নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সবার উপরে মানুষ সত্য, তার উপরে আল্লাহ! সঠিক বিচারের মালিক, সর্বশক্তিমান, মহা ক্ষমাশীল।

মোঃ ছিদ্দিকুর রহমান

আমি এক জন্ স্বাধীন চেতা মানুষ, ছাত্র জীবনে ছাত্র ইউনিয়নের সদস্য ছিলাম, কর্ম জীবনে একজন সরকারী কর্মচারী (অব:), বর্তমানে একটি বেসরকারী কোম্পানীতে হিসাব রক্ষন কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োজিত আছি।

মোঃ ছিদ্দিকুর রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

কেমন আছে গোলান মালভূমির আদিবাসীরা

২৩ শে অক্টোবর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৪০

সিরিয়ার গোলান মালভূমি এখন দখলদার ইসরাইলের পেটে। সেখানকার আদিবাসীরা বহিরাগতদের চাপে ক্রমেই কোণঠাসা হচ্ছে, যথাসাধ্য প্রতিরোধ গড়ছে আর তাকিয়ে আছে মাতৃভূমি সিরিয়ার দিকে, যে সিরিয়া নিজেই পুড়ছে গৃহযুদ্ধের আগুনে। গোলানবাসী তাহলে কোথায় যাবে? লিখেছেন ঐশী পূর্ণতা

মাজদাল শামস গ্রামটি ইসরাইল অধিকৃত গোলান মালভূমির একরকম মাঝখানে অবস্থিত। গাঁয়ের ঢালু বেয়ে নামলে চোখে পড়বে একটি সাদা ফটক। সেই ফটকটির দরজা খুললে চোখে পড়বে আরেকটি গ্রাম নেভি আভিত। কাছাকাছি দুটো গ্রাম। কিন্তু এ গাঁয়ের সাথে ও গাঁয়ের কোনো মিল নেই, বরং অমিলই বেশি। নেভি আভিত গ্রামটি এতই সাজানো-গোছানো, তার প্রতিটি বাড়ির সামনে সুসজ্জিত লন, উচ্ছ্বলিত ফোয়ারা দেখলে মনে হয় গ্রাম তো নয়, যেন একটুকরো স্বপ্ন। আল্পস পর্বতমালার স্কি রিসোর্টের সাথেই এর অনেক মিল।
কিন্তু ইসরাইল ঠিক এ কাজটিই (পড়ন : কুকাজ) করেছে। বিশ্ব জনমত উপেক্ষা এবং আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে তারা গোলানকে ইসরাইলভুক্ত করেছে এবং ১৯৮১ সালে ‘গোলান মালভূমি আইন’ও করে নিয়েছে।



গোলান কেন চাই
গোলান মালভূমির নামে ইসরাইলের জিহ্বায় পানি আসার বেশকিছু কারণও আছে। প্রথম কারণটি হলো, হেরমন পর্বত। এটির দক্ষিণাংশ পৌছে গেছে গোলান পর্যন্ত। ইহুদিরা যখন ইসরাইলে পা রাখে, তখন প্রথম যে পর্বতটি তাদের চোখে পড়ে, সেটি মাউন্ট হেরমন। এই পর্বতের সামরিক গুরুত্ব রয়েছে। এটি দখলে থাকলে ইসরাইল তার উত্তরাংশে সিরিয়ান হামলা ঠেকিয়ে দিতে পারে।
এর পরে রয়েছে পানি। গোলানে রয়েছে মিঠাপানির বিশাল ভাণ্ডার। ইসরাইলে ব্যবহৃত পানির তিন ভাগের এক ভাগই যোগান দেয় গোলান। অর্থাৎ গোলান এখন ইসরাইলের অপরিহার্য এক পানি-সরবরাহকারী।


এ প্রসঙ্গে বহু পুরনো একটি মন্তব্য উল্লেখের দাবি রাখে। ১৯১৭ সালে ‘বেলফোর ঘোষণা’কালে ইহুদি নেতা চাইম ওয়েইজমান তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড লয়ড জর্জকে লিখেছিলেন : ‘পুরো ফিলিস্তিনের ভবিষ্যত নির্ভর করছে পানি সরবরাহের ওপর সেচের জন্য পানি এবং বিদ্যুত উৎপাদনের জন্য পানি। এই পানি অবশ্যই মাউন্ট হেরমনের ঢালুদেশ (গোলান) থেকে, জর্দান থেকে এবং লিতানি নদী থেকে আসতে হবে।’


গোলানের আরব মানবাধিকার নেতা ফখরেদ্দীন তাই বলেন, ‘সিরিয়াকে গোলান ফিরিয়ে দেয়ার কথা ইসরাইল চিন্তাও করে না। নইলে ১৯৭৩ সালের যুদ্ধের পর তারা তো মিশরকে সিনাই ফিরিয়ে দিয়েছে এবং সিরিয়াকেও গোলান ফিরিয়ে দেবে বলেছিল। কিন্তু ফিরিয়ে দেবে কী, তারা এখন গোলানে একের পর এক ইহুদি আবাসিক এলাকা বানিয়ে চলেছে।’ বাস্তবিকই ইসরাইল ’৭০ দশকে ১৭টি ইহুদি আবাসিক এলাকা বানায় গোলানে, বাকিগুলো হয় ৮০ দশকে।


এ প্রসঙ্গে তেলআবিবের গবেষণা সংস্থা লেভানটাইন গ্রুপের প্রেসিডেন্ট ও ইসরাইলি নিরাপত্তা বিশ্লেষক দানিয়েল নিসমান বলেন, ‘গোলান ফিরিয়ে দেয়ার ব্যাপারে কিছু কথা যে হয়েছিল এটা সত্যি। তবে গোলান প্রত্যর্পণটা ইসরাইলিদের জন্য অতিমাত্রায় ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায়। আর গোলানে একটা বাফার জোন প্রতিষ্ঠার মূল কারণটাই হলো নিরাপত্তা। এর পরই রয়েছে পানি। দেশের বাকি অংশের পানির চাহিদা মেটাতে এরকম একটা উৎসের তো প্রয়োজন আছেই।’



গোলানে কেমন আছে ভূমিপুত্ররা
গোলানের ভূমিপুত্র অর্থাৎ আদিবাসী দ্রুজ মুসলিমদের অবস্থা সত্যিই ‘দেখার মতো’। তারা বাস করে ইসরাইলি দখলদারিত্বে। কিন্তু সর্বমুহূর্তে তারা এটাকে প্রত্যাখ্যান করে, কখনো-কখনো এর বিরুদ্ধে লড়াইও করে। কিন্তু পরিস্থিতির উন্নতি কিংবা তাদের ভাগ্য বদল যেটাই বলা হোক না কেন, সবই বহুলাংশে নির্ভর করে বৃহত্তর স্বদেশভূমি সিরিয়ার ঘটনাপ্রবাহের ওপর, যে সিরিয়া থেকে তারা বহুকাল ধরে বিচ্ছিন্ন।


সালমান ইব্রাহিমের কথাই ধরা যাক। মাজদাল শামস গ্রাম থেকে তার কৃষিখামারের দূরত্ব খুব বেশি নয়। সেখানেই সিরিয়ার সঙ্গে যুদ্ধবিরতি রেখা, ওপারে তার বিশাল ভূসম্পত্তি দেখলে যে কারোই চোখ টাটানো স্বাভাবিক। কিন্তু ইব্রাহিম সেখানে যেতে পারেন না। কেন পারেন না, গাড়ি দুর্ঘটনায় শারীরিকভাবে কিছু অক্ষম হয়ে পড়েছেন, তাই? না, তা নয়। পারেন না কারণ, যুদ্ধবিরতি রেখাটি বিদ্যুতায়িত কাঁটাতার দিয়ে চিহ্নিত।


ইব্রাহিম বলেন, ইহুদি বসতি স্থাপনকারীরা আপেল চাষ শুরু করার আগে ইসরাইল ও সিরিয়া দু’দেশে আমরাই ছিলাম আপেলের বৃহত্তম উৎপাদক। কিন্তু এখন ওরা আমাদের চাইতে তিন গুণ বেশি জমিতে চাষাবাদ করছে, প্রাপ্ত পানির সবটাই ভোগ করছে এবং আরো ভালো মানের আপেল আমাদের চাইতে কম দামে বিক্রি করছে।


ইব্রাহিমের এই বক্তব্য থেকে স্পষ্ট, গোলানের কী পরিমাণ ভূমি, পানি ও কৃষির কর্তৃত্ব বহিরাগত ইহুদিদের হাতে চলে গেছে। ওয়ার্ল্ড জায়োনিস্ট অর্গানাইজেশনের এক রিপোর্টে এর সত্যতা মেলে। এতে বলা হয়, ১৯৭৩-৭৪ সালেই স্থানীয় আরবদের চাইতে ১৭ গুণ বেশি পানি ভোগ করতো বসতি স্থাপনকারী ইহুদিরা। গোলানের স্থানীয় অধিবাসীদের মতে, বর্তমানে এর অনুপাত দাঁড়িয়েছে ৪:১।
গোলানে প্রাকৃতিক উৎস থেকে সরাসরি পানি পাওয়া যায় না। কিনতে হয় ইসরাইলি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান মেকোরত-এর কাছ থেকে। প্রতি ঘনমিটার পানির দাম স্থানীয় আরবদের দিতে হয় সাত সেন্ট। আর এই পরিমাণ পানিই ইহুদি বসতকারীরা তাদের সমবায় সমিতি মেই গোলানের মাধ্যমে কিনতে পারে আরো সস্তায়; প্রায় অর্ধেক দামে।


একই অবস্থা কৃষিপণ্যের বেলায়ও। সালমান ইব্রাহিম বলেন, প্রতি একশ’ বাক্স আপেল আমরা বিক্রি করি ১৭০ পাউন্ডে। এর মধ্যে পানি, সার ও মজুরি বাবদ চলে যায় ৮৫ থেকে একশ’ পাউন্ডের মতো। কৃষিপণ্য বিক্রি করতে গিয়ে বসতি স্থাপনকারীদের সঙ্গে কঠিন প্রতিযোগিতা করতে হয়। আসলে কৃষিকাজ করে আমাদের আর চলে না।


আসলেই তাই। এবং সে কারণেই বিপুল কৃষিজমির মালিক হয়েও ইব্রাহিমকে দিনযাপনের জন্য ট্রাক চালাতে হয়। তবে ইব্রাহিমের কথার সাথে একমত নন নিশমান। তার মতে, গোলানে যেসব ইহুদি বসতি স্থাপন করেছে, তারা গোটা ইসরাইলের মধ্যে সবচাইতে ধনী। সরকারের নানা সুযোগ-সুবিধা পেলেও তারা আসলে কর্মজীবী মানুষ। তাদের আয়-রোজগার মাঝারি, কিংবা খুব কম।
সেটা যেমনই হোক, এটা সত্য যে, ইসরাইলে ফলমূল ও শাকসবজির মোট উৎপাদনের ৩০ শতাংশই উৎপাদিত হয় গোলানে। বিপুল পরিমাণ মদও উৎপাদিত হয় সেখানে। কিন্তু ২০০৫ সাল পর্যন্ত গোলানের আরব বাসিন্দাদেরকে তাদের আপেল সরাসরি সিরিয়ায় বিক্রি করতে দেয়া হতো না। ২০১১ সালে সিরিয়ায় যুদ্ধ শুরুর পর সীমান্ত তো একেবারে ‘সিল’ করেই দেয়া হয়। এতে ফল রফতানি বলতে গেলে বন্ধ হয়ে যায়।


এ তো গেল গোলানে ইসরাইলি দখলদারিত্বের অর্থনৈতিক দিক। এর সামাজিক দিকটি আরো করুণ। এই দখলদারিত্ব বহু আরব পরিবারকে দু’ টুকরো করে দিয়েছে। ১৯৬৭ থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত কোনো-কোনো ক্ষেত্রে ভাঙ্গা পরিবারের সদস্যদের সাক্ষাতের সুযোগ মিলতো। পরে ইসরাইল নিয়ম করে দেয়, কোনো সিরিয়ান গোলানে ফিরে আসতে চাইলে আসতে পারে, তবে তা হবে ‘ওয়ান ওয়ে টিকেট।’ অর্থাৎ গোলানে ঢুকলে আর বের হতে দেয়া হবে না। সালমান ইব্রাহিমের এক ভাই দামেস্ক চলে গিয়েছিলেন। এই শর্তের বেড়াজালে দু’ ভাইয়ের আর দেখা হয় না। ইব্রাহিম বলেন, আমার নিজেকে খুব একা মনে হয়। ১৯৬৭ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত আমরা দু’ ভাইয়ের সাক্ষাৎ হয়েছে মাত্র একবার। বিশ্বাস হয়?


শুধু সালমান ইব্রাহিমের পরিবার নয়, গোলানের বেশিরভাগ পরিবারের কাহিনীই এরকম। ১৯৬৭ সালের আরব-ইসরাইল যুদ্ধে গোলান ইসরাইলের দখলে চলে যাওয়ার পর ইসরাইল সরকার সেখানকার এক লাখ ৪৬ হাজার সিরীয়কে জোরপূর্বক বাড়িভিটা থেকে উচ্ছেদ করে। এভাবেই ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় আরব পরিবারগুলো। ২০০৭ সালে ইসরাইল ও দখলীকৃত ভূখণ্ডে বসবাসরত আরবদের পারিবারিক পুনর্মিলন বন্ধ করে দেয় ইসরাইল। ফলে এমনও আছে যে, একই পরিবারের দুই অংশ কয়েক মিটার দূরে বাস করে। অথচ বছরের পর বছর তাদের মধ্যে দেখাসাক্ষাৎ নেই। আধুনিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের সুযোগও তাদের নেই।



সিরিয়ার প্রতিরোধযুদ্ধ
গোলানের আরবরা যেমন সিরিয়ার অনুগত, তেমনি সিরিয়াও সেই আনুগত্য রাখতে সদাসচেষ্ট। সিরিয়া বহু বছর ধরে স্থানীয় লোকজনকে নানাভাবে প্রণোদনা দিয়ে আসছে। যেমন, গোলানে সিরিয়াপন্থী সংগঠনে যেসব ছাত্র সক্রিয়, সিরিয়া তাদের বৃত্তি দিয়ে থাকে। গোলানের দ্রুজ কৃষকদের কাছ থেকে ইসরাইলি বাজারের চাইতে বেশি দামে আপেল কিনে নেয় সিরিয়া।


ইসরাইলও এক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকেনি। ১৯৮২ সালে তারা গোলানবাসীকে ইসরাইলি নাগরিকত্ব নেয়ার প্রস্তাব দেয়। তবে বেশিরভাগ মানুষ এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। অল্প কিছু মানুষ প্রস্তাবটি গ্রহণ করে ‘ইসরাইলি’ হয়ে যায় এবং ইসরাইল সরকারের দেয়া অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে থাকে। মূলধারার জনগোষ্ঠীর কাছে তারা ‘বেঈমান’ হিসেবে চিহ্নিত।


এ দু’টি ঘটনা থেকেই স্পষ্ট যে, গোলানবাসী তাদের সিরিয়ান পরিচয় ধরে রাখতে এবং মাতৃভূমি সিরিয়ার সাথে পুনরেকত্রিত হওয়ার জন্য লড়াই করতে কতটুকু কৃতসংকল্প। কিন্তু ২০১১ সালে সিরিয়ায় সূচিত গৃহযুদ্ধ সবকিছুকে যেন ওলটপালট করে দিয়েছে। কীভাবে, সেটা সদখি মাখত ও নাজাহ আবু জাবালের কথা থেকেই জানা যাবে।



মাখত ও নাজাহর কথা
মাখত বলেন, আমার জন্ম ১৯৬৭ সালে। ইসরাইলি দখলদারিত্ব কী জিনিস, তা আমি নিজের চোখে দেখেছি। দেখেছি বহিরাগত ইহুদিদের জন্য একের পর এক চমৎকার আবাসিক এলাকা গড়ে উঠছে। এসব এলাকার আয়তন যতই বাড়ছে, আমরা ততোই নিজেদের জমিতে কোণঠাসা হয়ে পড়ছি।


তিনি স্মরণ করেন, ‘আমরা যে সিরীয় এ কথা স্কুলে বলতে দেয়া হতো না। কেউ বলেছে তো অমনি তাকে সোজা বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হতো, অথবা থানায়। তখন আমার বাবা ও চাচা সিরিয়ান সেনাবাহিনীতে কাজ করতেন। শুধু এ কারণেই ইসরাইলি সৈন্যরা যখন-তখন আমাদের বাড়িতে ঢুকে সব তছনছ করে দিত। ঘটনাক্রমে বাবা ও চাচা দু’জনকেই ধরে জেলে নেয়ার আগ পর্যন্ত এটা চলতে থাকে।’


মাখত বলেন, ‘১৯৮২ সালে আমাদের প্রস্তাব দেয়া হয় ইসরাইলি নাগরিকত্ব নেয়ার। এটা ছিল আমাদের মধ্যে ভাঙ্গন ধরানোর একটা বড় অপচেষ্টা। এ সময় আমি আরো ১১ জনকে নিয়ে একটি গেরিলা সংগঠন গড়ে তুলি। সিরিয়ান রেসিসট্যান্ট মুভমেন্ট নামের এই সংগঠনের মূল লক্ষ্য ছিল ইসরাইলি দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে লড়াই করা।’


গঠিত হওয়ার পর মাখতের দলটি ইসরাইলি বাহিনীর বিরুদ্ধে কয়েকটি অভিযান চালায়। এতে কোনো রক্তক্ষয় ঘটেনি, তবে এর মাধ্যমে দলটির সামরিক শক্তিমত্তা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। কিন্তু ইসরাইলি গোয়েন্দারা শিগগিরই বুঝে ফেলতে সক্ষম হন এর পেছনের মানুষটি কে। ১৯৮৫ সালে গ্রেফতার হন সদখি মাখত। ২৭ বছর ইসরাইলি কারাগারে কাটিয়ে ২০১২ সালে মুক্তি পান তিনি।
এবার শোনা যাক নাজাহ আবু জাবালেল কথা। ৬৩ বছর বয়সী এই বিধবার বাড়ি মাখতের বাড়ির উল্টো দিকে। তিনি বলেন, ইসরাইলি আগ্রাসন আমাদের জীবন ও স্বপ্নকে তছনছ করে দিয়েছে। আমি চেয়েছিলাম লেখাপড়া করবো আর নিজ দেশ সিরিয়া ও স্বামীর দেশ লেবাননে ঘুরে বেড়াব। কিন্তু কী হলো, ১৭ বছর বয়সে আমার লেখাপড়া শেষ হয়ে গেল। আমি একটি স্কুলে শিক্ষিকা হয়ে যোগ দিলাম। তখন আমরা অনেকেই ভাবতাম, এসব রাষ্ট্রীয় ব্যাপার, কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই সব ঠিক হয়ে যাবে। মাঝখান থেকে ইসরাইল গোলযোগের সুযোগ নিচ্ছে।


এরই মধ্যে নাজাহর বিয়ে হয়। তার স্বামী ছিলেন কট্টর নাসেরপন্থী। এ কারণে তাকে ১৯৭০, ’৭১ ও ’৭৩ সালে গ্রেফতার করা হয়। এ অবস্থায় নাজাহ নিজ কর্তব্য স্থির করে নেন, যোগ দেন একটি গোপন সংগঠনে। সেখানে তার কাজ ছিল মাতৃভূমির পক্ষে লিফলেট লেখা, সিরিয়ার পতাকা বানানো এবং ইসরাইলি সৈন্যদের কঠিন জিজ্ঞাসাবাদের মুখেও কীভাবে অবিচল থাকা যায়, তা শিশুদের শেখানো।


ঠিক এ সময় স্কুলের চাকরিটিও হারান নাজাহ। কারণ, ইসরাইল তখন গোলানের স্কুলগুলোতে নতুন পাঠ্যক্রম চালু করেছে। তার প্রতিবাদে শুরু হয় ধর্মঘট। নাজাহ সেই ধর্মঘটে যোগ দেন। এতে জীবিকার অবলম্বনটি হারাতে হয় তাকে।


এ-ই হলো দু’ সিরীয় নারী ও পুরুষের আত্মত্যাগের কাহিনী। তাদের মধ্যে কোনো মতভেদ ছিল না। তাদের লক্ষ্য ছিল এক। অবিশ্বাস্য ঘটনা ঘটলো ২০১১ সালে; যখন সিরিয়ায় শুরু হলো গৃহযুদ্ধ। এই প্রথম দুই মুক্তিকামী মানুষের ‘দুটি পথ দুই দিকে গেল বেঁকে।’ এই গৃহযুদ্ধে মাখত সমর্থন করেন সিরিয়ার সরকার ও সেনাবাহিনীকে। বলেন, ‘আমার বিশ্বাস, প্রেসিডেন্ট আসাদই আমাদের রক্ষা করবেন। তিনি সবকিছু ঠিকঠাক করে ফেলবেন।’ অপরদিকে নাজাহ পুরোপুরি আসাদবিরোধী। তার কথা, ‘২০০৪ সালে সিরীয় জনগণের ওপর প্রেসিডেন্ট আসাদের সেনাবাহিনীর নির্যাতন আমি নিজের চোখে দেখেছি।’ একই সাথে আসাদবিরোধী গেরিলাদের ওপরও অসন্তুষ্ট নাজাহ। আসাদের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ গণঅভ্যুত্থানের অর্থহীন রক্তাক্ত সংঘাতে রূপ নেয়াটাকে মেনে নিতে পারেন না নাজাহ।


এ-ই হলো অবস্থা। একদিকে গোলানে ইসরাইলি দখলদারিত্ব আরো জোরদার হচ্ছে, অন্য দিকে সেখানকার ক্ষুদ্র ও ভঙ্গুর সিরীয় জনগোষ্ঠী তাকিয়ে আছে মাতৃভূমির দিকে, যা কিনা নিজেই ভয়াল এক গৃহযুদ্ধে জর্জরিত, ক্ষতবিক্ষত।

এই মুসলমানরা কোথায় যাবে, কেমন হবে তাদের জীবন, আমরা কি তাদের জন্য কিছুই করতে পারবো? একবার ভেবে দেখুন, ওরা তো আমাদেরই ভাই, একটু দোয়া করি আল্লাহু যেন এই অসহায় মুসলমাদের প্রতি দয়া করেন।

আমিন, সুম্মা-আমিন।।।।।।।।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে অক্টোবর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:০৬

জনাব মাহাবুব বলেছেন: হৃদয়স্পর্শি লেখা।

একসময় জালিমের পতন হবে মজলুমের জয় হবেই।

২৩ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ৮:২২

মোঃ ছিদ্দিকুর রহমান বলেছেন: হ্যা, ভাই এটাই নিয়ম, তবে দোয়া করুন, মহান আল্লাহুর কাছে। যেন তিন আমাদের প্রতি দযা করেন। আমিন।

২| ২৩ শে অক্টোবর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:১৭

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: এই মুসলমানরা কোথায় যাবে, কেমন হবে তাদের জীবন, আমরা কি তাদের জন্য কিছুই করতে পারবো? একবার ভেবে দেখুন, ওরা তো আমাদেরই ভাই, একটু দোয়া করি

আল্লাহু যেন এই অসহায় মুসলমাদের প্রতি দয়া করেন।

আমিন, সুম্মা-আমিন।।।।।।।।

২৩ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ৮:২৪

মোঃ ছিদ্দিকুর রহমান বলেছেন: হ্যাঁ, একটু দোয়া করলে হয়তো আল্লাহু কবুল করতেও পারেন। আমিন।।

৩| ২৩ শে অক্টোবর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৫৩

খেলাঘর বলেছেন:


গোলানের মানুষ যদি চায়, তারা একটা দেশ পেতে পারে, তাদের ভাবনায় সেটি নাই।

২৩ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ৮:২৬

মোঃ ছিদ্দিকুর রহমান বলেছেন: হয়তো সময় আসলে তারা ঘুরে দাড়াবে, আল্লাহ যেন তাদের প্রতি দয়া করেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.