নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

প্রভাবপ্রতিপত্তি আজীবন থাকে না। প্রতারকরাও প্রতিরিত হয়। ক্ষমতাচ্যুত হলে ক্ষমতাসীনের কী হবে? কবর অথবা শ্মশানে প্রতিদিন মৃতসৎকার হয়। ©_Mohammed Abdulhaque [www.mohammedabdulhaque.com]

মোহাম্মাদ আব্দুলহাক

অন্তত একবার সত্যকে তার সম্বন্ধে কিছু বলতে দাও। আমরা কে কী, অন্যরা তা জানতে এবং দেখতে পারবে।

মোহাম্মাদ আব্দুলহাক › বিস্তারিত পোস্টঃ

ধাধসপুরে বারবেলা ( উপন্যাস ) চার

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৫:০৬





চার ঃ-



‘তাই নাকি?’

‘হ্যাঁ। তুই মরে ভূতেশ হলেও আমি তোকে বন্ধু ডাকব। এখন চল। যেয়ে দেখি বন্ধুর অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা করা যায় কি না? ব্যাপক ও অবাঞ্ছিত পরিবর্তনে বিপরীত পরিণামে বিপাকগ্রস্ত হলে, বিপন্মুক্তির জন্য মেড়ামেড়ি মানত করব।’ বলে আমি গাড়ি চালাতে শুরু করলে বন্ধু কপাল চাপড়ে বলেছিল, ‘দুর্দশাগ্রস্ত হওয়ার জন্য কেন যে তোর বান্ধব হয়েছিলাম। আমার দাদীজান আমার জন্য নিখুঁত সুন্দরী খুঁজে পেয়েছেন আর ভ্রমান্ধ হয়ে আমি তোর সাথে নৈশভ্রমণে বেরিয়েছি। না জানি আমার পুড়া কপালে কী লেখা?’

‘তোর কপালে অনেক কিছু লেখা আছে বুঝতে পেরে আমি তাকে কথা দিয়েছিলাম, তোকে দিয়ে ভূত তাড়াব।’

‘কী!’

‘হ্যাঁ! তাকে বলেছিলাম তক্কেতক্কে থেকে তুই তুকতাক শিখেছিস। চিন্তার কারণ নেই, নিতান্ত ভয়ে ভ্রমান্ধ হলে আমরা ভূতপেত্নী দেখি।’

‘নিত্যান্দে দিন ফুরালে রাতদুপুরে ডরের ঠেলা টের পাবি।’

‘ঠিকাছে। এখন নিতাই ভূতের গল্প বল, ডরভয় দূর হবে।’

‘আচ্ছা। বলছি শোন! কবে ঘটেছিল জানি না। তবে আমার মনে আছে হয়ত শ বছর আগের কথা হবে। ভয়ত্রস্ত করার জন্য আমার এক জ্ঞাতিদাদা আমাকে বলেছিলেন। উনি নাকি উনার এক দাদার কাছ থেকে সত্য ঘটনা শুনেছিলেন, পরে উনি সাজিয়ে গুছিয়ে থোড়া রস লাগিয়েছিলেন। গালগল্প শুনে আমি ডরে আড়ষ্ট হয়েছিলাম। যে যাই বলুক ভাই ভূত আমি ডরাই। তো কী হয়েছিল? এক দুপুরে, মানে যখন ভূতরা উঠানে মাঠে দৌড়া দৌড়ি করে তখন। দাদা ধারিতে বসে বট গাছের দিকে তাকিয়ে বলেছিলেন, যা আমার জন্য ঠাণ্ডা চা নিয়ে আয় আজ তোকে ভূতের গল্প শুনাব। ঠাণ্ডা চা বলার কারণ, দুপুর বেলা চা’র কথা বললে কপালে ঝাড়ু পড়ে তা উনি জানেন তাই ঠাণ্ডা চা বলেছিলেন। আমি থরহরি করে বলেছিলাম, দাদা গো ঠাণ্ডা চা আনতে গেলে আমি ঠাণ্ডা হয়ে যাব। পাকঘরের চুল্লির পাড়ে আপনার ভাবী বসে আছেন। দাদা বলেছিলেন, তাইলে বাদ দে এখন আমি চা চাই ঝাড়ুর বাড়ি নয়। শোন, তোর নানার বাড়ি চল। তোকে দেখলে তোর নানি খুশি হয়ে আমাকে চা বানিয়ে দেবেন। আমি বলেছিলাম, নানিজান তো আমাদের বাড়ি। এখন গেলে নানির সতিন আপনার এবং আমার ঠ্যাং ভেংগে ল্যাংড়া বানাবেন। দাদা বিরক্ত হয়ে বলেছিলেন, দূর ছাই আমি এখন গরম চা কোথাই পাই? আমি গবেটের মত হেসে বলেছিলাম, এক কাজ করুন, খালিবাড়ি চলে যান। ওই বাড়িতে ভূতনীরা চা বেচে। আপনার বউর নামে বাকি লেখিয়ে খেয়ে আসুন। আমি আপনার সাথে যাব না। আমি ভূত ডরাই। দাদা থোড়া চিন্তা করে বলেছিলেন, তুই এক কাজ কর, আমার জন্য এক কাপ চা বানিয়ে নিয়ে আয়। আমি কিয়ৎ ধেয়ান চিন্তা করে বলেছিলাম, দাদা, আপনি এক কাজ করুন, পূবপাড়ে গিয়ে ছোট চাচার চাচিশাশুড়ির ধারিতে বসে চার কথা বললে উনি আপনােক অট্টগরম চা দিয়ে দেবেন। এমন সময় আমাদের সামনে দাদার নানি আবির্ভূত হয়েছিলেন। মা গো নানি গো বলে পড়ি কি মরি করে আমি ভোঁ দৌড়ে পাক ঘরে চলে গিয়েছিলাম। চোখের সামনে প্রেত্নী দেখে দাদা চোখ বুজে এলিয়ে পড়েছিলেন। উনাকে ভূতে ধরেছে ভেবে হুজুরকে খবর দেওয়া হয়। হুজুর এসে আম গাছের ডাল ভেংগে পানিতে চুবিয়ে ভূত ঝেড়েছিলেন। দাদীজান ঝাড়ু দিয়ে ঝাড়তে চেয়েছিলেন, কিন্তু দাদার বউর কান্নাকাটি দেখে দাদীজানের মন গলে চোখ দিয়ে পানি বেরিয়েছিল।’

‘দাদাকে নিশ্চয়ই ভূতে জেঁতেছিল?’

‘তা তো সবাই জানে। আমরা কোথায় যাচ্ছি তা কি তুই জানিস?’ বলে বন্ধু আমার দিকে তাকায়। এমন সময় ঝাঁকুনি দিয়ে গাড়ি থামে এবং ঝাঁগুড়গুড় শব্দ বাতাসে প্রতিধ্বনিত হয়। বিকট শব্দে দুজন ভয়ত্রস্ত হই। পশ্চিম দিগন্তে দৃশ্যমান শুক্রগ্রহ এবং সামনে কালেবিধ্বস্ত বাড়ি দেখে বুঝতে বাকি রইলো না আমরা যে ভূতের কবলে পড়েছি। অবস্থান জানার জন্য বন্ধু তার মোবাইল বার করে নেভিগেশন চালু করে আমার দিকে তাকিয়ে বলেছিল, ‘পূবে যাওয়ার কথা ছিল। দিগ্ভ্রান্ত হয়ে পশ্চিমে এসেছিস কেন?’

‘অহো! আমি তো সরসীর সাথে দেখা করার মানসে বেরিয়েছিলাম। ঔ সামনে ওর বাড়ি। আমার সাথে চল ওর সাথে পরিচয় কিরিয়ে দেব।’

‘আকাঙ্ক্ষাশূন্য আক্ষেপে সমস্যা সমাধান হবে না। আমরা এখনো কোথায় তা কী তুই জানিস?’

‘আকস্মিক দুর্ঘটনায় বিভ্রান্ত হয়ে আমরা বিভ্রাটে পড়েছি মাত্র। চিন্তা করিস না, ভ্রান্ত পথে দিগ্ভ্রান্ত হলে গন্তব্যে পৌঁছতে বেশি সময় লাগবে না।’

‘মানসিক চাঞ্চল্যে মন প্রায় বিমূঢ় আর তুই আমাকে অভয় দিচ্ছিস। মাথা তুলে সামনে তাকা, বিমণ্ডিত মায়াবির বিধুবদন দেখে মনের ভ্রম দূর হবে।’

সামনে তাকিয়ে আমার চিত্তবৈকল্য হয় এবং জপতপ করে দুজন ভয়ে নিদ্রাক্লিষ্ট হই। ভোরে পাখপাখালির ডাকে ঘুম ভাংগে। কথা না বলে দ্রুত গাড়ি চালিয়ে গহনবন থেকে বেরিয়ে পাশের শহরে প্রবেশ করে নাস্তা খেয়ে রেস্তোরাঁয় ফিরলে বন্ধু বিদ্রুপ হেসে বলেছিল, ‘ভাববাচ্যে ভূতের গল্প লিখবি না?’

তার কথা শুনে মনে সংশয় জাগে। অসংশয়িত হওয়ার জন্য শব্দকোষ খুলে বসি। রহস্যউপন্যাস, রোমাঞ্চকাহিনী, পুরাকাহিনী। মননশীলরচনা, গুরুগম্ভীর রচনা, জ্ঞানগর্ভরচনা, হাস্যরসাত্মক রচনা, ব্যঙ্গাত্মক রচনা। নকশা, কেচ্ছা। কথাপ্রবন্ধ, লোককথা, রূপকথা, উপকথা, পরীকথা, ইতিকথা, ব্রতকথা। আত্মজীবনী, আদ্যলীলা, লোকসাহিত্য অথবা জীবনীসাহিত্য। শব্দকোষে এত শব্দ দেখে আমি নিঃশর্তে নিঃশব্দ হই। খেই হারিয়ে চিন্তার সায়রে থই পাই না। রাক্ষসখোক্কস অথবা দত্যিদানোর গালগল্প অনেক শুনেছি। রাক্ষসরা উর বললে দূর যায় আর দূর বললে উরে থাকে। বরাবর বারোটায় ভূতপ্রেত্নীর সাথে কেউ দেখা করতে চায় না জেনে পুরাণ কথা পুনরায় লিখে নামের আগে নকুলে লাগাতে চাই না। সমন্বয়সাধনে আমি স্বকপোলকল্পিত গল্প লিখতে চাই। সমস্যা হল, সামঞ্জস্যসাধন ল্যাংড়ার হাতে লাঠি নয়। কোঁদাকুঁদি করলে কুঁদরুবন থেকে কুঁদুলি তেড়ে আসবে, আর বেশি কোঁতাকুঁতি করলে কুঁজড়া হতে হবে। মহা সমস্যায় পড়ে জেলিয়ার হাতে কুঁড়াজালি দেখে আমি আলিসাকুঁড়ের মত কল্পনাপ্রবণ হয়ে হাঁটছিলাম।

ভাদ্রের দুপুর। ঝাঁঝাঁ রোদের প্রখর তপনতাপে ভাপ উঠে মাটি তামার মত তাতাচ্ছে। সূর্য বরাবর মাথার উপর আসার সাথে সাথে রৌদ্রাভাবে আকাশ অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পরিবেশ ঝঞ্ঝাসমাকুল হয়। ঘনঘন বিজলি চমকে কড়কড় কড়াৎ শব্দে বাজ ফেটে ভূমিকম্পবলয় থেকে খপুষ্পরা বেরিয়ে অপচ্ছায়ার মত অস্পষ্টালোকে লুকালে শুরু হয় ধাধসপুরে বারবেলা।

অবিশ্বাস্য ভাবে ভূতাত্মাদের আবির্ভাবে ভূতাবিষ্ট লোকজনের অসংগত এবং অবান্তর ব্যবহারে পরিপার্শ্বে ক্রমবিপর্যয় দেখা দেয়। আরশোলা পাখির মত উড়ে। নেংটি ইঁদুররা নির্ভয়ে দৌড়ে। বন্যকুকুর এবং নেকড়েরা বনগহন থেকে বেরিয়ে আসে। স্কুল কলেজ ছুটি হয়েছে। ছাত্র ছাত্রীদের মনে পালাই ভাব। কেউ তড়বড় করছে। কেউ জোর কদমে তাগাদা হাঁটছে। কেউ একছুটে বাড়ি পৌঁছেছে। কলেজের সামনে গাড়ি থামিয়ে ড্রাইভার দোনোমনো শুরু করে। কলেজের বাগানে এক জোড়া শ্যামা আধার খাওয়ায় ব্যস্ত। হঠাৎ অলোক থেকে ফস করে দাঁড়কাক উড়ে এসে একটাকে ছোঁ মেরে ধরতে চায়। ছোবল থেকে ফসকে আড়ংবাড়ং করে উড়ে অন্যটার সামনে দিয়ে গেলে দুটা মিলে কাককে ধাওয়া করে বাতাসে হাপিশ হয়।পরিবেশ এবং পরিস্থিতি অস্থিরতা অনুভব করে পেশিবহুল ওজস্বী যুবক ডানেবাঁয়ে তাকিয়ে বিড়বিড় করছিল, ‘জিন অজিন কালাজিন গজাজিন।’

এমন সময় বিধুবদনা চিকনবরণী কলেজ থেকে বেরিয়ে ডাকাডাকি শুরু করে, ‘আয়মান ভাই! আয়মান ভাই। তুমি কোথায়?’



.....

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৫:১০

পরিবেশ বন্ধু বলেছেন: সুন্দর সাবলীল লেখনী , চালিয়ে যান , শুভকামনা ।

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৫:১১

মোহাম্মাদ আব্দুলহাক বলেছেন: আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ।

২| ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:৫৮

ইনসোমনিয়াক দাঁড়কাক বলেছেন: আগের গুলা পড়া হয়নি। পড়তে হবে

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:০০

মোহাম্মাদ আব্দুলহাক বলেছেন: আপনাকে ধন্যবাদ।

৩| ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:০৪

মাঈনউদ্দিন মইনুল বলেছেন:


ভাইজান.... সালাম জানাইয়া গেলাম.......

চলুক 'ধাধসপুরে বারবেলা' ...... শুভেচ্ছা অফুরন্ত :)

০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৫:০৭

মোহাম্মাদ আব্দুলহাক বলেছেন: কেমন আছেন মইনুলভাই?

এখনে সত্যি মজা করা যায়।

তো আর খবর কী?

৪| ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সকাল ১০:২৭

লাইলী আরজুমান খানম লায়লা বলেছেন: পরিবেশ এবং পরিস্থিতি অস্থিরতা অনুভব করে পেশিবহুল ওজস্বী যুবক ডানেবাঁয়ে তাকিয়ে বিড়বিড় করছিল, ‘জিন অজিন কালাজিন গজাজিন।’----------- দারুন -- দারুন

০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৫:০৮

মোহাম্মাদ আব্দুলহাক বলেছেন: আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ।

৫| ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৪৮

মাঈনউদ্দিন মইনুল বলেছেন:


আর সব খবর ভালা, ভাইজান....
আপনার লেখাগুলো সামু'র পাঠককে দেখতে দিন....
পাশে আছি :)

০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:৫৮

মোহাম্মাদ আব্দুলহাক বলেছেন: আমার লেখা এখানে অচল :(

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.