নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি একজন সাধারন মানুষ
গরু-মহিষের নাড়িভুঁড়িও (ওমাসম) এখন রপ্তানিপণ্য। অপ্রচলিত এ পণ্যের রপ্তানি দিন দিন বাড়ছে। বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর ১৫০-২০০ কোটি টাকার সমমূল্যের ওমাসম বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। এসব পণ্যের সিংহভাগই রপ্তানি হচ্ছে প্রধানত চীন, হংকং, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামে। রপ্তানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এ খাতের রপ্তানিকারকেরা মিলে বাংলাদেশ নাড়িভুঁড়ি ও জননেন্দ্রিয় রপ্তানিকারক সমিতি নামে নতুন একটি সমিতি গঠনের উদ্যোগ নিয়েছেন। প্রস্তাবিত সেই সমিতি সূত্রে এ রপ্তানি-সংক্রান্ত তথ্য পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, দেশে বর্তমানে ২৫ জন নাড়িভুঁড়ি রপ্তানিকারক রয়েছেন। প্রত্যন্ত অঞ্চলে লোক ঠিক করে বছরজুড়েই তাঁরা ওমাসম সংগ্রহ করেন। কোরবানির সময় সংগ্রহ করা হয় বছরের মোট চাহিদার এক-তৃতীয়াংশ। তারপর প্রক্রিয়াজাতের মাধ্যমে নাড়িভুঁড়ি থেকে চর্বি বের করে ফেলা হয়।
চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে মাসে ১৫টি কনটেইনার ওমাসম রপ্তানি হয় এবং একেকটি কনটেইনারে ৬০ থেকে ৭০ হাজার পিস ওমাসম থাকে বলে জানান প্রস্তাবিত সমিতির সদস্যরা। ইংরেজিতে এই নাড়িভুঁড়ির নাম ‘ওমাসম’, যা পশুর তৃতীয় পাকস্থলী নামেও পরিচিত। একসময় উচ্ছিষ্ট হিসেবে তা খাল-নালা ও ডোবায় ফেলে দেওয়া হতো।
এক টন (এক হাজার কেজি) প্রক্রিয়াজাত করার পর ৭০০ কেজি ওমাসম পাওয়া যায় বলে জানান দেশের অন্যতম ওমাসম রপ্তানিকারক বিএমসি ফুড ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী বাবুল মজুমদার। তিনি বলেন, বিপুল পরিমাণ ওমাসম রপ্তানির বাজার রয়েছে বহির্বিশ্বে। একটু সচেতন হলেই সেই বাজারটা ধরা সম্ভব। এতে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন ও পরিবেশদূষণ রোধ—দুই দিক থেকেই লাভ হবে।
ওমাসম দিয়ে উন্নত মানের স্যুপ ও সালাদ তৈরি হয় এবং তা চীনাদের কাছে বেশ জনপ্রিয় খাবার বলে জানান দ্য কনফারেন্স ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী ইয়াসিনুল ইসলাম আরাফাত। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ইউরোপেও ওমাসম রপ্তানির চেষ্টা চলছে।
দেশের ওমাসম রপ্তানিকারকদের বেশির ভাগই চট্টগ্রাম অঞ্চলের। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে স্কাই নেট সি ফুডস কোম্পানি, কনফারেন্স ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, ক্যামরিজ সি ফুড ইন্টারন্যাশনাল, আরএসএম ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, স্ট্যান্ডার্ড অ্যালাইড ফুড ইন্টারন্যাশনাল, জিআর এক্সপো ইন্টারন্যাশনাল, ভিভিড এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ ইত্যাদি।
অপ্রচলিত পণ্য শ্রেণিতে ওমাসম রপ্তানিতে বর্তমানে ৫ শতাংশ নগদ সহায়তা দেওয়া হয়। প্রস্তাবিত সমিতিটি অবশ্য ৩০ শতাংশ নগদ সহায়তার দাবি করছে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) সূত্র জানায়, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ১১৭ কোটি ৬৮ লাখ টাকা মূল্যের ওমাসম রপ্তানি হয়। অবশ্য ওমাসম রপ্তানি সমিতির দাবি হচ্ছে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে তা ১৫০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। চলতি অর্থবছরে তা আরও বাড়বে। বিশ্বে ৩২ হাজার কোটি টাকার ওমাসমের বাজার রয়েছে বলে সমিতির কাছে তথ্য রয়েছে।
স্বপ্নদ্রষ্টা মোহাম্মদ ইলিয়াছ:
চট্টগ্রামের পূর্ব শহীদনগরের মোহাম্মদ ইলিয়াছ মূলত ওমাসম ব্যবসায়ের স্বপ্নদ্রষ্টা। গত শনিবার মুঠোফোনে তিনি প্রথম আলোকে এ ব্যবসায়ের নেপথ্যের গল্প শোনান। বলেন, ‘২০০০ সালের ঘটনা। একদিন দেখি, একজন পাহাড়ি আর দুজন বাঙালি গরু জবাইয়ের পর কসাইখানা থেকে নাড়িভুঁড়ি বস্তায় ভরে নিয়ে যাচ্ছেন। এগুলো দিয়ে কী করেন জিজ্ঞেস করলে তাঁরা কথা বলতে চাননি। কৌতূহল বাড়তে থাকে আমার। একদিন তাঁদের পিছু পিছু যাই। দেখি কালুরঘাট এলাকার টিনের একটি ঘরে লবণ দিয়ে নাড়িভুঁড়ি মজুত করা হচ্ছে। পরে জানলাম, টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে মিয়ানমার ও থাইল্যান্ড ঘুরে এগুলো চোরাই পথে চীনে পাচার হয়।’
মোহাম্মদ ইলিয়াছ বলেন, ‘কয়েক দিন তাঁদের অনুসরণ করি এবং একদিন তাঁদের ট্রাকের পেছন পেছন টেকনাফ স্থলবন্দর পর্যন্ত যাই। এরপর আমি জেদ করি যে ব্যবসা আমি এটাই করব, তবে বৈধ পথে।’
একদিন হঠাৎ ঢাকা থেকে দুই বন্ধুর ফোন পান মোহাম্মদ ইলিয়াছ এবং এই ফোনই তাঁর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। তিনি বলেন, ‘২০০৩ সালের ঘটনা। দুই বন্ধু নেত্রকোনার উজ্জ্বল চাকমা ও তপন চাকমা। ঢাকার অভিজাত হোটেলে রান্না করেন। জানান, ভারতের মেঘালয় থেকে ডি কংলা নামের এক নারী এসেছেন ওমাসম কিনতে, আমার পক্ষে সম্ভব কি না। আমি ঢাকার বারিধারায় এসে তাঁর সঙ্গে দেখা করি। তিনিই প্রথম শিখিয়ে দেন ওমাসম থেকে গোবর পরিষ্কার, এরপর তা কাটা, ধোয়া, লবণ দেওয়া, হিমাগারে রাখা এবং গাড়িতে তোলার সব কলাকৌশল। তাঁর কাছে এক টন ওমাসম বিক্রি করি এক হাজার ডলারে।’
মোহাম্মদ ইলিয়াছ বলেন, এরপর পাকিস্তানি দুই ব্যবসায়ী তাহের সিদ্দিকী ও মো. নাছির চট্টগ্রামে আসেন। তাঁদের সঙ্গে চুক্তি হয় টনপ্রতি ১ হাজার ২২৫ ডলারে। ২০০৪ সালে হংকংয়ে রপ্তানি করি ৭ কনটেইনার ওমাসম। এরপর ভিয়েতনামে। সেই থেকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। এই ফাঁকে অনেকেই ওমাসম ব্যবসায় নেমেছেন এবং ব্যবসায়ের ভবিষ্যৎ খুবই উজ্জ্বল।
রপ্তানি বৃদ্ধিতে করণীয় জানতে চাইলে ইলিয়াছ বলেন, ‘অসচেতনতার কারণে আমাদের দেশে অনেক ওমাসম নষ্ট হয়। অথচ তা এড়াতে এক কেজি লবণই যথেষ্ট। গরু বা মহিষ জবাইয়ের পর যে অংশ ফেলে দেওয়া হয়, লবণ দিয়ে রেখে খবর দিলেই আমরা নিজেদের লোক দিয়ে তা সংগ্রহ করতে পারি। দামও কম না, ৩০০ টাকা কেজি।’
সূত্র : দৈনিক প্রথম আলো।
২| ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১:২৭
মাহবুবুল আজাদ বলেছেন: বাহ
©somewhere in net ltd.
১| ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:৩৫
আহলান বলেছেন: ফ্যান্টাস্টিক ......!!