নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মানবসম্পদ ও কমপ্লায়েন্স ব্যবস্থাপনা আমার পেশা হলেও, লেখালিখির মাধ্যমে নিজের ভাবনাগুলো ভাগ করে নিতে আমি সবসময় আগ্রহী।

শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু

আমি ইতিবাচক চিন্তার শক্তিতে বিশ্বাস করি এবং আমার কাজ এবং কথার মাধ্যমে অন্যদের অনুপ্রাণিত করার চেষ্টা করি। আমার ব্লগে আসার জন্য ধন্যবাদ। আসুন, একসাথে কাজ করে সফলতার পথে এগিয়ে যাই!

শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু › বিস্তারিত পোস্টঃ

সুশাসনের সংকট: ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির ধারাবাহিকতা

১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ ভোর ৬:৪৬

বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি বহুল প্রচলিত প্রবাদ আছে—“যে যায় লঙ্কায়, সে হয় রাবণ।” এ প্রবাদটি ক্ষমতার স্বভাবগত রূপান্তর ও অপব্যবহারের বাস্তবতা তুলে ধরে। দেশের রাজনৈতিক ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, যে দলই রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এসেছে, দুর্নীতি ও অপশাসনের চক্রে আবদ্ধ হয়েছে। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি—সব সরকারই কম-বেশি দুর্নীতির অভিযোগের সম্মুখীন হয়েছে। সর্বশেষ, শেখ হাসিনা সরকারের ১৬ বছরের শাসনে ব্যাপক দুর্নীতি ও অপশাসনের অভিযোগ উঠেছে, যার ফলস্বরূপ দেশের জনগণ গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে। এই বিদ্রোহের চাপে শেখ হাসিনা দেশত্যাগে বাধ্য হন।

অন্তবর্তীকালীন সরকারের চ্যালেঞ্জ

দেশের জনগণ আশা করেছিল, অন্তবর্তীকালীন সরকার দুর্নীতিমুক্ত ও স্বচ্ছ শাসন নিশ্চিত করবে। কিন্তু সাম্প্রতিক কিছু ঘটনায় এই প্রত্যাশা ভেঙে যাচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে যে, কিছু ছাত্র সমন্বয়ক চাঁদাবাজি, তদবির, টেন্ডারবাজি এবং ঘুষ বানিজ্যের সঙ্গে জড়িত। বিএনপির সিনিয়র নেতা বরকত উল্লাহ বুলু দুইজন উপদেষ্টার বিরুদ্ধে বদলি বানিজ্যের মাধ্যমে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ তুলেছেন। এ ধরনের অভিযোগ শুধু বর্তমান সরকারের গ্রহণযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে না, বরং ভবিষ্যতে সুশাসন প্রতিষ্ঠার স্বপ্নকেও ভেঙে চুরমার করে দেয়।

দুর্নীতির কারণ ও এর প্রভাব

দুর্নীতি বাংলাদেশের প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থার একটি দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা। এর মূল কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে—
১. ক্ষমতার অপব্যবহার: দীর্ঘদিন ধরে দেখা যাচ্ছে, ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ দুর্নীতির প্রধান কারণ। ক্ষমতায় থাকা ব্যক্তি ও গোষ্ঠী নিজেদের স্বার্থে রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটপাট করে।
2. দায়বদ্ধতার অভাব: স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাবে দুর্নীতিবাজদের বিচার হয় না, ফলে তারা বারবার একই কাজ করার সুযোগ পায়।
3. দুর্বল আইন প্রয়োগ: দুর্নীতি দমন কমিশনসহ বিভিন্ন সংস্থা কার্যত রাজনৈতিক প্রভাবের শিকার হয়ে দুর্নীতি দমনে ব্যর্থ।
4. রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা: ছাত্র সংগঠন ও অন্যান্য দলীয় কর্মীদের দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ার পেছনে রয়েছে রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা।

এই দুর্নীতির প্রভাব সুদূরপ্রসারী। এটি কেবল রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয় ঘটায় না, বরং সাধারণ জনগণের মৌলিক অধিকারও ক্ষুণ্ণ করে। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, অবকাঠামো উন্নয়ন—সব খাতে দুর্নীতির প্রভাব লক্ষ করা যায়।

সুশাসন প্রতিষ্ঠার উপায়

দুর্নীতি দূর করে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব, যদি কার্যকর কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়—

স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ প্রশাসন: প্রশাসনের সব স্তরে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে এবং দুর্নীতিবাজদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা: রাজনৈতিক নেতা ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের কার্যক্রমের ওপর কঠোর নজরদারি থাকা প্রয়োজন।

স্বাধীন ও কার্যকর বিচার ব্যবস্থা: আদালতকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে।

গণমাধ্যম ও নাগরিক সমাজের শক্তিশালী ভূমিকা: দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার গণমাধ্যম ও নাগরিক সমাজ গঠন করতে হবে, যারা সরকারের অপশাসন ও দুর্নীতি নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করবে।

রাজনৈতিক সংস্কার: ছাত্র সংগঠন ও দলীয় কর্মীদের রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোর ওপর প্রভাব কমিয়ে তাদের রাজনৈতিক দুর্নীতির হাত থেকে দূরে রাখতে হবে।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে দুর্নীতি ও অপশাসন যেন একটি অবশ্যম্ভাবী চক্রে পরিণত হয়েছে। গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে এক সরকারের পতন হলেও, নতুন সরকার যদি পুরনো পথ অনুসরণ করে, তাহলে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা বিফল হবে। অন্তবর্তীকালীন সরকারের উচিত দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা, যাতে তারা পূর্ববর্তী সরকারের মতো একই অভিযোগের সম্মুখীন না হয়। কেবলমাত্র সুশাসন ও দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসনই দেশের ভবিষ্যৎকে সুরক্ষিত করতে পারে।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ সকাল ৯:৩০

আহরণ বলেছেন: বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ অন্ধকার। সম্পদহীন ২০ কোটি অসৎ কাঙালের দেশে ভালো কিছু আশা করা যায় না... ভাইয়া।

১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ সকাল ৯:৪৯

শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু বলেছেন: আপনার হতাশা বুঝতে পারছি, কিন্তু বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে এতটা নৈরাশ্যবাদী হওয়ার কারণ নেই। ইতিহাস সাক্ষী, এই জাতি বহু সংকট পেরিয়ে এগিয়ে গেছে। দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার বাস্তবতা হলেও, সততা ও দেশপ্রেমও এই দেশের অনেক মানুষের মধ্যে বিদ্যমান। পরিবর্তন রাতারাতি আসবে না, তবে সুশাসন ও সচেতন নাগরিকদের প্রচেষ্টায় আমরা অবশ্যই একটি ভালো ভবিষ্যৎ গড়তে পারি। আশার আলো সবসময় থাকে—আমাদের শুধু লড়াইটা চালিয়ে যেতে হবে।

২| ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ সকাল ৯:৫৪

মোস্তফা সোহেল বলেছেন: দেশ নিয়ে মাঝে মাঝে ভাল কিছু ভাবলেও সেই ভাবনা ক্ষনস্থায়ী হয়।

১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ সকাল ১১:৫০

শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু বলেছেন: “আপনার অনুভূতি একদমই অমূলক নয়, কারণ বাস্তবতা আমাদের বারবার হতাশ করে। তবে পরিবর্তন কখনোই একদিনে আসে না। ইতিবাচক পরিবর্তনের জন্য ধারাবাহিক প্রচেষ্টা ও সচেতনতার প্রয়োজন। যদি আমরা সবাই একটু একটু করে দায়িত্ব নিই, তাহলে ধীরে ধীরে হলেও দেশকে সামনে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব। আশার আলো ক্ষণস্থায়ী হতে পারে, কিন্তু সেটাকে টিকিয়ে রাখা আমাদেরই দায়িত্ব।”

৩| ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ সকাল ১০:১২

রাজীব নুর বলেছেন: আমাদের দেশের মানুষ গুলো ভালো না। ইতর। জাস্ট ইতর।

১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ সকাল ১১:৫১

শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু বলেছেন: “আপনার হতাশা বুঝতে পারছি, তবে পুরো জাতিকে নেতিবাচকভাবে দেখলে সমাধান খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে যায়। আমাদের সমাজে যেমন দুর্নীতি ও অন্যায় আছে, তেমনি অসংখ্য সৎ, পরিশ্রমী ও দেশপ্রেমী মানুষও আছেন, যারা নিরলসভাবে ভালো কিছু করার চেষ্টা করছেন। পরিবর্তন রাতারাতি সম্ভব নয়, কিন্তু ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ও সচেতন প্রচেষ্টার মাধ্যমে আমরা ধীরে ধীরে উন্নতির দিকে যেতে পারি। হতাশ না হয়ে বরং পরিবর্তনের অংশ হওয়ার চেষ্টা করি।”

৪| ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ রাত ৯:০০

কামাল১৮ বলেছেন: সুশাসনের জন্য চাই গনতন্ত্র।যেমন ইউরোপের দেশ গুলিতে আছে।আমাদের পাশের দেশ ভারতে আছে।

১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ সকাল ৭:০৩

শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু বলেছেন: “আপনার সঙ্গে একমত, সুশাসনের অন্যতম ভিত্তি হচ্ছে প্রকৃত গণতন্ত্র। গণতন্ত্র যেখানে কার্যকর, সেখানে জবাবদিহিতা থাকে, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়, এবং জনগণের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। ইউরোপ বা ভারতের উদাহরণ থেকে আমাদের শেখার অনেক কিছু আছে, তবে একই সঙ্গে আমাদের দেশের বাস্তবতাও মাথায় রাখা জরুরি। গণতন্ত্র শুধু একটি কাঠামো নয়, এটি চর্চার বিষয়—জনগণকে সচেতন হতে হবে, রাজনৈতিক দলগুলোকেও দায়িত্বশীল হতে হবে। আমরা যদি সক্রিয়ভাবে গণতন্ত্রের চর্চা করি, তাহলে সুশাসন নিশ্চিত করা সম্ভব।”

৫| ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ সকাল ১১:০২

রাজীব নুর বলেছেন: আমার মন্তব্যের উত্তর দেওয়ার জন্য আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ।

১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ বিকাল ৪:৪৩

শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু বলেছেন: আপনাকেও আন্তরিক ধন্যবাদ মন্তব্য করার জন্য! গঠনমূলক আলোচনা ও মতামত আদান-প্রদানের মাধ্যমেই আমরা উন্নতির পথ খুঁজে পেতে পারি। আপনার ভাবনা ও অংশগ্রহণ সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি, ভবিষ্যতেও আপনার মতামত পাবো!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.