নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

প্রভাবপ্রতিপত্তি আজীবন থাকে না। প্রতারকরাও প্রতিরিত হয়। ক্ষমতাচ্যুত হলে ক্ষমতাসীনের কী হবে? কবর অথবা শ্মশানে প্রতিদিন মৃতসৎকার হয়। ©_Mohammed Abdulhaque [www.mohammedabdulhaque.com]

মোহাম্মাদ আব্দুলহাক

অন্তত একবার সত্যকে তার সম্বন্ধে কিছু বলতে দাও। আমরা কে কী, অন্যরা তা জানতে এবং দেখতে পারবে।

মোহাম্মাদ আব্দুলহাক › বিস্তারিত পোস্টঃ

ধাধসপুরে বারবেলা ( উপন্যাস ) সাত

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:০০





আয়মান হতাশ হয়ে কাঁধ ঝুলিয়ে মুখ বিকৃত করে বলল, ‘ওকে নিয়ে হাসপাতালে যাচ্ছ না কেন? জখমে ঘা হলে ছটফট করে মরে যাবে তো।’

‘ঠসা কানার মত ঠাস করে ঢিল মেরে আমার সুন্দর-মুন্দর কপাল ফাটিয়েছ। আজ আমি তোমার কামরায় ঘুমাব। ঘুমালে কী করবে?’ বলে সরসী অধরদংশন করে মাথা দিয়ে ইশারা করে।

‘আমার কিছু ছুঁলে, তোর হাত পা ভাংব মনে রাখিস!’ গর্জিয়ে বলে রেগে গজগজ করে আয়মান চলে যায়। মা বাবা দু হাত ধরে সরসীকে আয়মানের কামরায় নিয়ে গেলে সবাই মিলে সেবায় ব্যস্ত হলেন। যেন মহারানী। দাদীরা হাত টিপছেন, কাজের মেয়েরা পা টিপাচ্ছে। মা মাথা আঁচড়িয়ে দিচ্ছেন। বাবারা এক কোণে বসে খোশগল্প করছেন। দাদারা বারান্দায় বসে হাসাহাসি করছেন। বিকালের চা খেয়ে সবাই একটু শিথিল হয়ে আরাম করে বসেছেন। সরসীও ঘুমিয়ে পড়েছে। আয়মান সে তার কাজে মহাব্যস্ত। রাতে আরামে ঘুমাবার কাজের ছেলেকে নিয়ে বটগাছে মাচা বানাচ্ছে। সায়ংকালে ঘুম থেকে উঠে সরসী বিছানায় বসে আড়মোড়া দিয়ে চোখ মেলে সবাইকে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে চমকে বুকে থু থু দিয়ে কপটহেসে বলল, ‘আপনারা এখানে কী করছেন?’

আ’দাদী উদগ্রীব হয়ে বললেন, ‘এখন কেমন বোধ করছিস?’

মাথায় হাত দিয়ে কপাল কুঁচকে ক্লিষ্টকণ্ঠে সরসী বলল, ‘ইস, মাথায় এত ব্যথা হচ্ছে কেন?’

ওর মা ব্যস্তকণ্ঠে বললেন, ‘বেশি ব্যথা হচ্ছে নাকি?’

‘জি, ব্যথায় মাথা টনটন করছে।’ বলে চারপাশে তাকিয়ে সরসী অবাককণ্ঠে বলল, ‘ওঃ-অ্যাঁও, কামরাটা কার গো?’

আ’দাদী মৃদু হেসে বললে, ‘তোর আয়মান ভাইর।’

‘বনমানুষটা এখন কোথায়?’ চ্যাটাং করে বলে সরসী দাঁত কটমট করলে আ’দাদী ধীরে ধীরে হেঁটে এসে বিছানায় বসে জিজ্ঞেস করলেন, ‘কী করেছিলে?’

‘খামোখা পথ হারিয়ে জংলায় ঢুকে বনমানুষের মত ঘোরাঘুরি করে। ডরের চোটে শিয়ালরা দেশান্তরী হয়েছে জানের মায়ায়। শঙ্কিল এত ভয়ঙ্কর।’

‘কী করেছিলে তা তো বললি না।’

‘বনভোজন করার জন্য গিয়েছিলাম। শিকে পুড়ে নাদুসনুদুস ঘুঘু একা খেতে দেখে মিনতি করে বলেছিলাম, ও আয়মান ভাই, আমাকে আধখান রান দেবে? শুনে ঢিল মেরেছিলেন, আমার ডাগর নয়ন কানা করার জন্য।’

‘সত্য ঘটনা বলছিস না কেন?’

‘আপনারা সবাই জানেন ইদানীং আমি দুঃস্বপ্ন দেখে বিত্রস্ত হয়ে চিঁক চিৎকার করে জাগি। আজ আমি দুঃস্বপ্ন দেখিনি।’ গম্ভীরকণ্ঠে বলে সরসী দেয়ালের দিকে তাকালে আ’দাদী অধীরতা কণ্ঠে বললেন, ‘বুঝিয়ে বল।’

‘তন্দ্রাবিষ্ট হলে কিম্ভূতকিমাকার আমাকে ধাওয়া করে এবং আমার নিকটবর্তী হলে বীরের মত আয়মান ভাই আবির্ভূত হয়ে দাদুর মত আমাকে বুকে জড়িয়ে মাথা পিঠে হাত বুলিয়ে অভয় দেন।’ ঘাড় বাঁকিয়ে আ’দাদীর দিকে তাকিয়ে বলল, ‘দুঃস্বপ্নে যখন ডরের চোটে হন্যা হয়ে দৌড়ি, তখন একমাত্র আয়মান ভাই আমাকে বাজুতে টেনে বুক ফুলিয়ে অশিবের সাথে হাতাহাতি করেন। আপনারা সবাই, আমাকে বাঁচাও বাঁচাও জপেন। তাই লাই দিয়ে আমি আমার আয়মান ভাইর সাথে ভাব জমাতে চাই।’

সরসীর কথা শুনে দাদীরা চিন্তত হলেন। কথা না বলে কামরা থেকে বেরিয়ে দাদার পাশে যেয়ে স’দাদী চিন্তিতকণ্ঠে বললেন, ‘সরসীও দুঃস্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে।’

‘ঝাড়ফুঁক ছুমন্তরে উপরিভার নামবে না। জলপড়া অথবা তেলপড়ায় এ বেমার কমবে না। তুকতাক করে বাইলের ঝাড়ু দিয়ে ঝেড়েও ভর নামানো যাবে না। আল্লাহর কাছে দোয়া করা ছাড়া আর কিছুই করার নাই।’ বলে স’দাদা আ’দাদার দিকে তাকালে আ’দাদ জানতে চাইলেন, ‘এ সব কী বলছিস?’

‘বাবার ছোটফুফুও উধাও হয়েছিলেন। উনাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।’ দাদীদের দিকে তাকিয়ে স’দাদা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন, ‘জানি না কত শতাব্দী আগে আমাদের গ্রামে এক আচাভুয়া রূপের ধুচুনি জন্মেছিল। প্যাঁচা, বেঢপা এত বিদঘুটে ছিল যে, ভয়ে কেউ ওর দিকে তাকাত না। ছায়া দেখলেই শজারুর কাটার মত ঠাস ঠাস করে গায়ের রোম খাড়া হত। ওর কুতনু থেকে মড়া সাপের পচা গন্ধ বেরুত। বেঘোরে মরার ডরে কেউ ওর বাড়ির আশেপাশে যেত না। বিয়ের বয়স হলে তুকতাক করে জিন সাধন করেছিল, কিন্তু বাসররাতে বরের মুখ দেখে চোখবোজে যমের বাড়ি চলে গিয়েছিল। সেই থেকে শতাব্দীর শুরুতে জিন ফিরে আসে। এক পরী তাকে বিয়ে করতে চায় কিন্তু সে ওকে সহ্য করতে পারে না।’

সরসীর দাদী উদ্বেজিত হয়ে বললেন, ‘এসব শুনাচ্ছেন কেন?’

‘আমার ভয় হচ্ছে, তাই শুনালাম। বিশ্বাস হলে বিশ্বাস করো, অবিশ্বাস হলে বিশ্বাস করার জন্য মিনতি করব না।’ বলে স’দাদা কাঁধ বাঁকালে আয়মানের দাদা গম্ভীরকণ্ঠে বললেন, ‘যা বলেছিস সত্য, কিন্তু গত শতাব্দীতে আমাদের গ্রামের কেউ উধাও হয়নি এবং এ শতাব্দীও প্রায় শেষ হয়েছে।’

‘গত শতাব্দীতে পাশের গায়ের একজন বিদিশা হয়ে আমাদের গ্রামে এসে উধাও হয়েছিল। এ শতাব্দী এখনো শেষ হয়নি, বছর বাকি আছে।’

‘টক্কর দিয়ে তোর সাথে কথা কাটাকাটি করতে চাই না। যা বলার খুলে বল।’

‘শুনেছিলাম প্রতি শতাব্দীতে আমাদের গ্রামের এক যুবক পাগল হয় এবং এক যুবতী উধাও হয়। আজ পর্যন্ত যুবক পাগল হয়নি এবং যুবতীও উধাও হয়নি।’ বলে স’দাদা সামনে তাকালে আয়মানের দাদা বিরক্তেক্তি করে বললেন, ‘প্রতিদিন যুবতীরা উধাও হচ্ছে এবং দিনে তিন চারটা যুবক পাগল হচ্ছে দেখেও আগড়বাগড় বকছিস কেন?’

‘ভাইজান, যারা উধাও হয়েছে ওরা নাগরের হাত ধরে পালিয়েছে এবং যারা পাগল হচ্ছে ওরা মাদকাসক্ত।’

‘তোর হয়েছেটা কী?’

‘ভাইজান, আয়মান এবং সরসীর জন্য আমার ভয় হচ্ছে। আমার মন বলছে, এই শতাব্দীতে আয়মান পাগল হবে এবং সরসী উধাও হবে।’

‘যা! সট করে চা বানিয়ে দৌড়ে নিয়ে আয়।’ ধমক দিয়ে সরসীর দাদীর দিকে তাকিয়ে কপাল কুঁচকে আ’দাদা বললেন, ‘তোমাদের মন কী বলছে?’

‘ভাইজান, আমাদের কলিজা কাঁপতে শুরু করেছে।’

‘আয়মানকে ডাক দাও, সবার কলিজার দুরদুরানি বন্ধ করবে।’ মুখ বিকৃত করে সামনে তাকিয়ে বিরক্তসুরে আ’দা বললেন, ‘পান খেয়ে কানে চুন লাগিয়ে পরিকথা শুনাবার জন্য যতসব গণ্ডমূর্খ আমার উঠানে এসে এককাট্টা হয়েছে, কেচ্ছা করে গুলতানি মারার জন্য।’

এমন সময় বিদ্যুদ্বেগে কিছু একটা উড়ে গেলে আ’দাদী ভয়বিহ্বলকণ্ঠে বললেন, ‘ও আল্লাহ গো! ওটা কী ছিল?’

‘কই, আমি তো কিছু দেখিনি।’ আয়মানের দাদা জবাব দিলে আ’দাদী উনার পাশে যেয়ে বললেন, ‘ভয়ে আমার গা ছমছম করছে। ভিতরে চলুন।’

‘তোমরা কী শুরু করেছ?’

‘আমার নাতি কোথায়? দয়া করে কেউ আয়মানকে ডাকো। আয়মান! দৌড়ে দাদীর উরে আয়।’ আ’দাদী অস্থির হয়ে হাত ঝেড়ে উঠানে যেয়ে চিৎকার করে ডাকতে লাগলেন। আয়মান ঊর্ধ্বশ্বাসে দৌড়ে এসে হাঁফাতে হাঁফাতে বলল, ‘কী হয়েছে দাদীজান?’



মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.