![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি ইতিবাচক চিন্তার শক্তিতে বিশ্বাস করি এবং আমার কাজ এবং কথার মাধ্যমে অন্যদের অনুপ্রাণিত করার চেষ্টা করি। আমার ব্লগে আসার জন্য ধন্যবাদ। আসুন, একসাথে কাজ করে সফলতার পথে এগিয়ে যাই!
(মানুষের ভেতরের অদৃশ্য দানবের রূপক)
সন্ধ্যার অন্ধকার নেমে এসেছে নগরের উপর। বাতাসে এখনও ধোঁয়ার গন্ধ, মিশে আছে গ্লাস ভাঙার ঝনঝন শব্দের প্রতিধ্বনি। একটা সময় এই নগর প্রাণচঞ্চল ছিল, আর এখন মনে হয় – এটা কোনো অদৃশ্য ভূতের নগর, যেখানে মানুষ চলাফেরা করে, কিন্তু তাদের চোখে নেই আলো, কণ্ঠে নেই ভাষা। কিছু একটা বদলে গেছে। ভেতরে, গভীরে, অদেখা এক পর্দার আড়ালে।
তার নাম রাফি। সিলেট শহরের আম্বরখানার এক গলির মাথায় ছোট্ট ফাস্ট ফুডের দোকান চালায় সে। প্রতিদিন দুপুরে গরম সিঙ্গারা, পুরি আর কোলা বিক্রি করে। হাসিখুশি ছেলেটা। কেউ যদি কম টাকায় কিছু খেতে চায়, নিজে থেকে দিয়ে দেয়। তার দোকানের নাম "সন্ধ্যার স্বাদ"। খুব সাধারণ জীবন – একটা ভাঙাচোরা চেয়ার, একটা পুরনো ক্যাশ বাক্স আর একটা আয়না, যেখানে রাফি মাঝেমধ্যে নিজের ক্লান্ত মুখ দেখে।
কিন্তু সেই সন্ধ্যায়, অন্য কিছু হয়েছিল।
বিক্ষোভের গর্জন যখন রাস্তায় ছড়িয়ে পড়ছিল, রাফি তখন দূর থেকে দেখছিল। সে বিক্ষোভে যায়নি, শুধু ভাবছিল – এত মানুষের ভিড়ে কেউ কি সত্যি জানে, কেন তারা রাস্তায়? নাকি কেউ কেউ শুধু উত্তেজনায়, ঢেউয়ের তালে ভেসে যাচ্ছে?
তখন হঠাৎ, সেই ভিড় থেকে আলাদা হয়ে একদল লোক এসে দাঁড়ায় বাটার শোরুমের সামনে। গ্লাসের আড়ালে দাঁড়িয়ে থাকা জুতোগুলো যেন তাদের দিকে তাকিয়ে বলছিল, "আমরা তোমার নই।"
কিন্তু সেই মুহূর্তে, রাফি যেন আর নিজে ছিল না।
তার বুকের ভেতর থেকে যেন কিছুর ফিসফিসানি উঠল। অজানা এক কণ্ঠ, নরম কিন্তু কুটিল – "তুই তো গরিব। তোর কোনোদিন বাটার জুতা হইবো?"
সে উত্তর দিল না। শুধু এগিয়ে গেল। চোখের সামনে গ্লাস ভাঙা হচ্ছে, লোকে ঢুকছে, তুলে নিচ্ছে জুতা, বাক্স, এমনকি ম্যানিকুইনের পায়ের মোজা পর্যন্ত। রাফি দাঁড়িয়ে রইল। তারপর কে যেন তার হাতটা টেনে নিয়ে গেল শোরুমের ভেতরে। হয়তো সেটা তার লোভ ছিল, হয়তো কোনো অদৃশ্য পশু।
তার হাতে এসে পড়ল একটা দামি স্নিকার্স। চকচকে সাদা, একেবারে নতুন।
এই সেই সময়, যখন মানুষের মুখ থেকে মুখোশ খুলে পড়ে যায়। রাফি – যে সারা জীবন সত্য বলেছে, খদ্দেরদের ঠকায়নি, সেই রাফি – এখন একটা চুরি করা জুতা নিয়ে দৌড়াচ্ছে সন্ধ্যার গলির দিকে। তার ভেতরের অন্ধকার তখন জেগে উঠেছে।
রাত গভীর হলে সে দোকানের পেছনের ঘরে সেই জুতা লুকিয়ে রাখে। কিন্তু ঘুম আসে না। আয়নায় নিজের মুখ দেখে। নিজের চোখে সে দেখতে পায় – এক পশু। তার পেছনে দাঁড়িয়ে আছে আরও অজস্র মুখ, যারা একইভাবে আজ রাতে নিজেদের পরিচয় বদলে ফেলেছে।
পরদিন সকালে, সে আবার দোকান খোলে। ক্রেতারা আসে, কেউ কিছু বলে না। বাইরে পুলিশ টহল দিচ্ছে। আশেপাশের দোকানদাররা ফিসফিস করছে – কে কি লুটেছে, কে ধরা পড়েছে, কে বিক্রি করছে ফেসবুকে।
রাফি তখন তার ফোনে ছবি তোলে সেই স্নিকার্সের। ‘অরিজিনাল জুতা, দাম অল্প, আগ্রহীদের ইনবক্স করুন।’
কিন্তু তার মন ফাঁকা। বিকেল হতেই পুলিশ চলে আসে তেররতনে। ফেসবুকের সূত্রে, ছবি দেখে, তার নাম খুঁজে পায়।
রাফি যখন হাতকড়ায় বাঁধা, তখন তার মুখে কোনো ভয় নেই। সে জানে, এটাই হবে শেষ – হয়তো একটা ভুল, হয়তো একটা আবেগ, কিংবা সত্যিকারের এক পশুর ডাকে সাড়া দেওয়া।
পুলিশ জুতা উদ্ধার করে। ক্যামেরার সামনে দাঁড় করায় রাফিকে। সাংবাদিক প্রশ্ন করে – "আপনি কেন করলেন এই কাজ?"
রাফি চুপ করে থাকে।
তার চোখে তখনও ভাসে সেই সাদা জুতা। একটা অনাকাঙ্ক্ষিত স্বপ্নের মতো। একটা অচেনা আকর্ষণ, যা তাকে নিয়ন্ত্রণ করেছিল। হঠাৎ সে বলে ফেলে – "আমি করি নাই। করেছিলো সে। আমি শুধু তার হাত ছিলাম।"
সাংবাদিক অবাক হয়। "সে কে?"
রাফি উত্তর দেয় না। শুধু আয়নার দিকে তাকায়। সেখানে সে আর কাউকে দেখতে পায় না।
নগরে আবার সন্ধ্যা নামে। ত্রিপল ঢেকে দেয় শহরের ক্ষত। ভাঙা গ্লাসে আলো পড়ে – সেটা আর স্বচ্ছ নয়। এখন তার মাঝে লুকিয়ে আছে লোভ, অসততা, অস্থিরতা।
মানুষেরা আবার পথে নামে, বিক্ষোভে যায়, আবার দোকান খোলে, আবার হাসে। কিন্তু কেউ জানে না, কার ভেতরে এখনও ঘুমিয়ে আছে সেই পশু, যে সুযোগ পেলেই আবার জেগে উঠবে।
কারণ নগর শুধু পাথর আর কংক্রিটের নয়, এটা এক আয়নার নগর, যেখানে একবার চোখ ফেললে, আপনি শুধু আপনাকেই দেখবেন না – দেখবেন সেই অন্ধকারকেও, যেটা আপনি নিজেও চিনেন না।
০৮ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৯:৫৮
শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু বলেছেন: আপনার মন্তব্য হৃদয়ে নাড়া দিয়েছে। আপনি খুব সঠিকভাবে ধরেছেন—মানবিক হওয়া মানে শুধু অন্যের পাশে দাঁড়ানো নয়, বরং নিজের ভেতরের অমানবিকতাকে চিনে তার বিরুদ্ধে লড়াও। এটা এক ধরনের আত্মসংগ্রাম, এক ধরনের আত্মসমালোচনা—যা ছাড়া প্রকৃত মানবিকতা সম্ভব নয়।
আমরা আজ এমন এক সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি, যেখানে বাইরের লড়াইয়ের চেয়েও ভিতরের লড়াই অনেক বেশি জরুরি। হিংসা, লোভ, ঈর্ষা—এসব আমাদের অজান্তেই গ্রাস করছে। ফলে, সমাজে যে সহিংসতা বা ধ্বংস আমরা দেখছি—তার জন্ম হচ্ছে অনেকাংশেই আমাদের মানসিক অবক্ষয় থেকে।
আপনি দারুণভাবে বলেছেন—"আমরা এক মরণ খেলায় মেতে উঠেছি। নিজেদের সম্পদ নিজেরাই ধ্বংস করছি।"
এই কথাগুলো যেন ছায়ার শহরের নিঃশব্দ চিৎকারের প্রতিধ্বনি।
তবে আশার কথা এই যে—আপনার মতো পাঠকরা এখনও চোখ মেলে দেখছেন, ভাবছেন, প্রশ্ন করছেন।
এই প্রশ্নই একদিন আলো হয়ে উঠবে, যদি আমরা সত্যি সেই ছায়ার ভেতর থেকে নিজেকে টেনে তুলতে পারি।
ধন্যবাদ আপনাকে, এমন এক প্রাসঙ্গিক উপলব্ধির জন্য।
২| ০৮ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৮:৩৩
মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: অপরাধ কোনটা এই জানেনা মানুষ। শুধু হুজুগে ভেসে যায়!
০৮ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১০:০০
শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু বলেছেন: আপনার মন্তব্যটি আমার লেখার মূল ভাবনার সাথে গভীরভাবে মিলে গেছে। আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ, এমন একটি জাগ্রত উপলব্ধির জন্য।
৩| ০৮ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১০:১২
এইচ এন নার্গিস বলেছেন: সুন্দর বক্তব্য ।
০৮ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১১:৪১
শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু বলেছেন: আপনার মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ
৪| ০৯ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১:৩১
এইচ এন নার্গিস বলেছেন: ভয়ঙ্কর ছবি ।
০৯ ই এপ্রিল, ২০২৫ ভোর ৬:০৬
শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু বলেছেন: কনটেন্ট এর সাথে মানানসই ছবি।
৫| ০৯ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৮:৪৪
এ পথের পথিক বলেছেন: কেএফসি-বাটায় ভাঙচুরের ঘটনায় ছাত্রলীগ কর্মীসহ আটক ১৪
০৯ ই এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১:০৮
শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু বলেছেন: গত কয়েকদিনে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে বেশ তৎতপর হতে দেখা যাচ্ছে।
৬| ০৯ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৯:৪০
রাজীব নুর বলেছেন: দেশের বারোটা বাজাচ্ছে শুধু মাত্র জামাত শিবির আর সমন্বয়কম ও বৈষম্যবিরোধিরা।
০৯ ই এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১:০৯
শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু বলেছেন: আওয়ামীলীগও বসে নেই। তারাও দেশটাকে অস্থিতিশীল করার জন্য সক্রিয় আছে।
©somewhere in net ltd.
১|
০৮ ই এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:১৯
কামাল১৮ বলেছেন: মানুষকে মানবিক হয়ে উঠার জন্য নিজের সাথেও সংগ্রাম করতে হয়।এর নাম আত্মসমালোচনা।যেটা মানবিক হবার জন্য একান্ত প্রয়োজন।
আমরা এক মরন খেলায় মেতে উঠেছি।নিজেদের সম্পদ নিজেরাই ধ্বংস করছি।