![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ইলিয়াস আলীর পর সালাহ উদ্দিন নিখোঁজ, সত্যিই ঘটনাটি বিস্ময়কর !!
আজও সালাহ উদ্দিন আহমেদের খোঁজ মেলেনি। আজ তাঁর নিখোঁজ হওয়ার ২২তম দিন। তাঁর স্ত্রী ও ছেলেমেয়ে প্রতিদিন তাঁর অপেক্ষায় থাকে। কিন্তু তাদের অপেক্ষার দিন আর শেষ হয় না। প্রিয়জনকে হারানোর বেদনা তাদের প্রতিনিয়ত কুরে কুরে খাচ্ছে। তাদের ভেজা চোখ দেখলে বুকটা হাহাকার করে ওঠে। ইলিয়াস আলীর পর সালাহ উদ্দিন আহমেদের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনাটি সত্যি বিস্ময়কর।
দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কোন পর্যায়ে গেলে একজন রাজনীতিকের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা ঘটতে পারে! আমরা বিশ্বাস করতে চাই না যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এ ব্যাপারে পুরোপুরি অন্ধকারে আছে। তাহলে তো বলতে হয়, দেশে আইনশৃঙ্খলা বলে কিছু নেই! তাহলে তো কোনো মানুষই নিরাপদ নয়! যদি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সেটা মেনে নেয়, তাহলে আর আমার বলার কিছু নেই। আর সেটা মেনে নিলেও তারা দায়িত্ব এড়াতে পারে না। দেশের প্রত্যেক নাগরিকের জান-মালের নিরাপত্তা দেওয়া সরকারের দায়িত্ব। সরকার কি সে দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করছে?
প্রশ্ন জাগে, সালাহ উদ্দিন আহমেদ কেন নিখোঁজ হলেন? নাকি তাঁকে গুম করা হয়েছে? কারা করেছে? কেন করেছে? তিনি কি কোনো সন্ত্রাসী? নাকি তিনি বড় কোনো অপকর্ম করেছেন যে তাঁর প্রতিপক্ষ প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে তাঁকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে গেছে! সে ধরনের কোনো ঘটনা ঘটলেও তো এত দিনে তা ফাঁস হয়ে যাওয়ার কথা। তিন সপ্তাহ পরও তাঁর ব্যাপারে কেউ কিছুই জানে না, তা কী করে হয়! তাহলে কি বিএনপির মুখপাত্র হিসেবে নিযুক্ত হওয়াই তাঁর ‘অপরাধ’! এ ছাড়া আর কোনো ‘অপরাধ’ তিনি করেছেন কি না আমার জানা নেই। কিন্তু তাই বলে একেবারে নিখোঁজ! নিশ্চয়ই সালাহ উদ্দিন নিজে নিজে আত্মগোপন করেননি! আর যদি আত্মগোপন করেও থাকেন, তাহলে তো পুলিশ বাহিনীরই উচিত তাঁকে খুঁজে বের করা।
এই ইস্যুর সঙ্গে শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীরই নয়, সরকারের ভাবমূর্তিও জড়িয়ে আছে।
সালাহ উদ্দিন আহমেদের এখনকার যে অবস্থান, তাতে আত্মগোপন করা বা পালিয়ে বিদেশে চলে যাওয়ার মানুষ তিনি নন। এটা পুরোপুরি তাঁর সঙ্গে বেমানান। অবশ্য তিনি যখন বিএনপির মুখপাত্র হন তখনই আমরা আশঙ্কা করেছিলাম, এই লোকটার কপাল পুুড়েছে! না জানি কত মামলার আসামি হতে হয় তাঁকে! না জানি কত হয়রানির শিকার হতে হয়!
তাঁর আগে বিএনপির মুখপাত্র ছিলেন রিজভী আহমেদ। তিনি দীর্ঘদিন বিএনপির নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ছিলেন এবং সেখানে বসেই বিএনপির মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করতেন। এ কারণে তাঁকে অনেক নিপীড়ন-নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে। একপর্যায়ে তাঁর অসুস্থতার কথা বলে অজ্ঞাত পরিচয় কিছু ব্যক্তি তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করাল। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে রিজভী আহমেদ সবার অগোচরে হাসপাতাল ছাড়লেন। তারপর চলে গেলেন অজ্ঞাত স্থানে। সেখান থেকেই তিনি বিএনপির মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করতেন। রিজভী আহমেদ গ্রেপ্তারের পর বিএনপির পক্ষ থেকে মুখপাত্রের দায়িত্ব দেওয়া হয় সালাহ উদ্দিন আহমেদকে। দায়িত্ব পাওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি ভালোই ছিলেন। মুখপাত্রের দায়িত্ব পাওয়ার পর তিনিও চলে গেলেন অজ্ঞাত স্থানে। তিনি উত্তরার একটি বাড়িতে থাকতেন এবং সেখান থেকেই গণমাধ্যমে বিএনপির সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠাতেন।
সালাহ উদ্দিন আহমেদ বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব এবং সাবেক যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী। তিনি যখন সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন তখন থেকেই ভদ্র ও বিনয়ী একজন মানুষ। একসময় তিনি সরকারি চাকরি ছেড়ে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। তাঁর সঙ্গে আমার কালেভদ্রে দেখা হতো। কুশলবিনিময় হতো। ওই পর্যন্তই। তাঁর সঙ্গে সর্বশেষ দেখা হয় গত বছর, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোরশেদ খানের অফিসে। তারপর আর দেখা হয়নি। তাঁর সঙ্গে খুব যে সখ্য ছিল, তাও নয়। এর পরও একজন চেনাজানা মানুষের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনাটিতে আমি দারুণভাবে মর্মাহত। পত্রিকার পাতায় তাঁর ছবিটা দেখলেই বুকটা কেমন ধড়ফড় করে ওঠে!
আসন্ন সিটি নির্বাচন এবং বিএনপির সালাহ উদ্দিন ইস্যু ২. রাজনীতির উত্তাপ বছরের শুরু থেকেই ছিল। সেই উত্তাপে সারা দেশের মানুষ যখন উদ্বিগ্ন-উৎকণ্ঠিত, তখন সরকারের সিটি নির্বাচনের রাজনৈতিক কৌশলটি বেশ কাজে দিচ্ছে বলেই মনে হচ্ছে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে রাজনীতির আলোচনাটা নির্বাচনমুখী হয়ে পড়েছে। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচন আগামী ২৮ এপ্রিল। ইতিমধ্যেই আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সমর্থন নিয়ে অনেকে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। অনেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছেন। তবে মামলা থাকার কারণে বিএনপিদলীয় নেতারা সরাসরি মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেননি। তাঁদের পক্ষে তাঁদের ভাই-বোন, স্ত্রী, ছেলেমেয়ে ও আইনজীবীরা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এদিকে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা প্রচারে নেমে পড়েছেন। অথচ বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এতে একপক্ষীয় প্রচারণায় পরিণত হচ্ছে নির্বাচনী পরিবেশ। এটা শুভ লক্ষণ নয়।
©somewhere in net ltd.