নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সত্যই সুন্দর

আমি সত্য জানতে চাই

কোবিদ

আমি লেখালেখি করি

কোবিদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

দানবীর ও সমাজ সেবক রায় বাহাদুর রণদাপ্রসাদ সাহার ১১৭তম জন্মদিনে ফুলেল শুভেচ্ছা

০৯ ই নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:৪৭



বাংলাদেশের বিখ্যাত সমাজসেবক এবং দানবীর ব্যক্তিত্ব রায় বাহাদুর রণদাপ্রসাদ সাহা। আর. পি. সাহা নামেই তিনি সমধিক পরিচিত ছিলেন। শূন্য থেকে যাত্রা শুরু করেও প্রভূত ধনসম্পদের অধিকারী হয়েছিলেন। ধনসম্পদের সবটাই বিলিয়ে দিয়েছেন বাংলার মানুষের সেবায়। দেশের মানুষের শিক্ষা ও সেবার মানসিকতা থেকে তিনি গড়ে তোলেন কুমুদিনী হাসপাতাল, কুমুদিনী কলেজ, বাবার নামে দেবেন্দ্র কলেজ, ঠাকুরদার মায়ের নামে ভারতেশ্বরী হোমসের মতো শিক্ষা ও সেবামূলক অনেক প্রতিষ্ঠান। সন্তান প্রসবকালে প্রায় বিনা চিকিৎসায় অকালে মারা যান রনদাপ্রসাদের মা। মায়ের সেই স্মৃতি তাকে তাড়িয়ে ফিরেছে। তাই পরিণত জীবনে দুস্থ মানুষের সেবা দিতে গড়ে তুলেছেন মায়ের নামে কুমুদিনী কল্যাণ সংস্থা নামের দাতব্য প্রতিষ্ঠান। পরিবারের ভরণপোষণের খরচ ছাড়া এ প্রতিষ্ঠান থেকে তেমন কিছুই নিতেন না তিনি। ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনী কর্তৃক অপহৃত হন। পরবর্তীতে তার আর কোন খোজ পাওয়া যায় নি। সমাজকল্যাণে অকাতরে বিলিয়ে দেওয়া এ মানুষটির ১১৭তম আজ জন্মদিনি। জন্মদিনে তার জন্য রইল আমাদের অপরিসীম শ্রদ্ধা ও ফুলেল শুভেচ্ছা।



(নিজের বাড়ীর সামনে রণদাপ্রসাদ সাহা, ডান থেকে পঞ্চম)

রণদাপ্রসাদ সাহা ১৮৯৬ সালের ০৭ নভেম্বর ঢাকা জেলার সাভারের উপকন্ঠে কাছুর গ্রামে তার মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম দেবেন্দ্রনাথ সাহা পোদ্দার এবং মাতার নাম কুমুদিনী দেবী। তাঁর পৈতৃক নিবাস ছিল টাঙ্গাইল জেলার মীর্জাপুরে। পিতা-মাতার চার সন্তানের মধ্যে রণদা ছিলেন দ্বিতীয়। তার পিতা দেবেন্দ্রনাথ সাহা পোদ্দার অত্যন্ত দরিদ্র ছিলেন। তার বিশেষ কোনো স্থায়ী পেশা ছিল না। তিনি পেশাগত জীবনে দলিখ লেখার পাশাপাশি ছোটখাটো ব্যবসাও করেছেন, তবে ব্যবসার মানসিকতা তার ছিল না। মা ছিলেন গৃহিণী। মায়ের আদর বেশিদিন পাননি রণদা। অভাবের সংসারে মায়ের অসুস্থ্যতায় ডাক্তার জোটেনি; জোটেনি ওষুধ-পথ্য বা সেবাযত্ন। তখন গ্রামের হিন্দু সমাজে অশৌচের অজুহাতে সেবাযত্ন ও চিকিৎসার অভাবে মারা যাওয়া ছিল নারীদের নিয়তি। মাকে সেভাবেই মারা যেতে দেখেছেন সাত বছরের শিশু রণদাপ্রসাদ। তার বয়স যখন সাত বছর, তখন তার মাতা সন্তান প্রসবকালে ধনুষ্টংকারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। অ এর পর তার পিতা দ্বিতীয় বিবাহ করেন। বিমাতার আশ্রয়ে বহু দুঃখ-কষ্ট সহ্য করে ও অভাব-অনটনের মধ্য দিয়ে রণদা'র শৈশবকাল অতিবাহিত হয়।



(রণদাপ্রসাদ সাহার স্ত্রী কিরণবালা দেবী)

রনদাপ্রসাদ চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত মীর্জাপুর বিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেন। ১৪ বছর বয়সে বাড়ি থেকে পালিয়ে কলকাতা চলে যান। সেখানে গিয়ে জীবিকা নির্বাহের উদ্দেশ্যে মুটের কাজসহ বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত হন। এরই মধ্যে স্বদেশী আন্দোলনে যোগদান করে কয়েকবার কারাবরণ করেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের (১৯১৪-১৯১৮) সময় বেঙ্গল অ্যাম্বুলেন্স কোরে যোগ দিয়ে মেসোপটেমিয়ায় (বর্তমান ইরাক) যান। সেখানে তিনি হাসপাতালে এক অগ্নিকা-ের ঘটনায় রোগীদের জীবন বাঁচালে তাকে নবপ্রতিষ্ঠিত (১৯১৬) বেঙ্গল রেজিমেন্টে কমিশন দেওয়া হয়। যুদ্ধ শেষ হলে ১৯১৯ সালে পঞ্চম জজের সঙ্গে সাক্ষাতের আমন্ত্রণে ইংল্যান্ড সফর করেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে সেনাবাহিনী ত্যাগ করে রেলওয়ে বিভাগে টিকিট কালেক্টরের চাকরি নেন। পরে চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে সঞ্চিত অর্থ দিয়ে কয়লার ব্যবসা শুরু করেন। চার বছরে ব্যবসায়িক সাফল্যের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। এ সময়ে দ্য বেঙ্গল রিভার সার্ভিস কোম্পানি নামে নৌ-পরিবহন সংস্থা এবং নৌ-পরিবহন বীমা কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৪২ ও ১৯৪৩ সালে সরকারের খাদ্যশস্য ক্রয়ের এজেন্ট নিযুক্ত হন। ১৯৪৪ সালে নারায়ণগঞ্জে পাটের ব্যবসায় নামেন এবং জর্জ এন্ডারসনের কাছ থেকে ‘জুট প্রেসিং বিজনেস’ এবং ‘গোডাউন ফর জুট স্টোরিং’ ক্রয় করে নেন। এরপর নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ ও কুমিল্লায় ইংরেজদের মালিকানাধীন তিনটি পাওয়ার হাউস ক্রয় করেন। চামড়ার ব্যবসাও শুরু করেন এই সময়।



(বাঁ থেকে বড় মেয়ে বিজয়া, রণদাপ্রসাদ সাহা, ছোট মেয়ে জয়া ও ছেলে রবি)

এভাবেই নিজ মেধা ও পরিশ্রমের মাধ্যমে ধনকুবেরে পরিণত হন। পাশাপাশি দেশের উন্নয়ন ও মানবতার কল্যাণে প্রচুর অর্থ দান করতে থাকেন তিনি। রণদাপ্রসাদ সাহা ১৯৩৮ সালে মির্জাপুরে ২০ শয্যাবিশিষ্ট 'কুমুদিনী ডিস্পেনসারি' প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৪৪ সালে সেটিই কুমুদিনী হাসপাতাল নামে পূর্ণতা লাভ করে। ১৯৪২ সালে তাঁর প্রপিতামহী ভারতেশ্বরী দেবীর নামে 'ভারতেশ্বরী বিদ্যাপীঠ' স্থাপন করে ঐ অঞ্চলে নারীশিক্ষার সুযোগ করে দেন যা পরবর্তীতে ১৯৪৫ সালে ভারতেশ্বরী হোমস-এ রূপলাভ করে। ১৯৪৩ সালে টাঙ্গাইলে কুমুদিনী কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। পিতার নামে মানিকগঞ্জে দেবেন্দ্র কলেজ স্থাপন করেন। ১৯৪৭ সালে রণদাপ্রসাদ তার সম্পত্তি থেকে প্রাপ্ত লভ্যাংশ গরীবদের উদ্দেশ্যে ব্যয় করার জন্য কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট অব বেঙ্গল নামে অলাভজনক প্রাইভেট কোম্পানী রেজিস্টার্ড করেন। মীর্জাপুরে ডিগ্রী মহিলা কলেজ কুমুদিনী মহিলা কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৪৩-৪৪ সালে সংঘটিত পঞ্চাশের মন্বন্তরের সময় রেডক্রস সোসাইটিকে এককালীন তিন লক্ষ টাকা দান করেন এবং ক্ষুধার্তদের জন্য চার মাসব্যাপী সারাদেশে দুইশত পঞ্চাশটি লঙ্গরখানা খোলা রাখেন। এছাড়াও তিনি টাঙ্গাইলে এস. কে. হাইস্কুল ভবন নির্মাণ এবং ঢাকার কম্বাইন্ড মিলিটারি হসপিটাল (সিএমএইচ)-এর প্রসূতি বিভাগ প্রতিষ্ঠায় আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করেন।



মানবতাধর্মী কাজে সম্পৃক্ত থাকায় তৎকালীন বৃটিশ সরকার রণদাপ্রসাদ সাহাকে রায় বাহাদুর খেতাব প্রদান করেন। পরবর্তীতে ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশ সরকার মানবসেবায় অসামান্য অবদান রাখায় ও তাঁর কাজের যথাযথ স্বীকৃতিস্বরূপ তাকে স্বাধীনতা পুরস্কার (মরণোত্তর) প্রদান করেন। ব্যক্তিগত জীবনে রণদাপ্রসাদের সুযোগ্য সহধর্মিণী ছিলেন বালিয়টির জমিদারকন্যা কিরণবালা দেবী। তাদের চার সন্তানের মধ্যে বড় বিজয়া। কন্যা বিজয়া অল্প বয়সেই সংসারী হয়ে যান। দ্বিতীয় পুত্র দুর্গাপ্রসাদ। তৃতীয় সন্তান কন্যা জয়া লন্ডনের কিংস কলেজ থেকে উচ্চশিক্ষা নিয়ে দেশে ফিরে ভারতেশ্বরী হোমসের দায়িত্ব নেন। কনিষ্ঠ সন্তান পুত্র ভবানীপ্রসাদ বাবার আদর্শে গড়া দাতব্য প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব নেন।



(বিচারপতি আবু সাদত চৌধুরীর সাথে রণদাপ্রসাদ সাহা)

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানী কর্তৃপক্ষের সাথে রণদাপ্রসাদের ভাল সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসে পাকহানাদার বাহিনী রণদাপ্রসাদ ও তার ২৬ বছর বয়সী সন্তান ভবানীপ্রসাদ সাহা (রবি)-কে তুলে নিয়ে যায়। এক সপ্তাহ পর তারা বাড়ী ফিরে আসলেও পুণরায় ৭ মে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দোসর রাজাকার-আলবদররা নারায়ণগঞ্জ থেকে তাকে সপুত্রক ধরে নিয়ে যায়। এর পর থেকে আর তার কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হয় ঐদিনি পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী তাকে হত্যা করে। মৃত্যুকালে তিনি পুত্রবধূ স্মৃতি সাহা (২০০৫ সালে রোকেয়া পদকপ্রাপ্ত) ও পৌত্র রাজীবকে রেখে যান। দানবীর রণদাপ্রসাদ সাহা নেই, কিন্তু তার হাতে গড়া প্রতিষ্ঠানগুলো আজও অকাতরে মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে। মানবকল্যাণে নিবেদিত রণদাপ্রসাদ সাহা সেসবের মাঝেই বেঁচে আছেন।



(১৯৭০ সালের জন্মদিনে রণদাপ্রসাদ সাহা)

মানবকল্যাণে নিবেদিত রায় বাহাদুর রণদাপ্রসাদ সাহার ১১৭তম জন্মদিন। জন্মদিনে তার জন্য আমাদের ফুলেল শুভেছ্ছা ও গভীর শ্রদ্ধা।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:৩১

কুবের মাঝি১০৭০০৭ বলেছেন: i am glad to think that i am working one of his institute.

০৯ ই নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:২০

কোবিদ বলেছেন:
ধন্যবাদ আপনাকে কুবের মাঝি
পোস্টে মন্তব্য করার জন্য

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.