নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সব সুন্দরকে গ্রহন করে প্রিয় মানুষগুলোকে সুন্দর রাখার প্রয়াস অবিচল রাখার প্রত্যয়ে।

কিশোর মাহমুদ

কিশোর মাহমুদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

আয়নানামা

১৮ ই এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১:৫৬



মেসে ফিরে তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে বাথরুমে ঢুকা। কিছুক্ষণ ব্যাসিনের আয়নায় চেয়ে থাকি। ভাঙ্গাচুরা আয়না। আমি দেখতে সুশ্রী না। তবু আয়নায় নিজেকে দেখতে থাকি। সুন্দর লাগে। আমি হাসি দিই। সুন্দর লাগেনা। দুপাটি দাঁত বেরিয়ে যায়। আমি মুচকি হাসি। অদ্ভুত দেখায়। যৌবনে পুরুষের রূপ সৌন্দর্য আগুনের মত জ্বল জ্বল করে। আমার করেনা। আমি আয়নার দিকে তাকিয়ে থাকি অপলক দৃষ্টিতে। আয়নার কাছে বায়না ধরি। মোহ পেয়ে বসে আমায়। মোহ ছাড়িয়ে নিই। গোসল করতে হবে।
আস্তে আস্তে জিন্সের প্যান্ট খুলি পাছে চেইন আটকে না যায়। আমি প্যান্ট খুলার ক্ষেত্রে সাবধানী। আমার মনে পড়ে ছোটকালের কথা;
জিন্সের প্যান্ট সবে নতুন পরতে শিখেছি। গোসল খানায় আব্বার সাথে গোসল করতাম। একদিন প্যান্ট খুলতে গিয়ে চেইন আটকে যায়! "আব্বা" আমার মুখ থেকে ভয়ার্তভাবে একটি শব্দ বেরিয়ে আসে। আব্বা অহেতুক ব্যস্ততা দেখিয়ে হুলস্থুল কাণ্ড শুরু করে দেন। টিনের বেড়ার ওধারে আমার বড় বোনেরা আমাকে দেখে খিলখিল করে হাসে। আমি কাঁদি। বোনেরা হাসে। আব্বা ধমক লাগান। আমি বোনেদের বলি,"তোদের আটকালে টের পাবি!"
বোনেরা আবারো খিলখিল করে হাসে। আমি বুঝতে পারিনা হাসার অর্থ। প্রার্থনা করি ওদেরও যেন একদিন চেইন আটকে। সেদিনের কথা ভেবে আমি পুলকিত হই। বিলু আর সাদীকে কিভাবে সে দৃশ্যের বর্ণনা দিব মনে মনে ঠিক করে নিই। ততক্ষণে আব্বা চেইন আটকানো থেকে আমাকে রেহাই দিলেন! আমি টেরই পাই নি!
বালতি থেকে পানি তুলে গতরে ঢালি। সাবান মাখতে থাকি। সাবান ডলতে থাকি; হাতে,পেটে,পিঠে,বগলের তলায়,উরু ফাঁকে এবং মুখে বেশি করে। সুন্দর হবার বাসনা আমার ছোটকাল থেকে। সমাজ অসুন্দর কে গ্রহণ করেনা। সুশীল সমাজে প্রবেশের পূর্বশর্ত হল ফর্সা হওয়া। পুরুষেরা শ্যামলা হলেও চলে কিন্তু মেয়েদের ফর্সা হতে হবে।
আমার এক বড় বোন ছিল। শিউলি। তাকেও মেনে নেয় নি সমাজ। দেখতে কালো ছিল। এহেন কসমেটিকস্ নেই যা সে সুন্দর হবার জন্য ব্যবহার করেনি। আমার মনে পড়ে কতবার কত বরপক্ষ তাকে দেখতে এসেছিল। কারো পছন্দ হত না। শেষতক এক আধবুড়ার সাথে বিয়ে ঠিক হয়। সবাই খুশি। আপদ বিদেয় হচ্ছে। কিন্তু কোন এক কারণে বিয়ের দিন বিয়ে ভেঙ্গে যায়! আমি দেখেছি তার কান্না। রাতের পর রাত। দিনের পর দিন। কাঁদতে কাঁদতে একসময় সে অন্ধ হয়ে যায়। বাড়ির সবাই হতাশ। একদিন তার লাশ পাওয়া যায় ঘরে। নিজেই নিজেকে শেষ করে দিয়েছে বিষ খেয়ে। সবাই কাঁদছে। আমার কান্না আসেনা। চোখের নিচে মুখের লালা লাগিয়ে সবাইকে দেখাতে লাগলাম আমিও কাঁদছি। আমারো চোখ থেকে পানি আসছে। আমার বোনের মৃত্যুর দিন আমার মেঝদিকে সুখি সুখি দেখায়। এখন বুঝতে পারি সে সুখের কারণ। কারো পৌষ মাস ত কারো সর্বনাশ।
আমার গতরে সাবানের গন্ধ প্রকট হচ্ছে। সাবানের গন্ধে আমার শিউলি বুবুকে মনে পড়ে। আমি আবারো পানি ঢালতে থাকি।
বাইরে থেকে মেসের কেউ একজন দরজায় ধাক্কা দিচ্ছে আর চেঁচিয়ে বলছে,"মিয়া বাথরুমে কি মাল ফালাইতে গেছেন? জলদি খুলেন।"
সে আবারো ধাক্কা দেয়।
আমি গোসল শেষ করে বেরিয়ে পড়ি। ছেলেটা গালি দিয়ে আমাকে দৌড়ে ঢুকে পড়ে। পায়খানার চাপে দরজা লাগাতে ভুলে যায়।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই এপ্রিল, ২০১৭ রাত ২:০১

ওমেরা বলেছেন: খুব হাসি পাচ্ছে ।

১৮ ই এপ্রিল, ২০১৭ রাত ২:০৪

কিশোর মাহমুদ বলেছেন: হাসতে থাকেন :-P

২| ১৮ ই এপ্রিল, ২০১৭ রাত ২:০৬

ওমেরা বলেছেন: হাসতে হাসতে তো এখন পেট ব্যাথা করছে !

১৮ ই এপ্রিল, ২০১৭ রাত ২:০৮

কিশোর মাহমুদ বলেছেন: আপনের লাইগা এক পাতা প্যারাসিটামল সমান সমবেদনা!

৩| ১৮ ই এপ্রিল, ২০১৭ রাত ২:১১

সুমন কর বলেছেন: হাহাহাহা............মজা পেলাম।

১৮ ই এপ্রিল, ২০১৭ রাত ২:১৩

কিশোর মাহমুদ বলেছেন: পড়ার জন্যে থেংকু।
ফ্রি এডভাইস দিই-বাথরুমে গেলে দরজা লাগাতে ভুইলেন না :-P

৪| ১৮ ই এপ্রিল, ২০১৭ রাত ২:১১

ওমেরা বলেছেন: ধন্যবাদ।

১৮ ই এপ্রিল, ২০১৭ রাত ২:১৩

কিশোর মাহমুদ বলেছেন: ;-)

৫| ১৮ ই এপ্রিল, ২০১৭ ভোর ৪:৫৪

মাহমুদা রোজি বলেছেন: :(

৬| ১৮ ই এপ্রিল, ২০১৭ সকাল ১০:৫৩

মোস্তফা সোহেল বলেছেন: বেশ মজার সাথে দুঃখ গাথা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.