![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি এক জন্ স্বাধীন চেতা মানুষ, ছাত্র জীবনে ছাত্র ইউনিয়নের সদস্য ছিলাম, কর্ম জীবনে একজন সরকারী কর্মচারী (অব:), বর্তমানে একটি বেসরকারী কোম্পানীতে হিসাব রক্ষন কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োজিত আছি।
মুক্তি যুদ্ধ শেষ হলো, সারা দেশে একটি হা হা কার শব্ধ দেখতে পেলাম, ১৯৭২ সাল, আমার বাড়ী কড়াই বাড়ীয়া গ্রামের পূর্ব দিকে এবং জনাব আবদুস সোবাহান মুন্সির বাড়ীটা পশ্চিম দিকে, তাই আমরা সবাই ঐ গ্রামকে বলে থাকি পশ্চিম কান্দা, আমরা বরিশালের দক্ষিন সিমান্তের লোকরা গ্রামকে কান্দা বলি।
যদিও আমি একান্তই খাটি আঞ্চিলিক ভাষায় বলে ফেলেছি, হয়তো অনেকই ভাবতে পারে এ আমার কেমন লেখা? হ্যাঁ পাঠক এই টাই আমাদের একান্ত মায়াময়ি ভাষা।
হঠাৎ আমার বড় ভাই বলে চলো পশ্চিম কান্দা যাই, কেন রাঙগা মিয়া বাড়ি যাই, যেই কথা সেই কাজ, আমরা সবাই মিলে চললাম। সেখানে যাইয়া দেখতে পেলাম সবাই সারি করে বসে গেছে। বড় ভাই বললো, বস, সবাই যখন বসছে, আমরাও বসি। কলা পাতা দিতে আরম্ভ করলো। "খেজুর রসের সিরনি" বেশ খেতে সুসাদ্ধু । এখন মোনাজাত হবে। কি জন্য মোনাজাত তাহা বুঝতে পারলাম, যখন শুনলাম যে, জনাব সোবাহন মুন্সি যেন মেট্রিক পরীক্ষায় পাশ করতে পারেন।
তিনি পরীক্ষার হলে ডুকলে, এবং পরীক্ষাও দিযা বের হলেন এবং পাশ ও করলেন, কিন্তু তাহার নিজের মেয়ে তৃতীয় শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় তাকে ইংরেজি পড়াইতে পারতেছেন না দেখে আমি একটু চিন্তিত হলাম। এটা বিভাবে সম্ভব হয় না? লোকটা তো মেট্রিক পাশ।
আমার বন্দু, শাহজাহান ফরাজীর সাথে তর্কে জড়াইয়া গেলাম। যে তিনি যে মেট্রিক পরীক্ষা দিয়াছেন তা তো আমি নিজেই স্বাক্ষী, কারন পরীক্ষার আগে "সিরনি" খাওয়াইয়া পরীক্ষা দিয়াছেন। তিনি আমাকে বুঝাতে চেষ্টা করলেন এবং বললেন, সে ঠিক আছে "এটা তো সিরনির মেট্রিক" আসলে তিনি ফাইপ পাশেরও যোগ্য না।
আসলেই চিন্তিত হলাম।তার পর আমার বন্ধু আমাকে বোঝাতে চেষ্টা করলেন, যে এই লোকটা বিয়ে করার জন্য মেট্রিক পরীক্ষা দিয়াছেন। আর ঐ ১৯৭২ সালে যে লোক হলে একবার ডুকছে, সেই মেট্রিক পাশ, এই পাশ শুধুই পাশ, এখানে কোন দিক নাই। এখানে লেখা পড়ার কোন ধরকার হয় নাই।
আমি যেই ক্লাশে পড়ি সেই ক্লাশেরই ছাত্র আমার বন্ধ, তাকেই অংক কষাতে আমার কোন রকম বেগ পেতে আমার হয় না। বিদ্যালয়ে যখন ১ বা ২ প্রশ্নমালা অংক কষায় তখন আমি হয়তো বইয়ের প্রায় শেষ করে ফেলি। এটা আমার ছোট বেলা থেকেই অভ্যস হয়ে গেছে। নিজের লেখা পড়া করার তাগিদে দুই একজনকে পড়াই তাতে কিছু টাকা আসে এবং আমার লেখা পড়াটা চলে যায়। মুন্সি বাড়ীর সামনে দিয়া বিদ্যালয়ে যেতে হয়। মুন্সি বাড়ী একজন মাষ্টার রাখা হয় স্থায়ীভাবে তার পরেও জনাব আবদুছ সোবাহান মুন্সি আমাকে বললেন, তুমি কি আমার বাচ্চাকে একটু অংক দেখাতে পারবে? তোমাকে মাসে ৩০ টাকা দিব। আমি রাজি হয়ে গেলাম।মেয়েটি তখন ৪র্থ শ্রেণীতে পড়ে, তাকে অংক এবং ইংরেজি পড়াতে লাগলাম।তিন মাসে অংক বইটি শেষ করে, তাকে অংকে পাকা মাষ্টার বানাইয়া ফালাইলাম।
আমাকে এক সময় চলে আসতে হলো, জীবন ও জিবিকার তাগিদে শহরে। জীবনের যুদ্ধে আমি কখনও পরাজয় বরন করিনি।আমি যখন মেট্রিক পাশ করেছি, তখন শতকরা ২৬ জন পাশ করেছেন। কিন্তু সেই ৭২ সালে ১০০% পাশ করেছেন। তার মানে পরীক্ষার হল পর্যন্ত পৌছা মাত্রই পাশ হয়ে গেছে।এটা ছিল মুক্তিযুদ্ধের বদৌলতে তারা লেখা পড়া করতে না পারার করনে সবাইকে দয়া করে পাশ করাই দিয়াছেণ।
আমি দেখেছি ৯ মাস যুদ্ধ ছিল, কেউ লেখা পড়া করতে পারে নাই। এটা তারই ফসল কিন্তু তাতে শিক্ষার মান যে কতটা নিচে নেমে গিয়াছে তা কিন্তু কেউ ভাবেন নি। তবু মেনে নিলাম, একজন মেট্রিক পাশ বাবা তার শিশু সন্তানকে পড়াতে পারছেন না, এটা তেমন কষ্টের বা বেদনার নয়।কারন কিছু পেতে হলে কিছু হারাতে হয়।
একদিন তাহার নিজের জমি মাপতে আরম্ব করলেন, তিনি হিসাব করে নিলেন, তাতে অনেক ভুল তার ভাবা তাকে গাল মন্ধ করলেন, কিন্তু আমাকে হিসাবটা কষার জন্য বলা মাত্রই আমি তাতে বললাম, এখানে জমি ১২ কাঠা, তিনি রাগে লাল হয়ে গেলেন। এবং তাহার সেই পুত্রকে গাল মন্ধ করতে লাগলেন। "সিরনির মেট্রিক পাশ" কি আর হিসাব করতে পারবেন। তিনি হয় তো তার সেই বদনাম ঘুচাতে পারছিলেন, আবার তিনি লেখা পড়া করে, মেটিৃক পাশ করে, এখন তিনি ভারই হিসাব নিকাশ করতে পারেন, মাঝে মাঝে জমির "আমিনী" হিসাবও কষেন।জমির হিসাবকে আমিনী হিসাব বলে।
বর্তমান সমাজ ব্যবস্থা তার তুলনায় অনেক অনেক গুন বেশী ভাল। আজ আমরা সভ্যতার চড়ম শিখড়ে, শিক্ষা ব্যবস্থা অনেক উন্নত হয়েছে। আর্ন্তজাতীক মানের লেখা পড়ার চেষ্টায় আমরা মশগুল। প্রায়ই দেখা যায় ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যায়। আজকে যদি এমন কোন ঘটনা আমাদের কে প্রভাবিত করে তা হলে কিন্তু একটি প্রশ্ন থেকেই যাবে এতে কোন সন্দেহ নাই।আসলে আমরা কতটা শিক্ষিত হতে পেরেছি, না সেই "সিরনির যুগেই রয়ে গেলাম"।
গত কয়েক দিন আগে, টিভি ও পেপারে দেখে একটু ভাবতেছিলাম, আসলে কি ঘটছে। একটা কোমল মতি ছেলে, দুই পেপারে পরীক্ষা দেওয়ার পর সে তার মায়ের সাথে জীবন জীবিকার তাগিদে গামেন্টস ফ্যাক্টরীতে চাকুরী করতে আসলে, তাহাকে পরীক্ষায় জিপিএ-৫ দেখানো হয়েছে। বর্তমানে এই আধুনিক সভ্যতায় এসেও যদি সেই "সিরনির মেট্রিক পাশ্বের কথা মনে করাতে হয" তা হলে আমি বা সমাজ কি ভাববে একবার চিন্তা করুন। আপনার এই সমাজ ও সভ্যতাকে কিভাবে ইতিহাসের পাতায় লিখবেন একবার ভেবে দেখার দায়িত্ব কিন্তু আপনার এবং আমার, তাই নয় কি?
১৭ ই এপ্রিল, ২০১৫ বিকাল ৩:৫১
মোঃ ছিদ্দিকুর রহমান বলেছেন: লেখাটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১|
১১ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ১১:২৭
প্রামানিক বলেছেন: ধন্যবাদ