নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সত্যই সুন্দর

আমি সত্য জানতে চাই

কোবিদ

আমি লেখালেখি করি

কোবিদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রতিভাবান শিশুসাহিত্যিক ও ভারতীয় সাহিত্যে “ননসেন্স্ রাইমের” প্রবর্তক সুকুমার রায়ের মৃত্যুদিনে শ্রদ্ধাঞ্জলি

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:০৪



সুকুমার রায় বাংলা সাহিত্যের জনপ্রিয়তম শিশুসাহিত্যিকদের অন্যতম। তিনি একাধারে লেখক, ছড়াকার, শিশুসাহিত্যিক, রম্যরচনাকার ও নাট্যকার। ছাত্রাবস্থাতেই সুকুমার রায়ের প্রতিভার বিকাশ ঘটে। প্রতিভাবান এই শিশুসাহিত্যিক ছড়া, গল্প, নাটক, কবিতা ও প্রবন্ধ লিখে সহজেই বাংলা শিশুসাহিত্যে তাঁর শক্ত অবস্থান তৈরী করে নেন। শিশু সাহিত্যের এই জনপ্রিয় লেখক শিশু-কিশোরদের জন্য অসংখ্য বিজ্ঞানমনস্ক রচনা লিখেছেন। “ননসেন্স্ রাইমের” প্রবর্তক সুকুমার রায়ের লেখা ‘আবোল তাবোল, হ-য-ব-র-ল, পাগলা দাশু,বহুরূপী, খাই খাই' বইগুলো শিশুসাহিত্যের অমর সৃষ্টি । ১৯২৩ সালের ১০ সেপ্টেম্বর মৃত্যুবরন করেন জনপ্রিয় এই শিশুসাহিত্যিক। মৃত্যুদিনে শিশুসাহিত্যিক সুকুমার রায়কে স্মরন করছি গভীর শ্রদ্ধায়।



শিশুসাহিত্যিক সুকুমার রায়, ১৮৮৭ সালের ৩০ অক্টোবর ময়মনসিংহ জেলার মসুয়া গ্রামে এক ব্রাহ্ম পরিবারে জন্মগ্রহন করেন। তার পিতা বাংলা শিশুসাহিত্যের উজ্বল রত্ন উপেন্দ্রকিশোর রায় এবং মাতা বিধুমুখী দেবী। সুকুমার রায় জন্মেছিলেন বাঙ্গালী নবজাগরণের স্বর্ণযুগে। তাঁর পারিবারিক পরিবেশ ছিল সাহিত্যনুরাগী, যা তাঁর মধ্যকার সাহিত্যিক প্রতিভা বিকাশে সহায়ক হয়। পিতা উপেন্দ্রকিশোর ছিলেন শিশুতোষ গল্প ও জনপ্রিয়-বিজ্ঞান লেখক, চিত্রশিল্পী, সুরকার ও শৌখিন জ্যোতির্বিদ। উপেন্দ্রকিশোরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, যিনি সুকুমারকে সরাসরি প্রভাবিত করেছিলেন। এছাড়াও রায় পরিবারের সাথে জগদীশ চন্দ্র বসু, আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় প্রমুখের সম্পর্ক ছিল। কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ১৯০৬ সালে রসায়ন ও পদার্থবিদ্যায় বি.এসসি.(অনার্স) করার পর সুকুমার মুদ্রণবিদ্যায় উচ্চতর শিক্ষার জন্য ১৯১১ সালে বিলেতে যান। সেখানে তিনি আলোকচিত্র ও মুদ্রণ প্রযুক্তির ওপর পড়াশোনা করেন এবং কালক্রমে তিনি ভারতের অগ্রগামী আলোকচিত্রী ও লিথোগ্রাফার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। ১৯১৩ সালে সুকুমার কলকাতায় ফিরে আসেন।



(উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরী)

সুকুমারের পিতা উপেন্দ্রকিশোর ছাপার ব্লক তৈরির কৌশল নিয়ে গবেষণা করেন, এ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালান এবং মানসম্পন্ন ব্লক তৈরির একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। মেসার্স ইউ. রয় এন্ড সন্স নামে ঐ প্রতিষ্ঠানের সাথে সুকুমার যুক্ত ছিলেন। সুকুমার ইংল্যান্ডে পড়াকালীন, উপেন্দ্রকিশোর জমি ক্রয় করে, উন্নত-মানের রঙিন হাফটোন ব্লক তৈরি ও মুদ্রণক্ষম একটি ছাপাখানা স্থাপন করেছিলেন।



এই সময় তিনি ছোটদের একটি মাসিক পত্রিকা, 'সন্দেশ', প্রকাশনা শুরু করেন। সুকুমারের বিলেত থেকে ফেরার অল্প কিছুদিনের মধ্যেই উপেন্দ্রকিশোরের মৃত্যু হয়। উপেন্দ্রকিশোর জীবিত থাকতে সুকুমার লেখার সংখ্যা কম থাকলেও উপেন্দ্রকিশোরের মৃত্যুর পর সন্দেশ পত্রিকা সম্পাদনার দায়িত্ব সুকুমার নিজের কাঁধে তুলে নেন। শুরু হয় বাংলা শিশুসাহিত্যের এক নতুন অধ্যায়। পিতার মৃত্যুর পর আট বছর ধরে তিনি সন্দেশ ও পারিবারিক ছাপাখানা পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর ছোটভাই এই কাজে তাঁর সহায়ক ছিলেন এবং পরিবারের অনেক সদস্য 'সন্দেশ'-এর জন্য নানাবিধ রচনা করে তাঁদের পাশে দাড়ান। ১৯১৫ থেকে ১৯২৩ পর্যন্ত তিনি সন্দেশ পত্রিকা সম্পাদনা করেন।



ভারতীয় সাহিত্যে "ননসেন্স্ রাইমের" প্রবর্তক সুকুমার রায়। প্রেসিডেন্সী কলেজে পড়বার সময় তিনি ননসেন্স ক্লাব নামে একটি সংঘ গড়ে তুলেছিলেন। এর মুখপাত্র ছিল সাড়ে বত্রিশ ভাজা নামের একটি পত্রিকা। সেখানেই তাঁর আবোল-তাবোল ছড়ার চর্চা শুরু। তাঁর লেখা কবিতার বই আবোল তাবোল, গল্প হযবরল, গল্প সংকলন পাগলা দাশু, এবং নাটক চলচ্চিত্তচঞ্চরী বিশ্বসাহিত্যে সর্বযুগের সেরা "ননসেন্স" ধরণের ব্যঙ্গাত্মক শিশুসাহিত্যের অন্যতম বলে মনে করা হয়। পরবর্তীতে ইংল্যান্ড থেকে ফেরার পর মন্ডা ক্লাব (ইংরেজি ভাষা: Monday Club) নামে একই ধরণের আরেকটি ক্লাব খুলেছিলেন তিনি। মন্ডা ক্লাবের সাপ্তাহিক সমাবেশে সদস্যরা 'জুতো সেলাই থেকে চন্ডিপাঠ' পর্যন্ত সব বিষয়েই আলোচনা করতেন। সুকুমার রায় মজার ছড়ার আকারে এই সাপ্তাহিক সভার কয়েকটি আমন্ত্রণপত্র করেছিলেন সেগুলোর বিষয়বস্তু ছিল মুখ্যত উপস্থিতির অনুরোধ এবং বিশেষ সভার ঘোষনা ইত্যাদি।



সন্দেশের সম্পাদক থাকাকালীন সময়ে তাঁর লেখা ছড়া, গল্প ও প্রবন্ধ আজও বাংলা শিশুসাহিত্যে মাইলফলক হয়ে আছে। তাঁর বহুমুখী প্রতিভার অনন্য প্রকাশ তাঁর অসাধারণ ননসেন্স ছড়াগুলোতে। তাঁর প্রথম ও একমাত্র ননসেন্স ছড়ার বই আবোল-তাবোল শুধু বাংলা সাহিত্যে নয়, বরং বিশ্বসাহিত্যের অঙ্গনে নিজস্ব জায়গার দাবিদার। সাংস্কৃতিক ও সৃজনশীল কার্য ছাড়াও সুকুমার ছিলেন ব্রাহ্মসমাজের সংস্কারপন্থী গোষ্ঠির এক তরুণ নেতা। ব্রাহ্ম সমাজ, রাজা রামমোহন রায় প্রবর্তিত একেশ্বরবাদী, অদ্বৈতে বিশ্বাসী হিন্দুধর্মের এক শাখা যারা ৭ম শতকের অদ্বৈতবাদী হিন্দু পুরান ঈশ-উপনিষদ মতাদর্শে বিশ্বাসী। সুকুমার রায় 'অতীতের কথা' নামক একটি কাব্য রচনা করেছিলেন, যা ব্রাহ্ম সমাজের ইতিহাসকে সরল ভাষায় ব্যক্ত করে - ছোটদের মধ্যে ব্রাহ্ম সমাজের মতাদর্শের উপস্থপনা করার লক্ষে এই কাব্যটি একটি পুস্তিকার আকারে প্রকাশ করা হয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, যিনি ওই সময়ের সবথেকে প্রসিদ্ধ ব্রাহ্ম ছিলেন, তাঁর ব্রাহ্মসমাজের সভাপতিত্বের প্রস্তাবের পৃষ্ঠপোষকতা সুকুমার করেছিলেন।



১৯২৩ খ্রিস্টাব্দের ১০ সেপ্টেম্বর লেইশ্মানিয়াসিসে (কালাজ্বর) আক্রান্ত হয়ে মাত্র সাঁইত্রিশ বছর বয়সে সুকুমার রায় মৃত্যুবরণ করেন, সেই সময় এই রোগের কোনো চিকিৎসা ছিল না। মৃত্যুকালে তিনি একমাত্র পুত্র ভারতের অন্যতম চলচ্চিত্র পরিচালকরূপে সত্যজিত রায় এবং স্ত্রীকে রেখে যান। সুকুমার রায়ের স্বল্পস্থায়ী জীবনে তাঁর প্রতিভার শ্রেষ্ঠ বিকাশ লক্ষ্য করা যায়। তাঁর লেখা ছড়া, গল্প ও প্রবন্ধ আজও বাংলা শিশুসাহিত্যে মাইলফলক হয়ে আছে।



প্রতিভাবান শিশুসাহিত্যিক সুকুমার রায়ের আজ মৃত্যুদিন। মৃত্যুদিনে তাঁকে স্মরন করছি গভীর শ্রদ্ধায়।



সুকুমার রায়ের আবোল তাবোল পড়তে ক্লিক করুনঃ

`আবোল তাবোল'-এর কবিতা

মন্তব্য ১১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১১) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:২০

নিজাম বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:৫২

কোবিদ বলেছেন:

আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ

২| ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:০৮

আশরাফ মাহমুদ মুন্না বলেছেন: .
পরপর তিন পুরুষ লেখালেখি করে বিখ্যাত হয়েছেন এরূপ পরিবার খুবই কম পৃথিবীতে। নেই বললেই চলে। যদি থাকে তা-ও হাতে গোণা যাবে।

উপেন্দ্রকিশোর রায়

সুকুমার রায়

সত্যজিত রায়

Nature or Nurture???





#:-S 8-|

+++

:)

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:৪৭

কোবিদ বলেছেন:

Nature হলোঃ প্রকৃতি, নিসর্গ বা স্বভাব
আর Nurture হলোঃ পালন করা বা পুষ্টিদান করা

এবার ঠিক করে নিন কোনটা যথার্থ

৩| ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:২৫

এ.টি.এম.মোস্তফা কামাল বলেছেন: সুকুমার রায়ের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। মানডে ক্লাবকেই সুকুমারসুরভ কৌতুকের পাল্লায় পড়ে মন্ডা ক্লাব বনে যেতে হয়েছিলো। সুকুমারের কৌতুকবোধের যে উচ্চতা সেটা মাপার মতো এন্টেনা এখনো আমাদের তৈরী হয়নি।

আমার এ লেখায় তাঁর প্রতিভার প্রতি কিঞ্চিৎ শ্রদ্ধা দেখিয়েছি একটি শব্দে-
Click This Link

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:৪২

কোবিদ বলেছেন:

অসংখ্য ধন্যবাদ কামাল ভাই
আপনার লেখাটা চমৎকার হয়েছে।
পড়বার সুযোগ করে দেবার জন্য ধন্যবাদ

৪| ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:২৪

ঢাকাবাসী বলেছেন: উপরে এটিএম মোস্তফা কামাল বলেছেন 'সুকুমারের কৌতুকবোধের যে উচ্চতা সেটা মাপার মতো এন্টেনা এখনো আমাদের তৈরী হয়নি'। আমারও তাই মত।

৫| ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:২৮

সাদা রং- বলেছেন: আমার প্রিয় লেখকের একজন। এ লেখকে যদি ছন্দের জাদুকর নাম দিত তা হলে ভুল হত না।

৬| ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৫১

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: এ.টি.এম.মোস্তফা কামাল বলেছেন: সুকুমার রায়ের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সুকুমারের কৌতুকবোধের যে উচ্চতা সেটা মাপার মতো এন্টেনা এখনো আমাদের তৈরী হয়নি। একমত।

পাঠ্যবইয়ের বাইরে যখন থেকে বই পড়া শুরু করি, সেই সময়ের দিকে আমি একটা পুরাতন ‘সুকুমার সমগ্র’ হাতে পেয়েছিলাম কিছুদিনের জন্য। এরপর কমলাপুর বা চট্টগ্রাম রেলস্টেশনের এক বুকস্টল থেকে ঝকঝকে ছাপার সুদৃশ্য ‘সুকুমার সমগ্র’ কেনার সামর্থ হয় আমার। জীবনে যে বইগুলো সবচেয়ে বেশি সংখ্যকবার পড়া হয়েছে, সুকুমার রায়ের এ বইটি তার অন্যতম।

কতো সহজে গল্প বা ছড়া বলা যায়, তাঁর উৎকৃষ্টতম উদাহরণ সুকুমার রায়। কিন্তু এটা আমার অজানা ছিল যে মাত্র সাঁইত্রিশ বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন। বিরল প্রতিভার অধিকারী, ক্ষণজন্মা কিন্তু স্বল্পজীবী এই কালজয়ী লেখকের আত্মার শান্তি কামনা করছি।

তথ্য সমৃদ্ধ পোস্টের জন্য ধন্যবাদ।

৭| ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:২১

মহামহোপাধ্যায় বলেছেন: পাগলা দাশু পড়ে কত্ত হেসেছি আর যতীনের জুতো, আরোও অনেক। এইসব মহান সৃষ্টির কারিগরকে জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা।

পোস্টে ভালোলাগা রইল।

৮| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১:২৯

নাজিম-উদ-দৌলা বলেছেন:
মাঝে মাঝে এখনও ওনার লেখা ছড়া পড়ে হরদম হাসি :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.