![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মুসলিম মিল্লাতের জন্য পবিত্র রমজান মাস অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই মাসের একটি স্পেশাল রাতে পবিত্র কোরআন নাজিল করা হয়। আর পবিত্র রমজানেই যে কোরআন নাযিল হয়েছে তার প্রমাণ আল্লাহ দিয়েছেন, شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِيَ أُنزِلَ فِيهِ الْقُرْآنُ هُدًى لِّلنَّاسِ
(শাহরু রমাদ্ব-নাল্লাযী- উংঝিলা ফী-হিল কুর আনু হুদাল্লিন্না-স...)
"এই রমজান মাসেই আমি মানুষের জন্য হেদায়েত স্বরুপ কোরান অবতীর্ণ করেছি...) (সুরা বাক্বারা- আয়াত ১৮৫)
এই মাসের একটি রাতকে আবার হাজার মাসের চেয়ে উত্তম বলে ঘোষণা দিয়েছেন তিনি, যেটাকে আমরা কদরের রাত বলে থাকি।
মহান আল্লাহও বলছেন,إِنَّآ أَنزَلۡنَـٰهُ فِى لَيۡلَةِ ٱلۡقَدۡرِ (ইন্না- আংঝালনা- হু ফী- লাইলাতিল ক্বদর)
"কদরের রাতেই আমি তা (কোরআন) অবতীর্ণ করেছি"
এরপর আল্লাহ প্রশ্ন করছেন, وَمَآ أَدۡرَٮٰكَ مَا لَيۡلَةُ ٱلۡقَدۡرِ (অমা- আদ'র-কা মা- লাইলাতুল ক্বদর)
"কদরের রাত সম্পর্কে আপনি জানেন?"
এরপর আল্লাহ নিজেই এই রাতের গুরুত্ব বর্ণনা করছেন, لَيۡلَةُ ٱلۡقَدۡرِ خَيۡرٌ۬ مِّنۡ أَلۡفِ شَہۡرٍ۬ (লাইলাতুল ক্বদরি খইরুম্ম মিন আলফি শাহর)
"কদরের রাত হাজার মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ" (সূরা ক্বদর- আয়াত ১,২,৩)
এই রাতে স্পেশাল এমন কি ঘটে, যার জন্য এই রাতের এত মর্যাদা?
পরের আয়াতে লক্ষ্য করুন, تَنَزَّلُ ٱلۡمَلَـٰٓٮِٕكَةُ وَٱلرُّوحُ فِيہَا بِإِذۡنِ رَبِّہِم مِّن كُلِّ أَمۡرٍ۬ (তানাঝঝালুল মালা-ইকাতু অররূ-হু ফী-হা- বিইযনি রব্বিহিম্ম মিংকুল্লি আমর)
"ফেরেশতা ও রূহ(জিবরাঈল) সেই রাতে তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে অবতীর্ণ হয়"
এর ফলে, سَلَامٌ هِيَ حَتَّى مَطْلَعِ الْفَجْرِ (সালা-মুন হিয়া হা"ত্তা- মাত্বলাঈ'ল ফাজর)
"(এভাবে) ঊষার পূর্ব পর্যন্ত শান্তি বিরাজ করে" (সূরা ক্বদর- আয়াত ৪,৫)
উপরোক্ত আয়াতগুলো থেকে স্পষ্ট প্রতীয়মান, লাইলাতুল কদরের মর্যাদা অনেক এবং এই রাতের ইবাদাতের প্রতিদানও খুব বেশি। অর্থাৎ, এক রাতের ইবাদাত এক হাজার মাসের ইবাদাতের সমান।
এই রাতের ইবাদাতের মর্যাদা সম্পর্কে রাসুল (সা...) বলেন, مَنْ صَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ، وَمَنْ قَامَ لَيْلَةَ الْقَدْرِ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ
"যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে, সওয়াব লাভের আশায় লাইলাতুল ক্বদ্রে রাত জেগে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করে, তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ মাফ করে দেয়া হয়" (সহীহ বুখারী- হাদিস ২০১৪)
এখন প্রশ্ন হলো, রমজানের কোন রাতটি কদরের রাত?
পবিত্র কোরানে তো এই রাতটি নির্দিষ্ট করা হয়ইনি, রাসূল (সা) নিজেও এই রাতটি ঠিক কততম রমজানে তা নির্দিষ্ট করেননি। বরং তিনি বলেছেন, تَحَرَّوْا لَيْلَةَ الْقَدْرِ فِي الْوِتْرِ مِنَ الْعَشْرِ الأَوَاخِرِ مِنْ رَمَضَانَ
"তোমরা রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোতে শবে কদর তালাশ করো" (সহীহ বুখারী- হাদীস ২০১৭)
এখানে বিজোড় রাত বলতে, ২১, ২৩, ২৫, ২৭ এবং ২৯ তম রাত। অর্থাৎ, কেউ যদি লাইলাতুল কদর পেতে চায় তাকে এই বিজোড় রাতগুলোতে বেশি বেশি ইবাদাত করতে হবে।
আর একজন মুমিন মুসলমান যেনো পবিত্র রমজানে লাইলাতুল কদর মিস না করে সেজন্য রাসুল (সা.) শেষ দশদিন নিজে ই'তিকাফ করার পাশাপাশি সাহাবীদেরকেও ই'তিকাফ করার পরামর্শ দিতেন। তিনি বলেন, أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم كَانَ يَعْتَكِفُ فِي الْعَشْرِ الأَوْسَطِ مِنْ رَمَضَانَ فَاعْتَكَفَ عَامًا حَتَّى إِذَا كَانَ لَيْلَةَ إِحْدَى وَعِشْرِينَ وَهِيَ اللَّيْلَةُ الَّتِي يَخْرُجُ مِنْ صَبِيحَتِهَا مِنْ اعْتِكَافِهِ
"যারা আমার সঙ্গে ই‘তিকাফ করেছে তারা যেন শেষ দশকে ই‘তিকাফ করে" (সহীহ বুখারী- হাদীস ২০২৭)
মহান আল্লাহও ই'তিকাফ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে বলেন, وَلَا تُبَاشِرُوهُنَّ وَأَنْتُمْ عَاكِفُونَ فِي الْمَسَاجِدِ (অলা- তুবা-শিরূউহুন্না অআংতুম আ"কিফূ-না ফীল মাসাজীদ...)
"‘আর তোমরা মসজিদে ইতিকাফকালে স্ত্রীদের সঙ্গে মেলামেশা করো না..." (সূরা বাক্বারা- আয়াত ১৮৭)
রাসুল (সা.) লাইলাতুল কদর নির্দিষ্ট করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু মহান আল্লাহ তাকে এ ব্যপারটি ভুলিয়ে দিয়েছিলেন একটি ঘটনার মাধ্যমে। এই সম্পর্কিত হাদীসটি লক্ষ্য করুন, خَرَجْتُ لأُخْبِرَكُمْ بِلَيْلَةِ الْقَدْرِ، فَتَلاَحَى فُلاَنٌ وَفُلاَنٌ، فَرُفِعَتْ، وَعَسَى أَنْ يَكُونَ خَيْرًا لَكُمْ، فَالْتَمِسُوهَا فِي التَّاسِعَةِ وَالسَّابِعَةِ وَالْخَامِسَةِ
"আমি তোমাদেরকে লাইলাতুল কদরের সংবাদ দেয়ার জন্য বের হয়েছিলাম, তখন দুই ব্যক্তি ঝগড়া করছিল, ফলে নির্দিষ্ট তারিখের পরিচয় হারিয়ে যায়। সম্ভবতঃ এর মধ্যে তোমাদের জন্য কল্যাণ নিহিত রয়েছে। তোমরা নবম, সপ্তম ও পঞ্চম রাতে তা তালাশ কর" (সহীহ বুখারী- হাদীস ২০২৩)
লাইলাতুল কদর যে ২১তম রাতেও হয়েছিলো, এই হাদিসটি লক্ষ্য করুন عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ كَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يُجَاوِرُ فِي رَمَضَانَ الْعَشْرَ الَّتِي فِي وَسَطِ الشَّهْرِ فَإِذَا كَانَ حِينَ يُمْسِي مِنْ عِشْرِينَ لَيْلَةً تَمْضِي وَيَسْتَقْبِلُ إِحْدَى وَعِشْرِينَ رَجَعَ إِلَى مَسْكَنِهِ وَرَجَعَ مَنْ كَانَ يُجَاوِرُ مَعَهُ وَأَنَّهُ أَقَامَ فِي شَهْرٍ جَاوَرَ فِيهِ اللَّيْلَةَ الَّتِي كَانَ يَرْجِعُ فِيهَا فَخَطَبَ النَّاسَ فَأَمَرَهُمْ مَا شَاءَ اللهُ ثُمَّ قَالَ كُنْتُ أُجَاوِرُ هَذِهِ الْعَشْرَ ثُمَّ قَدْ بَدَا لِي أَنْ أُجَاوِرَ هَذِهِ الْعَشْرَ الأَوَاخِرَ فَمَنْ كَانَ اعْتَكَفَ مَعِي فَلْيَثْبُتْ فِي مُعْتَكَفِهِ وَقَدْ أُرِيتُ هَذِهِ اللَّيْلَةَ ثُمَّ أُنْسِيتُهَا فَابْتَغُوهَا فِي الْعَشْرِ الأَوَاخِرِ وَابْتَغُوهَا فِي كُلِّ وِتْرٍ وَقَدْ رَأَيْتُنِي أَسْجُدُ فِي مَاءٍ وَطِينٍ فَاسْتَهَلَّتْ السَّمَاءُ فِي تِلْكَ اللَّيْلَةِ فَأَمْطَرَتْ فَوَكَفَ الْمَسْجِدُ فِي مُصَلَّى النَّبِيِّ لَيْلَةَ إِحْدَى وَعِشْرِينَ فَبَصُرَتْ عَيْنِي رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَنَظَرْتُ إِلَيْهِ انْصَرَفَ مِنْ الصُّبْحِ وَوَجْهُهُ مُمْتَلِئٌ طِينًا وَمَاءً
"আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমাযান মাসের মাঝের দশকে ই‘তিকাফ করেন। বিশ তারিখ অতীত হওয়ার সন্ধ্যায় এবং একুশ তারিখের শুরুতে তিনি এবং তাঁর সংগে যাঁরা ই‘তিকাফ করেছিলেন সকলেই নিজ নিজ বাড়িতে প্রস্থান করেন এবং তিনি যে মাসে ই‘তিকাফ করেন ঐ মাসের যে রাতে ফিরে যান সে রাতে লোকদের সামনে ভাষণ দেন। আর তাতে মাশাআল্লাহ, তাদেরকে বহু নির্দেশ দান করেন, অতঃপর বলেন যে, আমি এই দশকে ই‘তিকাফ করেছিলাম। এরপর আমি সিদ্ধান্ত করেছি যে, শেষ দশকে ই‘তিকাফ করব। যে আমার সংগে ই‘তিকাফ করেছিল সে যেন তার ই‘তিকাফস্থলে থেকে যায়। আমাকে সে রাত দেখানো হয়েছিল, পরে তা ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, শেষ দশকে ঐ রাতের তালাশ কর এবং প্রত্যেক বিজোড় রাতে তা তালাশ কর। আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, ঐ রাতে আমি কাদা-পানিতে সিজদা করছি। ঐ রাতে আকাশে প্রচুর মেঘের সঞ্চার হয় এবং বৃষ্টি হয়। মসজিদে আল্লাহর রাসূল (সা.) এর সালাতের স্থানেও বৃষ্টির পানি পড়তে থাকে। এটা ছিল একুশ তারিখের রাত। যখন তিনি ফজরের সালাত শেষে ফিরে বসেন তখন আমি তাঁর দিকে তাকিয়ে দেখতে পাই যে, তাঁর মুখমন্ডল কাদা-পানি মাখা" (মুসলিম-১১৬৭)
এই হাদীসে স্পষ্ট, মহান আল্লাহ চাননি লাইলাতুল কদর মুসলিমের সামনে নির্দিষ্ট হয়ে যাক। তারা বেশি বেশি ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করুক। তিনি চাইলে রাসুল (সা.) কে পুণরায় মনে করিয়ে দিতে পারতেন।
কিন্তু দূর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, আমাদের আলেমরা মুসলিমদের ইবাদাত বিমূখ করতে শুধুমাত্র ২৭তম রাতকে শবে কদর হিসেবে ঘোষণা দিয়ে ফেলেছেন। যেখানে রাসুল সা) নিজেই সাহাবীদের নির্দিষ্ট করে লাইলাতুল কদর এর রাতের ব্যপারে বলে যাননি, সেখানে তারা কিভাবে এটা নির্দিষ্ট করলো??
আল্লাহ আমাদের পবিত্র কোরান-হাদীসের আলোকে সঠিকভাবে ইসলাম মেনে চলার তাওফীক দান করুন। আমীন!
©somewhere in net ltd.