নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মানবসম্পদ ও কমপ্লায়েন্স ব্যবস্থাপনা আমার পেশা হলেও, লেখালিখির মাধ্যমে নিজের ভাবনাগুলো ভাগ করে নিতে আমি সবসময় আগ্রহী।

শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু

আমি ইতিবাচক চিন্তার শক্তিতে বিশ্বাস করি এবং আমার কাজ এবং কথার মাধ্যমে অন্যদের অনুপ্রাণিত করার চেষ্টা করি। আমার ব্লগে আসার জন্য ধন্যবাদ। আসুন, একসাথে কাজ করে সফলতার পথে এগিয়ে যাই!

শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাংলাদেশের অর্থনীতি: প্রবৃদ্ধির মুখোশে সংকটের বাস্তবতা

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ দুপুর ২:১১



বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা বিগত ১৫ বছরের শাসনামলে এক ধারাবাহিক সংকটের মধ্য দিয়ে অতিক্রান্ত হয়েছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের অর্থনৈতিক নীতিগুলি প্রাথমিকভাবে উচ্চ প্রবৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবতা ভিন্ন চিত্র তুলে ধরেছে। সাম্প্রতিক সময়ে রাজস্ব ঘাটতি, ব্যাংক খাতের অনিয়ম এবং বিনিয়োগ স্থবিরতার ফলে দেশের অর্থনৈতিক কাঠামো ক্রমশ দুর্বল হয়েছে।

গত এক যুগে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বারবার ব্যর্থ হয়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় প্রায় ৫১ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি হয়েছে। অথচ প্রতি বছর আদর্শহীনভাবে এই লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হয়। অর্থনীতিবিদদের মতে, অবাস্তব লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের পাশাপাশি রাজনৈতিক অস্থিরতা, আমদানি হ্রাস এবং বিনিয়োগ স্থবিরতা রাজস্ব ঘাটতির মূল কারণ। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ব্যবসা-বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে, যার ফলে সরকারের রাজস্ব আদায় কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে পৌঁছাতে পারেনি।

অন্যদিকে ব্যাংক খাতেও চরম নৈরাজ্য দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর স্বীকার করেছেন যে কিছু ব্যাংক কার্যত দেউলিয়া হয়ে গেছে এবং কিছু ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৮৭ শতাংশে পৌঁছেছে। সবচেয়ে ভয়াবহ তথ্য হলো, নির্দিষ্ট একটি পরিবার ব্যাংক থেকে অধিকাংশ ঋণ নিয়ে পুরো খাতকে অস্থিতিশীল করে তুলেছে। রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী গোষ্ঠীগুলোর মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুট হওয়ায় সাধারণ জনগণের সঞ্চয়ও এখন ঝুঁকির মুখে। সরকারি ও বেসরকারি উভয় ব্যাংকেই নজরদারি এবং সুশাসনের অভাব প্রকট হয়ে উঠেছে।

মুদ্রাস্ফীতি ও জীবনযাত্রার ব্যয়ও ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য কয়েকগুণ বেড়ে গেছে, যার ফলে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। খাদ্য, জ্বালানি এবং পরিবহন ব্যয়ের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি মানুষের জীবনযাত্রাকে কঠিন করে তুলেছে। টাকার ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়ায় জনগণের সঞ্চয় কমছে এবং ভোগ্যপণ্যের চাহিদা হ্রাস পাচ্ছে, যা সামগ্রিকভাবে অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

বৈদেশিক ঋণ ও রিজার্ভ সংকটও বর্তমানে দেশের অর্থনীতির জন্য অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দ্রুত হ্রাস পাওয়ার ফলে আমদানি ব্যয় নির্বাহ করা কঠিন হয়ে পড়ছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF) এবং অন্যান্য দাতা সংস্থার ঋণের ওপর নির্ভরশীলতা বাড়ছে, যা দীর্ঘমেয়াদে অর্থনীতিকে আরও দুর্বল করতে পারে। বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে ব্যর্থতা এবং রপ্তানি আয় প্রত্যাশিত হারে না বাড়ায় বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্যও হুমকির মুখে পড়েছে।

বিগত সরকার প্রবৃদ্ধির উচ্চ হার দেখিয়ে অর্থনীতির সফলতার কথা বলে এসেছে, কিন্তু বাস্তবে এই প্রবৃদ্ধির সুবিধা সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছেনি। বিনিয়োগ স্থবিরতা এবং কর্মসংস্থানের সংকট বাড়তে থাকায় তরুণদের বেকারত্ব বেড়েছে। অধিকাংশ নতুন বিনিয়োগ থমকে গেছে এবং সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের বাস্তবায়ন ধীর গতিতে চলছে। অর্থনীতিবিদদের মতে, দীর্ঘমেয়াদি পুঁজি না থাকায় ব্যাংকগুলো স্বল্পমেয়াদি সঞ্চয়ের বিপরীতে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ দিতে বাধ্য হচ্ছে, যা খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাড়িয়ে তুলেছে।

এদিকে, মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) খাতে লেনদেনের পরিমাণ আশাব্যঞ্জক হলেও অর্থনীতির মূল সমস্যাগুলো এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে। ডিজিটাল পেমেন্টের প্রসার অর্থনীতির আধুনিকায়নের ইঙ্গিত দিলেও বাস্তব সমস্যা সমাধানে এটি কোনো দীর্ঘমেয়াদি সমাধান নয়।

বাংলাদেশের অর্থনীতির ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করলেও বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কাঠামোগত সংস্কারের বিষয়ে তেমন কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। রাজনৈতিক সংস্কার, আর্থিক খাতে সুশাসন এবং বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরি না হলে অর্থনীতির এই সংকট আরও গভীর হতে থাকবে। সময় এসেছে, অর্থনীতিকে রাজনৈতিক স্বার্থ থেকে মুক্ত করে বাস্তবসম্মত নীতি গ্রহণের।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ বিকাল ৩:১৯

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: সংকট হয়েছে আম্লিক ও শেখ পরিবারের লুটপাটের কারণে।

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ বিকাল ৪:১৭

শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু বলেছেন: অর্থনৈতিক সংকটের পেছনে দুর্নীতি ও অপশাসনের ভূমিকা অস্বীকার করা যায় না, তবে বিষয়টি আরও গভীর এবং বহুমাত্রিক। রাজস্ব ঘাটতি, ব্যাংক খাতের অনিয়ম, বৈদেশিক মুদ্রার সংকট, বিনিয়োগ স্থবিরতা—এসব সমস্যা দীর্ঘমেয়াদি কাঠামোগত দুর্বলতার ফলাফল। শুধুমাত্র একটি পরিবার বা রাজনৈতিক দলকে দায়ী করলে প্রকৃত কারণগুলো আড়ালে থেকে যায়। এর সাথে পীর, দরবেশ এবং তাদের অনেক সাকরেদও জড়িত ছিলো। অর্থনীতির সংকট সমাধানে সুশাসন, জবাবদিহিতা এবং কার্যকর নীতিমালা প্রয়োজন, যা দলমত নির্বিশেষে সকলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

২| ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ রাত ৮:০৭

ধুলোপরা চিঠি বলেছেন:




AI দিয়ে সবকিছু লেখা যাচ্ছে, ব্লগিং ভালো হচ্ছে!

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ রাত ৯:১০

শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু বলেছেন: গাজী আপনি নতুন নামে আবার এসেছেন। আপনি এতো বেহায়া কেনো বুঝিনা। ব্লাগ অথরিটি বারবার আপনাকে পাছায় লাথি দিয়ে বের করে দেয় আর আপনি নতুন আইডি খুলে কিছুদিন পর আবার ফিরে আসেন। ফিরেন ভালো কথা কিন্তু খোচাখুচি করেন কেনো? আমি AI দিয়ে লিখি নাকি দোয়াত কলম দিয়ে লিখি তাতে আপনার সমস্যা কি? এর আগে আপনি বিভিন্ন সময়ে আমাকে উল্টা পাল্টা কমেন্ট করে বিরক্ত করেছেন। এবার যদি ফের একই কাজ করেন তাহলে আপনাকে আমার পোস্টে ব্লক করে দিবো।

৩| ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ দুপুর ১২:১৮

রাজীব নুর বলেছেন: ২ নং মন্তব্যের উত্তর ভদ্রভাবে কেন দিলেন না?

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ দুপুর ১:০৩

শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু বলেছেন: When you are playing with a gentleman, play like a gentleman, but when you are playing with a bastard, make sure you are a bigger bastard. Otherwise, you will lose the game.

৪| ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ সকাল ৯:৫৩

রাজীব নুর বলেছেন: বাংলায় লিখলে কি সমস্যা হতো বুঝতে পারছি না।

২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ দুপুর ১:৫০

শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু বলেছেন: কিছু কথা বাংলার থেকে ইংরেজিতে জোড়ালো ভাবে বলা যায় ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.