নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি ইতিবাচক চিন্তার শক্তিতে বিশ্বাস করি এবং আমার কাজ এবং কথার মাধ্যমে অন্যদের অনুপ্রাণিত করার চেষ্টা করি। আমার ব্লগে আসার জন্য ধন্যবাদ। আসুন, একসাথে কাজ করে সফলতার পথে এগিয়ে যাই!
অনার্স কমপ্লিট করে একটি অসরকারী প্রতিষ্ঠানে মাঠকর্মী হিসেবে সবেমাত্র চাকুরীতে প্রবেশ করেছি। তখন আমার কাজ ছিলো আশুলিয়া এলাকার বিভিন্ন দোকানে টাকা লোন দেয়া এবং প্রতিদিন কিস্তি আদায় করা।
এই কাজ করতে যেয়ে তখন আমার সাথে আশুলিয়া ছয়তলা ও নরসিংহপুর বাজারের অনেক দোকান মালিক ও ব্যবসায়িদের সাথে আলাপ পরিচয় তৈরি হয়। প্রতিদিন যখন টাকা কালেকশন করতে যেতাম তখন দোকানীরা ব্যস্ততার কারনে আমাকে পরে আসতে বলতো আবার কখনও কখনও দেখা যেত দোকানে বসে অপেক্ষা করতে হতো। এরকম সময়ে আমি লক্ষ্য করতাম দোকানের বেশিরভাগ ক্রেতা গার্মেন্ট ওয়ার্কার। বিভিন্ন দোকানে প্রতিদিন যাওয়ার কারনে তাদের ব্যবসার প্রকৃতি, বিক্রির পরিমান, আর্থিক অবস্থা সর্বপরি অত্র এলাকার চলমান অর্থনীতি সম্পর্কে আমার কিছুটা ধারনা জন্মে। দেখা যেত যে, প্রতিমাসের ০১ থেকে ০৭ তারিখ পর্যন্ত আমার কিস্তি কালেকশন কম হতো আবার ০৭ থেকে ১৫ তারিখ পর্যন্ত টার্গেট ফিলআপ হয়ে যেত; অন্যদিকে মাসের ২০ তারিখের পর থেকে দোকানীদের হাতে টাকা কমে যেত তাই কিস্তি পরিশোধ অনিয়মিত হয়ে যেত। প্রথমদিকে আমি ব্যপারটা বুঝতাম না। পরে আস্তে আস্তে জানতে পারি যে, গার্মেন্ট ওয়ার্কারদের স্যালারীর সাথে এখানকার অর্থনীতি পুরোপুরি জড়িত। বেশির ভাগ ফ্যাক্টোরীতে স্যালারী হয় মাসের ০৭/০৮ তারিখ তাই এর পরদিন থেকে মার্কেটে প্রচুর টাকার রোলিং হয়; ফলোশ্রুতিতে দোকানীরা পরবর্তী সপ্তাহখানিক বকেয়াসহ নিয়মিত কিস্তি পরিশোধ করে।
গার্মেন্ট ওয়ার্কাররা মূলত সরা মাস বিভিন্ন দোকানে বাকিতে পন্য ক্রয় করে এবং স্যালারী পেলে টাকা পরিশোধ করে। একজন ওয়ার্কর যখন স্যালারী পায় তখন তার টাকা সিংহভাগই চলে যায় রুমভাড়া এবং দোকানের বাকি পরিশোধ করতে করতে। এর পর তাদের হাতে খুব সামান্যই টাকা অবশিষ্ট থাকে যা দিয়ে মাসের অন্য দিনগুলো চলা যায়।
তাহলে প্রশ্ন আসে তারা চলে কি করে? ২০০৬ সালে একজন গার্মেন্ট ওয়ার্কারের সর্বনিম্ন মজুরী ছিলো ১৮০০/- টাকা, এরপর ২০১০ সালে মজুরী বৃদ্ধি পেয়ে হয় ৩০০০/- টাকা এবং সর্বশেষ ২০১৩ সালে হয়েছে ৫৩০০/- টাকা। আমাদের কাছে মনে হতে পারে যে এত অল্প টাকা দিয়ে তারা কি করে জীবন নির্বাহ করে?
যারা আশুলিয়া, গাজিপুর অঞ্চলে বসবাস করেন তারা জানেন যে, এখানে বিভিন্ন বাড়িতে স্বল্প আয়ের মানুষ বিশেষ করে গার্মেন্ট ওয়ার্কাররা ভাড়া থাকেন। একটি ছোট রুমে চার পাঁচ জন ছেলে অথবা মেয়ে একত্রে থাকে। দূর থেকে দেখলে কিছুটা অমানবিক বলে মনে হতে পারে । কিন্তু যদি কাছে থেকে দেখা হয় তবে বুঝবেন ওরা প্রচন্ড হিসাবী। ছোট্ট একটি উদাহরন দিচ্ছি, চার জন হেলপার এক সাথে রুম ভাড়া নিয়ে থাকলে তারা দুইজনের বেতনের টাকা ঘর ভাড়া এবং খাওয়ার কাজে ব্যবহার করে এবং বাকি দুজনের বেতন জমা করে। প্রতি মাসে একজন সেই জমানো টাকা নিজ বাড়িতে পাঠায়। নিকট আত্নীয়দের কাছে।
এমন অনেক পরিবার আছে যেখানে শুধুমাত্র বৃদ্ধ বাবা-মা এবং ছোট শিশু বাদে সবাই গার্মেন্টস ওয়ার্কার। যদি একটি পরিবারে চারজন ব্যক্তি সুইং অপারেটর হিসাবে কাজ করে তবে তারা বেতন এবং ওভারটাইমসহ প্রতিমাসে গড়ে দশ হাজার টাকা আয় করে। অর্থাৎ চার জনের মোট আয় চল্লিশ হাজার টাকা। এর সাথে দুটি ঈদ বোনাস এবং বাৎসরিক ছুটির টাকা যোগ করুন। কত হয় ? গার্মেন্টস ওয়ার্কাররা একটি পরিবারে সম্মিলিত ভাবে অন্য সেক্টরের থেকে অনেক বেশি টাকা আয় করে।
অনেকে বছর শেষে জমানো টাকা দিয়ে গ্রমে জমি কেনে, বাড়ি করে, ছেলে-মেয়ের লেখা পড়া শেখায়।
আলোর নীচে যেমন অন্ধকার থাকে তেমন এই পজেটিভ চিত্রের বিপরীতে রয়েছে নেগেটিভ চিত্র। গার্মেন্টসে যে সব ছেলে কাজ করে তারা প্রচুর বেহিসাবী। প্রচুর টাকা যেন তেন ভাবে নষ্ট করে।
শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু
উত্তরা, ঢাকা।
www.facebook.com/snalam.raju
©somewhere in net ltd.