নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জ্ঞানিরা বলেন মানুষ জন্মমাত্রই মানুষ নয়,তাকে যোগ্যতা অর্জন করে তবেই মানুষ হিসেবে পরিচয় দিতে হয়।যোগ্যতা আছে কি না জানি না,হয়তো নিতান্তই মূর্খ এক বাঙ্গাল বলেই নিজেকে নির্দ্বিধায় মানুষ হিসেবে পরিচয় দিয়ে ফেলি।

কল্পদ্রুম

আমি আপনার চেয়ে আপন যে জন খুঁজি তারে আমি আপনায়

কল্পদ্রুম › বিস্তারিত পোস্টঃ

(১ম পর্ব)সিনেমা কথনঃলাগ ভেল্কি লাগ,আয়নাবাজির ভেল্কি লাগ

১২ ই অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ৯:১০

গতকাল(১০ অক্টোবার,সোমবার) অমিতাভ রেজার 'আয়নাবাজি' দেখে আসলাম।স্থান চট্টগ্রামের আলমাস সিনেমা হল।আগে থেকেই একরকম ভেবে রেখেছিলাম এরপরের লেখাটা আমার পছন্দের একটি সিনেমা নিয়ে লিখবো।বিষয়ও ঠিক ছিলো।কিন্তু সিদ্ধান্ত আপাতত স্থগিত রাখতে হলো।হল থেকে ফেরার সময় মনে হলো আগে আয়নাবাজি নিয়েই না হয় কিছু লেখা যেতে পারে।
শুরুতেই বলে রাখা ভালো এই লেখাটা ঠিক আয়নাবাজির পোস্টমর্টেম রিপোর্ট নয়।আমি সিনেমা সংশ্লিষ্ট কেউ নই।সাধারণ দর্শক।সম্পূর্ণ লেখাটা শুধুমাত্র আয়নাবাজি সিনেমা সংক্রান্ত আমার ব্যক্তিগত কিছু অভিজ্ঞতা এবং মতামত মাত্র।তাই কারো মতের সাথে না মিললে বেজার হওয়ার কোনই কারণ নেই।

এবারই প্রথম নিজ শহরের বাইরের কোন সিনেমা হলে যাওয়া হলো।আয়নাবাজির প্রথম খবর পাই ইউটিউবে;'আলু পেঁয়াজের কাব্য' এর মধ্য নিয়ে।প্রথমবার গানটা দেখেই পুরো সেট আপটা অন্যরকম লেগেছিলো।'অন্যরকম' টা ভালোর দিকে আর কি!ডাউনলোড করে বন্ধু বান্ধব কয়েকজন কে দেখাতাম।তারা চোখ মুখ কুঁচকে দেখে বলতো-'ভালো হইছে।কিন্তু দেখে তো মনে হচ্ছে আর্ট ফিল্ম।বাংলাদেশে ভালো আর্ট ফিল্ম বানাইতে পারবে না।ফাও সময় নষ্ট।'বেশিরভাগেরই পরিকল্পনা সিনেমা মুক্তি পাক।ল্যাপটপে দেখে নেওয়া যাবে।সিনেমা হলে গিয়ে কষ্ট করার মানে নেই।

সারা দেশে যখন আয়নাবাজি মুক্তি পেয়েছে চট্টগ্রামে তখনো আসেনি।অন্যান্য জায়গার মত চট্টগ্রামে একই সাথে মুক্তির দাবিতে ফেসবুকে ইভেন্ট পর্যন্ত খোলা হয়েছিলো।মজার ব্যাপার হলো মুক্তি পাওয়ার পর আমার ল্যাপটপবাদী বন্ধুরাই টিকেটের পিছনে দৌড়াদৌড়িতে এগিয়ে ছিলো।এই ছোট্ট ঘটনা প্রমাণ করে প্রচারণার দিক থেকে আয়নাবাজি কতটা সফল।বাংলাদেশ ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় ম্যাচের সময় পরিচালক অমিতাভ রেজা এবং অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরীকে মাঠে দেখা গেছে।যদিও প্রথমবারের দেখায় চঞ্চলকে চিনতে পারিনি।তিনি মুখে দাড়িগোঁফ লাগিয়ে বিরাট ভুঁড়ি নিয়ে বসে নির্বিকার ভঙ্গিতে পান চিবুচ্ছিলেন।মাত্র শ খানেক টাকা খরচ করে একই সাথে কয়েক হাজার মানুষের মাঝে সরাসরি প্রচারণার এই বুদ্ধিটা আমার কাছে ভালো লেগেছিলো।
সিনেমা হলের ভিতরে যখন ঢুকেছি তখন অধিকাংশ সিট দখল হয়ে গেছে।সিটের বাইরে চেয়ারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।সেই চেয়ারও প্রায় দখলের পথে।সিনেমা এদিকে ১০ মিনিট পার হয়ে গেছে।সিটে বসে অবশেষে যখন স্ক্রীনে নজর দিলাম।আমার চোখ তখন ছানাবড়া!আক্ষরিক অর্থেই ছানা বড়া।কারণ স্ক্রীনের আলোর যে অবস্থা তাতে ছানাবড়া চোখ ছাড়া কি ঘটছে দেখার সাধ্য নেই।তারপরেও কাহিনীর ভিতর ঢুকে যেতে খুব বেশি সময় লাগেনি। বিরতির আগ পর্যন্ত সাউন্ডের সমস্যার কারণে কিছু কথা কেমন গম গম শব্দে হারিয়ে যাচ্ছিলো।তবে কি এসব সমস্যা ঐ মুহূর্তে কেউ আমলে রেখেছে বলে মনে হয়নি।একটু পর পরই হাসিতে ফেটে পড়া মানুষগুলো আর হাততালির শব্দ বুঝিয়ে দিচ্ছিলো হলের প্রত্যেকটা মানুষ কতটা মনোযোগ আর আনন্দ নিয়ে সিনেমা দেখেছে।

এই পর্যায়ে আয়নাবাজি নিয়ে কথা বলি।সিনেমাটা এত বেশি আলোচনা পেয়েছে যে এর কাহিনী সংক্ষেপ যারা এখনো দেখেননি তাদেরও মোটামুটি জানা হয়ে গেছে।তাই এ ব্যাপারে লেখা না লেখা সমান কথা।যেহেতু নির্দিষ্ট করে আয়নাবাজির কথা লিখছি।তাই কাহিনীর কিছু ধারণা না দিলে একটা অপূর্ণতা থেকে যায়।

শারাফাত করিম আয়না জাহাজের কুকের চাকরি করেন।এর বাইরে একটা স্কুলে পড়ান।চাকরির কারণে মাঝে মাঝে তিনি উধাও হয়ে যান--কখনো তিন মাস,কখনো ছয় মাস।এটুকু সবাই জানে।যেটা কেউ জানে না সেটা হলো আয়নার একটি গোপন প্রতিভা আছে।সে যে কারো আচরণ নকল করতে পারে।একজন কন আর্টিস্ট যেরকমটা করেন।আয়নাকে সমাজের বিভিন্ন ক্ষমতাশালী ব্যক্তি ভাড়া করে।সে তাঁদের আচরণ বেশভূষা হুবহু নকল করে আইনের চোখে ধুলা দেয়।তাঁদের হয়ে জেলখানায় প্রক্সি দেয়।এইখানেই আয়নার সাথে অন্য সব অভিনেতার পার্থক্য।অভিনেতারা যেখানে মঞ্চে অভিনয় করে।আয়নার কাছে জীবনটাই সেখানে মঞ্চ।পুরো কাহিনী এগিয়ে চলে সময়ে সময়ে আয়নার বিভিন্ন চরিত্রে রূপান্তর এবং একই সাথে ব্যক্তিগত জীবনের ঘটনা নিয়ে।কাহিনীর পরিক্রমায় আয়নার লাভ ইন্টারেস্ট হৃদি,ক্রাইম রিপোর্টার সাবের,রাজনৈতিক নেতা নিজাম একে একে হাজির হয়।শেষ পর্যন্ত আয়নার পরিণতি কি সেটাই সিনেমার শেষ মুহূর্তের ক্লাইম্যাক্স।

প্রথমেই যে দিকটা আমার ভালো লেগেছে তা হলো সংলাপের সাবলীলতা।কাহিনীর জটিলতা প্রকাশের জন্য জটিল কথার মারপ্যাঁচের আশ্রয় নেওয়া হয় নাই।যেটা আমি ব্যক্তিগতভাবে পছন্দ করি।সহজ স্বাভাবিক কথার ভিতর দিয়ে কাহিনীর চরিত্রগুলো পর্দায় উপস্থিত হয়েছে।নায়ক কিংবা নায়িকার আবির্ভাবের জন্য কোন অতিনাটকীয় ঘটনার সৃষ্টি করা হয়নি।যেটা আরো একটা ভালো দিক।ছোট ছোট চরিত্রগুলো যত্নের সাথে উপস্থাপন করা হয়েছে।বিদেশি সিনেমায় এই ব্যাপারটা লক্ষ করতাম।ওরা অনেক ছোট চরিত্র অভিনয়ের জন্যেও পেশাদার বা অন্তত অভিনয় সম্পর্কে জ্ঞান আছে এরকম অভিনেতা অভিনেত্রী ব্যবহার করে।বাংলাদেশের খুব কম সিনেমাতেই পরিচালকদের আমি এমন সতর্ক হতে দেখেছি।অমিতাভ রেজার এই গুনটা আসলেই আমাকে মুগ্ধ করেছে।

মনপুরাতে চঞ্চলকে আমি দেখেছি।তার অনেক নাটক দেখে পরিবার,বন্ধুবান্ধব নিয়ে হেসে কুটিকুটি হয়েছি।সত্যি বলতে আয়নার চরিত্রে চঞ্চলের অভিনয় দেখার পর অভিনেতা হিসেবে এই মানুষটার প্রতি শ্রদ্ধা অনেক বেড়ে গেলো।বিশেষত সবশেষে তিনি(মানে আয়না) যে নেতার চরিত্র নকল করেন ঐ অংশটুকু আমার কাছে মনে হয়েছে পুরো আয়নাবাজি সিনেমার সেরা অংশ।সত্যিকারর্থে যেটা সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার সিনেমাগুলোতে দর্শককে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ধরে রাখতে প্রয়োজন ছিলো।আয়না যখন সাইকেল চালিয়ে পালিয়ে যাচ্ছিলো,জয়ের আনন্দে হাসতে হাসতে মাথার টুপিটা শূন্যে ছুড়ে দিলো।ধীর গতিতে দেখানো ঐ দৃশ্যটুকু বোধহয় বাংলা সিনেমার ইতিহাসে একটা মাইলস্টোন হয়ে থাকবে।

আমি দৃঢ় ভাবে বিশ্বাস করি বাংলা সিনেমার পরিবর্তন ঘটবে।অমিতাভ রেজা এরকম ব্যতিক্রম সিনেমা বানিয়ে একটা জুয়া খেলেছেন।এবং আমার মনে হয় এই জুয়ায় তিনি জিতেছেন।এদেশে সৃজনশীল মনের মানুষের অভাব নেই।হয়তো আয়নাবাজির চেয়েও ব্যতিক্রমী চমকপ্রদ কোন কাহিনী তাদের হাতে আছে।এই সিনেমার জনপ্রিয়তা এবং ব্যবসা সফলতা(আমি যদ্দুর জানি) দেখে হয়তো তারাও আগ্রহী হবেন প্রচলিত বাণিজ্যিক ধারার বাইরের সিনেমা বানাতে।(আমি 'বাণিজ্যিক ধারা' কথাটা লিখলাম।এর সাথে অনেকে দ্বিমত প্রকাশ করতে পারেন।তবে 'আয়নাবাজি' বাণিজ্যিক সিনেমা না কি আর্ট ফিল্ম এইটা নিয়ে কথা বলার সুযোগ আছে।)

এতক্ষণ আয়নাবাজির শুধু প্রশংসাই করলাম।কিছু নিন্দা বোধহয় করা উচিত।নাহলে আবার লোকজন সন্দেহ করতে পারে।(বিটকেল হাসির ইমো হবে)
যারা সিনেমাটা এখনো দেখেননি তাঁরা এই অংশটুকু এড়িয়ে গেলেই ভালো হবে।স্পয়লার এলার্ট!

#আয়নাবাজির কাহিনী বেশ দ্রুত গতিতে এগিয়েছে।দর্শকের রিল্যাক্সড হবার জায়গা বলতে গেলে নেই।আমাদের জন্য ব্যাপারটা সমস্যা না।তবে আমাদের মুরুব্বিদের(বেশিরভাগ) জন্য সমস্যা।আয়নাবাজি বর্তমানের ঘটনা নিয়ে বর্তমান প্রজন্মের জন্য।এখানে অতীতের সাথে কোন সম্পর্ক নেই।এইদিক থেকে আয়নাবাজি পরিবারের একটা বয়সের দর্শকশ্রেণী হারিয়েছে।

#সিনেমার শেষের দিকে ক্রাইম রিপোর্টার আয়নার অতীত সম্পর্কে যে তথ্যগুলো যোগাড় করেন তার উৎস দেখানো হয়নি।

#শেষবার আয়না যখন নেতার সাজে থানায় যায় তখন তার খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি ছিলো,সাথে গোঁফ ছিলো।সবই পাকা।নেতার অনুকরণে আর কি।কিন্তু দৃশ্যত আয়না নেতার চেয়ে বয়সে অনেক ছোট।মাশাল্লাহ তাঁর চুল দাঁড়ি সবই কুচকুচে কালো।থানায় প্রবেশের সময় সে না হয় পাকা গোঁফ,খোঁচা দাড়ি লাগিয়েছিলো।কিন্তু পরবর্তীতে যখন তার ইয়া বড় দাড়ি হলো (পাহারাদার লাবু মিয়ার মত এবং আপাতদৃষ্টিতে লাবুও একজন বৃদ্ধ) সেটা পাকলো কিভাবে!যারা সিনেমা ইতোমধ্যে দেখেছেন তাঁরা বুঝবেন ঐ সময়ে আয়নার যে অবস্থা তাতে পুনরায় নকল দাড়ি গোফ চুল যোগাড় করাটা কেমন গোজামিল যুক্তি হয়ে যায়।

#একদম শেষ দৃশ্যে আয়নাকে দেখে হৃদি হাসিমুখে ওকে মেনে নেয়।তাকে দেখে মনে হয়েছে এমনটা হবে সে আগেই জানতো।আয়নার ফিরে আসাটা পুরো কাহিনীর শেষ মুহূর্তের টুইস্ট ছিলো।আয়না নিজেই তো এরকম হবে জানতো না।তাহলে হৃদি কিভাবে জানলো যে আয়না ফিরে আসছে!এখানে তার অবাক হওয়াটাই কি স্বাভাবিক ছিলো না?

যাই হোক সব কথার শেষ কথা,আমার দেশের সিনেমা বলে না,এইসব ভুল ত্রুটি বাদ দিয়েও আয়নাবাজি আমার মত অনেকেরই সব সময়ের পছন্দের সিনেমার তালিকায় থাকবে।এটা নিশ্চিত।

মন্তব্য ১৬ টি রেটিং +৬/-০

মন্তব্য (১৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ১০:২৮

অপ্‌সরা বলেছেন: বাহ!


খুবই সুন্দর বিশ্লেষন ভাইয়া!

১২ ই অক্টোবর, ২০১৬ বিকাল ৪:১৯

কল্পদ্রুম বলেছেন: মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ আপু

২| ১২ ই অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ১১:২৬

খায়রুল আহসান বলেছেন: ছবিটা দেখেছি, ভাল লেগেছে।
আয়না যখন সাইকেল চালিয়ে পালিয়ে যাচ্ছিলো,জয়ের আনন্দে হাসতে হাসতে মাথার টুপিটা শূন্যে ছুড়ে দিলো।ধীর গতিতে দেখানো ঐ দৃশ্যটুকু বোধহয় বাংলা সিনেমার ইতিহাসে একটা মাইলস্টোন হয়ে থাকবে - ভাল বলেছেন! + +
শেষের নিন্দাটুকু তেমন জোরালো হয়নি।

১২ ই অক্টোবর, ২০১৬ বিকাল ৪:২১

কল্পদ্রুম বলেছেন: নিন্দাটুকু জোরালো না হলেই ভালো।মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

ভালো থাকবেন।

৩| ১২ ই অক্টোবর, ২০১৬ বিকাল ৫:০৩

গেম চেঞ্জার বলেছেন: দাঁড়ি মোচের ব্যাপারটা একটু বেশিই চোখে পড়ে!! আর হৃদির স্বভাবের সাথেও কেমন যেন যায় না হাসিমুখে বরণ করার ব্যাপারটা!! তবে এইগুলোকে ইগনোর করলে আয়নাবাজি একটা মাস্টার-পিস সিনেমা!!

আমিও দেখেছি, খুব ভাল সিনেমা এটা!!

১৩ ই অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১২:০০

কল্পদ্রুম বলেছেন: বাহ!তাহলে তো আপনার আর আমার পছন্দের মিল হয়েই গেলো।

মন্তব্য জানানোর জন্য ধন্যবাদ রইলো।

৪| ১২ ই অক্টোবর, ২০১৬ রাত ৯:৫৯

আমি তুমি আমরা বলেছেন: দেখেছি, চমৎকার লেগেছে। চঞ্চলের সাইকেল নিয়ে পালানোর দৃশ্যটা আসলেই বাংলা সিনেমায় একটা ম্মাইলস্টোন হয়ে থাকবে।

১৩ ই অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১২:০৩

কল্পদ্রুম বলেছেন: বাংলা সিনেমা এগিয়ে যাক সুস্থ ধারা অনুসরণ করে।

মন্তব্য জানানোর জন্য ধন্যবাদ

৫| ১৩ ই অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১:১৪

রক্তিম দিগন্ত বলেছেন:
মুভির গতি নিয়ে আমি মহাখুশি। কারণ, বাংলাদেশে থ্রিলার মুভি করতে পারবে কিনা তাই জানতাম না - আমাদের এখানে এই জেনারেশনের কিছু মানুষ ছাড়া কেউ ই থ্রিলারকে গণ্য করতে চায় না। সেইখানে কাহিনী বানানোর মত লোকই কই আর সেটাকে চিত্রায়ণ করার মত নির্দেশকই কই?
তবে, আয়নাবাজি সেই অভাবটা দূর করেছে। একটা পারফেক্ট থ্রিলারের মত এগিয়েছে। (তবুও কিন্তু বয়স্করা এটাকে মানতে পারেনি।)

যাই হোক - প্রশংসা যেগুলো করেছেন আপনি - আমিও সেগুলোর সাথে একমত - তাই কথা বাড়াচ্ছি না।

তবে, নেতার সাথে দেখা হওয়ার দৃশ্যটা, বিশেষ করে কাজটায় সম্মতি দেওয়ার সময় 'ভাত কি হাত দিয়ে খান না কাঁটাচামচ দিয়ে?' এই সংলাপটা হল মুভির বেস্ট পার্ট।

এবং দুঃখজনক ভাবে এরপরই মুভিটা লজিকে অনেক উলটপালট করে ফেলেছে।

ফিনিশিংটা ভাল হলেও - অনেকটাই প্রথম দিকের মুগ্ধতার উপর দিয়ে চলে যাওয়ার মত হয়ে গেছে।

দাঁড়ি পাকা করাটা ফ্যাক্ট না - হালকা চুন বা সেলের দেয়ালের চুনকামই যথেষ্ট এর জন্য। এখানে মূল ফ্যাক্টটা হল - দাঁড়িটা কীভাবে ঐ পাহারাদারের মতই হল। এটা অনেক বড়সর কোইনসিডেন্স। ঠিক লজিকে আসছে না।
আয়নাকে কাজ পাইয়ে দেয়া লোকটাকে কে খুন করলো এবং কেনো? কারণ,আয়নাকে যদি ফাঁসানোর জন্যই এই কাজ করে থাকে - তাহলে সেটা আয়নার উপকারেই গেছে। এমন কোইনসিডেন্স হবার কথা না। আবার, আয়না জেলে থেকে কারো সাথে সাক্ষাৎও করেনি - তাই সে যে কাউকে দিয়ে কাজটা করিয়েছে, সেটাও বলা যাচ্ছে না।

তাহলে কাজটা কে করলো? এবং তাতে সে কী উপকারটাই বা পেল? বরং, ঐ লোকটাকে বাঁচিয়ে রাখলে কিন্তু উপকারটা নেতারই হত।

তারপর, সেন্ট্রিকে সম্মোহন করানোর দৃশ্যটা ফিলোসফিক্যাল কায়দায় - কিন্তু ঐ দৃশ্যে স্ট্রং কোন ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক নেই। এটা দুঃখজনক কারণ, মুভির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দৃশ্যটাই দর্শকের মনে দাগ কাঁটবে - আর সেখানেই কোন ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর নেই?

একটা ভাল টুইস্ট হত - নেতার সাথে আয়নার এক্সচেঞ্জ হলে। বলবেন, এক্সচেঞ্জ তো হয়েছিলই। না, ওটা না - এক্সচেঞ্জের এক্সচেঞ্জের কথা বলছি। ওটা হলে বেস্ট হত কারণ, কাহিনীর সব লজিক অনুযায়ী নেতা কিন্তু এই কথাটা ফাঁস করতে পারতো না। আঁটকে যেত। আর এটা হলে আয়না কিছুদিন নেতার বেশে নেতার মত জীবনযাপন করে - একদম পুরোপুরি ভাবে সাধারণ জীবনে ফিরে আসতে পারতো কোন পিছুটান ছাড়াই। আর, মুভির শেষ দৃশ্যটা হতে পারতো নেতা ফাঁসিতে ঝুলছে - সাংবাদিক, হৃদিরা মন খারাপ করে আছে, আর আয়না ঐদিকে নেতার বেশ থেকে নিজের আসল রূপে ফিরে আসছে। [এরসাথে এক্সটেনশনাল ব্যাপারগুলো তো থাকবেই]
(যারা মুভি দেখেছেন - তারা বুঝতে পারবেন এমনটা হলে কেমন লাগতো।)

অথবা, ঐ ফিনিশিং-এই - লাবু মিয়াকে কনভিন্স করার সময় মিউজিক এবং আয়নার ফিলোসফিক্যাল কথাগুলোকে ব্যাকগ্রাউন্ডে রেখে - সে কীভাবে ঐ পরিকল্পনাটা করেছে সেটাকে ফ্ল্যাশাকারে দেখাতে পারতো। বেশি না তাতে বড়জোর সিনেমার দৈর্ঘ্য ২ মিনিট বাড়তো। এতে মোটামুটি সব লজিকের ফাঁকফোকরও চরম ভাবে মিলিয়ে যেতে পারতো।

সাংবাদিক, হৃদি চরিত্রদুটো খুব সুন্দরভাবে সূচনা করলেও - শেষে এই চরিত্রগুলো দুর্বল হয়ে গিয়েছিল।

ফিনিশিং-এ আমি যা বললাম - তা হলিউডি টাচ না - নরমাল লজিক্যাল টাচ - তাতে খরচ বা কোন কিছুর অপ্রতুলতাও হত না। কিন্তু, এরকম এটাই প্রথম হওয়ায় ঠিকমত সাহসটা পায়নি। শেষটাকে যেভাবে ফুঁটিয়ে তুলতে চেয়েছিল - আই থিংক তারা নিজেরাও সেটা পারেনি।

বাট, ইটস অ্যা স্টার্ট।

এরকম আরো কিছু হবে আশা করছি।

১৩ ই অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ৭:৫৮

কল্পদ্রুম বলেছেন: দাঁড়ির ব্যাপারে যেটা বললেন সেরকমটাও হতে পারে।আর হ্যাঁ যে লোকটা কাজ পাইয়ে দিত আয়নাকে তাকে খুন করার নেপথ্য ঘটনা দেখানো হয়নি।আমার মনে হয় কাজটা ইচ্ছা করে করা হয়েছে।এত যত্ন নিয়ে যে সিনেমা বানানো হয়েছে সেখানে গল্পের এত বড় গ্যাপ পরিচালক কিংবা কাহিনীকার লক্ষ করবেন না,তা হয় না।সিনেমার শেষের দিকে এবং আয়নার জীবনের শুরুর দিকে ঘটনাগুলো দর্শকের কাছে পরিষ্কার করা হয়নি।তারপর আয়না যে পালিয়ে গেছে এখবর তো নেতাও পাবে নিশ্চয়ই।সে নিশ্চয়ই আয়নাকে ছেড়ে দেবে না।পুলিশও তো নেতাকে ধরতে পারেনি।

মজার ব্যাপার কি জানেন,আপনি যে টুইস্টার কথা বললেন একই কথা আমিও চিন্তা করেছিলাম।এমনকি আয়নার সাথে যখন রিপোর্টার সাবের জেলে দেখা করতে গেল তখনই আমার সাথে থাকা বন্ধুকে এই কথাগুলো বলেছিলাম।যেহেতু আপনার আমার দুজনেরই একই টুইস্টের কথা মনে হয়েছে।এরকম বোধহয় আরো অনেকেই চিন্তা করেছিলেন।আর সে কারণেই সিনেমার এন্ডিং অন্যরকম করা হয়েছে।আমার মনে হয় কাহিনীর এসব মিসিং সূত্র ধরে আয়নাবাজি ২ তৈরি হতে পারে।

৬| ১৩ ই অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ১১:২১

ইছামতির তী্রে বলেছেন: দাঁড়ি মোচের ব্যাপারটা আর হৃদির হাসিমুখে বরণ করার ব্যাপারটা আমার কাছেও একটু খটকা লেগেছে। আমি চেয়েছিলাম হৃদি আয়না কে দেখে ভীষণ অবাক হবে। যাইহোক, এটুকু বাদ দিলে আয়নাবাজি একটা মাস্টার-পিস সিনেমা!! হাল আমলের সিনেমা এত গ্ল্যামারহীন হয়, এবং লোকজন দলে দলে সিনেমা দেখে হাসিমুখে-হাততালি দিতে দিতে বের হচ্ছে-এটা দুনিয়ার সকল সিনেমা কারিগরদের স্বপ্নের সিন। 'আয়নাবাজি' তাই করেছে। মনে রাখতে হবে এটা 'পথের পাচালী' যুগ নয়। যাইহোক, প্রথম শেষ শেষ অবধি দেখেও বুঝতে পারলাম না 'এরা সবাই অভিনয় করছে'। সত্যি কোন অভিনেতাই বুঝতে দেয়নি ওরা অভিনয় করছে।

১৫/১৬ বছর পর হলে গিয়ে সিনেমা দেখলাম। আমার সময় ও পয়সা উভয়েই উশুল।

২৪ শে অক্টোবর, ২০১৬ রাত ২:০৬

কল্পদ্রুম বলেছেন: ভালো লাগা ভাগাভাগি করার জন্য ধন্যবাদ।

ভালো থাকবেন।

৭| ২২ শে অক্টোবর, ২০১৬ বিকাল ৪:০২

মহা পাপী রুহান বলেছেন: হৃদির হাসিমুখে বরণ করে নেয়াটা মে বি বিশ্বাস ছিল আয়নার উপর যে সে ফিরে আসবেই।

২৪ শে অক্টোবর, ২০১৬ রাত ২:০৯

কল্পদ্রুম বলেছেন: হতে পারে।বিশ্বাসে মিলায় 'আয়না',তর্কে বহুদূর।

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

৮| ১১ ই জানুয়ারি, ২০২২ রাত ৯:৫৭

খায়রুল আহসান বলেছেন: "এই লেখাটা ঠিক আয়নাবাজির পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট নয়" - এ কথার পরেও আপনার নিখুঁত পর্যবেক্ষণগুলো চমৎকার এবং সঠিকভাবে উপস্থাপিত হয়েছে।

২৭ শে জুন, ২০২২ দুপুর ১:০৭

কল্পদ্রুম বলেছেন: পছন্দের সিনেমা এবং বিশেষত বাংলা সিনেমা নিয়ে লেখার একটা ইচ্ছে ছিলো একসময়। কিন্তু পরে আর তেমন আর লেখা হয়নি। প্রথমদিকের এই লেখা খুঁজে নিয়ে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.