নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

“Blogger | Law Student | Human Rights Activist”

শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু

লেখালেখির মাধ্যমে আমি নতুন ভাবনা, নতুন দৃষ্টিভঙ্গি ও সৃজনশীল প্রকাশ খুঁজে পাই। আমার লেখার লক্ষ্য পাঠকদের ভাবতে উদ্বুদ্ধ করা এবং একটি অর্থবহ আলোচনা তৈরি করা।

শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাংলাদেশের পোশাক শিল্প: সংকট কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর পথে আশুলিয়া

১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ ভোর ৬:৪৯

বাংলাদেশের পোশাক শিল্প বিশ্ববাজারে দীর্ঘদিন ধরে প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান ধরে রেখেছে। তবে গত বছরের ৫ই আগস্টের পর ঢাকার অদূরে আশুলিয়াসহ বেশ কয়েকটি পোশাক শিল্প অঞ্চলে শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দেয়, যা উদ্যোক্তাদের মধ্যে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করে এবং বিদেশি ক্রেতাদের উদ্বিগ্ন করে তোলে। তবে বর্তমানে সংকট কাটিয়ে পোশাক শিল্প অঞ্চলগুলোতে স্থিতিশীলতা ফিরতে শুরু করেছে এবং রপ্তানি আয়ও ইতিবাচক ধারায় রয়েছে।

শ্রমিক অসন্তোষের প্রভাব

শিল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, গত বছরের রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর আশুলিয়ায় শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনা ঘটে। এতে স্পেন, সুইজারল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের বড় ব্র্যান্ডগুলো সতর্ক হয়ে ওঠে। পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নেয়, যার ফলে পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে শুরু করে। তবে ক্রেতারা সম্ভাব্য ঝুঁকি এড়াতে দেশের অন্যান্য শিল্প অঞ্চলের কারখানায় উৎপাদন স্থানান্তর করতে বাধ্য হয়, যা শিল্পখাতের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করে।

অর্ডার স্থানান্তর এবং শিল্পের বর্তমান অবস্থা

কারখানা মালিকদের মতে, আশুলিয়ায় আপাতত ২০২৫-২৬ সালের বসন্ত-গ্রীষ্ম মৌসুমের জন্য চীন থেকে স্থানান্তরিত হয়ে আসা বাড়তি অর্ডার সামলানো হচ্ছে। এতে বড় ব্র্যান্ডগুলোর ফাঁকা জায়গা পূরণ হলেও দীর্ঘমেয়াদে এ অঞ্চলের ওপর নির্ভরতা কিছুটা কমেছে। বিশেষ করে, আশুলিয়ায় কর্মরত প্রায় ১০ লাখ শ্রমিক এবং ৪০০-এর বেশি রপ্তানিমুখী কারখানার জন্য স্থিতিশীলতা বজায় রাখা জরুরি হয়ে পড়েছে।

বিজিএমইএ-এর তথ্যমতে, আশুলিয়ার কারখানাগুলো দেশের বার্ষিক রপ্তানি আয়ে প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলার অবদান রাখে। তবে শ্রমিক অসন্তোষের কারণে বেশ কিছু কারখানা ঝুঁকির মুখে পড়েছে। বেক্সিমকো গ্রুপের একটি ইউনিট বন্ধ হওয়ায় প্রায় ৪০ হাজার কর্মী চাকরি হারিয়েছেন। বর্তমানে সরকার কারখানাগুলো পুনরায় চালু করার বিষয়ে আলোচনা করছে।

পোশাক রপ্তানিতে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি

গত বছর শ্রমিক অসন্তোষের ফলে একাধিক কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হয়। উদাহরণস্বরূপ, একটি কারখানা ৮৫ মিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করলেও শ্রমিক আন্দোলনের কারণে তাদের ৪.৫ মিলিয়ন ডলার কম আয় হয়। তবে বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি আবারও পূর্ণ উৎপাদন ক্ষমতায় ফিরে এসেছে। এ ধরনের পরিস্থিতি এড়াতে শিল্প অঞ্চলের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি করা জরুরি বলে মনে করছেন শিল্প নেতারা।

পোশাক রপ্তানিকারকরা জানান, আশুলিয়ায় নির্ধারিত অনেক অর্ডার এখন গাজীপুর, চট্টগ্রামসহ অন্যান্য শিল্প অঞ্চলে স্থানান্তর করা হচ্ছে। এমনকি কিছু স্বনামধন্য মার্কিন ব্র্যান্ড আশুলিয়ায় তাদের উৎপাদন চালিয়ে যেতে চাইছে না এবং বিকল্প কারখানা খুঁজছে।

সরকারের ভূমিকা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

আশুলিয়ার অস্থিতিশীলতার কারণে সময়মতো উৎপাদন ও শিপমেন্ট ব্যাহত হচ্ছে। ফলে চট্টগ্রামের কারখানাগুলো বিকল্প হিসেবে গুরুত্ব পাচ্ছে। বর্তমান পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে হলে সরকারকে রপ্তানিকারকদের সঙ্গে আলোচনা করে দীর্ঘমেয়াদী সমাধান বের করতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি

বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের জন্য আশার খবর হলো, গত বছরের শেষ চার মাসে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানিতে বড় প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে। বিশেষ করে, ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে ৫৮ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ১৮.৩৬ শতাংশ বেশি। সার্বিকভাবে ২০২৪ সালে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিতে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি না হলেও ইতিবাচক ধারায় ফিরতে শুরু করেছে। ২০২৩ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে রপ্তানি ২৫ শতাংশ কমে গিয়েছিল, তবে বর্তমানে পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে।

আশুলিয়াসহ দেশের অন্যান্য পোশাক শিল্প অঞ্চলের জন্য শ্রমিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। দীর্ঘমেয়াদে ক্রেতাদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হলে শিল্প অঞ্চলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি করা এবং শ্রমিকদের সুষ্ঠু কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা জরুরি। একই সঙ্গে, ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে রপ্তানিকারক ও সরকারের যৌথ উদ্যোগ প্রয়োজন। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন বাজারে রপ্তানি বৃদ্ধি ইতিবাচক ইঙ্গিত দিচ্ছে, যা ভবিষ্যতে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের জন্য নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করতে পারে।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ সকাল ১১:১৪

রাজীব নুর বলেছেন: পোশাক শিল্পে বাংলাদেশ সব সময়ই ভালো করছে।

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ দুপুর ১:৪৮

শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু বলেছেন: ধন্যবাদ আপনার মতামতের জন্য! সত্যিই, বাংলাদেশের পোশাক শিল্প দীর্ঘদিন ধরে বৈশ্বিক বাজারে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান ধরে রেখেছে এবং ক্রমাগত উন্নতি করছে। তবে বিভিন্ন সময়ে শ্রমিক অসন্তোষ, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রভাব এবং সরবরাহ চেইনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছে। সাম্প্রতিক সংকট কাটিয়ে ওঠার পর শিল্পটি আবারও স্থিতিশীলতার দিকে এগোচ্ছে, যা ভবিষ্যতে আরও ইতিবাচক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা তৈরি করছে। আপনার দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ!

২| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ দুপুর ১২:০৫

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের ভিত অনেক শক্ত। তবে আমাদের উচিত পোশাক শিল্পের উপরে নির্ভরতা কমানোর চেষ্টা করা।

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ দুপুর ২:৪৩

শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু বলেছেন: আপনার সঙ্গে আমি সহমত। পোষাক শিল্পের ব্যবসা অনেকটা যাযাবরের মতো। সময়ের সাথে সাথে এটা গন্তব্য পাল্টায়। বর্তমানে বাংলাদেশের পোষাক শিল্প উন্নতির কার্ভ উর্দ্ধমুখী তবে একটা সময় আসবে যখন এটা নিম্নমূখী হবে। কাজেই সময় থাকতে অন্য সেক্টরের ডেভলপমেন্ট দরকার।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.