নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যুক্তি হোক মুক্তির সোপান

'কাটায়ে উঠেছি ধর্ম আফিম নেশা/ধ্বংস করেছি ধর্ম যাজকী পেশা,/ভাংগি মন্দির ভাংগি মসজিদ/ভাংগি গীর্জা--গাহি সংগীত' - নজরুল

লাইটহাউজ

নেই স্বর্গলোভ কিংবা কল্প-নরকের ভয়,/অলীক সাফল্যমুক্ত কর্মময় পৃথিবী আমার৷ চর্মচোখে যা যা দেখি, শারীরিক ইন্দ্রিয় যা ধরে,/তাকেই গ্রহন করি৷ জানি, নিরাকার অপ্রত্যক্ষ/শুধুই ছলনা, বিশ্বাস করি না ভাগ্যে, দেবতার বরে৷ আমার জগৎ মুগ্ধ বাস্তবের বস্তুপুঞ্জে ঠাসা,/তাই সে ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য, অতীন্দ্রিয় নয়৷/অন্ধতার বধ্যভূমি আমার হদৃয়৷ সেই শ্রেষ্ঠ মানব-সন্তান, যার মন মুক্ত ভগবান৷/আমার মস্তক নিত্য নত সেই নাস্তিকের তরে৷ নাস্তিক - নির্মলেন্দু গুণ

লাইটহাউজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

একুশের প্রথম কবিতা

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ রাত ২:০২

কাল অমর একুশে ফেব্রুয়ারী। সে উপলক্ষে একুশের প্রথম কবিতা ও প্রথম গান।



কবি মাহবুবুল আলম চৌধুরী রচিত একুশের প্রথম কবিতাঃ



'আজ আমি এখানে কাঁদতে আসিনি, ফাঁসির দাবী নিয়ে এসেছি...'



ওরা চল্লিশজন কিংবা আরো বেশি

যারা প্রাণ দিয়েছে ওখানে—রমনার রৌদ্রদগ্ধ কৃষ্ণচূড়ার গাছের তলায়

ভাষার জন্য, মাতৃভাষার জন্য—বাংলার জন্য।

যারা প্রাণ দিয়েছে ওখানে

একটি দেশের মহান সংস্কৃতির মর্যাদার জন্য

আলাওলের ঐতিহ্য

কায়কোবাদ, রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের

সাহিত্য ও কবিতার জন্য

যারা প্রাণ দিয়েছে ওখানে

পলাশপুরের মকবুল আহমদের

পুঁথির জন্য

রমেশ শীলের গাথার জন্য,

জসীমউদ্দীনের ‘সোজন বাদিয়ার ঘাটের’ জন্য।

যারা প্রাণ দিয়েছে

ভাটিয়ালি, বাউল, কীর্তন, গজল

নজরুলের “খাঁটি সোনার চেয়ে খাঁটি

আমার দেশের মাটি।”

এ দুটি লাইনের জন্য

দেশের মাটির জন্য,

রমনার মাঠের সেই মাটিতে

কৃষ্ণচূড়ার অসংখ্য ঝরা পাপড়ির মতো

চল্লিশটি তাজা প্রাণ আর

অঙ্কুরিত বীজের খোসার মধ্যে

আমি দেখতে পাচ্ছি তাদের অসংখ্য বুকের রক্ত।

রামেশ্বর, আবদুস সালামের কচি বুকের রক্ত

বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে সেরা কোনো ছেলের বুকের রক্ত।

আমি দেখতে পাচ্ছি তাদের প্রতিটি রক্তকণা

রমনার সবুজ ঘাসের উপর

আগুনের মতো জ্বলছে, জ্বলছে আর জ্বলছে।

এক একটি হীরের টুকরোর মতো

বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা ছেলে চল্লিশটি রত্ন

বেঁচে থাকলে যারা হতো

পাকিস্তানের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ

যাদের মধ্যে লিংকন, রকফেলার,

আরাগঁ, আইনস্টাইন আশ্রয় পেয়েছিল

যাদের মধ্যে আশ্রয় পেয়েছিল

শতাব্দীর সভ্যতার

সবচেয়ে প্রগতিশীল কয়েকটি মতবাদ,

সেই চল্লিশটি রত্ন যেখানে প্রাণ দিয়েছে

আমরা সেখানে কাঁদতে আসিনি।

যারা গুলি ভরতি রাইফেল নিয়ে এসেছিল ওখানে

যারা এসেছিল নির্দয়ভাবে হত্যা করার আদেশ নিয়ে

আমরা তাদের কাছে

ভাষার জন্য আবেদন জানাতেও আসিনি আজ।

আমরা এসেছি খুনি জালিমের ফাঁসির দাবি নিয়ে।



আমরা জানি ওদের হত্যা করা হয়েছে

নির্দয়ভাবে ওদের গুলি করা হয়েছে

ওদের কারো নাম তোমারই মতো ওসমান

কারো বাবা তোমারই বাবার মতো

হয়তো কেরানি, কিংবা পূর্ব বাংলার

নিভৃত কোনো গাঁয়ে কারো বাবা

মাটির বুক থেকে সোনা ফলায়

হয়তো কারো বাবা কোনো

সরকারি চাকুরে।

তোমারই আমারই মতো

যারা হয়তো আজকেও বেঁচে থাকতে

পারতো,

আমারই মতো তাদের কোনো একজনের

হয়তো বিয়ের দিনটি পর্যন্ত ধার্য হয়ে গিয়েছিল,

তোমারই মতো তাদের কোনো একজন হয়তো

মায়ের সদ্যপ্রাপ্ত চিঠিখানা এসে পড়বার আশায়

টেবিলে রেখে মিছিলে যোগ দিতে গিয়েছিল।

এমন এক একটি মূর্তিমান স্বপ্নকে বুকে চেপে

জালিমের গুলিতে যারা প্রাণ দিল

সেই সব মৃতদের নামে

আমি ফাঁসি দাবি করছি।



যারা আমার মাতৃভাষাকে নির্বাসন দিতে চেয়েছে তাদের জন্যে

আমি ফাঁসি দাবি করছি

যাদের আদেশে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে তাদের জন্যে

ফাঁসি দাবি করছি

যারা এই মৃতদেহের উপর দিয়ে

ক্ষমতার আসনে আরোহণ করেছে

সেই বিশ্বাসঘাতকদের জন্যে।

আমি তাদের বিচার দেখতে চাই।

খোলা ময়দানে সেই নির্দিষ্ট জায়গাতে

শাস্তিপ্রাপ্তদের গুলিবিদ্ধ অবস্থায়

আমার দেশের মানুষ দেখতে চায়।



পাকিস্তানের প্রথম শহীদ

এই চল্লিশটি রত্ন,

দেশের চল্লিশ জন সেরা ছেলে

মা, বাবা, নতুন বৌ, আর ছেলে মেয়ে নিয়ে

এই পৃথিবীর কোলে এক একটি

সংসার গড়ে তোলা যাদের

স্বপ্ন ছিল

যাদের স্বপ্ন ছিল আইনস্টাইনের বৈজ্ঞানিক তত্ত্বকে

আরো গভীরভাবে বিশ্লেষণ করার,

যাদের স্বপ্ন ছিল আণবিক শক্তিকে

কী ভাবে মানুষের কাজে লাগানো যায়

তার সাধনা করার,



যাদের স্বপ্ন ছিল রবীন্দ্রনাথের

‘বাঁশিওয়ালার’ চেয়েও সুন্দর

একটি কবিতা রচনা করার,

সেই সব শহীদ ভাইয়েরা আমার

যেখানে তোমরা প্রাণ দিয়েছ

সেখানে হাজার বছর পরেও

সেই মাটি থেকে তোমাদের রক্তাক্ত চিহ্ন

মুছে দিতে পারবে না সভ্যতার কোনো পদক্ষেপ।



যদিও অগণন অস্পষ্ট স্বর নিস্তব্ধতাকে ভঙ্গ করবে

তবুও বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই ঘণ্টা ধ্বনি

প্রতিদিন তোমাদের ঐতিহাসিক মৃত্যুক্ষণ

ঘোষণা করবে।

যদিও ঝঞ্ঝা-বৃষ্টিপাতে—বিশ্ববিদ্যালয়ের

ভিত্তি পর্যন্ত নাড়িয়ে দিতে পারে

তবু তোমাদের শহীদ নামের ঔজ্জ্বল্য

কিছুতেই মুছে যাবে না।



খুনি জালিমের নিপীড়নকারী কঠিন হাত

কোনো দিনও চেপে দিতে পারবে না

তোমাদের সেই লক্ষদিনের আশাকে,

যেদিন আমরা লড়াই করে জিতে নেব

ন্যায়-নীতির দিন

হে আমার মৃত ভাইরা,

সেই দিন নিস্তব্ধতার মধ্য থেকে

তোমাদের কণ্ঠস্বর

স্বাধীনতার বলিষ্ঠ চিৎকারে

ভেসে আসবে

সেই দিন আমার দেশের জনতা

খুনি জালিমকে ফাঁসির কাষ্ঠে

ঝুলাবেই ঝুলাবে

তোমাদের আশা অগ্নিশিখার মতো জ্বলবে

প্রতিশোধ এবং বিজয়ের আনন্দে।



চট্টগ্রাম, ১৯৫২

মন্তব্য ২১ টি রেটিং +১০/-০

মন্তব্য (২১) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ রাত ২:১৭

রাতমজুর বলেছেন: ৫+ পুরা কবিতা টা দিতে পারবেন ভাই?

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ রাত ২:২১

লাইটহাউজ বলেছেন: এই মুহূর্তে নেই। খুঁজে পেলে অবশ্যই দেব।

২| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ রাত ২:২৮

রাহাত আহমেদ বলেছেন: প্লাস দিলাম ।

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ রাত ২:৩৯

লাইটহাউজ বলেছেন: ধন্যবাদ।

৩| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ রাত ২:২৯

রাতমজুর বলেছেন: ধন্যবাদ লাইটহাউজ।

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ রাত ২:৩১

লাইটহাউজ বলেছেন: এখন পুরোটা দিয়েছি। বিডিনিউজ হতে সংগৃহীত।

৪| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ রাত ২:৩২

লাইটহাউজ বলেছেন: গত ২৩ ডিসেম্বর ঢাকায় মারা গেলেন ভাষাসৈনিক মাহবুব উল আলম চৌধুরী। তিনি জন্মেছিলেন চট্টগ্রামের রাউজানে, ৭ নভেম্বর ১৯২৭ সালে। বায়ান্নোর ২১শে ফেব্রুয়ারির সঙ্গে মাহবুব উল আলম চৌধুরীর নাম ঐতিহাসিক ভাবে যুক্ত হয়ে আছে। তিনি একুশের হত্যাকাণ্ডের পরে চট্টগ্রামে জ্বরাক্রান্ত অবস্থায় মুখে মুখে ‌’কাঁদতে আসিনি ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি’ কবিতাটি রচনা করেন। কবিতাটি প্রকাশের পর পরই বাজেয়াপ্ত হয়। দীর্ঘকাল নিষিদ্ধ থাকার কারণে এক সময় কবিতাটি হারিয়ে যায়। এই কবিতা নিয়ে নানা সময় লিখেছেন ড. আনিসুজ্জামান, খোন্দকার মোহাম্মদ ইলিয়াস (কবিতার প্রথম দুই শ্রোতার একজন), ড. রফিকুল ইসলাম, ড. হায়াৎ মামুদ, বশীর আল হেলাল সহ অনেকে। কারো কাছ থেকেই কবিতাটির পূর্ণাঙ্গ তথ্য পাওয়া যায় নি। এমনকি কবি নিজেও তা দিতে পারেন নি। দীর্ঘদিন পরে ১৯৯১ সালে অধ্যাপক চৌধুরী জহুরুল হকের গবেষণায় কবিতাটি সম্পূর্ণ রূপ পায়। তিনি এই কবিতা বিষয়ে তার বই প্রসঙ্গ : একুশের প্রথম কবিতা রচনা করেন। উল্লেখ্য, চৌধুরী জহুরুল হক এই কবিতার দুর্লভ কপি উদ্ধার করেন প্যারামাউন্ট প্রসেস এন্ড প্রিন্টিং ওয়র্কসের স্বত্বাধিকারী আবু মোহাম্মদ তবিবুল আলমের কাছ থেকে। তবিবুল আলম সংগ্রহ করেছিলেন কম্পোজিটার নুরুজ্জামান পাটোয়ারীর কাছ থেকে।

৫| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ রাত ২:৩৪

লাইটহাউজ বলেছেন: প্রাসঙ্গিক মনে করে দিয়ে দিলাম বিডিনিউজ থেকে।

কবি মাহবুব উল আলম চৌধুরীর সাক্ষাৎকার
সাক্ষাৎকার গ্রহণ: ইলু ইলিয়াস

[চৌধুরী জহুরুল হকের উদ্বারকৃত কবিতাটির নির্ভুল মূল পাঠ দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত হওয়ার পরে বাংলা একাডেমীর একুশের কবিতা POEMS 21st(১৯৯২), একুশের কবিতা (১৯৯৯) - তে মুদ্রিত হলো ১৯৮২ খ্রিস্টাব্দে ড. রফিকুল ইসলাম কর্তৃক কবির স্মৃতি থেকে উদ্বারকৃত কবিতাটির কথিত অংশ ও কবির গ্রন্থে মুদ্রিত অংশের মিশেলে আরো ভয়ানক এক ভ্রান্ত পাঠ । এমতাবস্থায় এই বহুমাত্রিক বিকৃতি থেকে ঐতিহাসিক কবিতাটির মূল পাঠ সংরক্ষণ ও সর্বজনের কাছে পৌঁছে দেয়ার সংকল্পে একুশের পঞ্চাশ বছর পূর্তিতে সংশ্লিষ্ট গবেষণাকর্ম সহ কবিতাটির মূল পাঠ গ্রন্থাকারে প্রকাশের উদ্যোগ নেন গবেষক অধ্যাপক চৌধুরী জহুরুল হক। এ ব্যাপারে কবির প্রতিক্রিয়া ও আরো প্রাসঙ্গিক নানা বিষয়ে জানার জন্য ৯/২/২০০২ তারিখে আমি লিপ্ত হই কবির সঙ্গে এক অন্তরঙ্গ আলাপচারিতায়।]

ইলু ইলিয়াস: আপনি একুশের প্রথম কবিতার রচয়িতা। আজ পঞ্চাশ বছর পর এ ব্যাপারে আপনার অনুভূতি কেমন?

মাহবুব উল আলম চৌধুরী: ১৯৫২ সালে আমি যখন এই কবিতাটি রচনা করি তখন আমার বয়স ছিল পঁচিশ বছর। এখন আমি পঁচাত্তর বছরে পদার্পণ করেছি। যে জন্য এ কবিতাটি লিখেছিলাম, যে কারণে ভাষা-আন্দোলন করেছিলাম তার অসম্পূর্ণতা দেখে–এত বছর পরে বাংলা ভাষার প্রতি অবহেলা দেখে আমি ক্ষুব্ধ এবং মনে হচ্ছে আমি যদি যৌবনকে ফিরে পেতাম তাহলে আরেকটি ভাষা-আন্দোলনের সূচনা করতাম।

ইলু ইলিয়াস: কবিতাটির জন্যে আপনি খ্যাতি পেয়েছেন, পেয়েছেন ব্যাপক পরিচিতি। এতে কি আপনি তৃপ্ত?

মাহবুব উল আলম চৌধুরী: খ্যাতির একটি বিড়ম্বনা আছে। ফেব্রুয়ারি মাস আমার জন্য যন্ত্রণার মাস। আগে যখন সংবর্ধনা দেওয়া হতো বিভিন্ন জায়গায় তাতে আমি খুশি হতাম। ইদানিং আমি খুশি হতে পারি না। আমার বয়সের কারণে আমি কোথাও যেতে পারি না। গুছিয়ে কথা বলতে পারি না। মনের মতো করে কথা বলতে পারি না। স্মৃতিতে বিভ্রম চলে এসেছে। ফলে হয়েছে কি…আমি তৃপ্ত এ কথা বলতে পারছি না এ কারণে কবিতাটি আমার একমাত্র পরিচয় হয়ে যাওয়ার ফলে আমি দীর্ঘ তিরিশ বছর দেশের জন্য, সংস্কৃতির জন্য, সাহিত্যের জন্য—আমি যে সীমান্ত পত্রিকা বের করেছি, বিশ্বশান্তি আন্দোলন করেছি, আমি যে সাংস্কৃতিক সম্মেলনের উদ্যোগ নিয়েছিলাম চট্টগ্রামে—আমার অন্যান্য কীর্তি এত ঢাকা পড়ে গেছে যে, লোকে আমাকে শুধু ‘কাঁদতে আসিনি ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি’র কবি হিসেবে চিহ্নিত করে। কাজেই এ কবিতাটি আমার একাধারে বন্ধু এবং একাধারে শত্রু।

ইলু ইলিয়াস: যে ভাবে আপনি খ্যাতি পেয়েছেন সেইভাবে আপনার কবিতা কি মূল্যায়িত হয়েছে?

মাহবুব উল আলম চৌধুরী: খ্যাতির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে কবিতাটি মূল্যায়িত হয়নি। কারণ এই কবিতা যদিও মনে হয়ে আকস্মিকভাবে আমি লিখেছি কিন্তু এটির প্রস্তুতি ছিল প্রায় পঁচিশ বছরের। আমার পঁচিশ বছরের সামাজিক চেতনা এবং রাজনৈতিক চেতনা এতে প্রতিফলিত হয়েছে। যে কারণে আমি এ কবিতার শেষাংশে বলতে পেরেছিলাম—

যে দিন আমরা লড়াই করে জিতে নেব
স্বাধীনতার দিন
সে দিন বিজয়ী হয়ে সে আখড়া থেকে
বের হবো
খুনি জালিমকে
ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলাবোই ঝুলাবো।

কাজেই আমার লক্ষ্যে, আমার চেতনার কারণে অবশ্যই স্বাধীনতার কথাটি এ কবিতাতে এসেছে। যারা এ বিষয়ে আলোচনা করেছেন, দেখি যে বিষয়টি তারা উপেক্ষা করেছেন। এবং এতে যে বিভিন্ন বিষয়ের আমি অবতারণা করেছি তারা তা উপেক্ষা করেছেন। কাজেই যে ভাবে খ্যাতি পেয়েছি সে ভাবে এ কবিতার মূল্যায়ন হয়নি।

ইলু ইলিয়াস: ১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দে হাসান হাফিজুর রহমানের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় একুশে ফেব্রুয়ারী সংকলন। সংকলনটি ভাষা-আন্দোলনের সাহিত্যিক, সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে সর্বজনের কাছে স্বীকৃত হয়েছে। এই সংকলনটিতে কিন্তু আপনার রচিত একুশের প্রথম কবিতা ‘কাঁদতে আসিনি ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি’ সংকলিত হয় নি। এ ব্যাপারে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?

মাহবুব উল আলম চৌধুরী: ১৯৫২ সালে কবিতাটি প্রকাশিত হওয়ার পর পরই সরকার এক নির্দেশবলে এটিকে বাজেয়াপ্ত ঘোষণা করে। ফলে এই কবিতাটি আর প্রকাশ্যে কোনো ভাবে কোনো পত্রিকায় ছাপাবার অবকাশ ছিল না। হাসান হাফিজুর রহমান যখন এই সংকলনটি বের করেন, হাসান হাফিজুর রহমান ব্যক্তিগতভাবে আমার বন্ধু, সে হয়তো ঐ কারণে এই কবিতাটি তাঁর সংকলনে অন্তর্ভুক্ত করেন নি।

ইলু ইলিয়াস: ১৯৮৮ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত আপনার কাব্যগ্রন্থটিতে ‘লেখকের নিবেদন’ অংশে মফিদুল হকের সৌজন্যে কবিতাটির মূল অংশ পাওয়ার কথা জানিয়েছেন আপনি। কিন্তু ১৯৯২ খ্রিস্টাব্দে দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত ‘চল্লিশ বছর পরে আরেক ফাল্গুনে একুশের প্রথম কবিতার পূর্ণপাঠ’ শীর্ষক রচনায় অধ্যাপক চৌধুরী জহুরুল হক দাবি করেছেন, তাঁরই উদ্ধারকৃত—যা আজাদীতে প্রকাশিত হয়েছে সেটিই হলো আপনার কবিতাটির আদি ও মূল পাঠ। এ ব্যাপারে আপনার বক্তব্য জানতে চাই।

মাহবুব উল আলম চৌধুরী: আমি চিরকালই সত্যের কাছে মাথা নত করতে অভ্যস্ত। যেটা সত্য সেটাকে আমি মেনে নি। কাজেই যে পাঠটা আমার কাব্যগ্রন্থে গ্রহণ করা হয়েছে সেটা হাতের লেখা এবং সে সম্পর্কে কোনো সঠিক ধারণা আমার ছিল না। ফলে চৌধুরী জহুরুল হক যেটি উদ্ধার করেছেন সেটিই আমি মেনে নিয়েছি।

ইলু ইলিয়াস: দীর্ঘ এক যুগ ধরে নানা অনুসন্ধান ও গবেষণার পর আপনার কবিতাটির আদি ও মূলপাঠ সম্প্রতি গ্রন্থাকারে প্রকাশের একটি উদ্যোগ নিয়েছেন গবেষক অধ্যাপক চৌধুরী জহুরুল হক। তা কি আপনি জানেন? এ ব্যাপারে আপনার অনুভূতি বা প্রতিক্রিয়া আমাদের জানাবেন কি?

মাহবুব উল আলম চৌধুরী: চৌধুরী জহুরুল হক আমার স্নেহভাজন একজন সাহিত্যিক। তার উপর আমার গভীর আস্থা আছে। দীর্ঘকাল ধরে তার কার্যকলাপ আমার পরিচিত। ফলে সে যে কাজটি হাতে নিয়েছে সেখানে যে সত্য নিষ্ঠার পরিচয় দেবে, বস্তুনিষ্ঠার পরিচয় দেবে এই বিশ্বাস আমার আছে বলে এতে আমার ক্ষুব্ধ হওযার কোনো কারণ নেই, আমার প্রতিক্রিয়া সদর্থক।

ইলু ইলিয়াস: বাংলাদেশের সাহিত্যে একুশের প্রথম কবিতা আপনার রচিত ‘কাঁদতে আসিনি ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি’-র প্রভাব নিঃসন্দেহে অনেক। এ রকম উজ্জ্বল ভূমিকার পর উত্তরকালে আপনি আর সাহিত্যে তেমন সক্রিয় থাকেন নি কেন?

মাহবুব উল আলম চৌধুরী: আমি সাহিত্য, সংস্কৃতি এবং রাজনীতিকে একই ধারায় প্রবাহিত করতে চেয়েছি—প্রবাহিত করেছি আমার কর্মে ও জীবনে। আমার কবিতা পড়লেই বুঝবেন রাজনীতির প্রভাব তাতে খুব বেশি ছিল। এক সময় আমি বামপন্থী রাজনীতিতে বিশ্বাস করতাম এবং সক্রিয় ছিলাম। কাজেই হতাশার কারণে রাজনীতি ছেড়ে দেওয়ার পর আমার যে প্রেরণা সেটা চলে যাওয়ায় আমি আর বেশি কবিতা লিখতে পারিনি।
mahbubul-alam-choudhury-3.jpg
পত্নী জওশন আরা রহমানের সঙ্গে

ইলু ইলিয়াস: আমরা কিন্তু খালাম্মার কাছে জেনেছি আপনি এখনো প্রায়শই প্রতিদিন কবিতা লিখছেন, কিন্তু প্রকাশ করছেন না। কেন?

মাহবুব উল আলম চৌধুরী: আমি প্রকাশ করছি না সেটা ঠিক না। আমি মূলত সব্যসাচীর মতো কবিতা না লিখলেও প্রচুর কবিতা তারপরে লিখেছি। কিন্তু আমার স্বভাবের মধ্যে একটা আলসেমি দেখা দিয়েছে পরবর্তীকালে। ফলে কোনো কবিতা কোনো পত্রিকায় পাঠানো কিংবা সেটা প্রকাশের তেমন তাড়না অনুভব করি না। মনের আনন্দে লিখি, আর মাঝে মাঝে যেগুলো প্রকাশিত হয়েছে সেগুলোও বিশেষ সংখ্যায়—যেমন সংবাদ ঢাকা বিশেষ সংখ্যায় লেখার জন্য তারা যখন অনুরোধ করে সে অনুরোধেও লিখি—মাঝে মাঝে সেগুলো প্রকাশিত হয়। আর যেগুলো নিজের মনের আনন্দে লিখি সেগুলো এদিক ওদিক ছড়িয়ে পড়ে। আমি আমার লেখার প্রতি আমার সৃষ্টির প্রতি, একটু নিষ্ঠুর। কারণ আমার মধ্যে একজন সমালোচকের মন আছে। আমি বিষ্ণুদের কবিতার এক সময় সমালোচনা করেছি। কাজেই যখনই দেখি আমার কবিতা বিশিষ্ট হতে পারছে না, তখন মনে হয় লিখে কী লাভ!

৬| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ রাত ২:৩৬

ফারহান দাউদ বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ কবিতা এবং গানের জন্য।

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ রাত ২:৩৯

লাইটহাউজ বলেছেন: ধন্যবাদ।

৭| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ রাত ২:৩৮

শফিউল আলম ইমন বলেছেন: অসাধারন একটি কবিতা।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ রাত ২:৪০

লাইটহাউজ বলেছেন: শহীদদের পাশাপাশি কবিদের প্রতিও শ্রদ্ধাঞ্জলি।

৮| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ রাত ২:৪৭

শফিউল আলম ইমন বলেছেন: অথচ আমি যতটুকু জানি উনাকে একুশে পদক দেয়া হয়নি।
আমাদের জন্য এটা অনেক বড় লজ্জা।
যাদের একুশে পদক দেয়া উচিত তাদের না দিয়ে দলাদলি করে এরকম নাম না জানা মানুষরে দেয়......একুশে পদক নিজেও লজ্জা পায়।

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ রাত ২:৫০

লাইটহাউজ বলেছেন: যদি তাকে সত্যিই না দেয়া হয়ে থাকে তবে জাতি হিসেবে আমাদের লজ্জার বিষয়।

৯| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ রাত ২:৫৮

রাতমজুর বলেছেন: আবার ধন্যবাদ লাইটহাউজ।

১০| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ ভোর ৫:১৯

রাশেদ বলেছেন: ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য।

১১| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ ভোর ৫:২১

নরাধম বলেছেন: প্রিয় পোস্ট। অনেক ধন্যবাদ।

১২| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ সকাল ১১:০৫

এস্কিমো বলেছেন: ধন্যবাদ।

১৩| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ দুপুর ১২:০১

লাইটহাউজ বলেছেন: সবাইকে ধন্যবাদ।

১৪| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ রাত ১২:৪৯

শফিউল আলম ইমন বলেছেন: প্রিয়'তে এ্যড করতে ভুলে গিয়েছিলাম তাই আবার আসলাম।
একুশে পদকের বিষয়টি ভাইয়া আমি সমকাল পত্রিকায় পড়েছিলাম (মাস কিংবা দু'মাস আগে)।
আসলে দুঃখজনক সাথে সাথে আমাদের জন্য লজ্জার।
আবারও ধন্যবাদ আপনাকে কবিতাটা দেয়ার জন্য।

১৫| ২১ শে অক্টোবর, ২০১২ বিকাল ৪:০৬

মোরশেদ পারভেজ বলেছেন: ভালো লাগা না জানিয়ে পারলাম না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.