নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

প্রবাস থেকে লিখছি. .....

রফিকুজজামান লিটন

আমি একজন প্রকৌশলী।একটা মোবাইল কোম্পানিতে কামলা দিই ।নিজের সুখ দুঃখ শেয়ার করতে চাই সবার সাথে। স্বপ্ন দেখি একটা সুন্দর বাংলাদেশের।

রফিকুজজামান লিটন › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রবাসে অমানবিক কর্মঘন্টা :

০৯ ই জুন, ২০২১ বিকাল ৪:৪৩

[দুবাই থাকতে লিখেছিলাম। দুবাই কনস্যুলেটের লেবার কাউন্সিলরকে জানিয়েছিলাম, তিনি বলেছিলেন দেখবেন। এখনকার পরিস্থিতি কেমন ঠিক জানি না !!]
বিশ্বজুড়ে দাস প্রথা নিষিদ্ধ হয়েছে সেই কবে৷ কিন্তু প্রথা নিষিদ্ধ হলেও এখনো দাসত্ব বিলীন হয়নি৷ এক বছরের প্রবাস জীবনে এতটা করুণ চিত্র আমার চোখে পড়েনি। মনে হচ্ছে এদের সাথে পরিচয় না হলেই ভালো হতো, অন্তত কিছু হতাশা আর কিছু মন-যাতনা থেকে মুক্ত থাকতাম।এই প্রবাসী ভাইদের সাথে কথা বলে এক ধরনের কষ্ট অনুভব করছিলাম। আপনজনদের দেশে রেখে প্রবাসে অমানবিক কর্মঘন্টা, নিরানন্দ জীবন , সত্যিই বড় কষ্টের ।

দুবাইয়ে "ডে টু ডে" নামে বহুজাতিক কোম্পানির সুপার মার্কেটের দেইরা ব্রাঞ্চে ৩২ জন বাংলাদেশী সেলসম্যান হিসাবে চাকরি করেন। সকাল ৯ টা থেকে রাত ১২ টা প্রতিদিন ১৫ ঘন্টা করে ডিউটি (লাঞ্চ টাইমে ২ ঘন্টার বিরতি) । সাপ্তাহিক কোনো ছুটি নাই। ওভার টাইম নাই (তাদের বলা হয়েছে চাকরি ছেড়ে দেয়ার সময় তাদের একবারে ওভার টাইম দেয়া হবে) । প্রতিদিন ১৫ ঘন্টা ডিউটি করে কোনো মানুষের পক্ষে শারীরিক বা মানসিক কোনভাবেই সুস্থ থাকা সম্ভব নয়।সুন্দর বিকেল কিংবা চাদনী রাতে আড্ডা কোনটাই উপভোগ করা হয় না। তারা যেন কৃত্রিম শৃঙ্খলায় বন্ধী। আমরা যারা দুবাই এর মতো সভ্য (সভ্য বলছি কারণ এখানে সবাই নিয়ম মেনে চলে বা মানতে বাধ্য হয়) সমাজে বাস করি তাদের কাছে এটা অকল্পনীয়। একই কোম্পানিতে অনেক ফিলিপিনো চাকরি করেন তারা সাপ্তাহিক ছুটি ছাড়াও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকেন।

বাংলাদেশীদের ভিসা বন্ধের পাশাপাশি রিলিজ ট্রান্সফারও বন্ধ থাকায় সর্ব ক্ষেত্রে বঞ্চনার শিকার হতে হচ্ছে । তাদের প্রাপ্য মিনিমাম অধিকার থেকেও বঞ্চিত। তারা যেন তাদের প্রাপ্য অধিকার টুকু চাইতেও ভয় পায়।দুবাইয়ের শ্রম আইন অনুযায়ী ,শ্রমিকদের সাপ্তাহিক ছুটি ও রাষ্ট্রিয় ছুটি প্রদান করা,দৈনিক ৮ঘন্টা কর্মঘন্টা ও অতিরিক্ত সময় এবং যে কোন ছুটির দিনে কাজ করলে ওভার টাইম দিতে বাধ্য থাকিবে। দিনে সর্বোচ্চ ২ ঘন্টার ওভার টাইম করতে পারবে।

UAE Labour Law:
Article 65: The maximum number of ordinary working hours for adult workers shall be eight hours per day, or forty eight hours per week.
Article 67: The ordinary working hours, the additional period shall be deemed an overtime
Article 69: Effective overtime working hours may not exceed two hours per day
Article 70: Friday shall be the ordinary weekly rest for all workers

আমি ঘুরে ঘুরে কেনা কাটা করছি আর তাদের সাথে গল্প করছি। আমি অবাক হয়ে তাদের কথা শুনছি। তারা প্রতেকেই চার পাচটা ভাষায় কথা বলতে পারে(বাংলা ,হিন্দি, উর্দু , ইংলিশ এবং আরবী)। এক বছরে একটা আরবী ওয়ার্ড ও বলতে শিখি নাই আর তারা কাস্টমারের সাথে আরবিতে কথা বলে যাচ্ছে অনগর্ল। তাদের অসাধারণ প্রতিভা না দেখলে বিশ্বাসই করা যেতো না। এজন্য তাদের বেশ সুনাম ও আছে। আগে আরো বেশি বাংলাদেশী ছিলেন , অনেকে একটানা দাড়িয়ে ডিউটি করতে করতে অসুস্থ হয়ে দেশে চলে গেছেন। পরিবারের কথা উঠতেই কেমন যেন কান্না লুকানোর ব্যর্থ চেষ্টা কিন্তু অবাধ্য চোখগুলো সিক্ত করে তুলছে।

বাংলাদেশের রিজার্ভ ফান্ড $৪৪ বিলিয়ন ছাড়িয়েছে, পার ক্যাপিটা ইনকাম $২২০০ এর বেশি। যার বড় অবদান এই প্রবাসী শ্রমজীবি ভাই বোনেরা। যাদের ইনকামের ৮০% ই দেশে পাঠান। আশা রাখি আমাদের সব প্রবাসী শ্রমজীবি ভাইদের কষ্ট জড়ানো ঘামের মূল্যায়ন পাবে এবং সাম্য স্বাধীনতা, ন্যায্যতা, সহযোগিতা ও অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে গড়ে উঠবে একটি মানবিক সুন্দর বাংলাদেশ। প্রত্যাশা করি সেদিন আর কারো প্রবাসী হয়ে অমানুষিক শ্রম দিতে হবে না।

অপার সম্ভাবনার দেশ বাংলাদেশ: লালন ফকিরের ভাষায়
“আপন ঘরে বোঝাই সোনা,
পরে করে লেনা দেনা”_ ----লালন ফকির

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই জুন, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:১৫

রাজীব নুর বলেছেন: মধ্য প্রাচ্যের দেশ গুলোতে বাঙ্গালিরা ভালো নেই।

১০ ই জুন, ২০২১ ভোর ৪:০৭

রফিকুজজামান লিটন বলেছেন: একশ্রেণীর মানুষ মিডিলিস্ট বেশ ভালো আছে। কিন্তু একশ্রেণীর মানুষ যারা বাংলাদেশেও অবহেলিত বিদেশেও অবহেলিত।

২| ০৯ ই জুন, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:২৬

চাঁদগাজী বলেছেন:



আমাদের নিজের মানুষকে নিজ দেশে কাজ দেয়ার মতো সম্পদ আছে?

১০ ই জুন, ২০২১ ভোর ৪:০৬

রফিকুজজামান লিটন বলেছেন: সম্পদ আছে কিন্তু আমরা কাজে লাগাতে পারছি না। কিছুদিন আগে এক চাইনিজের সাথে দেখা তিনি 25 বছর আগে ইউরোপে মুভ করছেন। তিনি যখন চায়না থেকে আসেন তখন চায়নার অর্থনৈতিক অবস্থা ছিল খুবই খারাপ কিন্তু আজ তার বন্ধুমহল বা কাছের মানুষজন চায়নায় এখন অনেক ভালো আছে।
আমার মনে হয় বাংলাদেশে যেভাবে এগোচ্ছে নেক্সট 15,20 বছর পরে বাংলাদেশ থেকে কেউ মিডিলইস্টে লেবার হয়ে আসবে না।

৩| ১০ ই জুন, ২০২১ সকাল ৯:৫৩

স্বামী বিশুদ্ধানন্দ বলেছেন: বাংলাদেশ এগুচ্ছে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স আর বস্ত্রবালিকাদের রপ্তানিকৃত গার্মেন্টসের মাধ্যমেই। সুতরাং ১৫, ২০ বৎসর পরেও প্রবাসে যাওয়া মোটেও কমবে না। এই অমানবিক অবস্থা থেকে কিছুটা পরিত্রান মিলতে পারে আমাদের দূতাবাসগুলো যদি মালিক পক্ষের সাথে কিছুটা নেগোশিয়েট করতে পারে তবেই - যেটা ফিলিপিনো ও ভারতীয় দূতাবাস অনেক সময় করে থাকে।
আমাদের সরকারকে দেশে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার জন্য বিনিয়োগ বাড়াতে হবে - কারিগরি দক্ষতার সাথে সাথে ইংরেজি ও অন্যান্য ভাষায় নিবিড় প্রশিক্ষণ প্রদান খুবই প্রয়োজন।

১০ ই জুন, ২০২১ দুপুর ২:৩১

রফিকুজজামান লিটন বলেছেন: গুড পয়েন্ট।
মিডিলইস্টে যারা লেবার হিসাবে জব করেন তাদের এভারেজ স্যালারি ২০-২৫ হাজার টাকা মতো। নেক্সট ১০ বছরে বাংলাদেশে এই ধরণের স্যালারি সবার জন্য এভেইল্যাবল হয়ে যাবে তখন ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা দালালদের দিয়ে কেউ মিডিলইস্টে আসতে চাইবে না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.