![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি ইতিবাচক চিন্তার শক্তিতে বিশ্বাস করি এবং আমার কাজ এবং কথার মাধ্যমে অন্যদের অনুপ্রাণিত করার চেষ্টা করি। আমার ব্লগে আসার জন্য ধন্যবাদ। আসুন, একসাথে কাজ করে সফলতার পথে এগিয়ে যাই!
বাংলাদেশে গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারগুলোর জন্য প্রতিটি দিন এক অন্ধকার বাস্তবতা। প্রিয়জনের হঠাৎ অন্তর্ধান তাদের জীবনের প্রতিটি স্তরে গভীর প্রভাব ফেলছে। একদিন যারা ছিলেন পরিবারের মূল উপার্জনকারী, তাদের অনুপস্থিতিতে স্বজনদের অর্থনৈতিক, মানসিক ও সামাজিক জীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা প্রতিনিয়ত আতঙ্কে বসবাস করছেন। কিছু পরিবার পুরোপুরি আর্থিক দুরবস্থার মধ্যে চলে গেছে, কারণ উপার্জনক্ষম মানুষটি হারিয়ে যাওয়ার পর তাদের আয়ের উৎসও বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক পরিবার বাধ্য হয়ে সহায়তা চাইতে হচ্ছে আত্মীয়স্বজনের কাছে কিংবা মানবাধিকার সংগঠনগুলোর দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হচ্ছে।
কিন্তু শুধু অর্থনৈতিক সংকট নয়, মানসিক দুশ্চিন্তাও পরিবারগুলোর জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছে। এক অনিশ্চিত অপেক্ষা তাদের মনকে গ্রাস করে রেখেছে—কেউ জানে না তাদের স্বজন বেঁচে আছেন কিনা, কোথায় আছেন, কেমন আছেন। দিনের পর দিন, বছরের পর বছর ধরে তারা অপেক্ষায় থাকলেও প্রশাসন থেকে কোনো সুস্পষ্ট উত্তর আসে না। তাদের আশা একসময় হতাশায় রূপ নেয়, কিন্তু তারা হাল ছাড়তে পারেন না।
গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্তানরা সবচেয়ে বেশি মানসিক আঘাতের শিকার হচ্ছে। বাবার হঠাৎ অনুপস্থিতি তাদের শিক্ষাজীবন ও মানসিক বিকাশে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। স্কুলে সহপাঠীদের প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়, পরিবারে দুঃখের ছায়া তাদের স্বাভাবিক জীবনকে ব্যাহত করছে। অনেক শিশুই ছোটবেলা থেকেই বাস্তবতার নির্মম রূপের মুখোমুখি হচ্ছে, যা তাদের মানসিক সুস্থতায় গভীর প্রভাব ফেলছে।
গুম হওয়া ব্যক্তিদের স্ত্রী ও মায়েরা সবচেয়ে বেশি কষ্টের মধ্যে দিন পার করছেন। স্বামী বা সন্তানের ফিরে আসার আশায় তারা দিন গুনছেন, কিন্তু কোনো সুসংবাদ নেই। সমাজের অনেকেই তাদেরকে বোঝানোর চেষ্টা করেন যে আশা ছেড়ে দেওয়া উচিত, কিন্তু হৃদয়ের কোথাও তারা বিশ্বাস করতে পারেন না যে তাদের স্বজন আর ফিরে আসবে না।
এদিকে, হুমকি ও ভয়ভীতি এখনো অনেক পরিবারকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। কেউ কেউ প্রকাশ্যে কথা বলার সাহস করলেও, অনেকেই ভয়ে মুখ খুলতে পারেন না। প্রশাসনের নীরবতা ও বিচারহীনতার সংস্কৃতি তাদের হতাশ করে তুলেছে।
বাংলাদেশে গুম হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনরা শুধু তাদের প্রিয়জনদের ফিরে পাওয়ার অপেক্ষায় নেই, তারা ন্যায়বিচারও চান। রাষ্ট্রের দায়িত্ব নাগরিকদের সুরক্ষা দেওয়া, কিন্তু যখন রাষ্ট্রই ব্যর্থ হয়, তখন পরিবারগুলো এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখোমুখি হয়। গুমের এই বাস্তবতা শুধু ব্যক্তিগত বা পারিবারিক সমস্যা নয়, এটি রাষ্ট্রীয় নৈতিকতা ও মানবাধিকারের প্রশ্নও।
মানুষের জীবনে সবচেয়ে কঠিন বিষয় হলো অনিশ্চয়তা। গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারগুলো প্রতিদিন এই অনিশ্চয়তার সঙ্গে লড়াই করে যাচ্ছে। তারা জানে না তাদের অপেক্ষা কখন শেষ হবে, বা আদৌ শেষ হবে কি না। কিন্তু একটাই প্রত্যাশা—একদিন তাদের স্বজন ফিরে আসবে বা অন্তত তারা জানতে পারবে তাদের ভাগ্যে কী ঘটেছে।
©somewhere in net ltd.