![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি এক জন্ স্বাধীন চেতা মানুষ, ছাত্র জীবনে ছাত্র ইউনিয়নের সদস্য ছিলাম, কর্ম জীবনে একজন সরকারী কর্মচারী (অব:), বর্তমানে একটি বেসরকারী কোম্পানীতে হিসাব রক্ষন কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োজিত আছি।
তালুকদার সাহেব ক্যামন আছেন?
ভালনাই, শরীরের ব্যাথায় ঘুমাতে পারিনা। এর চাইতে মৃত্য অনেক ভাল। এমন কথা বললেন, তালুকদার সাহেব, কি রোগ কেমন রোগ কিছুই ডাক্তার সাহেবরা বলতে পারতেছেন না।
তৎকালীন বাকেরগঞ্জ জেলার নিচু এলাকার, কলাপাড়া থানায় বাড়ি তিনি একজন বেশ বড় জমিদার গোছের মানুষ, প্রায়ই তিনি ঢাকা বরিশাল যাতায়াত করেন। বেশ নাম ডাক আছে তাহার, তিনির ছেলে-মেয়েরা মোটামুটি শিক্ষিত, তার ফেমিলিতে শিক্ষার আলো বৃটিশ আমলেই প্রবেশ করেছে। তিনিই এই প্রথম কোট পড়ে বাজারে আসতেন। সবাই কোট পড়া তালুকদার সাহেব বলেই চিনতেন।
সুদর্শন পুরুষ, মাথায় বাবড়ি চুল, তালুকদার সাহেব, কেউ তার সাথে ভাল ভাবে কথা বলার সাহস পায়না। বিশাল বড় একটি কাচারি ঘর সামনে ইজি চেয়ার পাতা আছে তাতে তিনি বসে হুক্কা টানেন, কড় কড় শব্ধ হচ্ছে , এটা তাদের বাপ-দাদাদের তালুকদারী। একটি অপূর্ব সকাল, তার ছেলেরা তার চারি পাশ্বে বসে বাবার সাথে কথা বলছেন। তাহার তবিয়ৎ জানতে চাইছেন, রাশভারী লোকটা মুখে কিছুই বলছেন না। ভাব-ভংগিমায় বুঝাতে চাইছেন, তিনি অসুস্থ্য তাহার বড় ছেলে বৃটিশ সরকারী ডাক্তার, তিনি তাহাকে পরীক্ষা নিরিক্ষা করে ঔষধ লিখিয়া দিয়া অন্য ছেলেকে দিয়া তাহা আনাই সেবন করিতে লাগলেন।
কিছু দিন সেবন করার পর তিনি একান্তই বিরক্ত হইয়া, তাহার ডাক্তার ছেলেকে ডেকে পাঠালেন, তুমি কিসের ডাক্তার? তোমার চাইতে ভাল ডাক্তার আছে কিনা তিনি জানতে চাইলেন। ছেলে নিতান্তাই অনুপায় হইয়া বললেন, বাবা আমি আপনাকে অনেক বড় ডাক্তার দেখাবার ব্যবস্থা করিতেছি। বলিয়া তাহাকে জেলা শহরের ডাক্তারের কাছে নিয়া গেলেন, তাহারা কোন রোগের কুল-কিনারা না করিতে পারিয়া, তাহাকে, রাজধানী শহরে পাঠালেন, সেখানে তাহার বেশ দিন চিকিৎসা হইল। অনেক পরীক্ষা-নিরিক্ষা করিয়া তাহাকে চিকিৎসা প্রদান করা হলো। তিনি যতক্ষন ঔষধ সেবন করেন ততক্ষনই সুস্থ থাকেন, তার পর আবার একই রকম উপসর্গ তাহার শরীরে উপস্থিত হন।
এক পর্যায় তাহার বড় ছেলের কথায় তাহাকে ভারত বর্ষের বড় চিকিৎসালয় ভর্তি করা হলো, এবং চিকিৎসা শুরু হলো, এক নাগাড়ে ৮ বৎসার যাবৎ চিকিৎসা করার পর তিনিকে সেখান কার ডাক্তার সাহেবরা নিরুপায় হইয়া ফিরাইয়া দিলেন। এরকমই মন্তব্য করা হলো যে, তিনি আর মাত্র ১ মাস জীবিত থাকবেন, তাহার মনে যে ধরনের আশা আকাংক্ষা আছে, বা তিনি যে ধরনের খাবার খাইতে চান, সে রকম যেন তাহাকে খাইতে দেয়া হয়। সকল সন্তানদের মন খারাপ তাহার বাবাকে আর বাচাতে পারলো না।
তালুকদার সাহেব যে, আর বাচিবেন না, তাহা তিনিও অনুমান করিতে পারিতেছেন, কারন ডাক্তারদের আচার - আচারন এমনই হইয়াছে যে, তাহাদের দ্বারা আর কোন কিছুই করার না্ই। এটা তিনি বেশ ভালভাবেই বুঝিতে পারিতেছেন। এতদিন তাহাকে যতই স্বাস্থ্যবান দেখাইতেছিল কিন্ত আজ আর সেরকম দেখাইতেছে না। কারন তাহার মনবল ভেঙ্গে গিয়াছে।
ইতিমধ্যে তাহার স্ত্রীর বিয়োগ ঘটিয়াছে, মা হারা একটি পুত্র সন্তান ছিল। তাহাকে মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়াছিল। সেই একমাত্র তালবে আলিম সন্তান, অনেক সন্তানদের মধ্যে, একটি মাত্র সন্তান মাদ্রাসার ছাত্র। তাহার বাবার অসুস্থতার জন্য একজন সন্তান মাত্র সর্বক্ষণ বিলক্ষন চিন্তা করিতেছেনএবং মহান আল্লাহু তায়ালার দরবারে দোয়া করিতেছেন, যাহা তালুকদার সাহেব ঠায় বুঝিতেছেণ। প্রায়ই আফসোষ করিতেছেন, যদি তিনি তাহার সব ছেলে মেয়েকে তিনি মাদ্রাসায় পড়াইতেন তাহা হইলে না জানি কতই না ভাল হইতো। তালুকদার সাহেব যখন চিকিৎসায় ব্যর্থ হইয়া বিফল মনরতে তাহার গ্রামে ফিরিল। তখন সবাই যে যার মত মন্তব্য করিতে লাগিলেন। এমন কি তাহার একান্ত আপন জনও তাহাকে তাদের মনের দিক থেকে দুরে সরাই দিল, তাহা বুঝিতে তালুকদার সাহেবের একটুও বাকী থাকলি না। এই পৃথিবীতে এবং আখেরাতে তাহার কি আছে সে তাহা হাড়ে হাড়ে টের পাইতেছেন। এই পৃথিবীতে তিনি যে সবার কাছে একটি বোঝা মাত্র তাহা টের পাইতে তার আর বাকী থাকিল না।
তিনি চিকিৎসা ফেরৎ রুগি, বর্তমানে স্ত্রী বিয়োগ, তাই তিনি আর অন্ধর মহলে আর প্রবেশ করিল না, তাহাকে কেহ আগের মত সমিহ করেন না। রুটিন মাফিক তাহার খাবার কাচারী ঘরে আসতে লাগলো, তাহার একমাত্র সাথি তাহার ছোট ছেলে মাদ্রাসার ছাত্রটিই আছে, তিনিই তাকে সময় দেয়, তাহার পাশ্বে বসে কোরআন তেলায়ত করেন এবং তাহার সেবা করেন। মহান রাব্বুল আলামীনের দরবারে বাবার জন্য দোয়া করার একমাত্র ব্যক্তিটিই এই তালবে-আলিম ছেলেটি, তাহা তিনি নিজ চোখেই দেখিতে পাইলেন।
একদিন, তাহার ছোট ছেলেকে তিনি বললেন, "আবদুর রশিদ, আমাকে একটু ঘরের বাহিরে নিয়া যাও আমি আর শুইয়া থাকিতে পারিতেছি না।" রীতিমত তিনি প্রায়ই শরীরের ব্যাথায় চিৎকার করিতেছেন।
শত হোক বাবাতো, বহুত কষ্টে তাহাকে ধরিয়া কাচারী ঘরের বাহিরে নিয়া আসলেন, ঘাসের উপরেই বসিয়া পরিলেন, যেই তালুকদার সাহেব ইজি চেয়ার ছাড়া বসিতেন না, সেই তালুকদার সাহেব আজ ঘাসের উপরে বসিয়া তাহার জীবনের শেষ প্রহরগুলোই গুনিতেছেন।
প্রতিবেশীরা তাহাকে কটাক্ষ করিতে ছাড়ছেন না, তিনি কাহাকে কাহাকে ঠকাইয়াছেন, কাহার কি ক্ষতি করিয়াছেন, তাহার হিসাব নিকাশ করিতে ব্যস্ত এবং সেই সকল অপরাধের বিপরিতে আল্লাহু তায়ালা তাহাকে এই কঠিন রোগ প্রদান করিয়াছেন। এমন মন্তব্য করিতে কেহই ছাড়িতেছেন না। হায়রে নিয়তি, এই কি তোমার বিধান, যাহার প্রতি এত আদর ভালবাসা, যাহাকে না দেখিলে একমুহুরতো সময় কাটতো না আজ সেই রতন আজ ধুলাই গড়াইতেছে। তালুকদার সাহেব পৃথিবী নামক কথাটা ভূলিতেই বেশী আশস্থ বোধ করিতেছেন। তাহার একমাত্র সাথি, এক মাত্র সন্তান মাদ্রাসা তালবে আলিমই সেবায় ব্যস্থ অন্য সন্তানরা যে যার কাজে ব্যস্থ কেহ তাহার তালুকদারী, কেহ তাহার নাম জশ সঠিক রাখিবার জন্য যেন ঠিকাদারী নিয়াছেন।
দক্ষিন মুখি একটি খোলা জায়গা তাহাতে দুই বাপ-বেটা বসিয়া আছে, ছেলে তাহার বাবার পা টিপিতেছেন, এখানে না ওখানে, ওখানে না ওখানে, এমনি করিয়া বলিতেছেন। আবার বিরক্ত হইয়া বলিতেছেন, দরকার নাই মৃতুই একমাত্র আমার বন্ধু, দরকার নাই তুই দুরে যা, কিন্তু তাহার ছেলে নাছর বান্ধা দুরে যায় না, মাঝে মাঝে কান্না করে, আবার খুব জোড়ে নিঃশ্বাস ছাড়েন। রাস্তা দিয়া একটি বালক, আখ চিবুতে চিবুতে যাচ্ছে, তিনি তাহার ছেলেকে বলিলেন। আবদুর রশীদ আমার ঐ আখ ক্ষেতে ইচ্ছে করেন, শেষ ইচ্ছে বলে একটি কথা, সে তার তৃতীয় ভাইকে বললেন। তার বাবা আখ খাইতে চান, শোনা মাত্র তাহার তৃতীয় ভাই কলাপাড়া বাজারে গেলেন, সে দিন ছিল মঙ্গলবার সাড়া বাজার তন্ন তন্ন করিয়া খুজিয়া একটি আখও পাওয়া গেল না। যখন তিনি বাজার থেকে ফিরতে ছিল, এমন সময় দেখলো, তাদেরই পাশ্বের গ্রামের একবৃদ্ধ তিন টি আখ আটি বেধে বাজারে নিয়া যাচ্ছে, তিনি তাহার দামের কথা না বলিয়া তাহার আখ তিনটি চাহিলেন, বৃদ্ধা তাহার আথের দাম তিন টাকা হাকিলেন।এখানে বলা প্রয়োজন তৎকালীন সময়ে এক সের চালের দাম ছিল মাত্র চার আনা, মানে কি , প্রতি টাকায় ৪ সের চাল পাওয়া যেত। বাবা বলে একটা কথা। এতেই তালূকদারের ছেলে রাজি হইয়া তাহা কিনিয়া লইয়া বাড়ী ফিরিলেন।
আবদুর রশীদের দায়িত্ব হইল তাহার বাবার সেবা করা, তাই তিনি বাবার জন্য ক্রয়কৃত জিনিস একটু যত্ন করিতে মোটেই দ্বিধা করিতেন না।, আখ গুলো অতি যত্ন করিয়া দের হাত অন্তর ছেও দিয়া, খন্ড করিয়া আলমারিতে রাখিলেন। তালূকদার সাহেব একখানি আখ চিবুতে লাগলেন, যে মানুষ ভাল ভাবে খাবার খান না তিনি আজ আস্ত আখ ছিলাইয়া খাইতেছেন, সবাই একটু বিস্ময় প্রকাশ করিতে ছাড়লেন না।
পরের দিন, ঘুম থেকে সবার আগেই উঠেছেন। এলাকার সবাই জানের তিনি আর দুই দিন বাচবেন, তার পর হয়তো তিনি মারা যাবেন, ছেলেরা তাদের বাবা মারা গেলে কি কি করতে হবে, তাহা তাহাদের হিসাব করিয়া রাখিয়াছেন। তিনি এখানকার তালূকদার তাই তাহার মৃতুর ৪ দিন পর, একটি বড় খাবারের ব্যবস্থা করিতে হইবে। তালুকদার সাহেব নিজের চোখেই দেখিতেছে। তাহার মৃতুর পরে, তাহার আত্মার সন্তস্টির জন্য কি করবেন। যাই হোক এটি একটি সামাজিক নিয়ম নীতি। তাই আপত্তি কোথায়। চলছে বড় করে খাবারের আয়োজন। আজকে আর কেউ তাকে ধরে ধরে হাটাচ্ছে না। আজ আবদুর রশীদ তাহার সাথে সাথে হাটছে তবে তাকে ধরে নয়, তার কাছে কাছে। তালুকদার সাহেবের হাতে একটি বেতের লাঠি, পড়নে সাদা লুঙ্গি, পানজাবি, কাঁধে একটি কাশমিরি চাদর ভাজ করা, কিছু সময় হাটার পর, আবার কাচারি ঘরের কাছে এসে তিনি ডাকলেন "আবদুর রশীদ আমার আখ কি আরো আছে?" ছেলে তারাতারি তার বাবাকে আখ এনে দিলেন, তালুকদার সাহেব আবার চিবুতে লাগলেন, এক সময় তিনি তিন খানি আখ খেয়ে ফেললেন। আবার বললেন, আবদুর রশীদ "আখ" কি আর আছে? তার ছোট ছেলে জবাব দিল "না বাবা আখ আর নাই"। আজ দুই দিন গত হলো আজকে তার চির বিদায় হয়ে যাবার কথা , কিন্তু তিনি আজ বেশ সুস্থ অবস্থাতেই ঘুম থেকে উঠলেন, ছেলের সাথে নামাজ আদায় করলেন। ছেলে কেঁদে কেঁদে আল্লাহুর তায়ালার কাছে তার রোগের আরগ্য লাভের জন্য আল্লাহুর দরবারে দোয়া করলেন। বাবা তার ছেলের চোখের পানি মুছাইয়া দিয়া বলিল, আবদুর রশীদ, সবাইকে মরিতে হবে এটা যেমন সত্য তাই আমি যে মারা যাব এটাও ঠিক তেমনি সত্য। তাই বাবা আমার জন্য কান্নাকাটি করিও না, তার চাইতে তোমার মার জন্য দোয়া কর। এই বলিয়া, তিনি তার ছেলে আবদুর রশীদ কে বললো "বাবা রশিদ আজ একটু বাজারে জাইতে আমার মন চাইতেছে।"
অসুস্থ্য বাবা বাজারে যাবেন, সবাই একটু হতবাক প্রায়। কেউ বা একটু হায় হুতাস করিতেছেন কি প্রয়োজন বুড় মানুষ বাজারে যাবেন। কিন্তু তালুকদার আগে যখন কথা বলতেন কেউ তাহার কথার দ্বিমত করিবার ক্ষমতা রাখতেন না। আজও সেই রুপ মনে হইল, কথার মধ্যে একধরনের তালুকদারী ভাব নিহিত রহিয়াছে, তাহার শরীরের তেজ ভাবটা ফিরিয়া আসিয়াছে, তাহা বুঝিতে কাহারও বাকি রহিল না। চাকর-বাকরা তাহার দিকে দৌড়াইয়া আসিয়াছে। বাদীরা তাহার পোষাক আষাক আনিয়া দিল, কাজের লোকের বড় সাহেব বড় সাহেব বলিয়া তাহাদের মুখে রব তুলিল।
দুই দিন আগেও যাহার কোন আদর যত্ন ছিল না, আজ তাহাকে সবাই ভয় পাইতেছেন।কি আশ্চর্য্য আজব এই দুনিয়া এবং আজব তার এই নিয়ম, সুধুই বিমোহিত নয় একদম থেমে যাবার পালা বটে।
ঘোড়ার গাড়ী তৈরি করিয়া চাকর বলিল, হুজুর টাংগা তৈরি আছে, আপনার অপেক্ষায়। তিনি তালবে-আলিমকে সাথে নিয়া যথা নিয়মে বাজারের দিকে রওয়ানা হইয়াছেণ। পূর্ব দিকে ফিরিতেই তিনি অনেক গাছের খন্ড দেখিতে পা্ইলেন, তিনি চাকরকে জিজ্ঞাসা করিলেন "আবদুল, এই গুলো কেন, এত গাছের গুড়ি এক জায়গায় করেছো কেন? চাকর অকপটে উত্তর দিলেন, হুজুর জিয়াফত, বলিয়া জিহ্বাহ কামড় কাটিল, কিন্তু তালুকদার সাহেব মনের অজান্তেই বলে চললেন, বুঝিতে পারিয়াছি, আমার মৃতুর পর খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে, তাহার ছোট্ট ছেলেটি আবার হাউ মাউ করিয়া কাদিয়া ফেলিলেন।
ঘোড়ার গাড়ী অর্থাৎ টাংগা হইতে নামিয়া যথা রীতি সদরের ডাক্তারের সাথে একবার দেখা করিয়া, থানায় দেখা করিয়া যথা সম্ভব বাজার করিয়া সাথে নিয়া ফিরিবেন। কিন্তু ডাক্তার সাহেব তাহাকে দেখা মাত্রই তাহার তবিয়াৎ জানতে চাইলেন এবং হাত ধরিয়া নাড়ির গতি পরিক্ষা করিতে লাগিলেন। ডাক্তার রীতিমত তাহার নাড়ির গতি লক্ষ করিয়া আশ্চর্য্য হয়ে, চক্ষু পরিক্ষা করিতে ছাড়িলেন না। ডাক্তারের চিকিৎসা বিদ্যা যাহা ছিল সবই নিরিক্ষা করিলেন। এক পর্যায় ডাক্তার সাহেব অভাক বিম্ময় প্রকাশ করিয়া জানতে চাইলেন আপনী ভাল আছেন তো? আপনার শরীরটা এখন কেমন লাগছে। তিনি বলিলেন, "ভালই তো, আগের তুলনায় ভালই লাগছে। তবে আপনাদের ঔষধ খাচ্ছি না, তাই ভাল আছি।" ডাক্তারের চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল। তিনি তালুকদার সাহেবের বড় ছেলে ডাক্তার সাহেবের সাথে দেখা করার ইচ্ছা পোষন করিলেল।
পরের দিন সকালে সদরের ডাক্তার তাহার বাড়িতে বিলক্ষন উপস্থিত হইয়া তাহার তবিয়াৎ জানিতে চাহিলেন। তিনি যথা রীতি উত্তর দিল, "আমি ভাল আছি।"
তাহার ছেলেদের কে ডাকিয়া কাচারি ঘরে আনিলেন, কাচারী ঘর লোকে পরিপূর্ন তিনি তাহার ছেলেদেরকে আদেশ করিলেন, আজ থেকে ৪র্থ দিন আমার নামে জিয়াফত হবে, লোকজন দাওয়াত দাও। ছেলেরা অভাক, তালুকদার সাহেব কি বলিতেছেন। তিনি মারা যাবার পর তাহার নামে খাবার হবে, কিন্তু তিনি জীবিত থাকতেই খাবার হবে। মাওলানা সাহেব ডেকে পাঠালেন, জিজ্ঞাসা করিলেন, আমি জীবিত থাকা অবস্থায় জিয়াফত খাওয়াতে পারবে কিনা? মাওলা সাহেব উত্তর দিল হ্যাঁ , তা পারা যাবে এতে কোন ধরা বাধা নিয়ম নীতি না্ই। মানুষ খাবে এবং আপনার মাগফেরাতের জন্য দোয়া করবে, এটাই তো কথা।
জীবনে বহুবার মৃত্য মানুষের নামে জিয়াফত হয়েছে, দাওয়াত পেয়েছি, গিয়া খেয়েছি, কিন্তু জীবিত মানুষের নামে এই প্রথম জিয়াফত হবে, অভাক তো হতেই হবে। আমার বাবা বললেন, চলো তালুকদারের জ্যান্ত জিয়াফত খাইয়া আসি। বাবার সাথে গেলাম নৌকায় করিয়া, সারি সারি লোক বসে আছে, তালুকদার সাহেব সবার সাথে দেখা করেন এবং দোয়া চাইতেছেন। এক পর্যায় মাইকের মাধ্যমে দোয়া চাইলেন। আমিও এববার তাকে দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। কত মানুষ খেয়েছেন, হিসেব করা খুবই কঠিন হবে, তবে বাবাকে জিজ্ঞাসা করা হইলে তিনি আমাকে জানালেন, হয়তো লাক্ষ খানেক হবে, বা বেশী কম, খাওয়া শেষ হলে আমরা আবার নৌকায় চড়িলাম, কখন যে ঘুমাইয়া গিয়াছি, জানি না, তবে সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি আমরা আমাদের কাচারী ঘরের শুয়ে আছি।
রোগ তালুকদার সাহেবকে ছাড়িলেও ডাক্তার সাহেব তালুকদার সাহেবের পিছু ছাড়িলেন না। তিনি তালুকদার সাহেবের সুস্থ্যতার কারন জানিতে চেষ্টা আর কোন কমতি থাকিল না। তিনি তাহাকে ঢাকার ডাক্তার দিয়া আবার পরীক্ষা করাইলেন কিন্তু তাহার কোন রোগ আছে, বা ছিল এমন কোন আলামত খুজিয়া পাইলেন না। তাহারা নিতান্তই চিন্তা্য় পরিয়া গেলেন এবং তাহাদের সর্বময় পরীক্ষা করাইতে চেষ্টা করিলেন, তাহাদের উৎসুক আরো বাড়ীয়া গেল, যাহার ক্যান্সার হইয়াছে নিশ্চিত হইয়া চিকিৎসা দেওয়া হইয়াছে, এবং মৃত্য নিশ্চিত সত্যেও আজ তিনি সম্পূর্ন সুস্থ্য হইয়া সবার সমনে হাটিয়া বেড়াতেছেন এযেন সিদ্ধ ধানে চাড়া গজানোর মত কথা।
ভারত বর্ষে সেই সেরা ডাক্তারদের নিকট নিয়া যাওয়া হলো, তাহারা সব রকমের পরীক্ষা নিরীক্ষা করিয়া দেখিলেন, তাহারাও নিশ্চিত হইলেন যে, তালুকদার সাহেবের কোন রোগ নাই। কেমনে সারিল, কেমনে ভাল হইল, একটাই তাহাদের খোজার বিষয় হইয়া দেখাদিল।
ডাক্তার সাহেবরা, তালুকদার সাহেবের খাবার খাবার দাবার আচার আচরন খুজিতে লাগিলেন। তাহারা এক পর্যায় আখের সন্ধান করিতে চাহিলেন, তাহারা বুঝিতে পারিলেন যে, এই আখের পিছনে কোন রহস্য নিহিত রহিয়াছে।
সেরা ডাক্তার সাহেবরা আসিলেন এই আখের সন্ধান করিতে কিন্তু আখের কোন সন্ধান পাওয়া গেল না। ডাক্তার সাহেবরা হাল ছাড়িলেন না। এই আখ কোন বাড়ীতে জন্ম নিয়াছে তাহা খোজ করিতে বাহির হইলেন। অনেক খোজা খুজি করার পর আখের ঝাড়ের সন্ধান পাওয়া গেল। ডাক্তার সাহেবরা আখের ঝাড়কে খুড়তে নির্দেশ দিলেন, ঠিক যখন কোদাল দিয়া তাহা খোড়া হইয়, অমনি ফোস ফোস করিয়া পদ্ম গোখরা সাপ বাহির হইয়া আসিল। তখন ডাক্তার সাহেবরা বলিল, আর দরকার নাই আমাদের হিসাব মিলিয়া গিয়াছে। আমরা এখন হিসাব করিতে পারিয়াছি। তালুকদার সাহেব কেমন করিয়া সুস্থ্য হইয়াছেন। তাহারা বুঝাইতে চেষ্টা করিলেন, আখের ঝাড়ের নিচে এই পদ্ম গোখরা সাপের বিষ আখের শিকর টেনে খাইয়া বড় হইয়াছে, আর সেই বিষ খেয়ে তালুকদার সাহেব সুস্থ্য হইয়াছেন। এটা ডাক্তারদের সিদ্ধান্ত, কিন্তু তাহার একমাত্র তালবে-আলেম ছেলের সিদ্ধান্ত হইল, "আল্লাহু আমার বাবাকে বাচাইয়াছেন।"
রাখে আল্লাহু মারে কে, আর মারে আল্লাহু রাখে কে। আল্লাহু যাকে বাচাতে চায় তাকে যেকোন উছিলা দিয়া বাচাতে পারেন, যা মানুষ কল্পনাও করতে পারে না। আবার সমন্য ব্যাপারে মানুষ মারা যায়, এটা একমাত্র আল্লাহুর ইচ্ছায় হয়। হায়ত ও মৌয়াতের ফয়সালা একমাত্র আল্লাহুর হাতে।
©somewhere in net ltd.