নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অন্তত একবার সত্যকে তার সম্বন্ধে কিছু বলতে দাও। আমরা কে কী, অন্যরা তা জানতে এবং দেখতে পারবে।
তারপর যা হয় ...
তা ছিল শৈশবলীলা। কৈশোরে এক সন্ধায় লালফুফুর বাড়ি থেকে ফিরছিলাম। মাঝপথে মেড়ামেড়ির পাল দেখে আমি তো ভড়কে ভেকু। বণিত আছে, ভরসন্ধ্যা অথবা নিশারাতে ভূতরা নাকি মেড়ামেড়ির ভেক ধরে আক্রমণ করে। ওরে বাপরে! সন্ধ্যা সাঁঝে মেড়ামেড়ির পাল দেখে আমার অন্তরাত্মা প্রায় অধরা হওয়ার উপক্রম। শমদমে আল্লাহ বিল্লাহ জপে মিঠাই মণ্ডা মানত করে নিস্তার পেয়েছিলাম।
তারুণ্যে বিশ্ববিদ্যালয় বাদ দিয়ে ব্যবসায় যোগ দিয়েছিলাম। দুইটা দোকান নিয়ে একটা রেস্তোরাঁ। দশ এগার জনে কাজ করতাম। রাত হলে ব্যবসা উঠত তুঙ্গে। কাঁটা চামচের ঝন ঝন। গেলাসের টন টন। হাসির হা হা শব্দ এবং উজ্জ্বলাদের হাবভাবে রোমবিকার হত। কিন্তু! নিশির ডাক শুনে টং করে ঘণ্টি বাজলে সাহসের বারটা বাজত। শহর জনমানবশূন্য হয়ে লোকজন কোথায় যে উধাও হত, চিন্তকের মত ধেয়াচিন্তা করেও জবাব মিলতো না। একদা কারণ বশত আমাকে একা রেখে সবাই চলে গিয়েছিল। আমিও বুক ফুলিয়ে বলেছিলাম, যাও যাও ভূতপ্রেত্নী আমি বিশ্বাস করি না। হায় রে, কী সর্বনাশইনা করেছিলাম। সবাই চলে গেলে পরিকথা স্মরণ হয়। মনের চোখে ডানাকাটা পরীর অশরীরী দেখতে পাই। ও একজনকে ভালোবাসত। বয়সকালে ওর মনের বনে বিয়ের ফুল ফুটে কিন্তু মালাবদলের জন্য বরণমালা গেঁথে বরের গলায় দিতে পারেনি। প্রেমীকের কাছে প্রতারিত হয়ে অকালবসন্তে পটোলতোলা যাওয়ার পথে বিরহিণীর আত্মা বিপদসঙ্কুল বাঁকে আঁটকেছিল, যা কেউ টের পায়নি। সেই থেকে সেই বাঁকে এক মায়াবীর আবির্ভাব হয়েছিল এবং ঠিক মধ্যরাতে একা হাঁটত। ওর জেল্লার তাপে ভীমরতিতেও নাকি দপ করে কামাগ্নি জ্বলে। ভূতপূর্ণিমায় কেউ ওকে উদলা হাঁটতে দেখেছে। কেউ বা ধেই ধেই ধিন ধিনাত, তাইরে নাইরে না তাতা থৈ থৈ করে ন্যাংটা নাচতে দেখে, হাঁ করে ঘাড়বাঁকিয়ে গাড়ি চালিয়ে খাঁদে পড়ে মরেছে। যাদের মনে কামেচ্ছা নেই ওরা ওর পরনে ন্যাতা ছেঁড়া কাপড়চোপড় দেখে। আমি অবশ্য ওর দেখা পাইনি এবং রসে ঠাসা দেহাংশ দেখার ইচ্ছাও আমার মনে নেই। কিন্তু আমার মগজে সুড়সুড়ি দিয়ে অগাচণ্ডি বলেছিল, ‘ওই ভেকু! হাবার মত কী দেখছিস?’
আমি চমকে উঠে বাতি জ্বালাবার জন্য হাত বাড়িয়ে কিছু অনুভব করতে না পেরে চোখ মেলে দেখি দুনিয়া অন্ধকার। সাঁ সাঁ শাঁই, কড় কড় ক্রিং, ঠুং ঠাং ডিং, ধক ধক ধাঁই ধুম ধুপ্পুস শুনে আমার তো মগজ বিকল। চিন্তা করতে পারছিলাম না, চিত্তবৈকল্য হয়েছিল। তবুও অগাচণ্ডি খামোখা আমাকে খুঁচাচ্ছিল। অমন অলোকসামান্য সময়ে কার মনে কামেচ্ছা জাগবে? অপ্রতীয়মান নগ্নাট গড়নপেটন দেখে থরহরিকম্পিত গাগতরে তাপন উঠলেও, তরাসে প্রথমরিপু তেরিমেরি করছিল না। গলা শুকিয়ে আমার কলিজা শুঁটকি হওয়ার উপক্রম। হাত পা অবশ হয়ে মগজকে বলেছিল, তুই খামকাজ কর আমরা একটু জিরিয়ে নেই। মন কাকুতি মিনতি করে বলছিল, শুঁটকিশুরুয়া দিয়ে কেউ আমাকে চারটা ভাত দাও রে, দোয়া করব। তখন কেউ দোয়া চায়নি এবং বাথরুম প্রায় দশ বিশ হাত দূরে ছিল। প্রয়োজন হলে হাঁটতে হবে। প্রথম তেমন চিন্তিত ছিলাম না কিন্তু আলো ভরতা দিয়ে ভাত খেতে না পেরে, পানি গিলে পেট ভরেছিলাম। জঠরজ্বালা নিবাবার জন্য বেআক্কেলের মত তিন গেলাস পানি গলাধঃকরণের ফলে আক্কেলসেলামিতে ঘাম দিতে হয়েছিল। জানলে নৈশ্যভোজন করতাম না। হঠাৎ তলপেটে নিম্নচাপ অনুভব হলে পেটনামবে ভেবে শিউরে উঠেছিলাম। কেমিস্ট ফার্মেসি ডাক্তারখানার পাশে কিন্তু ঔষধালয় অনেক দূর। গরলনাশক আনার জন্য বেরোলে মাঝপথে সূর্যোদয় হবে। বিধেয় দাওয়াইর দুশ্চিন্তা বাদ দিয়ে বদনায় পানি আছে না নেই জানার জন্য তন্ময় হলে শুনতে পেয়েছিলাম, মেনিবিড়ালের সবিনয় ম্যাও ম্যাও শুনে নিষ্ঠুর কুকুর ঘেউ ঘেউ করে ধমকাচ্ছে। রাতজাগা পাখির ডাকে মন বিমনা প্রায়। আমার আহল দেখে খিলখিল করে হেসে কুটিপাটি হয়েছিল দিগম্বরী। ভেটকি দিতে চেয়েছিলাম, কিন্তু গলা শুকিয়ে জিবেগজা হয়ে তিলকুটের মত কটকট করছিল। মন লাড্ডু খেতে চেয়ে না পেয়ে ইনিয়ে বিনিয়ে বলেছিল, কেউ আমারে একটা কাঁচাগোল্লা দাও। মনের আকুতি কাকুতি শুনে পাষাণী মুখ ভেংচিয়ে বলেছিল, ‘আমার উরে আয়, আদর করে আনন্দনাড়ো খাওয়াব।’
ওর কথা শুনে গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠে এবং নির্জন নিরালা থেকে ভূতপ্রেত্নীর পদধ্বনি ভেসে আসলে মন সভয়ে বলেছিল, ‘সব নিয়ে গেলেও আমি এখন নিচে যাব না গো।’
মনের কথা শুনে আমি হতাশ হয়ে পেটে মৃদু ছাপ দিয়ে অনুভব করতে চেয়েছিলাম শৌচাগারে যেতে হবে কি না? পেট ইনিয়ে বিনিয়ে বলেছিল, ‘বদনা লাগবে না কিন্তু পানি কমাতে হবে। আমার জবর কষ্ট হচ্ছে।’
পেটের কথা শুনে হাত বুলিয়ে বলেছিলাম, ‘সক্কালে কমালে ভালো হবে রে।’
পেট গুড়ুম করে বলেছিল, ‘পক্কাধানে ঠাসাঠাসি। কারু সাথে হাতাহাতি করলে গরম জলে জাতকুল যাবে। ইজ্জত হারিয়ে আজ রাতে বেইজ্জত হব।’
মহা সমস্যা! নিশির ডাক শুনে আমাকে হায় হায় করতে দেখে অশরীরী বলেছিল, ‘রেচনে যাচ্ছিস না কেন?’
‘পথঘাট চিনি না, কোন পথে যাব?’
‘আস্তে ধীরে দাঁড়িয়ে সোজা হেঁটে দরজা খুলে ডাইনে মোড়ে বউড়ির মত কদম গুনে তাগাদা যা নইলে ভূতপূর্ণিমায় ইজ্জত হারাবি।’
‘ভয়ে হাত বিবশ। নির্ভিয়ে নির্ভীক হতে চাই। ’
‘অসমকালীন হলেও আমরা সমবয়সী। আমার সাথে ভাব জমালে আমি তোকে চোখে চোখে রাখব। ভাবুক হয়ে ভাব জমাবি?’
‘চাইলেও এখন আমি ভাবভোলা হতে পারব না। সদয় বল তারপর কী করব?’
‘একটা রসের চুটকি বলি?’
‘নামটা জানতে পারব?’
‘পৌষ্প।’
‘ওঃ-অ্যাঁও!’
‘এই! কী হয়েছে?’
‘এত সুন্দর নাম আমি ইতিপূর্বে শুনিনি।’
‘সত্যি বলছিস?’
....
©somewhere in net ltd.