কৃতি কথা” প্রবন্ধে তিনি বলছেন ;

“ সাধারণ লোকের কাছে প্রগতি আর সভ্যতার কোনো পার্থক্য নেই। যা সভ্যতা তা-ই প্রগতি, অথবা যা প্রগতি তা-ই সভ্যতা। কিন্তু কালচার্ড লোকেরা তা স্বীকার করে না। উভয়ের সূক্ষ্ম পার্থক্য সম্বন্ধে তারা সচেতন। প্রগতি তাদের কাছে মোটের উপর জ্ঞানের ব্যাপার। কেননা, জ্ঞানের ক্ষেত্রেই পরিবর্তনশীলতা অবধারিত, সৌন্দর্যের ক্ষেত্রে নয়। তাই জ্ঞান, বিশেষ করে বিজ্ঞান আর বিজ্ঞানপ্রসূত কল্যাণকেই তারা প্রগতি মনে করে। প্রকৃতিবিজয়লব্ধ সমৃদ্ধির সার্থক বিতরণই তাদের কাছে প্রগতি। কিন্তু সভ্যতা শুধু প্রগতি নয়, আরো কিছু। প্রগতির সঙ্গে সৌন্দর্যের সম্বন্ধ, প্রেমের সম্বন্ধ স্থাপিত না হলে সভ্যতা হয় না। আর সৌন্দর্য ও প্রেমের ব্যাপারটা তথা শিলেপর ব্যাপারটা—কেননা শিলপ, সৌন্দর্য ও প্রেমেরই অভিব্যক্তি—চিরন্তন ব্যাপার, প্রগতির ব্যাপার নয়। চিরন্তনকে স্পর্শ করতে না পারলে সভ্যতা সৃষ্টি করা যায় না। কেননা, সভ্যতা ভ্যালুর ব্যাপার, আজ নিউভালু বলে কোনো চিজ নেই। জীবনে সোনা ফলাতে হলে প্রগতিকে চলতে হবে সভ্যতার দিকে মুখ করে, নইলে তার কাছ থেকে বড়কিছু পাওয়া যাবে না। কিন্তু দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে, আজকাল প্রগতি কথাটা যত্রতত্র শুনতে পাওয়া গেলেও সভ্যতা কথাটা একরকম নিশ্চিহ্ন হতে চলেছে। লোকেরা কেবল প্রগতি-প্রগতি করে, সভ্যতার নামটিও কেউ মুখে আনে না। “

অর্থাৎ তিনি সৌন্দর্য ও প্রেম নামক বিষয়গুলোকে শিল্পের অন্তর্ভুক্ত করছেন এবং শিল্পকে চিরন্তন ঘোষণা করছেন । শিল্পবিহীন মানব সভ্যতাকে তিনি সভ্যতা নয় , তা শুধু প্রগতি হতে পারে বলে উল্লেখ করছেন , কেননা পরিবর্তনশীলতা শুধু জ্ঞানের জগতের বিষয় , কিন্তু সৌন্দর্য ও প্রেম তথা শিল্প চিরন্তন বিষয় । কথাগুলো শুনতে পড়তে ভালোই লাগছে , কিন্তু বাস্তবতা কি সম্পূর্ণ তাই? শিল্প কিংবা শিল্প চর্চার কি উন্নতি, অবনতি নেই? শিল্প, ধর্ম, দর্শন ইত্যাদি যদি সংস্কৃতির উপাদান হয় তবে কি এসব কিছু নিয়ে সংস্কৃতি একটি বহতা নদী নয় ? সৌন্দর্য ও প্রেম, সভ্যতা ও সংস্কৃতি এসব কি সময়ের সাথে তাঁর রূপ ও প্রকাশ ভঙ্গির পরিবর্তন ঘটায়না? সৌন্দর্য ও প্রেমের বোধ আমাদের আবেগের সাথে জড়িত, যদি সেই আবেগকে কেড়ে নেওয়া যায় বা আবেগ কলুষিত হয় বলে মেনে নিই তাহলে চিরন্তন আবেগ বা শিল্পবোধ আমরা কাকে বলবো? চিরন্তন কি তবে এখানে শুধু একটি আদর্শের নাম? কোন প্রিয় স্মৃতির নাম যা ফিরে ফিরে আসে কেবল কিন্তু আদতে যা স্থায়ী নয়? এমন চিরন্তন শিল্প বোধের সাথে জীবনের সংশয় বা অনিশ্চয়তা বোধের সম্পর্কটিই বা কি?

অন্যদিকে, মোতাহের হোসেন চৌধুরীর প্রিয় দার্শনিকদের একজন, বিংশ শতাব্দীর অন্যতম পলিম্যাথ বারট্রান্ড রাসেল তার “Mysticism and Logic” প্রবন্ধে বিজ্ঞান ও আধ্যাতিকতা প্রসঙ্গে দর্শনের মেটাফিজিক্স শাখার কথা উল্লেখ করছেন এভাবে;
“Metaphysics, or the attempt to conceive the world as a whole by means of thought, has been developed, from the first, by the union and conflict of two very different human impulses, the one urging men towards mysticism, the other urging them towards science. Some men have achieved greatness through one of these impulses alone, others through the other alone: in Hume, for example, the scientific impulse reigns quite unchecked, while in Blake a strong hostility to science co-exists with profound mystic insight. But the greatest men who have been philosophers have felt the need both of science and of mysticism: the attempt to harmonise the two was what made their life, and what always must, for all its arduous uncertainty, make philosophy, to some minds, a greater thing than either science or religion

তারমানে কিছু মানুষের কাছে দর্শন হচ্ছে বিজ্ঞান ও ধর্মের চাইতেও ব্যাপক একটি বিষয় যেখানে পৃথিবীর মহত্তম অনেক দার্শনিকেরা আধ্যাতিকতা ও বিজ্ঞান এই দুইয়ের সমন্বয় সাধন করাকেই জীবনের ব্রত করে তুলেছিলেন, এই দুইয়ের মাঝে কোন প্রতিযোগিতা না খুঁজে । তাতে করে কি বাস্তব জীবনে মানুষের অনিশ্চয়তা বোধের একটা গতি হবে? বাস্তব জীবনে মানুষের জীবনে দর্শনের ভূমিকা কি এমন প্রশ্ন করা হলে রাসেল বলেন;
“One has in practical life to act upon probabilities, and what I should look to philosophy to do is to encourage people to act with vigor without complete certainty.”

তারমানে রাসেল বলতে চান মানুষের বাস্তব জীবনে সম্ভাব্যতার আলোকে কাজ করে যাওয়াই -ই মুখ্য । অন্যদিকে দর্শন অনিশ্চয়তার বিলুপ্তিতে নয়; দর্শনের মূল ভূমিকা অনিশ্চয়তার মাঝে বসবাস করেও মানুষকে প্রবল উদ্যমে কাজ চালিয়ে যাবার বিষয়ে অনুপ্রেরণা দিয়ে যাওয়া ।

যদি ভিত্তিক আরো একটা প্রশ্ন রেখেই তাহলে এবার ইতি টানি;
যদি আধুনিক বিজ্ঞান ভিত্তিক সমাজ মানুষের আবেগ কলুষিত হবার কারন হয়, লাখো প্রায়োগিক উপকার থাকা সত্ত্বেও
তবে চিরন্তন/ বর্তমান শিল্প,সাহিত্য, সংগীত, দর্শন, ধর্ম বা সভ্যতা কি পারছে সে আবেগকে বিশুদ্ধ করে অনুপ্রেরণা হয়ে থাকতে?



ছবি © স্থিতধী

মন্তব্য ৩১ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৩১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই মার্চ, ২০২১ সকাল ৮:১১

চাঁদগাজী বলেছেন:



লজিকের একটি শব্দ (কন্ডিশানেল ষ্টেইটমেন্ট); আপনি কি ইহাকে ১ম বার মোটামুটি বুঝতে পারলেন?

০৭ ই মার্চ, ২০২১ সকাল ১০:৪০

স্থিতধী বলেছেন: না, উহাকে কম্পিউটারে আরো ভালোভাবে ব্যবহার করা লেগেছে আমার, তাই উহাকে আরো আগেই বুঝতে হয়েছে। ঐ প্রসঙ্গটি শুধুমাত্র ‘যদি’ এর একটি বাইনারি প্রয়োগের উদাহারন টানার জন্য আনা হয়েছে । মূল আলোচনা এটাই যে একদিকে ‘যদি’ যেমন লজিক্যাল ডেভলপমেন্টে র‍্যাশনাল ডিসিশন মেকিং এর কাজে ব্যবহার হচ্ছে অন্যদিকে এই শব্দের মাঝে যে অনিশ্চয়তার ডাইমেনশন রয়েছে তা কিভাবে আমাদের আবেগ বা ভীতিকেও প্রভাবিত করতে পারে সেটা । অনেকে যেমন ভাবেন যে অনিশ্চয়তা না থাকলে জগতে ধর্মের আর প্রয়োজন হবেনা, সেক্ষেত্রে ‘যদি’র নানারকম প্রয়োগ কতদূর মানব সভ্যতা থেকে অনিশ্চয়তা দূর করতে সক্ষম হতে পারে?

২| ০৭ ই মার্চ, ২০২১ সকাল ১০:১৯

মোঃমোস্তাফিজুর রহমান তমাল বলেছেন: যদি শুধু অনিশ্চয়তা নয়,আশাবাদ ও প্রেরণারও উৎস। যদি ভালো সময় আসে!! এই আশায় মানুষ প্রবল অধ্যবসায়ের সাথে পরিশ্রম করে। সংস্কৃতির কথা প্রবন্ধে মোতাহের হোসেন চৌধুরী একথাও বলেছেন যে, নীচ তলা থেকে ওপর তলায় ওঠার সিঁড়ি হচ্ছে শিক্ষা। শিক্ষিত না হলে এবং শিল্প,সংস্কৃতির মূল্য বোঝার মতো জ্ঞান না থাকলে দোতলায় পৌছেও মানুষ সংস্কৃতিবান হতে পারে না।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর চতুরঙ্গ উপন্যাসে ধর্ম,দর্শন,আধ্যাত্মিকতা ও জাগতিক বস্তুবাদ ও বিজ্ঞানবাদের আন্তঃসম্পর্ক বিশ্লেষণ করেছেন। তাঁর মতে, শুধু বস্তুবাদ বা শুধু ধর্ম,দর্শন দিয়ে মানবসভ্যতা এগোবে না। দুটোরই সমান পদচারণা প্রয়োজন। এ ব্যাপারটি আপনার এই লেখার একটা অংশে আছে। বিজ্ঞানের অগ্রসর হবার সাথে সাথে ধর্ম,দর্শন,সংস্কৃতিরও সমানতালে এগিয়ে যাওয়া প্রয়োজন।
শেষে যে প্রশ্নটি রেখেছেন এর পরিপ্রেক্ষিতে আমার মনে হয়, আপনার প্রশ্নটির উত্তর খুঁজতে গেলে কয়েকটা ফ্যাক্টর আমলে নিয়ে উত্তর দিতে হবে। প্রথমেই বিজ্ঞান আবেগ কেড়ে নিয়েছে এই ব্যাপারটা ভুল বলে মনে হয় আমার। এটা মানুষের নিজেদের মানবতার অবক্ষয়কে ঢেকে দেয়ার একটা চেষ্টা। বিজ্ঞান কোথাও বলেনি যে তাকে ব্যবহার করতে হলে আবেগহীন হতে হবে। বিজ্ঞানকে মানব কল্যাণে, ভালোবাসার প্রসারেও ব্যবহার করা যায়। কিন্তু তার জন্য একটা সংস্কৃতিবান মন থাকতে হবে।শিক্ষা থাকতে হবে,বোধ থাকতে হবে। এখন কথা হচ্ছে যে শিল্প,সংস্কৃতির চর্চা কতজন মানুষ করে? আর বিজ্ঞানের সুবিধা কতজন গ্রহণ করে? হিসেব করলে দেখা যাবে মানব সমাজের প্রায় সবাই বিজ্ঞানকে ব্যবহার করে। এমনকি যার কিছু নেই সেও। কিন্তু শিল্প,সংস্কৃতি,দর্শন,শিক্ষার ব্যাপারে আগ্রহীদের সংখ্যা সে তুলনায় নগন্যের চেয়েও নগন্য বলা যায়। আর বর্তমান শিল্প সাহিত্যে (বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে) আগের বিখ্যাত জিনিসেরই অনুকরণ চলছে। নতুন কিছু নেই। আর নতুনকে সহজে গ্রহণও করা হচ্ছে না ধ্রুপদী শিল্পের দোহাই দিয়ে। যার ফলে শিল্প-সাহিত্য একই জায়গায় আটকে থাকছে। বিজ্ঞানের সাথে সাথে তাদের যে পরিমাণ উৎকর্ষ হবার কথা ছিলো সেটা হচ্ছে না। যার ফলে বিজ্ঞান যদি আবেগ কেড়ে নিয়েও থাকে( যদিও নিচ্ছে না।কারণ তার সেই ক্ষমতা নেই।) তাহলেও মানুষের আবেগকে বিশুদ্ধ করার মতো রসদ বর্তমান শিল্প-সাহিত্য-দর্শনের নেই। তার সেই শক্তি একটা নির্দিষ্ট যুগেই ছিলো এবং সেখানেই আটকে আছে।

০৭ ই মার্চ, ২০২১ সকাল ১০:৫৮

স্থিতধী বলেছেন: সংস্কৃতির কথা প্রবন্ধে মোতাহের হোসেন চৌধুরী একথাও বলেছেন যে, নীচ তলা থেকে ওপর তলায় ওঠার সিঁড়ি হচ্ছে শিক্ষা। শিক্ষিত না হলে এবং শিল্প,সংস্কৃতির মূল্য বোঝার মতো জ্ঞান না থাকলে দোতলায় পৌছেও মানুষ সংস্কৃতিবান হতে পারে না।

খুব ভালো একটি প্রবন্ধ বই ওটি। “ বুদ্ধির মুক্তি” আন্দোলন বাংলাদেশের জন্য একটা সম্পদ ছিলো।
শিক্ষা কে আমরা সার্বজনীন কেন করতে পারছিনা? ভালো মানের শিক্ষা সার্বজনীন করতে পারলে কি সবাই সংস্কৃতির মূল্য বোঝা শুরু করবে বলে আপনার মনে হয়?

আপনার প্রশ্নটির উত্তর খুঁজতে গেলে কয়েকটা ফ্যাক্টর আমলে নিয়ে উত্তর দিতে হবে। প্রথমেই বিজ্ঞান আবেগ কেড়ে নিয়েছে এই ব্যাপারটা ভুল বলে মনে হয় আমার। এটা মানুষের নিজেদের মানবতার অবক্ষয়কে ঢেকে দেয়ার একটা চেষ্টা। বিজ্ঞান কোথাও বলেনি যে তাকে ব্যবহার করতে হলে আবেগহীন হতে হবে। বিজ্ঞানকে মানব কল্যাণে, ভালোবাসার প্রসারেও ব্যবহার করা যায়। কিন্তু তার জন্য একটা সংস্কৃতিবান মন থাকতে হবে।শিক্ষা থাকতে হবে,বোধ থাকতে হবে।

নিজেদের মানবতার অবক্ষয় কে ঢেকে দেবার জন্য দায় বিজ্ঞানের উপর চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা । আপনার এই ভাবনার সাথে আমার ভাবনা মিলে যায়। বিজ্ঞান তাঁর গতিতে এগিয়ে গেছে, মানুষ ই তাঁকে এগিয়ে নিয়েছে । কিন্তু যেই মানুষদের মানবতা কেও সামনে নেবার কথা, তারা সকলে মিলে সে কাজে ভালো অবদান রাখতে পেরেছে বলে মনে হয়না। কেন সেটার কিছু উত্তর দিতে চেয়েছেন। ভালোবাসা, বোধ , শিক্ষা সংস্কৃতি। কিন্তু আবারো সেই একই সংগ্রাম। বিশ্বের বাড়তি জনসংখ্যাতে কিভাবে এগুলোকে ছড়িয়ে দেওয়া যায় ? বিজ্ঞান সাহায্য করতে পারে নিশ্চয়ই, কিন্তু মানুষ বা ক্ষমতাধরেরা কি তা চায়?

৩| ০৭ ই মার্চ, ২০২১ সকাল ১০:২৬

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: জনাব স্থিতধী, প্রথমেই আপনাকে ধন্যবাদ দিই, চিন্তার উদ্রেক করে এমন একটি লেখা শেয়ার করবার জন্যে।

সংক্ষেপে, আপনার আর্গুমেন্টের ফ্লো, আমি যেরূপে বুঝলাম, সেটা শেয়ার করি। কোন পয়েন্ট আমি মিস করলে ধরিয়ে দেয়ার অনুরোধ।

আপনি প্রাথমিকভাবে, বিজ্ঞান/গণিত - কীভাবে 'যদি'র অনিশ্চয়তা সংক্রান্ত সমস্যাকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ইউনিটে ভাগ করে আরও নিখুঁত সমাধানের দিকে আমাদের পরিচালিত করছে, আপনি সেটা আলোচনা করেছেন।

তারপর আপনার লেখা টার্ন নিয়েছে সুখের সংজ্ঞা খোঁজার দিকে।

আপনার তারপরের লেখা - সপ্তদশ শতক থেকে কীভাবে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতি হয়েছে সেটার বর্ণনা দেয়, এবং ধর্ম - দর্শনসহ, কলা ও সামাজিক বিজ্ঞানের অন্যান্য অনুষদগুলি একই গতিতে অগ্রসর হয়েছে কিনা - এ বিষয়ে মতামত দিয়েছে।

তৃতীয় অংশে যে প্রশ্নটাকে আপনি মূলে প্রোথিত করেছেন, তা হচ্ছে - 'বিজ্ঞান যদি বা মানুষের আবেগকে কলুসিত করে, ধর্ম - দর্শন কী পারছে, মানুষকে সে কলুষ থেকে মুক্ত করতে?'

আপনার শেষ প্রশ্নটির উত্তর দিয়ে আমার মন্তব্য শুরু করি। আমার মতে উত্থিত প্রশ্নটি একটি ভুল প্রশ্ন।

বিজ্ঞানের নিজ থেকে কাউকে কলুষিত করবার ক্ষমতা নেই। কাজেই বিজ্ঞান / বিজ্ঞানভিত্তিক সমাজ যদি ... করে, এরকম অ্যাজাম্পশন থেকে উদ্ভূত প্রশ্ন একটা ভুল প্রশ্ন, কারন তাতে প্রদিত পূর্বশর্ত, একটা ভুল শর্ত। "বিজ্ঞান দিয়েছে বেগ" - বলতে রবীন্দ্রনাথ যদি বুঝান বিজ্ঞান নিজে নিজে দিয়েছে, তবে রবীন্দ্রনাথও ভুল। তবে আমি মনে করি না রবীন্দ্রনাথ মনে করতেন বিজ্ঞানের হাত পা আছে।

০৭ ই মার্চ, ২০২১ সকাল ১১:০৩

স্থিতধী বলেছেন: এমন বিশ্লেষণী মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ।

বিজ্ঞানের নিজ থেকে কাউকে কলুষিত করবার ক্ষমতা নেই।

উপরে এ বিষয়ে তমাল ভাইয়ের বক্তব্যের সাথে আপনারটাও মিলে যায় । আমার নিজের ব্যাক্তিগত মতামত ও এ ক্ষেত্রে আপনাদের কাছাকাছি।

৪| ০৭ ই মার্চ, ২০২১ সকাল ১০:৩১

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: আমার চোখে, আপনার আলোচনার অন্যান্য যা কিছু সীমাবদ্ধতা আকারে ধরা পড়েছে, তা বিনীতভাবে শেয়ার করি।

১। অন্যান্য অনেক আলোচনার মতই, আপনিও বিজ্ঞান, এবং গণিতকে একটা ইন্ডিভিজুয়াল এনটিটি হিসেবে উপস্থাপন করেছেন, যেন বিজ্ঞান, বা গণিতের নিজস্ব হাত পা বা মাথা আছে, মানুষের সমস্যা সমাধানে গণিত একদিন নিজে নিজেই সিদ্ধান্ত নিলো যে তার একটা ফলিত শাখা এখন ক্যালকুলাস নামে প্রবাহিত হবে।

২। প্রযুক্তি কীভাবে কৃত্তিম উপায়ে আমাদের নতুন নতুন অভাব তৈরি করছে, সে দিকটা আপনার আলোচনায় অনুপস্থিত।

৩। প্রযুক্তি, এমনকি ক্লাসিক বিজ্ঞানের তত্ত্ব - তথ্য কীভাবে মানুষের মাঝে ডিসক্রিমিনেশনের বৈজ্ঞানিক ভিত্তি তৈরিতে ব্যবহার হয়েছে - সেটাও আপনি এড়িয়ে গেছেন।

নিগ্রো দাসদের শ্বেতাঙ্গ মালিকদের কাছ থেকে পালিয়ে যাওয়াকে ততকালীন চিকিৎসা বিজ্ঞানিরা একটা রোগ হিসেবে চিহ্নিত করেছিল। কালো মানুষদের খুলির গড়ন বানরের কাছাকাছি, এটাও হোয়াইট সুপ্রিমিস্টরা অকাট্য যুক্তি হিসেবে মানত, এখনও তাদের কেউ কেউ মানে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে, হিটলার অধ্যুষিত জার্মানিতে বাচ্চাদের স্কুলে পড়ানো হত, বিবর্তনবাদের সূত্র ধরে পৃথিবীর কলুষিততম মানব সম্প্রদায় হচ্ছে ইহুদী, এবং সমকামীরা। আর এই কলুষ থেকে পৃথিবীকে মুক্ত করবার দায়িত্ব অ্যারিয়েন নাজিবাহিনীর। কাজেই ইহুদী নিধন, সমকামীদের ফাঁসীতে ঝোলান, পৃথিবীব্যাপী নাজিদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা, আদতে মানব সমাজেরই উপকার করা।

৪। প্রযুক্তিকে ব্যবহার করেই আমাদের উপর পুঁজিপতি মালিকপক্ষের, সরকার ব্যবস্থাসমূহের সারভিলেন্স / নজরদারী যে বৃদ্ধি পেয়েছে, এবং আমাদের স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতাকে যে ক্রমশ আরও সংকুচিত করে আনা হচ্ছে, এ ব্যাপারেও আপনার আলোচনা নেই।

৫। সর্বোপরি প্রযুক্তির উন্নতিকে একটা ইতিবাচকতার আলোকে আপনার আলোচনায় উপস্থাপন করা হয়েছে। ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর মতো কতো মারণাস্ত্র যে প্রযুক্তি আমাদের হাতে তুলে দিয়েছে সে সম্পর্কেও আপনার লেখা কোন ধারনা দেয় না। একটা বাটন প্রেস করবার মাধ্যমে কোটি কোটি মানুষ একসঙ্গে মেরে ফেলার সক্ষমতা এখন পৃথিবীর কিছু কিছু দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের রয়েছে।

বিজ্ঞান যদি মানুষের জীবনকে সহজ করবার ক্রেডিট টুকু নিতে চায়, তবে মানুষ মারার দায়ভার সে এড়ায় কীভাবে?

০৭ ই মার্চ, ২০২১ সকাল ১১:২৭

স্থিতধী বলেছেন: ১) মানুষকে বুদ্ধিমান , স্বপ্নবাজ প্রানী বলেছি আলোছনায়। উদ্দেশ্য ওটাই দেখানো যে মানুষ তাঁর কর্ম সিদ্ধির জন্য গণিত, বিজ্ঞান, দর্শন, আইন ইত্যাদি সবকিছুর জন্ম ও বৃদ্ধির পরিচর্যা করছে। গণিত নিজে সিদ্ধান্ত নয়, বরং নিঊটন যখন দেখলেন তাঁর অভিকর্ষ সংক্রান্ত আবিষ্কারের প্রয়োগ দেখানর জন্য তাঁর একটি নতুন গণিতের প্রয়োজন হবে তখনি তিনি ক্যালকুলাসের জন্ম দিতে গেলেন।

২) প্রযুক্তি কীভাবে কৃত্তিম উপায়ে আমাদের নতুন নতুন অভাব তৈরি করছে, সে দিকটা আপনার আলোচনায় অনুপস্থিত

কৃত্তিম উপায় কি আসলে প্রযুক্তি তৈরি করছে নাকি প্রযুক্তির মাত্রাহীন বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে প্রয়োগ সেই কৃত্রিমতার জন্ম দিচ্ছে; এই দিকটি আরেকটি আলোচনার ক্ষেত্র তৈরি করতে পারে।

৩) সাইন্টিফিক রেভুলুশনের পরের দিকে বৈজ্ঞানিক গবেষণা অনেক অনেক বেশী পরিপক্কতা লাভ করে । ফলে আপনার উদাহারণ গুলোর অনেক গুলই সিউডো সাইন্স হিসেবে সনাক্ত হবার কথা। এখনো তাই আছে যদি ভুল না বলো থাকি । তত্ত্ব কে প্রমান করার জন্য তথ্য সংগ্রহের ডিডাক্টিভ মেথড এই সময় থেকে বাতিল হতে শুরু করে। বরং পর্যাপ্ত পরিমাণের তথ্য সংগ্রহের পর তত্ত্ব উপস্থাপনের প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠিত করা হয় এ সময়।

৪) ২ নং পয়েন্টে, এই বিষয় টির দিকেই ইঙ্গিত করলাম।

৫) সে জন্য ই তো প্রশ্ন উত্থাপন, বিজ্ঞান কি আমাদের আবেগ কলুষিত করে আমাদের ভয়াবহ আমানবিক করতে ভূমিকা রাখছে? নাকি বিজ্ঞান কে প্রযুক্তি দিয়ে ব্যবহার করা মানুষ গুলোই এর জন্য দায়ী?

৫| ০৭ ই মার্চ, ২০২১ সকাল ১০:৩৬

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: আপনি বলছেন, খনার প্রবচনের বদলে কৃষকদের মোবাইলে কৃষি অধিদপ্তরের পাঠানো বৈজ্ঞানিক পরামর্শ বেশী উপকারী। এখানে খনার প্রতি যে অবিচারটা করা হল, তা এই যে - খনা যাকে সত্য মনে করতেন, তা বলা থেকে বিরত থাকার বদলে তার জিভ কেটে নেয়ার মতো চরম একটা অবস্থার মুখোমুখি হওয়াকে প্রেফার করেছেন, এই ঘটনাটি চেপে যাওয়া।

খনা প্রকৃতির পরিবর্তন অব্জারভ করে শ্লোকের মতো কিছু সূত্র বানিয়েছিল, রাজ দরবারে খনার মিথ, তার শ্বশুরের গুরুত্ব কমিয়ে দেয়, ফলে শ্বশুরবাড়ি থেকে তাকে কথা বলা বন্ধ করতে বলা হয়, সে জিভ কেটে নেয়াকে বরন করতে রাজি হয়, কিন্তু কথা বলা থামাতে নয়। অপরদিকে ক্যালকুলাসের মাহত্ব বর্ণনা করতে গিয়ে নিউটন কীভাবে লাইবনিজের ক্যারিয়ার পুরা খেয়ে দিয়েছিলেন, লাইবনিজ যখন ক্যালকুলাস আবিষ্কারের ক্রেডিট দাবী করে, সে বর্ণনা বাদ পড়ে গেলো। কাজেই খনার 'প্রাচীন বুজরকিমূলক জ্যোতিষ' হওয়াটা তাকে মানুষ হিসেবে ছোট করে না, আবার নিউটনের ক্যালকুলাসের আবিষ্কারক মহান বিজ্ঞানী হওয়াটা তাকে ভেতর থেকে একজন সৎ মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে না।

আমার মনে হয়, এটাও একটা ভুল চিন্তা যে, দর্শন বা ধর্মকে প্রযুক্তির সমানতালে পাল্লা দিয়ে দৌড়াতে হবে নিজেদের যৌক্তিকতা, বা প্রাসঙ্গিকতা প্রমানের জন্যে।

শুভকামনা সহ

০৭ ই মার্চ, ২০২১ সকাল ১১:৪০

স্থিতধী বলেছেন: কাজেই খনার 'প্রাচীন বুজরকিমূলক জ্যোতিষ' হওয়াটা তাকে মানুষ হিসেবে ছোট করে না, আবার নিউটনের ক্যালকুলাসের আবিষ্কারক মহান বিজ্ঞানী হওয়াটা তাকে ভেতর থেকে একজন সৎ মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে না।

খনা কে ছোট বা নিঊটন কে নৈতিকতার দিক থেকে বড়, কোন টিই এই লেখাতে করা হয়নি । যেটা বলেছি যে আজকের পৃথিবীতে এই বাংলার কৃষকদের জন্য খনার জ্ঞান প্রয়োগ করে বেশী ফল আসবে নাকি আজকের হালনাগাদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি দিয়ে? মূল প্রসঙ্গ সেই জায়গাটিতে জ্ঞানের সমকালীন বাস্তব প্রয়োগ সংক্রান্ত ছিলো, নৈতিকতায় কে বা কারা ছোট বড় সেই তুলনার কোন প্রসঙ্গ তোলা হয়নি ।

আমার মনে হয়, এটাও একটা ভুল চিন্তা যে, দর্শন বা ধর্মকে প্রযুক্তির সমানতালে পাল্লা দিয়ে দৌড়াতে হবে নিজেদের যৌক্তিকতা, বা প্রাসঙ্গিকতা প্রমানের জন্যে।

দার্শনিকরা যে সেই চিন্তাটির উল্লেখ করেছেন এবং বিজ্ঞান ও আধ্যাত্মিকতা যে পরস্পরের প্রতিযোগী না হয়ে সহযোগী হতে পারে রাসেলের প্রবন্ধ টির চুম্বক অংশ সেই ভাবনাটিকেই সামনে এনেছে। তবে আমার শেষ প্রশ্ন প্রতিযোগীতা নয় বরং বিজ্ঞান কে মানুষ খুনের দায়ে অপরাধী করতে পারলে দর্শন কেন সেই অপরাধী বিজ্ঞান ( নাকি মানুষ?) কে আজ সামলে রাখতে পারবেনা সেই প্রশ্ন টাই ছিল। মূল থীম আসলে স যোগিতার পথ খোঁজার প্রতিযোগিতার নয়।

বিস্তারিত ভাবনা বিনিময়ের জন্য আপনাকেও ধন্যবাদ ও শুভকামনা।

৬| ০৭ ই মার্চ, ২০২১ সকাল ১১:২১

মোঃমোস্তাফিজুর রহমান তমাল বলেছেন: একেবারে শতভাগ কোনোকিছুই হয় না। সার্বজনীনভাবে ভালো শিক্ষাকে সবার মাঝে ছড়িয়ে দিলেও সংস্কৃতির মূল্য সবাই বুঝবে না। শিক্ষার উদ্দেশ্য যা-ই হোক না কেন, শিক্ষা গ্রহণের উদ্দেশ্য একেকজনের একেকরকম। তাই ভালোমানের শিক্ষা ছড়িয়ে দিলেই সবাই সংস্কৃতির মর্ম বুঝবে না। এটা ক্ষমতাবানেরা চায় না। কারণ বুদ্দিবৃত্তিক উন্নয়ন ক্ষমতালোভীদের জন্য বিপদজনক।
খনার ব্যপারটা আসলে বিজ্ঞানের অগ্রগতির সাথে তুলনা করা যায় না। খনার বচনগুলো ছিলো পর্যবেক্ষণ ও প্রজ্ঞার ফলাফল এবং সেগুলো সঠিকই ছিলো। এখন জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবটুকু না মিললেও বেশির ভাগই মিলে যাবে। এটাই খনার বচনের মাহাত্ম্য।
শিল্প-সাহিত্যের অগ্রগতি হিসেবে আমি বোঝাতে চেয়েছিলাম যে যুগের প্রয়োজনের মুহুর্তে তার উপযোগীতা ও গ্রহণযোগ্যতা থাকা। অর্থাৎ সর্বযুগেই তার উপযোগীতা থাকবে। প্রযুক্তির সাথে পাল্লা দিয়ে উন্নত হওয়া না।

০৭ ই মার্চ, ২০২১ সকাল ১১:৪৭

স্থিতধী বলেছেন: শিক্ষার উদ্দেশ্য যা-ই হোক না কেন, শিক্ষা গ্রহণের উদ্দেশ্য একেকজনের একেকরকম।

এটা একটা খুব ভালো কথা তুলে এনেছেন। ব্যাক্তিগতভাবে শিক্ষা কেন গ্রহণ করছি, এটিও একটি মৌলিক প্রশ্ন হওয়া উচিৎ।

শিল্প-সাহিত্যের অগ্রগতি হিসেবে আমি বোঝাতে চেয়েছিলাম যে যুগের প্রয়োজনের মুহুর্তে তার উপযোগীতা ও গ্রহণযোগ্যতা থাকা। অর্থাৎ সর্বযুগেই তার উপযোগীতা থাকবে।

এখানেই প্রশ্ন। শিল্প-সাহিত্যের অগ্রগতি যদি যুগের উপযোগী না হয়, সেক্ষেত্রে কি বিজ্ঞানের অপ প্রয়োগ বৃদ্ধি পায় এবং আমরা মানবিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি আরও বেশী করে হই? কে জানে!

৭| ০৭ ই মার্চ, ২০২১ সকাল ১১:৫৫

মোঃমোস্তাফিজুর রহমান তমাল বলেছেন: শিল্প, সাহিত্য, ধর্ম, দর্শনের মূল উপযোগিতাটা এখানেই। মানুষকে মানুষ করে তোলা। তাকে উন্নত করা, তার মধ্যে মানবতা, নৈতিকতা এবং উন্নত রুচি ও বিবেকবোধ জাগ্রত করা। এগুলোর অভাব মানেই ক্ষমতার অপব্যবহার, বিজ্ঞানের অপব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়া।

০৭ ই মার্চ, ২০২১ দুপুর ১২:২০

স্থিতধী বলেছেন: সেক্ষেত্রে শিল্প ,সাহিত্য, সঙ্গীত, চিত্র, দর্শন, নৈতিকতা এমন সব বিষয়গুলো নিয়ে যারা চর্চা করেন ও এসবে মেধা রাখেন তাঁদের আরেকটু বেশী দায়িত্বশীল, আরেকটু বেশী একতাবদ্ধ হওয়া কি প্রয়োজন নয় মানুষের রুচি, নৈতিকতা, মানবতা ও বিবেক কে জাগ্রত ও সমুন্নত রাখার কাজে ? তারা যদি ক্ষমতার অপব্যাবহারের বিপক্ষে কাজ না করেন তখন শুধু বিজ্ঞান বা বিজ্ঞান চর্চাকারীরা কি যথেষ্ট হতে পারেন সভ্যতার অবক্ষয় ঠেকাতে?

৮| ০৭ ই মার্চ, ২০২১ দুপুর ১২:৫৮

মোঃমোস্তাফিজুর রহমান তমাল বলেছেন: "শিল্প ,সাহিত্য, সঙ্গীত, চিত্র, দর্শন, নৈতিকতা এমন সব বিষয়গুলো নিয়ে যারা চর্চা করেন ও এসবে মেধা রাখেন তাঁদের আরেকটু বেশী দায়িত্বশীল, আরেকটু বেশী একতাবদ্ধ হওয়া কি প্রয়োজন নয় মানুষের রুচি, নৈতিকতা, মানবতা ও বিবেক কে জাগ্রত ও সমুন্নত রাখার কাজে ?"
আপনার সাথে এ ব্যাপারে সহমত পোষণ করছি।এসবের চর্চা যারা করেন তাদেরকে অবশ্যই আরো বেশি দায়িত্ব পালন করতে হবে এবং একতাবদ্ধ থাকতে হবে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নতুন জিনিস উদ্ভাবন করে।কিন্তু তার ব্যবহার কেমন হবে সেটা নির্ধারন করবে মানুষ। ইয়াবা তৈরি করা হয়েছিলো সীমান্তপ্রহরীদের জন্য।অথচ সেগুলো এখন নেশার কাজে ব্যবহৃত হয়। বিজ্ঞানের পক্ষে তার নিজের অপব্যবহার রোধ করা সম্ভব নয়।

০৭ ই মার্চ, ২০২১ বিকাল ৫:২৫

স্থিতধী বলেছেন: পপ কালচার বা পপ ইন্টারটেইনমেন্টেও নানা ভাবে শিল্প বা দর্শনের আঙ্গিকগুলো কে নিয়ে আসা যায় । ২০১৮ সালের মুভি এভেঞ্জারস ইনফিনিটি ওয়ার মুভিতে কিভাবে Deontologists versus Utilitarian ফিলসফি কে গল্পের মাঝে নিয়ে আসা হইছে এবং এর সাথে মানুষের অনিশ্চয়তার যে জটিলতা সেটা কিভাবে ব্যাখ্যা করা যায় সেটা নিয়ে নিচের লিঙ্কে একটা ভালো বিশ্লেষণ পড়েছিলাম । আপনি সময় করে পড়ে দেখতে পারেন। ভালো কথা আপনি যতীন সরকারের “ সাহিত্যের কাছে প্রত্যাশা” বইটি কি পড়েছেন?

https://philosophynow.org/issues/132/Ethics_and_Uncertainty

৯| ০৭ ই মার্চ, ২০২১ দুপুর ১:৩১

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন: যদি মানেই অনিশ্চয়তা বা শংসয়।

০৭ ই মার্চ, ২০২১ বিকাল ৫:২৮

স্থিতধী বলেছেন: আবার যদি মানেই সম্ভাবনা । দৃষ্টিভঙ্গিতে বদলে যায় যদির রূপ।

১০| ০৭ ই মার্চ, ২০২১ দুপুর ১:৩৯

নেওয়াজ আলি বলেছেন: যদি আমি হতাম

০৭ ই মার্চ, ২০২১ বিকাল ৫:৩০

স্থিতধী বলেছেন: দার্শনিক , গণিতবিদ রেনে দেকারত বলতেন “ I think, therefore I am”

১১| ০৭ ই মার্চ, ২০২১ দুপুর ২:১৬

রাজীব নুর বলেছেন: সুন্দর পোষ্ট। এবং মন্তব্য গুলো আরো বেশী সুন্দর।

০৭ ই মার্চ, ২০২১ বিকাল ৫:৩১

স্থিতধী বলেছেন: ধন্যবাদ রাজীব ভাই । আবার ফিরে আসবেন আশা করি। কে কি মন্তব্য করলো দেখে যাবেন। ;)

১২| ০৭ ই মার্চ, ২০২১ দুপুর ২:৪১

চাঁদগাজী বলেছেন:

আপনি বলেছেন, " মূল আলোচনা এটাই যে একদিকে ‘যদি’ যেমন লজিক্যাল ডেভলপমেন্টে র‍্যাশনাল ডিসিশন মেকিং এর কাজে ব্যবহার হচ্ছে অন্যদিকে এই শব্দের মাঝে যে অনিশ্চয়তার ডাইমেনশন রয়েছে তা কিভাবে আমাদের আবেগ বা ভীতিকেও প্রভাবিত করতে পারে সেটা । "

ডিসিশান থিওরিতে 'যদি' লজিক্যাল কন্ডিশান অন্য কিছু নয়; আমার মনে, আপনি গরুর রচনা লিখতেছেন।

০৭ ই মার্চ, ২০২১ বিকাল ৫:৩৬

স্থিতধী বলেছেন: লেখাটা শুধু ডিসিশন থিঊরির আলোচনাতে সীমাবদ্ধ ছিলোনা। প্রশ্ন যেহেতু ধরতে পারেন নাই, তাই উত্তরও দেন নাই। আপনার বিষয়ের মূলে না গিয়ে তাঁর শাখা প্রশাখা আর লতা পাতার প্রতি আগ্রহ বেশী দেখা যায়, হয়তো এ কারনেই মাথায় শুধু গরু -ছাগলের চিন্তা বেশী ঘুরে। সবকিছুতে তাদেরই খুঁজে পান।

ডিসিশন থিঊরি জিনিসটা দাড়া করানোই হয়েছে প্রবাবিলিটি থীওরামের উপর। জনাব প্যাস্কেল সাহেবের এক বন্ধু জুয়া খেলাতে কিভাবে জেতা যায় বন্ধুর কাছে সেটা নিয়ে আইডিয়া চাওয়াতে তিনি এটা নিয়ে ভাবা শুরু করেন এবং তাঁকে এতে সাহায্য করেন জনাব ডি ফেরমা । কন্ডিশনাল প্রবাবিলিটি তে যদি এর ব্যবহার হয়। আর বাইনারি ইয়েস অর নো ভিত্তিক লজিকাল এপ্লিক্যাশন পুরো প্রবাবিলিটি থিওরীর ছোট একটা অংশ মাত্র। ওটা ডিসিশন থিঊরির সব না । ডিসিশন থিঊরি এবং এর সাথে মানুষের সাইকোলজির প্রভাব বিষয়ে ইসরায়েলর তেল আবিব ইউনিভারসিটির ডিসিশন এন্ড ইকনমিক থিঊরির অধ্যাপক Itzhak Gilboa এর Decision Theory Under Uncertainty (নীচে লিঙ্ক দিলাম) এই ভিডিও টা সময় করে পুরো দেখেন । এই প্যাস্কেল সাহেব তাঁর প্রবাবিলিটি দিয়েই ঈশ্বরের ব্যাখ্যা করতে গিয়েছিলো , কিন্তু এম্পেরিকাল প্রবাবিলিটি পয়েন্ট অফ ভিঊ থেকেই তাঁর ঐ ব্যখ্যা গ্রহণ যোগ্যতা হারায় । তো প্যাস্কেলের মতো বুদ্ধিমান লজিকাল ব্যাক্তি তাঁর ক্যাথলিক বিশ্বাসের আবেগ দিয়ে কেন প্রভাবিত হল? সেটার ব্যাখ্যা র‍্যাশনাল বনাম ইরেশনাল ডিসেশন মেকিং থেকেইও পাওয়া যায় । এডাম স্মিথের ক্লাসিকাল ইকোনমিক্স এই এজাম্পশনে নে চলে যে Human is rational decision maker কিন্তু Behavioral Economics যখন মানুষের সাইকোলজিকে মাথায় রেখে মানুষের irrationality in decision making নিয়ে ব্যখ্যা দাড়া করাতে লাগলো তখন ক্লাসিকাল ইকনমিস্টরা তাঁদের ভেংচি কাটতো । আজকে সেই Behavioral Economics শাখার পাচ জন অর্থনীতিবিদ নোবেল পেয়ে বসে আছে এবং এই শাখার অনেক আবিষ্কার এখন ব্যাবহারিকভাবে ফিন্যান্স, মারকেটিং, পলিটিক্যাল ইকোনমি ক্ষেত্র ব্যাবহার করা হচ্ছে।

যদি শব্দটা শুধু “শর্তে” সীমাবদ্ধ না, যদি তে মানুষের “ আকাঙ্খা/ সংশয়” এসব আবেগের প্রকাশও ঘটে ব্যাপকভাবে । ফলে “যদি” শুধু বাইনারি লজিক কন্সট্রাক্ট করার মত ওয়ান ডাইমেনশনাল শব্দ না , ওটা একটা মাল্টি ডাইমেনশনাল শব্দ।

Decision Theory Under Uncertainty
https://www.youtube.com/watch?v=owazk4B8qF0&list=LL&index=11

০৭ ই মার্চ, ২০২১ বিকাল ৫:৩৭

স্থিতধী বলেছেন: মুহাম্মদ জাফর ইকবাল ইঞ্জিনিয়ার পেশায় থাকা এবং ইঞ্জিনিয়ারিং এ পড়াশোনা করা লোকেদের থেকে একরোখা স্বভাবের জঙ্গীবাদি মানসিকতার মানুষ বেশী বের হয় বলে একটা হাইপো থিসিস দিয়েছিলেন একটা পাবলিক ফোরামে। তিনি বলেছিলেন লাদেনের মতো বাংলাদেশেও জঙ্গীবাদে জড়ানো অনেকের ব্যাকগ্রাঊন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং। তাঁর একটা কারন তিনি বলেছিলেন যে ইঞ্জিনিয়াররা তাঁদের কারিকুলাম এবং পেশার কারনেই অনেক বেশী বাইনারি “ধর তক্তা মার পেরেক” টাইপ চিন্তাধারাতে অভ্যস্ত । তাঁর ফলে তারা একটা ছকের মধ্যে বেশী চিন্তা করে আর যখনই তাদেরর ছক এবং বিশ্বাসের বাইরে কোন কিছু আসে সেটাকে বুঝতে না পেরে তারা ইমোশনাল হয় বেশী । সাদা কালোর মাঝে থাকা ছাই রঙ টা কে তারা বুঝে উঠতে পারেনা। সে জন্য ইঞ্জিনিয়ার দের কারিকুলামে আরো বেশী করে সাহিত্য শিল্প দর্শন ঢোকানো উচিৎ বলে তিনি মত দেন। মাঝে মাঝে অনেক নমুনা দেখলে ওনার সেই হাইপোথিসিসটা সঠিক বলেই মনে হয় ।

১৩| ০৮ ই মার্চ, ২০২১ রাত ১২:১৩

রাজীব নুর বলেছেন: লেখক বলেছেন: ধন্যবাদ রাজীব ভাই । আবার ফিরে আসবেন আশা করি। কে কি মন্তব্য করলো দেখে যাবেন।

হ্যা আবার এলাম।
দেখে গেলাম। ভালো লাগলো।

০৮ ই মার্চ, ২০২১ সকাল ৮:৪৫

স্থিতধী বলেছেন: বাহ! আপনাকে আবার এখানে পেয়ে আমারো ভালো লাগলো।

১৪| ০৮ ই মার্চ, ২০২১ ভোর ৪:২৭

মোঃমোস্তাফিজুর রহমান তমাল বলেছেন: লিংক থেকে পড়ে নেব অবশ্যই। যতীন সরকারের অল্পকিছু প্রবন্ধ পড়া হয়েছে। যেমন 'মার্ক্সবাদী দৃষ্টিতে রবীন্দ্রনাথ', 'বাংলার রেঁনেসাস', 'ইকবাল আমাদের' এসব। সাহিত্যের প্রতি প্রত্যাশা বইটি পড়া হয় নি। পড়ে নেব একসময়।

০৮ ই মার্চ, ২০২১ সকাল ৮:৫২

স্থিতধী বলেছেন: বইটা আশির দশকে প্রকাশিত হওয়া । 'ইকবাল আমাদের' এই প্রবন্ধ টাও ঐ বইতে আছে খুব সম্ভব । আপনি যেহেতু সাহিত্যপ্রেমী ও সমঝদার, আমার ধারনা ঐ বইটা পড়ে আপনার ভালো লাগবে । রকমারি তে বইটা আছে দেখলাম ,

"সাহিত্যের কাছে প্রত্যাশা"ঃ রকমারি লিঙ্ক ( Click This Link)

১৫| ০৯ ই মার্চ, ২০২১ ভোর ৪:৩৭

সোহানী বলেছেন: এতাে ক্যাচাল প্যাচাল" যদি" নিয়া!!! পুরোটা পড়ি নাই, কারন সময়ের অভাব। সময় করে নিজের ভাবনা নিয়ে আসবো।

০৯ ই মার্চ, ২০২১ ভোর ৬:০২

স্থিতধী বলেছেন: হেহে . . ‘যদি’র যুক্তি- তর্ক- দর্শন এসব কিছুকে মিলে একটা “হাউকাঊ - ম্যাওপ্যাও” আবহ তৈরি হয়েছে আরকি । :P
এ সংক্রান্ত ক্যাচাল- প্যাঁচালে আপনাকেও স্বাগতম । রাজীব ভাইয়ের মতো আপনিও আবার এখানে ফিরে আসবেন আশা করি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.