নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অন্তত একবার সত্যকে তার সম্বন্ধে কিছু বলতে দাও। আমরা কে কী, অন্যরা তা জানতে এবং দেখতে পারবে।
‘কী হয়েছে! হাঁকাহাঁকি করছিস কেন?’
‘আমার ভয় হচ্ছে। দৌড়ে আসো।’
‘তুই চলে যা আমি পরে আসব।’
‘তুমি কোথায় যাবে?’
‘আমার অনেক কাজ আছে। ড্রাইভার! সরসীকে নিয়ে বাড়ি যাও।’
‘ড্রাইভারকে চলে যেতে বলো। আমি তোমার সাথে যাব।’ বলে সরসী অগ্রসর হয়ে থমকে দাঁড়ায়। কিছু ওর পথরোধ করে। হতবাক হয়ে হাতড়ে অদৃশ্য দেয়ালের মত কিছু অনুভব করে পিছু হেঁটে গাড়িতে উঠে বসলে ড্রাইভার দ্রুত চালিয়ে চলে যায়। আয়মান নিম্নকণ্ঠে সুরা নাস পড়তে শুরু করে। ফকিরামালা হাতে এক ফকির তার নিকটবর্তী হয়ে গম্ভীরকণ্ঠে বললেন, ‘অবিশ্বাস্য হলেও দত্যিদানো আছে। সুরা আল জিনের অনুবাদ পড়লে সত্যাসত্যি জানতে পারবে। সব বিশ্লেষিত আছে। নির্ধূম আগুনে সৃষ্ট গুপ্ত সত্তারা লোকচক্ষুর অন্তরালে বসবাস করে। তাদের মাঝে আস্তিক নাস্তিক পাষাণ এবং পাষণ্ড আছে।’
আয়মান সাধারণকণ্ঠে বলল, ‘আদম (আঃ) কে সৃষ্টির দুই হাজার বৎসর আগে অত্যন্ত সূক্ষ্ম হয়ে অতুষ্ণ বায়ূতে পরিণত আগুন থেকে আল্লাহ তা’আলা আবুল জিন্নাত সামূমকে সৃষ্টি করার পর কামনা জানতে চাইলে বলেছিল, আমরা সবাইকে দেখব কিন্তু আমাদের যেন কেউ না দেখে এবং আমরা যেন পৃথিবীতে অদৃশ্য হতে পারি আর আমাদের বৃদ্ধরা যেন যুবক হয় মৃত্যুর পূর্বে। তার দুই কামনা পূরণ করা হয়। জিনরা বৃদ্ধ বয়সে মৃত্যুর পূর্বে আবার যুবক হয়। পাঁচ প্রজাতের জিন আছে। জিন হল জিন্নাত বা জিনজাতির এক বিশেষ প্রজাতি। আমির মানুষের সাথে থাকে। আরওয়াহ্ মানুষের সামনে আসে। শয়তান হল অবাধ্য। ইফরীত্ব শয়তানের চাইতেও বিপজ্জনক। ইফরীত্ব শব্দের অর্থ ভূত। জিনদের দেহ সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম। ওরা চাইলে যেকোনো কঠিন পদার্থের বাধা অতিক্রম করতে পারে। আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে বিশেষ কিছু কথা ও কাজ শিক্ষা দিয়েছেন। যদ্বারা ওরা আকৃতি বদলিয়ে রূপ দেখে রূপান্তরিত হতে পারে। বেশিরভাগ সময় ওরা সর্পাকৃতিতে চলাফেরা করে। মানবজাতির আবির্ভাবের আগে জিনরাই পৃথিবীতে রাজত্ব করত। অবাধ্যতার অপরাধে উৎখাত করা হয়েছে। বর্তমানে পৃথিবীতের নির্জন স্থানসমূহে ওরা বসবাস করছে।’
‘মৌলিক এবং দুর্জ্ঞেয় তত্ত্বে তুমি তত্ত্বজ্ঞ হয়েছ।’ বলে ফকির মৃদু হেসে মাথা দুলালে আয়মান বলল, ‘যা জেনিছি তা যথেষ্ট নয়। আপনার কাছ থেকে অনেক কিছু জানার আছে।’
‘সজ্ঞানে যা জেনেছি এবং বাস্তবে যা অভিজ্ঞতা করেছি তা তোমাকে জ্ঞাত করব। জ্ঞাতব্য জেনে অভিজ্ঞতা অর্জন করলে তুমি জ্ঞানী এবং অভিজ্ঞ হবে। কী জানতে চাও?’
‘জাদুকররা অমরত্বে বিশ্বাসী। জ্যোতিষীরা চকখড়ির সাহায্যে কোষ্ঠী বিশ্লেষণে অতীত বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ গণনা করতে পারে। তা কী করে সম্ভব সামান্য বিশ্লষণ করতে পারবেন?’
‘হ্যাঁ নিশ্চয়ই। তবে তারাগে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিশ্লেষণ করলে বিষয় বিশ্লেষিত হবে।’
‘আপনি বিরক্ত না হলে আমি কৃতার্থ এবং উপকৃত হব।’ আয়মান বিনয়ের সাথে বললে ফকির স্বস্তির সাথে বললেন, ‘ধর্মশাস্ত্রে জীবের বল এবং দূর্বলতা বিশ্লেষিত আছে। অপমন্ত্রে মানুষ বশ্য হয় এবং শাস্ত্রমন্ত্রে জিন বশ করা যায়। জিনরা তিনশো বছরে প্রাপ্তবয়স্ক হয়। জাদুকররা শয়তানোপাসক। ওরা বিশ্বাস করে শয়তানের উপসনায় অমরত্ব লাভ হয়। আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, প্রত্যেক আত্মা মৃত্যু স্বাধ গ্রহণ করবে। হারুত এবং মারুত নামক ফেরস্তারা বাবেল শহরের মানুষকে জাদুবিদ্যা শিক্ষা দিয়েছিল। জিনের কাছ থেকে জ্যোতিষীরা ভবিষ্যৎ গণনা শিখেছিল। ভবিষ্যদ্বক্তা জিনরা আকাশসীমায় যেয়ে ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে জানতে পারত। কোরআন নাযিল হওয়ার পর থেকে ওরা আর আকাশসীমায় যেতে পারে না।’
‘অতীত বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে বিশ্লেষণ করলে বিশেষজ্ঞ হব।’
‘জাদুঘরে পুরাতত্ত্ব বিষয়ক দ্রব্যসম্ভার আছে। অতীতে কী হয়েছে তা ইতিহাসের পাতায় লেখা আছে। বর্তমানে কী হচ্ছে তা আমরা অভিজ্ঞতা করছি। ভবিষ্যতে কী হবে তা একমাত্র আল্লাহ ভালো জানেন। জন্ম মৃত্যু আয়ূ সম্মান এবং সম্পদ এই সব আল্লাহর আয়ত্তে। লক্ষ সাধনে সিদ্ধ হলে তুমি একাই সাঙ্গপাঙ্গ সুদ্ধ জুজুবুড়িকে যমের জাঙ্গালে পাঠাতে পারবে। দোয়া করি তুমি সত্বর সিদ্ধাই হও।’ বলে ফকিরামালা আয়মানের হাতে দিয়ে ফকির মাথা দুলিয়ে হাঁটতে শুরু করেন। ফকিরামালা গলায় পরে আয়মার চোখ বুজে বুক ভরে শ্বাস টেনে চোখ মেলে সামনে অভয়ারণ্য দেখে অবাক হয়। অলোকদৃষ্টে তাকিয়ে আজগুবি কাণ্ডকারখানা দেখে নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারে না।
অদ্ভুত আভরণে ভূষিত বুড়ি নরনারীর নাড়িভুঁড়ি টেনে ছিঁড়ে বার করছে। মৃত্যুযন্ত্রণায় চিৎকার করে ওরা হাত পা ছুড়ে ছটফটিয়ে নিথর হচ্ছে। সাঙ্গপাঙ্গের পানাহার দেখে আয়মান দু হাতে মুখ চেপে ধরে গাছের আড়ালে যেয়ে বমন করে। ভয় এবং তীব্র ঘৃণায় অস্থির এবং অসহায়ের মত ডানে বাঁয়ে তাকায়। দূরে নারী আকৃতি দেখে দৌড়ে অভয়ারণ্যে প্রবেশ করে হিজলগাছের পাশে যায়। ফাঁদ কাত দেখে এক লাফে গাছে উঠে ভোজালি সুদ্ধ কোষ কোমরে বেঁধে বর্শা হাতে নিয়ে লাফ দিয়ে নামে।
এমন সময় অলীক থেকে পাপিয়া প্রজাতিরা উড়ে আসে। পাখির ডাকাডাকি শুনে আয়মান অত্যাশ্চার্য হয়ে নিম্নকণ্ঠে বলল, ‘এতসব পাপিয়া কোত্থে আসল? সরসীকে বললে বিশ্বাস করবে না। বলবে পরখ করে পাপিয়া দেখে তুমি চোখের মাথা খেয়েছ। ইস! এখন আসলে চোখে আংগুল দিয়ে দেখাতে পারতাম।’
এমন সময় সরসী হেঁকে জানতে চায়, ‘ও বাগুরিক! তোমার বাগুরা কোথায়?’
সরসীর অভ্যাগমনে অভয়ারণ্যের পরিবেশে পরিবর্তন আসে এবং পাপিয়ারা অলীকে বিলীন হয়। হিংস্র বনচারীর মত ঘাড় বাঁকিয়ে রাগান্বিত কণ্ঠে আয়মান বলল, ‘তুই এসেছিস কেন?’
‘তোমাকে দেখা করার জন্য। একা একা জংলায় আস কেন?’
‘আমি আসি শিকার করার জন্য, তুই কেন আসিস?’
‘অনেক কষ্টে বিলাসভঙ্গি শিখেছি কিন্তু পাখি শিকার করতে পারি না। হরিণ শিকার করে শিকে পুড়ে একা খেতে পারবে না জেনে তোমার অর্ধী হওয়ার জন্য আসি।’
‘আমাকে দিকদারি না দিয়ে দৌড়ে বাড়ি যা। পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতিতে অস্থির ভাব। কখন কী হবে আমি জানি না।’
‘আয়মান ভাই তোমার কী হয়েছে, দিনানুদিন অসাধারণ হচ্ছ কেন?’
‘আমার কিছু হয়নি। তোর মন মগজে সমস্যা আছে। দৌড়ে বাড়ি যা।’ বলে আয়মান সতর্ক হয়ে কিছুর জন্য অপেক্ষমাণ হয়। সরসী হেঁকে বলল, ‘আয়মান ভাই! আজ কী শিকার করেছ?’
‘তুই এখনো যাসনি?’
‘আমি যাব না। তোমার সাথে বনভোজন করতে চাই।’
‘তোর মত ছুঁড়ির সাথে আমি চড়াইভাতি করব না। যা ভাগ!’
‘নববর্ষে যৌবনোদয় হয়ে নবযুবতী হয়েছি। দিনেদিনে যৌবনসঞ্চার হচ্ছে। মনভোমরা জানে আমি যৌবনমদমত্তা হয়েছি। দৌড়ে আমার উরে আসো, আদর করে অধরমধু পান করাব।’ বলে সরসী উত্তেজক হাসি হাসলে ঢিল ছুড়ে আয়মান বলল, ‘দাঁড়া! আজ তোর যৌবনের লীলা সাঙ্গ করব।’
কপালের ডানপাশে ঢিল লাগলে সরসী দু হাতে চেপে ধরে বসে ইচ্ছা করে গলার জোরে কাঁদতে শুরু করে। আয়মান দৌড়ে যেয়ে ব্যস্তকণ্ঠে বলল, ‘কপাল কানা করেছি নাকি?’
.....
০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:০৫
মোহাম্মাদ আব্দুলহাক বলেছেন: ধন্যবাদ বাবলা ভাই।
©somewhere in net ltd.
১| ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:০২
মোহাম্মদ জমির হায়দার বাবলা বলেছেন: হাক ভাই,
পুরোনো বাড়িতে পড়েছি।উপন্যাসটার শিরোনাম বেশ দারুন হয়েছে। আপনার উপন্যাস এগিয়ে যাক।
শুভকামনা।