নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
হযরত উমর রাঃ বলেন, সেই সময়েই আমার মনে ইসলাম রেখাপাত করে। কিন্তু তখনো তাঁর মনে পূর্ব পুরুষদের ধর্মের প্রতি বিশ্বাস ও ভালবাসা ছিল অটুট। এ কারণেই হৃদয়ের গোপন গভীরে ইসলামের প্রতি ভালবাসার বীজ বোপিত হলেও ইসলামের বিরোধিতার প্রকাশ্য কাজকর্মে তিনি ছিলেন সোচ্চার।
তাঁর স্বভাবের কঠোরতা এবং রাসূল সাঃ এর সাথে শত্রুতার অবস্থা এমন ছিল যে, একদিন তলোয়ার হাতে নিয়ে রাসূল সাঃ কে হত্যা করার উদ্দেশ্যেই বেরিয়ে পড়লেন। পথে নঈম বিন আব্দুল্লাহ নাহহাম আদবীর বা বনি যোহরা বনি মাজুমের কোন এক লোকের সাথে তার দেখা হল। সেই লোক তার রুক্ষ্ম চেহারা দেখে জিজ্ঞাসা করলেন, ওমর! কোথায় যাচ্ছো? তিনি বললেন,মুহাম্মদ [সাঃ] কে হত্যা করতে যাচ্ছি। সেই লোক বললেন, মুহাম্মদকে হত্যা করে বনু হাশে এবং বনু যোহরার হাত থেকে কিভাবে রক্ষা পাবে? তিনি বললেন, মনে হয় তুমিও পূর্ব পুরুষদের ধর্ম ছেড়ে বেদ্বীন হয়ে পড়েছো? সেই লোক বললেনম, উমর একটা বিস্ময়কর কথা শুনাচ্ছি। তোমার বোন এবং ভগ্নিপতিও তোমাদের দ্বীন ছেড়ে দিয়ে বেদ্বীন হয়ে গেছে।
একথা শুনে হযরত উমর রাঃ ক্রোধে দিশেহারা হয়ে সোজা ভগ্নিপতির বাড়ি অভিমুখে রওনা হলেন। সেখানে গিয়ে দেখলেন, তারা হযরতখাব্বাব বিন আরত রাঃ এর কাছে সূরা ত্ব হা লেখা সহীফা পাঠ করছেন। কুরআন শিক্ষা দেয়ার জন্যে হযরত খাব্বাব রাঃ সে বাড়িতে যেতেন। হযরত উমরের পায়ের আওয়াজ শুনে সবাই নীরব হয়ে গেলেন। হযরত উমরের বোন সূরা লেখা পাতাটি লুকিয়ে ফেললেন। কিন্তু ঘরের বাইরে থেকেই হযরত উমর রাঃ কুরআনের আওয়াজ শুনেছিলেন। তিনি তাই জিজ্ঞাসা করলেন, কিসের আওয়াজ শুনছিলাম?
তারা বললেন, কই কিছু নাতো! আমরা নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা বলছিলাম। হযরত উমর রাঃ বললেন, সম্ভবত তোমরা উভয়ে বেদ্বীন হয়ে গেছো। তার ভগ্নিপতি বললেন, আচ্ছা উমর! সত্য যদি তোমাদের দ্বীন ছাড়া অন্য কোন ধর্মে থাকে তখন কি হবে? হযরত উমর একথা শুনামাত্র ভগ্নিপতির উপর ঝাপিয়ে পড়লেন এবং তাকে মারাত্মকভাবে প্রহার করলেন।
তাঁর বোন ছুটে গিয়ে স্বামীকে ভাইয়ের হাত থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলেন। এক সময় তাকে সরিয়ে দিলেন।
হঠাৎ হযরত উমর রাঃ তার বোনকে এতো জোরে চড় দিলেন যে, তার চেহারা রক্তাক্ত হয়ে গেল। ইবনে ইসহাকের বর্ণনায় এসেছে যে, তার মাথায় আঘাত লেগেছিল। তার বোন ক্রুদ্ধভাবে বললেন, উমর! যদি তোমাদের ধর্ম ছাড়া অন্য ধর্মে সত্য থাকে, তখন কি হবে? আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই এবং হযরত মুহাম্মদ সাঃ তাঁর রাসূল। একথা শুনে হযরত উমর রাঃ হতাশ হয়ে পড়লেন। বোনের চেহারায় রক্ত দেখে লজ্জাও পেলেন। তিনি বললেন, আচ্ছা, তোমরা যা পাঠ করছিলে, আমাকেও একটু পড়তে দাও। তার বোন বললেন, তুমি নাপাক। এ কিতাব শুধু পাক পবিত্র লোকই স্পর্শ করতে পারে। যাও গোসল করে আসো। হযরত উমর রাঃ গিয়ে গোসল করলেন। এরপর কিতাবের সেই অংশবিশেষ হাতে নিয়ে বসলেন এবং পড়লেন বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম। এরপর বললেন, এতো বড় পবিত্র নাম!
হযরত খাব্বাব রাঃ হযরত উমর রাঃ এর মুখে একথা শুনে ভেতর থেকে বাইরে এলেন এবং বললেন, উমর খুশি হও! রাসূল সাঃ বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে যে দুআ করেছিলেন, আমার মনে হয় এটা তারই ফল। এ সময়ে রাসূল সাঃ সাফা পাহাড়ের নিকটবর্তী এক ঘরে অবস্থান করছিলেন।
একথা শুনে হযরত উমর রাঃ তলোয়ার হাতে সেই ঘরের সামনে এসে দরজায় করাঘাত করলেন। একজন সাহাবী দরজায় উঁকি দিয়ে দেখলেন যে, তলোয়ার হাতে হযরত উমর। আশে পাশেই সবাই একত্রিত হলেন। হযরত হামযা রাঃ জিজ্ঞাসা করলেন কি ব্যাপার? তাকে বলা হল যে, উমর এসেছেন। তিনি বললেন, উমর এসেছে? দরজা খুলে দাও। যদি ভালোর জন্যে এসে থাকে, তবে ভালোই পাবে। আর যদি খারাপ উদ্দেশ্যে এসে থাকে, তবে তার তলোয়ার দিয়েই আমরা তাকে শেষ করে দিবো। এদিকে রাসূল সাঃ ভেতরে ছিলেন। তার উপর ওহী নজিল হচ্ছিল। ওহী নাজিল হওয়ার পর তিনি এদিকের কামরায় হযরত উমরের কাছে এলেন এবং তাঁর পরিধানের পোশাক এবং তলোয়ারের একাংশ ধরে ঝাঁকুনি দিয়ে বললেন, উমর তুমি কি ততোক্ষণ পর্যন্ত বিরত হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ তোমার উপরও ওলীদ বিন মুগিরার মত অবমাননাকর শাস্তি নাজিল করবেন? হে আল্লাহ! উমর বিন খাত্তাবের দ্বারা দ্বীনের শক্তি ও সম্মান দান কর। একথা বলার সাথে সাথে হযরত উমর রাঃ ইসলাম গ্রহণ করে নিলেন। {আররহীকুল মাখতুম, হযরত উমর রাঃ এর ইসলাম গ্রহণ পরিচ্ছেদ}
যারা বলেন কোরআন শরীফ ধরতে পাক পবিত্র হওয়া লাগে না, তাদের কি এই ঘটনাটিও জানা নাই? অথচ এই ঘটনাটি ক্লাস থ্রির অনেক বাচ্চারাও জানে .... শুধু পিস টিভির বড় বড় আলেমগন জানেন না! সেই টিভি বন্ধ হওয়াতে আমাদের ইসলাম শিক্ষা লাটে উঠে গেছে ... ব্লগে চল্লিশা চলছে .... !!
©somewhere in net ltd.