নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এন্টিভাইরাস

শ্রেণীসংগ্রাম যেন নিয়মের ভাগ্যবান ঠাপ; আমাদের ঘরে তাই বিশ্বায়ন স্বামীর প্রতাপ

তানভীর রাতুল

Sensitivity to social justice might be a motivation for poems, but it is not the only one. Through the immediacy of images, an improvised-sounding, rigorous musicality, and far-ranging sentences, conveys complexities of feeling and thought while avoiding didacticism and ideologically motivated polemicspoet does not ma...ke the dangerous mistake of addressing social inequality by turning politics into art. As the philosopher and literary critic Walter Benjamin might have said, 'responds by politicizing art.' The danger of such a response, though, is that it can lead to art that disguises its participation in capitalist culture so that attention to poetic form only produces the illusion of resolution of real social conflict.

তানভীর রাতুল › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্বেচ্ছা

০৫ ই এপ্রিল, ২০২২ রাত ৯:১৬

আগের দিন সন্ধ্যায়, এমন সময়ে যে পরের দিন পর্যন্ত খোলা হবে না আর ততক্ষণে সে নিজের জীবন নিয়ে ফেলবে, পাঠানো ইমেলটি পড়ার সাথে সাথে আমি পুলিশের সাথে যোগাযোগ করি। আমি সকাল আটটায় হাসপাতালে পৌঁছে প্রায় আটটা বিশ মিনেটে ইমেলটা খুললাম।

দরজার পাশের গাছের পাত্রের নীচে তার সদর দরজার চাবি কোথায় থাকবে তার বিশদ বিবরণ দিয়ে রেখেছিলেন, যাতে পুলিশকে দরজা ভেঙ্গে প্রবেশ করতে না হয়। পুলিশ আমাকে জানালো যে তার বাড়িটা পরিষ্কার-পরিপাটি অবস্থান আছে, তার দেহটা ছিল শোবার ঘরে এবং তার পোষাকুকুর, মন্টি, বৈঠকখানায়, উদ্বিগ্ন, কিন্তু সার্বিকভাবে ভালই আছে। আমি প্রায় ত্রিশ মিনিট পরে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হই আর তার বাসাটা আমি যেমন প্রত্যাশা করেছিলাম সেরকমই দেখতে।

বয়স ছিল মাত্র ৬২ বছর, স্থানীয় বেসরকারী কলেজে প্রভাষক হিসাবে কাজ করতেন, আগের দিনের মানুষ, প্রথমজীবনে কোন এক বিখ্যাত সঙ্গীত উস্তাদের অধীনে শিক্ষানবিশও নাকি ছিলেন কিছুদিন।

বছর দুয়েক আগে আমার কাছে আসেন, শরীরে অস্বাভাবিক স্ফীতি বা অর্বুদ ধরনের কি একটা খুঁজে পেয়ে আর আর অনেক জরুরী পরীক্ষানিরীক্ষা ও তদন্তের পরে। ক্যান্সারযুক্ত টিউমারে আক্রান্ত। পরবর্তী মাসগুলোতে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন আর বেশ বড়সড় একটা অপারেশনও করা হয়। সেই বেসরকারী হাসপাতালটার কর্তব্যরত অন্যান্য ডাক্তাররা আমাকে তার শারীরিক অগ্রগতি-অবনতি সবকিছুই নিয়মিত অবহিত করে গেছে। আর আমিও বিভিন্ন সময়ে আমার মতামত তাদেরকে জানাতাম।

সে বছরের সেপ্টেম্বরেই তাকে বলা হয় যে এই রোগের কোন উপস্থিতির প্রমাণ তার শরীরে আর নেই। তিনি যথারীতি চাকরিতে ফিরে গেলেন। যাহোক, তার ছয় মাসের স্ক্যানে দেখা যায় বিধ্বংসী, বহুমুখী, এবং অস্ত্রোপচার-অযোগ্য টিউমারের বিকাশ। কিছুটা উপশমকারী কেমোথেরাপি বেছে নেয়া হলো পরবর্তী ধাপ হিসেবে এই যুক্তিতে যে, যদিও এটা তাকে বাঁচাতে পারবে না, কিন্তু টিউমারগুলোর আক্রমণাত্মক প্রকৃতিকে কিছুটা হলেও আটকে রাখতে পারে।

চিকিৎসা আর তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এতটাই কঠিন হয়ে উঠলো যে শুধুমাত্র অসুস্থতার বিভিন্ন জটিলতাগুলি নির্ণয় আর নিয়ন্ত্রণ করার জন্যই তাকে আমার চেম্বার আর সেই বেসরকারী হাসপাতালেই তার বেশিরভাগ সময় ব্যয় করতে হয়। এবং টাকাও। কিন্তু তিনি তার নতুন নাতনির জন্মের সময়টাতে সাথে থাকতে পেরেছিলেন, যা তার মনোবলটাকে তুলনামূলকভাবে বাড়িয়ে, চাঙ্গা করে দেয়।

সপ্তাহদুয়েক আগে তিনি আমার চেম্বারে শেষবারের মত যখন এসেছিলেন সেবার আমরা ব্যথা উপশম, প্রশমন, নিয়ন্ত্রণ এইসব নিয়ে আলোচনা করেছি। সে ঠিকই বুঝতে পারে যে তার টিউমারগুলোর আকার আর তাদের অবস্থানের কারণেই কোন প্রকার শল্যবিদ্যা এইপর্যায়ে অকার্যকর। আমাকে জানালো যে, সে তার নিজের মৃত্যু সম্পর্কে স্বপ্ন দেখে, ব্যথায় অবস্থা আরও খারাপ হওয়ার এবং স্নায়বিক ক্ষমতাগুলো হারানোর আশঙ্কাও করে। সে তার নিজের মৃত্যুর উপর আরো নিয়ন্ত্রণ চায় যাতে সেটা কিছুটা শান্তিপূর্ণ হতে পারে।

জীবিত থাকাকালীন নিয়মিত হাঁটার অভ্যাস ছিল, এমনকি অনেকবার বিদেশভ্রমণও। ফ্রান্স, ইতালি, জার্মানি, নেপাল এবং অস্ট্রিয়া ছিল প্রিয়। সেসব জায়গায় নিজের থেকেও অর্ধেক বয়সীদের সাথে পাহাড়পর্বতে চড়ার অভিজ্ঞতাও আছে। জীবনকে ভালবাসতেন, কিন্তু এখন সেই তিনিই আমাকে বলেছেন যে, তার নিজেকে একজন নিন্দিত ব্যক্তির মতো মনে হয় যে কারাগারে বন্দী হয়ে জল্লাদের জন্য অপেক্ষা করছে। প্রায় পাঁচ বছর আগে তার জীবনসাথীর মৃত্যুর পর থেকে একাই থাকতেন, তাই তিনি মন্টির দায়িত্ব তার ছেলের উপর ছেড়ে দিয়েছিলেন যে কিনা এক স্ত্রী ও দুই সন্তানসহ চাকরিজনিত কারণে অস্থায়ীভাবে বিভিন্ন মফস্বলে বাস করে।

আমাদের আলাপচারিতায় তিনি কখনই কোন তিক্ততা বা দুঃখ প্রকাশ করেননি। তবে আমাকে বলেছিলেন যে তিনি বেসরকারী দামী নার্স বা অন্যকোন ঠিকা বা ছুটা সেবিকা বা গৃহপরিচারিকার দ্বারা তার নিম্নাংশটি মুছতে চান না বা নাক দিয়ে নল ঢুকিয়ে খাদ্যের সরবতও খেতে চান না। আজীবন শ্রমিক ইউনিয়নের কঠোর সমর্থক, মানবাধিকারকর্মী; আর এখন উপযুক্ত সুরক্ষা ও সাহায্যসহ 'স্বেচ্ছামৃত্যু'র অধিকারের প্রতিও নিজের সমর্থনটা যোগ করতে চান।

'জীবনের সমাপ্তিবেলায়' বা দুর্বল বয়স্ক রোগীদের ক্ষেত্রে চাওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। তারা প্রায়শই ঘুমন্ত অবস্থাতেই চিরনিদ্রায় প্রবেশের ইচ্ছা প্রকাশ করে। আমরা আজকাল রোগীদের চিকিৎসা এবং স্বাস্থ্যসেবায় তাদের নিজস্ব পছন্দ বাছাই করতে দেওয়ার বিষয়ে আরও উন্মুক্তমনা। ১৯৮০'র দশকে যখন আমি সদ্য ডাক্তার হয়েছি তার চেয়ে আজকে অনেক বেশি উন্মুক্ত। তার ভয় এটাই ছিল যে তার স্বাস্থ্যের অবনতি হলে তিনি হয়তো তার চিকিৎসা বিষয়ক নিজস্ব সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতাটা হারিয়ে ফেলবেন। তিনি কেবল তার অনিবার্য মৃত্যুর বেদনা এবং যন্ত্রণা থেকে রক্ষা পেতে চান আর চান এতদিন যে ধরণের জীবনযাপন করেছেন সেটাকে সম্মান করতে।

একজন পেশাদার চিকিৎসাকর্মী হিসাবে, আমি জানি যে, কারো অবশিষ্ট আয়ু নির্ধারণ করা মানে সময়ের হিসাব করে বলা কে কতদিন বেঁচে থাকতে হতে পারে, এক অবিশ্বাস্যরকমের কঠিনকাজ। জীবনযাত্রার মান নির্ণয় করাটাও কঠিন কারণ ব্যাপারটা ব্যক্তিগত এবং পরিস্থিতিনির্ভর, তার উপরে আছে ব্যক্তির মানসিক ক্ষমতা এবং পারিবারিক ও সামাজিক জবরদস্তিজনিত সমস্যা।

কোন প্রাণঘাতী রোগাক্রান্ত মানুষের কি অধিকার আছে 'কখন' আর 'কোন' পদ্ধতিতে মৃত্যুবরণ করবে তা নির্ধারণ করার? মৃত্যু কি সত্যিই চিকিৎসার বিকল্প হতে পারে?

আমি অনেক রোগীকে বলতে দেখেছি যে, তারা আর বেঁচে থাকতে চায় না কারণ তাদের অসুস্থতা তাদের জীবনের উপর প্রভাব ফেলছে, যাপনের মানটাকে আরো নিচে নামিয়ে দিচ্ছে। অন্যরা মনে করে যে তারা তাদের প্রিয়জনদের উপরে বোঝা। আমি এমন রোগীও দেখেছি যাদের মেজাজ প্রত্যেকবার নাটকীয়ভাবে বদলে যায়, আবার নিজেদের স্বাস্থ্যাবস্থা সম্পর্কে সামান্যতম সচেতনতাও নেই এমন রোগীও দেখেছি আমি।

ময়নাতদন্তের উপসংহারে বলা হয় যে, প্যারাসিটামল, কোডিন এবং ট্রামাডলের এক সংমিশ্রণ খেয়ে ঘুম দেয় সে। আমিই তার জন্য এই ওষুধগুলি লিখে দিতাম আর সে তার পরিকল্পনা মোতাবেক জমা করে রাখতো মনে হয়। ইচ্ছাকৃতভাবেই মৃত্যুর সিদ্ধান্তটা নেয় যেন কাউকে সাহায্য করার কথা বলার চেয়ে নিজের হাতে তার জীবন শেষ করার ক্ষমতাটাই ভালো বলে মনে হয়েছিল। তার আশঙ্কা ছিল যে, আরও বেশি সময় অপেক্ষা করলে সেই ক্ষমতাটাও হয়তো থাকবে না।

প্রায় ছয় মাস পর তার ছেলে কাঁধের ছোটখাট একটা ব্যথা নিয়ে আমার চেম্বারে এসেছিল। সাথে ছিল সেই অনুসন্ধানী পোষাকুকুর, মন্টি, ঠিক যেমন আসতো পুরাতন প্রভুর সাথে।

মন্টির গলায় একটি রঙিন গামছার মতো ওড়না বা ব্যান্ডানা বা রুমাল বাঁধা ছিল, যেটা আমি আগেও দেখেছি সেই রোগীর গলায়, মন্টি আমাকে পুরনো বন্ধুর উত্তেজনায় পূর্বপরিচয় প্রকাশের জন্য উচ্ছস্বর দিয়ে অভ্যর্থনা জানায়। তার নতুন মালিক আমাকে বললো যে, মন্টি'র দুঃসাহসিক কাজ, ভরপুর জীবনীশক্তি এবং জীবনের জন্য ভালোবাসা তার আগের মালিকের কথাই অবিরাম মনে করিয়ে দেয়।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই এপ্রিল, ২০২২ রাত ৯:৪০

:):):)(:(:(:হাসু মামা বলেছেন: অনেক সুন্দর

০৫ ই এপ্রিল, ২০২২ রাত ১০:২২

তানভীর রাতুল বলেছেন: ধন্যবাদ!

২| ০৮ ই এপ্রিল, ২০২২ ভোর ৪:৩৮

মোহাম্মদ গোফরান বলেছেন: ভালো লাগলো।

০৯ ই এপ্রিল, ২০২২ সকাল ৯:২১

তানভীর রাতুল বলেছেন: অনেক কৃতজ্ঞতা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.