| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |

মুক্তিযুদ্ধকালীন কুমিল্লার দাউদকান্দি থানার বিএলএফ কমান্ডার ও দেশমাতৃকার অকুতোভয় সৈনিক নজরুল ইসলামের ৪৬তম শহীদ দিবস আজ। ১৯৭১ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলে প্রায় এক মাস ধরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী অকথ্য নির্যাতন করেও মুক্তিবাহিনী সম্পর্কে, মুক্তিযুদ্ধে তাজউদ্দীন আহমদের কৌশল সম্পর্কে একটি কথাও বের করতে পারেনি তার মুখ থেকে। শেষ পর্যন্ত হানাদার বাহিনী একাত্তরের পবিত্র ঈদুল ফিতরের রাতে (২১ নভেম্বর) ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেল থেকে তাকেসহ ৩৮ জন মুক্তিযোদ্ধাকে বের করে নিয়ে যায়। সে রাতেই ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের রেলব্রিজের পাশের পৈরতলা খালপাড়ে নিয়ে হত্যা করা হয় তাদের।
কুমিল্লার দাউদকান্দির সুন্দলপুর গ্রামের কৃতী সন্তান নজরুল ইসলাম ১৯৭১ সালে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ছাত্র ও ফজলুল হক হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। ঢাকা কলেজ থেকে ১৯৬৯ সালে এইচএসসি পাস করে নজরুল ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে। নজরুল ইসলাম থাকতেন ফজলুল হক হলের ১১৭ নম্বর রুমে। তার কক্ষের দেয়ালে লেখা ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এক বাণী- 'আমার জীবন দিয়ে হলেও বাঙালিদের পথের নিশানা দিয়ে যাবো।' ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে এই বাণীকেই নিজের করে নিয়েছিলেন নজরুল। ২৫ মার্চের পর নজরুল চলে যান ভারতের আগরতলায়। সেখানে প্রশিক্ষণ শেষে দেশে এসে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। গোপনে ঢাকায় ছাত্রদের সংগঠিত করে প্রশিক্ষণের জন্য আগরতলায় দিয়ে আসতে শুরু করেন। যেতেন দাউদকান্দিতেও। সেখানকার ছাত্র-যুবকদের ছোট ছোট দলে বিভক্ত করে কৌশলে সীমান্ত পার করে ভারতে নিয়ে যেতেন। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ছাত্র-যুবকদের দেশে এনে মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন গেরিলা দলভুক্ত করতেন। বিএলএফ (বাংলাদেশে লিবারেশন ফোর্স- মুজিব বাহিনী নামে পরিচিত) গঠিত হলে নজরুল ইসলাম দাউদকান্দি থানার বিএলএফ কমান্ডার নিযুক্ত হন।
১৯৭১ সালের ২৭ অক্টোবর (রমজান মাস) তৎকালীন মোহাম্মদপুর থানার দারোগা শহীদ সিরু মিয়া, তার ছেলে শহীদ কামাল, বিএলএফ কমান্ডার শহীদ নজরুলসহ ৬ জন মুক্তিযোদ্ধা স্থানীয় এক রাজাকারের বিশ্বাসঘাতকতায় ধরা পড়েন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবার তন্তর চেকপোস্টে। নজরুল ও সিরু মিয়া ধরা পড়েন রিভলবারসহ। তাদেরকে নিয়ে যাওয়া হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলে। সেদিন বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে স্থানীয় রাজাকাররা মাইকে প্রচার করে- ৬ জন দুর্ধর্ষ দুস্কৃতকারী ধরা পড়েছে।
জেলে বন্দি নজরুলের ওপর চলে অমানুষিক নির্যাতন। উদ্দেশ্য- মুক্তিবাহিনীর বিভিন্ন তথ্য বের করা। কিন্তু নজরুলের শরীর যেন হয়ে ওঠে পাথরের শরীর। শত নির্যাতনেও কোনো তথ্য বের করতে পারেনি হানাদার বাহিনী। মানবতাবিরোধী অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত আসামি গোলাম আযমের বিরুদ্ধে করা মামলার অভিযোগে উল্লেখ ছিল নজরুল, সিরু মিয়া দারোগাসহ ৩৮ জন মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যার ঘটনা। সেই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের অন্যতম সাক্ষী ছিলেন নজরুলের সঙ্গে জেলে থাকা জনপ্রিয় সুরকার, গীতিকার ও শিল্পী আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল। ঈদের রাতে নজরুলসহ ৩৮ জন মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যার ঘটনার করুণ বর্ণনা ছিল আদালতে দেওয়া আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের বক্তব্যে। তিনি বলেন, '...(হত্যার জন্য জেল থেকে বের করে নেওয়ার সময়) আমি নজরুল ভাইয়ের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করি, আপনি তো পালিয়ে গেলেন না। তিনি আমার দিকে তাকিয়ে বলেন, এই লুঙ্গিটা আমার মায়ের কাছে পৌঁছে দিস। কামালের বাবা সিরু মিয়া দারোগা বারবার কাঁদছিলেন। তখন কামাল তার বাবাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে বলে, বুলবুল, যদি কোনোদিন রাস্তায় কোনো পাগলিকে দেখিস, তাহলে মনে করিস, ওটাই আমার মা। নজরুল বলেছিলেন, যখন কোনো পাকিস্তানি আর্মি দেখবি, একটা করে মাথায় গুলি করবি।'
এর পর সে রাতেই পৈরতলা খালপাড়ে লাইনে দাঁড় করিয়ে হত্যা করা হয় নজরুলসহ ৩৮ মুক্তিযোদ্ধাকে। শহীদদের লাশ ফেলে দেওয়া হয় পৈরতলা খালে। সেখানে এখন ইটের গাঁথুনি দিয়ে কোনো রকমভাবে তৈরি একটি স্মৃতিচিহ্ন আছে। কিন্তু সে জায়গাটি পড়ে আছে অযত্ন-অবহেলায়।
সমকাল
বাশার খান
মুক্তিযুদ্ধ গবেষক ও সাংবাদিক
২১ শে নভেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৫৮
গর্তে পরছি বলেছেন: ধন্যবাদ
২|
২১ শে নভেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১:৫৫
কামরুননাহার কলি বলেছেন: হুম সত্যিই তো কি না করেছে এরা দেশের জন্য। তারা দেশকে এতো ভালবাসছিলো ভাবাই যায়না। আর আমরা কি করি এই দেশের জন্য মাঝে মাঝে মনে হয় কিছুই না। যা করি সব নিজেদের স্বর্থের জন্য, দেশের এবং দশের স্বার্থে জন্য নয়।
৩|
২১ শে নভেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৪:৫৮
রাজীব নুর বলেছেন: অজানা ব্যাপার গুলো জানতে আমার খুব ভালো লাগে।
৪|
২১ শে নভেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:০৩
চাঁদগাজী বলেছেন:
উনার পরিবারের প্রতি আমাদের সন্মান রলো।
©somewhere in net ltd.
১|
২১ শে নভেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১:৪৯
মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন: উনি জান্নাতবাসী হোক।
লেখকের জন্যও শুভ কমনা।